বিচ্ছিন্ন ভাবে মার্কসের তত্ত্বদৃষ্টি থেকে সাহিত্য করলে সেটা মার্কসের তত্ত্বের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়বে: রায়হান রাইনের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 30, 2012 5:55:36 AM

প্রকাশিত বই: পাতানো মায়ের পাহাড়, কিতাব আল-তাওয়াসিন, লেখক : মনসুর আল-হাল্লাজ, ভাষান্তর ও সম্পাদনা: রায়হান রাইন

দুপুর মিত্র: আপনি নিজেকে কেন লেখক বলে পরিচিত করাতে চান?

রায়হান রাইন: প্রশ্নটা সচরাচর এরকম হয়, 'আপনি কেন লেখেন?' লেখা ছাড়াও কত কাজই তো করার আছে। সেসব রেখে কেন লেখা? যেন না লিখলেও চলতে পারতো। না লিখে কোনো অর্থকরী কাজে সময় দেয়া যেত বা শিল্পের আরও কোনো দিক বেছে নেয়া যেত, তখন অবশ্য ঐ কাজ কেন করছেন প্রশ্নটা আসত বা আসত না। এই প্রশ্নটার পেছনে একটা আপ্তধারণা আছে, সেটা হলো, লেখা ব্যাপারটা অপশনাল। তো লিখছেন কেন? যদি ঘটনা এমন হয় যে, আমার না লিখে উপায় ছিল না, তখন কিন্তু আর প্রশ্ন চলে না। তখন এটা বলা চলে না যে, আপনি সংগীতচর্চা না করে লেখার অপশন বেছে নিলেন কেন? কারণ আমার তো কোনো অপশনই নেই লেখা ছাড়া। তখন প্রশ্ন হতে পারে, কেন অপশন নেই? কেন লিখতেই হচ্ছে? সেই প্রশ্নের উত্তরে অনেক কথা রহস্য করে বলা যায়। বলা যায়, লেখাই আমার স্বভাব, লেখার ভেতর দিয়ে চারপাশে আমার দেখাটা সবার কাছে আমি ফিরিয়ে দেই। আবার 'যে আমি' লিখি সেই আমিও কিন্তু ঐ সবার অংশ, সেই আমি নিজেই নিজেকে বানায়নি। তাহলে লেখার ভেতর দিয়ে কী ঘটছে? 'আমি' কি কিছু একটা হারিয়েছে, যা সে সবার ভেতর খুঁজছে? নাকি কোথাও বড় রকমের একটা গড়বড় নিজের আয়নায় ধরা পড়েছে যে জন্যে না লিখে থাকাই যাচ্ছে না। সেই উত্তরগুলোর খোঁজও তো লেখার ভেতর দিয়েই চলতে থাকে।

কিন্তু প্রশ্ন যখন 'আপনি নিজেকে কেন লেখক বলে পরিচিত করাতে চান?' তখন সেই ধরন কিন্তু খুব আলাদা। প্রশ্ন তখন এমন হয়ে যাচ্ছে যে, 'কাঁটাগাছ' আপনি কেন নিজেকে কাঁটাগাছ হিসেবে পরিচিত করাতে চান? আপনি কেন ধুতুরাগাছ রূপে আত্মপ্রকাশ করেন না? নিজেকে পরিচিত করাতে চাওয়ার উপর লেখার প্রক্রিয়াগুলো আসলে নির্ভর করে না। কেন'র উত্তরটা আসলে পরিচিত করাতে চাওয়ার ভেতরে নেই।

দু: নিজেকে পরিচিত করাতে চাওয়ার উপর লেখার প্রক্রিয়াগুলো আসলে নির্ভর করে না। তাহলে লেখার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কিছু বলুন যে এর প্রক্রিয়াগুলো কেমন?

