কবিতা লেখা শুরু করার জন্য সেরকম কোন প্রস্তুতির দরকার নেই: রেজওয়ান তানিমের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Oct 12, 2012 8:19:59 AM

প্রকাশিত বই: মৌনমুখর বেলায়

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

রেজওয়ান তানিম: কবিতা কেন লিখি এই প্রশ্নটা একজন কবি বা লেখকের জন্যে খুব কঠিন একটা প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর কোন লেখক কবির পক্ষেই গ্রহণযোগ্য ভাবে দেয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। ধরে নেই আমি একজন মানুষ, আমার দুটো চোখ, দুটো হাত, পা.... এসব আছে। এখন বেচে থাকতে হলে আমাকে কি করতে হবে? শ্বাস প্রশ্বাসের পরের কাজ খাওয়া ও ঘুম। এদুটো না করলে মানুষ হিসেবে সুস্থ জীবন যাপন করা কঠিন। তেমনি কবির পক্ষেও কবিতা ছাড়া থাকা কঠিন। কবিতা তাকে লিখতেই হবে। যতদিন তার আত্মার মৃত্যু না হবে, কবি কবিতা লিখেই যাবে। কেন লিখবে এ বিষয়ে কি কবি প্রশ্নাতীত জায়গায় যাবার মত উত্তর দিতে পারে ? আমার মনে হয় না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে লেখা যায় কিনা তা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন আছে। সহজ কথায় যদি বলি, ভাল লাগে তাই লিখি। শুধু ভাল লাগাই নয়, যখন লিখি না, তখন এক ধরণের যাতনা বোধ হয়। নিজের মাঝে একধরণের অপরাধ বোধ কাজ করে, মনে হয় ফাকি দিচ্ছি। মোট কথা, লেখাটা এখন অনেকটা রুটিন ওয়ার্ক।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

রেজওয়ান তানিম: এই আরেকটি প্রশ্ন যার উত্তর এক কথায় দেয়া কঠিন।

কবিতা লেখা আসলে কি? কবিতায় কবির বলবার ভাষাটা কেমন হওয়া উচিত? এ বিষয়টি স্পষ্ট হবার আগেই কিংবা নিজের কাছে পরিষ্কার হবার আগেই অনেকে কবিতা লিখছেন, আগামীতেও লিখবেন,সম্ভবত সবাই তাই করেন। নিজেকে কবি হিসেবে চেনা জানার বা উপলব্ধির আগে লিখিত এসব কবিতাকে গণহারে মানহীন বলে দেয়াটা হবে ঘোরতর অন্যায়। এসব কবিতায় হয়ত আবেগের, স্ফূর্তির জায়গাটা অনেক বেশি প্রাধান্য পায়, কবির দর্শন বা ভাব প্রকাশের জায়গাটাতে অপরিপক্বতা থাকে, তবে এই কবিতাগুলোই কিন্তু একজন কবিকে কবিতার পথে হাটতে সাহায্য করে। প্রথম দিকের কবিতা লেখার সেই তীব্র আবেগ, বাঁধভাঙা জোয়ার থিতিয়ে এলেই কবিত্বের সূচনা হয় বলে মনে করি। কবিকে তার দুর্বলতাটুকু জানতে হলে এই জোয়ারের স্তিমিত হবার বিকল্প নেই।

একথা আমি বিশ্বাস করি, কবিতা লেখা শুরু করার জন্য সেরকম কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। দু চারটে কবিতা বাঙ্গালী মাত্রই লেখে। তাই ও জায়গাতে দাড়িয়ে কাউকে কবি বলে যেহেতু ডাকা হবে না, সেহেতু কবিতা লিখতে প্রস্তুতির ও দরকার নেই। কিন্তু যে কবি জানেন তার কবিতার ভাবনায়, শব্দের ভাণ্ডারে, ভাবের প্রকাশ ভঙ্গিতে, কল্পনার চমৎকারিত্বে ভাটার টান লেগেছে তিনি যথাযথ প্রস্তুতির পানে হাঁটবেনই, আজ অথবা কাল। কবিতা লেখার কিংবা কবি হবার প্রস্তুতি একজন চিকিৎসকের কাছাকাছি অনেকটা আজীবন শিখে যেতে হয়, আবার চিকিৎসকের চেয়েও কঠিন এই কারণে যে তরুণদের কাছ থেকেও শিখতে হয়, রবিঠাকুরকেও শিখতে হয়েছিল। কবি যখন উপলব্ধি করবেন তার শেখা দরকার কবিতা তখন আপনা থেকেই কবি হবার দরজাটা খুলে দিলেন। কবিতার পথের সিঁড়ি ওই তো সামনে...