রা : মানে হলো, আমি লেখক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করাতে চাই বলে লিখতে বসলাম, আর লেখা হয়ে উঠতে থাকল, ব্যাপারটা এইরকম নয়। লেখার প্রক্রিয়া, শর্ত ইত্যাদি কারো বেড়ে উঠবার ভেতর নিহিত থাকে; চারপাশের মানুষ, পরিবেশ ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্ক, যোগাযোগ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কাঁটাগাছটির কাঁটাগাছ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া তার কাঁটাগাছ হিসেবে পরিচিত করানোর ইচ্ছার ভেতর নেই। এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া ও শর্তগুলো তার জৈবসত্তা, পরিবেশ ইত্যাদির ভেতর আছে।

দু: কবিতার চেয়ে কথাসাহিত্যকে আপনি কেন বেছে নিলেন?

রা: আবারও বেছে নেবার আপ্তধারণাটি এসে গেল। আমরা যে সচেতনবৃত্তি থেকে নির্বাচন করি ঘটনাগুলোর গোড়া তার বাইরেও থাকা সম্ভব। আর এখানে 'চেয়ে'র তুলনা করার মতো কোনো ঘটনাও নেই আসলে। আমি কবিতা যেমন লিখতে চাই, তেমনি কথাসাহিত্যেও। বাছাবাছি করে নয়।

দু: আমরা যে সচেতনবৃত্তি থেকে নির্বাচন করি ঘটনাগুলোর গোড়া তার বাইরেও থাকা সম্ভব। এটা একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?

রা: আমাদের সচেতনতা আমাদের সত্তার সবটুকু নয়। সচেতনতা কোনোকিছু করার মানে এই নয় যে, তাতে অচেতনের কোনো যোগ নেই। ধরা যাক, আমাদের দেখার জন্য চোখের দরকার, শোনার জন্য কানের দরকার, কিন্তু আমরা চোখ বা কানকে সচেতনভাবে নির্বাচন করে নিইনি। আমাদের সচেতনতার বাইরে জৈবসত্তার নিজেরও কিছু করবার থাকে। সেটা হয়তো প্রাণের অজ্ঞাত কোনো আবেগ। যেমন, শরীরের কোথাও পুড়ে গেল। আমি সচেতনভাবে না চাইলেও দেহ নিজে থেকেই একটা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষতটা সারিয়ে ফেলে। যা বলতে চাইছি, সেটা হলো সচেতন চাওয়ার ভেতর দিয়ে 'আমি' একটা ইগোকে জাহির করে বটে, কিন্তু তার ঊর্ধ্বেও 'আমি'র একটা বড় সত্তারূপ আছে। কোনো বিশেষ কাঁটাগাছ না চাইলেও কাঁটাগাছের যেই সত্তাটি চায় যে টিকে থাকার জন্য তার গায়ে কাঁটা গজিয়ে ওঠুক।

দু: পশ্চিমবঙ্গের সমসাময়িক গল্পচর্চা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

রা: সমসাময়িক শব্দটা বুঝতে যদি আমি ভুল না করে থাকি তাহলে অগ্রজ হলেও দেবেশ রায়, অমিয়ভূষণ মুজমদার, কমলকুমার মজুমদার, অভিজিৎ সেন, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, রামকুমার মুখোপাধ্যায় এঁরা আমাদের সমসাময়িক। আরও অনেকে এদের পরে গল্প লিখতে শুরু করেছেন, তাদের লেখা কম পড়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের এইসব গল্পকারদের গল্প পড়ে আমি আনন্দ পাই। এই গল্পকারদের মধ্যে যদি একদুজনকে আলাদা করতে বলা হয় আমি অবশ্যই অমিয়ভূষণ মজুমদার ও কমলকুমার মজুমদারকে আলাদা করব তাঁদের দুর্দ্দান্ত গল্পগুলোর জন্য।

দু: অমিয়ভূষণ মজুমদার ও কমলকুমার মজুমদারের গল্পগুলো কেন দুর্দান্ত। মানে ঠিক আপনি কোন বিষয়গুলো খুঁজে পেয়েছেন যে আপনার তা দুর্দান্ত মনে হয়।

রা: নি:সন্দেহে তাদের লিখন ভঙ্গিমা। একটি লেখাজুড়ে থাকে অজস্র কোড, অজস্র সংকেত, যেমন শিশুর জন্য একজোড়া লাল জুতা বা কাফেলার মানুষগুলোর জন্য একটা সরাইখানা। লেখায় এই সব কোডকে এমন ভাবে বিন্যস্ত করতে হয় যাতে সবকিছু জীবন্ত হয়ে কথা বলতে থাকে, অনেক মানে তা থেকে বেরুতে থাকে। কাজটা কিন্তু ঘটতে থাকে একই সঙ্গে পাঠকের প্যারাডিমের ভেতরেও। সুতরাং কাজটা শুধু প্রতীক ব্যবস্থাপনার ভেতরেও কিন্তু নেই। উল্লেখিত দুজন লেখকের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার সাধারণ যে দুজনেই এইসব আর্কেটাইপ ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। দারুণভাবে তারা মানব-পরিস্থিতির রূপায়নে এই সব মিথেমগুলোকে ব্যবহার করেন। এদের লেখাগুলো ভালো লাগবার আরো অনেক কারণ আছে বটে।

দু: কথাসাহিত্যের কোন ধারাকে আপনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং কেন?

রা: কথাসাহিত্যের কোনো ধারায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলে তখন ঐ সাহিত্যটাই গুরুত্বপূর্ণ, ঐ ধারায়ও একটা কন্ট্রিবিউশন হয় বটেই। একটা ধারা সম্মৃদ্ধ হয়ে ওঠে। কিন্তু সাহিত্যের আগে সাহিত্যের কোনো ধারাকে গুরুত্বপূর্ণ বলার কোনো মানে নেই।

দু: সাহিত্যের আগে সাহিত্যের কোনো ধারাকে গুরুত্বপূর্ণ বলার কোনো মানে নেই কেন?

রা: একটা ধারা আগে থেকেই কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে? আমি বললাম, গীতিকা গুরুত্বপূর্ণ ধারা। কিন্তু কেউ একখানা গুরুত্বপূর্ণ গীতিকা কোনোদিন লিখলেন না। তাহলে এই ধারাকে গুরুত্বপূর্ণ বলার কী মানে থাকল? সেজন্য বলছি যে ধারা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যই গুরুত্বপূর্ণ, তা সে যে ধারাতেই পড়ুক।

দু: লেখার বিষয়ের ক্ষেত্রে আপনি কোন জায়গাকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং কেন?

রা: যে পরিস্থিতির ভেতর মানুষ বাস করে, যে ঘটনাবলির ভেতর বা যে প্রকৃতির ভেতর, সব মিলিয়ে যে বাস্তবতা, মানে যাকে বলা যায় 'মানব-পরিস্থিতি', সেটাই গুরুত্বপূর্ণ, লেখার জন্য। কোনোভাবেই তাতে মানবকেন্দ্রিক হায়ারার্কির বিবেচনা নাই। কেন? কারণটা নিহিত আছে হয়তো ঐ ভাবে দেখতে পারার উপর। সবাই একইভাবে কোনো বিষয়কে দেখেন না। অভিজ্ঞতার দুনিয়াও সবার এক রকমের হয় না। ইচ্ছে করলেই এমন কোনো দৃষ্টিকে বেছে নেয়া যায় না, আদতে যেভাবে বাস্তবে আমি জীবনকে দেখিনি।

দু: লেখা নিয়ে আপনি কেমন আশা করেন? তার কতটুকু আপনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন এবং কেন?

রা: হ্যাঁ। লেখার ভেতর একটা প্রত্যাশা অবশ্যই থাকে, বিষয় নিয়ে, উপস্থাপনের ধরন নিয়ে, অভিঘাত তৈরির নতুন কায়দা-কানুন নিয়ে। এগুলা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিশ্চয়ই পাঠক বুঝবেন। আত্মতৃপ্তির কোনো জায়গা নেই আসলে। নেই এই অর্থে যে, একটা লেখা তৈরি হয়ে যাবার পর, প্রত্যাশাটা ডিসপ্লেসড হয়ে যায়। পুরা ঘটনাটাই পুরাতন হয়ে যায়।এইখানে একটা ট্রানসেনডেন্স কাজ করে। বারবার নতুন করে শুরু করার একটা তাগাদা সেইহেতু আসে মনে হয়।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্য আর বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ফারাক কোথায়?

রা: অর্থাৎ ফারাক যে আছে প্রশ্নের ভেতর তা মেনে নেয়া হচ্ছে। মানে ফারাক আছে কিন্তু সেটা ঠিক কোনখানে সেটাই জিজ্ঞাস্য। অবশ্যই ফারাক আছে। কেননা দুইটা দেশ আলাদা, মানুষজনের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পার্থক্য বিস্তর, সেইটা ধরে ধরে দেখানো যায়, গবেষকেরা নিশ্চয়ই কাজটা সূক্ষ্মভাবে করে দেখাতে পারবেন। তো বলার বিষয় এইখানে যে, সাহিত্য আসলে কিভাবে আলাদা হয়। একই দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতির ভেতর থাকা দুইজন সাহিত্যিকও তো একই রকম লেখেন না। তাদের রচিত সাহিত্যে ফারাক তৈরি হয়। তাহলে এইসব ব্যক্তির ভেদের ঊর্ধে আর কিসে সাধারণ পার্থক্য হচ্ছে এই দুই দেশের সাহিত্যে? এখানেও একটা আপ্তধারণা থেকে যাচ্ছে যে দুই দেশের সাহিত্যিকদের নিজেদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। যাতে দুই দেশের সাহিত্যের ঐ সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোর ভেদ করা যায়। তাহলে আগে ঐ সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এটা সাধারণীকরণের ব্যাপার। এইসব সাধারণীকরণ নানা সমস্যার জন্ম দেয় সেইটা না করাই উত্তম কাজ মনে হয়ে।

দু: আপনি কেন নিজেকে মার্কসবাদী দাবি করেন?

রা: কখন আমি নিজেকে মার্কসবাদী দাবি করলাম? মার্কসবাদী হওয়া এক ব্যাপার আর নিজেকে মার্কসবাদী দাবি করা অন্য ব্যাপার। কারো পক্ষে শতভাগ কোনো তত্ত্বের প্রতি অনুগত থাকা অসম্ভব। কেউ যখন বলেন আমি লাকানিয়ান বা আলথুজারিয়ান বা চমস্কিয়ান তখন তিনি আসলে একটা ফেটিশ তৈরি করেন, তার দেখার দৃষ্টিকে কারো সংগে মিলিয়ে নেন। এটা কখনো কখনো একটা রোগে পরিণত হয়। তত্ত্বমুগ্ধতা থেকে এটা তৈরি হতে পারে। আসলে কেউ চাইলে একটা দৃষ্টি দিয়ে দুনিয়াকে দেখতে পারেন, কিন্তু সেই দেখা সংকীর্ণ হতে বাধ্য। এমন কোনো তত্ত্ব নেই যা দিয়ে দুনিয়ার সবকিছুকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায়। যারা এইটা করেন তারা আসলে ভাণ করেন। কিন্তু মার্কস কি সত্যিই কাউকে মার্কসিস্ট হতে বলছিলেন?

দু: সাহিত্য কিভাবে মার্কসবাদী হয়?

রা: সাহিত্যের সঙ্গে সাহিত্যতত্ত্বের সম্পর্কটাকে খোলাসা না করলে এই প্রশ্নের উত্তরে ভুল বুঝবার অবকাশ অনেক বেশি। সাহিত্য আপতিকভাবে কোনো তত্ত্বকে আমলে আনে না। যেভাবে আনে সেটা সমাজ-ইতিহাসের শর্তের সঙ্গে যুক্ত। কোনো তত্ত্বদৃষ্টি যদি বড় কোনো সমাজ-রাজনৈতিক অভিঘাত থেকে জনগণের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় আর সেই জনগণের ভেতর থেকে সাহিত্যিক সেটাকে উপলব্ধি করেন তো সেই তত্ত্বের বীজ সাহিত্যের ফসল ফলাতে পারে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পরাবাস্তববাদী সাহিত্য করার কথা ফরাসি বা জার্মান সাহিত্যিকগণের পক্ষে ভাবা অসম্ভভ ছিল। কোনো আদর্শ অনুসরণ করে যে সাহিত্য হতে পারে না তা নয়, তবে বাস্তবতাকে একটা তত্ত্বদৃষ্টির ভেতর সেঁটে দিতে গেলে সাহিত্যের ভরাডুবি ঘটবার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বাসেরও যুগ-বদল হয়। খ্রীস্টধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রচুর চিত্রকলা হয়েছে, সাহিত্য হয়েছে। মার্কসবাদ নিয়েও হয়েছে, সমাজে ও ইতিহাসে যখন ঐরূপ তত্ত্বদৃষ্টি বিরাজমান ছিল। এখন যদি কেউ মার্কসবাদী সাহিত্য সৃষ্টির চেষ্টা করেন তবে সেটা ক্লিশে হতে বাধ্য। একটা সমাজ, যে সমাজে সাহিত্যিক থাকেন, একটা ইতিহাস সাহিত্যিক নিজে যে ইতিহাস হয়ে উঠতে থাকেন, যদি মার্কসবাদী হয় তবে তার সাহিত্য মার্কসবাদী হবে। বিচ্ছিন্ন ভাবে মার্কসের তত্ত্বদৃষ্টি থেকে সাহিত্য করলে সেটা মার্কসের তত্ত্বের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়বে। তবে সেই সাহিত্যিকের জন্মও হতে পারে যিনি মার্কসের লাইন ধরে মার্কসকে ছাড়িয়ে গিয়ে নতুন সাহিত্য করতে পারেন।

দু: ফিকশনে কাদের লেখাকে আপনি বেশি অনুসরণীয় মনে করেন এবং কেন?

রা: অনুসরণ কথাটাকে সীমিত অর্থে নিচ্ছি; মানে কাদেরকে পাঠ করা জরুরি মনে করি, কাদের লেখাকে সমীহ করি এই অর্থে। আর ফিকশন বলতে গল্প-উপন্যাস। যদিও পার্থক্য করা যায় ফিকশনকে গল্প-উপন্যাস থেকে। বিদেশি লেখকদের মধ্যে অনেকেই আছেন যেমন, লাতিন বলতে আলেহো কার্পেন্তিয়ার, হুয়ান রুলফো, হোর্হে লুই বোর্হেস এবং অবশ্যই গার্সিয়া মার্কেজ। ইউরোপীয় বলতে থমাস মান, হেরমান হেস, গুন্টার গ্রাস, জেমস জয়েস এবং মিলান কুন্ডেরা; আমেরিকানদের মধ্যে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আফ্রিকানদের মধ্যে আমোস টুটুওলা, চিনুয়া আচেবে, রাশান বলতে তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, আন্তন চেখভ। তো এই তালিকা অনেক বড় হতে পারে। আমাদের দেশে আছেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মাহমুদুল হক, শহীদুল জহির প্রমূখ। পশ্চিমবংগের বাঙালি লেখকদের কথা আগে উল্লেখ করছি। কেন এদের লেখাকে অনুসরণীয় মনে হয় তার কারণ এদের রচনা পড়লে ভালো বোধ হয়, মনে হয় জীবন নিয়ে একটা ভালো আত্মীয়তা হয়ে গেল। সাহিত্যের ভেতর দিয়ে মানুষের যৌথ যোগাযোগ এইভাবে হতে পারে।