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

রেজওয়ান তানিম: সমসাময়িক অনেকের কবিতাই ভাল লাগে। কবিতাকে আমি আসলে কবির নাম দিয়ে বিচার করিনা। কবিতার বিচারে যেটা ভাল লাগে সেই কবিকেই ভাল লাগে। সেই তালিকা দীর্ঘ। সেই ভাল লাগাটা জানাতে চাই একটু অন্যভাবে। আমি এখানে কোন নাম উল্লেখ করতে চাইনা কেননা নাম বিষয়ক দ্বন্দ্ব (যা কিছুদিন আগে বেশ নগ্ন ভাবেই ধরা দিল) বড্ড তেতো স্বাদের।

অন্তর্জালে এ সময়ের সক্রিয় প্রায় সকল কবিরই দেখা পাওয়া যায়। অর্ন্তজালের বিভিন্ন লেখ্য মাধ্যম ব্লগ, ফেসবুক, নেট ভিত্তিক পত্রিকায় প্রকাশিত অনেকের লেখাই আমার বেশ ভাল লাগে। যেমন ব্লগের মধ্যে সামহয়্যার ব্লগ, শব্দনীড়, ফেসবুকে কবিতা বিষয়ক দুই বাংলার গ্রুপ ক্ষেপচুরিয়াস, ইচ্ছে দেয়াল, বইমেলা, সাহিত্য পত্রিকা-লিপি এসব গ্রুপে যে সব লেখা আসে মোটামুটি অনেক গুলোই ভাল লাগে। এছাড়া আরো বেশ কিছু নেট পত্রিকা ও ব্লগজিন এর লেখা পড়ি যেমন কবিতার কালিমাটি, বাক, মুক্তডানা, অন্য নিষাদ এইসব।

অর্ন্তজালের বাইরে শূন্য এবং এক দশকের কবিদের কবিতা পড়ার ও কবিদের সম্পর্কে জানবার চেষ্টা চলছে। যদিও এই কাজটা বেশ কঠিন, কেননা আমি খুব ঘরকুনো মানুষ

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

রেজওয়ান তানিম: কবিতা খারাপ লাগা শব্দটা ঠিক কবিতার সাথে যায় না।যা সবার না হোক, মোটামুটি কিছু সংখ্যক পাঠকের যারা প্রকৃত অর্থেই কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক, তাদের ভাল লাগলেই আমি মনে করি তা কবিতা। সেই বিবেচনায় তাদের কবিতাই আমার খারাপ লাগে বলব, যারা নিজেদের কবিতাকে কবিতা হিসেবে প্রস্ফুটিত হতে দিচ্ছেন না, প্রতিনিয়ত বৈচিত্র্যহীন লেখা লিখে, ভাবনার জায়গাটিতে অনুরণন না ঘটিয়ে লিখে যাচ্ছেন অবিরাম তাদের কবিতা আমার কাছে ভাল লাগে না। আবার দু চারটা কবিতা লিখেই প্রসার ও বিজ্ঞাপন সর্বস্বতার চোরা স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে কবিতার মূল সুরে নিজেকে ঢোকাতেও একদলের আপত্তি লক্ষ্য করা যায়, তাদের কবিতাও ভাল লাগে না।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

রেজওয়ান তানিম: আমি মনে করি প্রকৃত অর্থে নব্বই এবং শূন্য দশক কোনটা নিয়েই মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। বিশেষ করে শূন্য নিয়ে কথা বলা একেবারেই অনুচিত কাজ হবে কেননা শূন্যের কবিরা কেউ কেউ নিজের কণ্ঠস্বর তৈরি করেছেন কেউ কেউ এখনো খুঁজে ফিরছেন।

যদিও নব্বই বিষয়ে এখনই মোটাদাগে কোন ডিসিশনে আসা উচিত হবে না তথাপি নব্বই নিয়ে কিছুটা বলাই যায়। আমাদের দেশে নব্বই এর প্রধান যে দিকটি আমার কাছে মনে হয় তা হল নব্বই এর কবিরা এস্টাবলিশমেন্ট ও কবিতার প্রকাশের প্রচলিত যে প্রথা বা দৈনিকীয় ধারা সেখান থেকে অনেকাংশে বেড়িয়ে এসে লিটল ম্যাগ আন্দোলনকে বেগবান করেছেন। যদিও আশির দশকে লিটল ম্যাগ আন্দোলন শুরু হয় তথাপি এর বিকাশ ও পরিণতি নব্বই এ একথা বলাই চলে।

কবিতা দৈনিকের নানা বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হয়ে একটা স্বাধীনতা লাভ করল। কবিতা চর্চায় নতুন গতি, নানাবিধ যোগ বোধক উপকারিতা দিয়েছে লিটলম্যাগ এমন আলোচনা চলেছে বিস্তর। কিন্তু তার ফলটা যতটা ইতিবাচক হবার কথা ছিল পাঠক মহলের দিক থেকে সেই খানে আমরা ঘাটতি লক্ষ্য করি। কবিতা ও কবির জন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না কেননা আজ অব্ধি চলে আসছে। লিটল ম্যাগ আন্দোলনের আমি বলব এটা অন্যতম ব্যর্থতা। আমার কথাটা নিয়ে অনেক রকম কথা উঠতে পারে তবে মোটা দাগে এ কথা সত্য। লিটল ম্যাগ প্রকাশে কবি, লেখক ও প্রকাশকের অক্লান্ত পরিশ্রম দেখা গেলেও বিপণনে তার ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যায় নি। এর পেছনে অবশ্য সরকারী বা বেসরকারি কোন পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়াও একটা বড় কারণ।

কবিতার ভাব, ভাষা ও আঙ্গিকের দিক থেকে নব্বই ও শূন্যে আমরা লক্ষ্য করি কবিতার পরিসর ক্রমশ সঙ্কীর্ণ হয়ে আসাটা। কবিতা আরো জমাট, শব্দগত বুননে বেশ ঋদ্ধ এবং আকারে সংক্ষিপ্ত। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবণতাটি আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে বলে মনে হয়। তবে আমার কাছে মনে হয় দীর্ঘ কবিতা কিংবা কাহিনী কাব্যের প্রয়োজন বা আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

রেজওয়ান তানিম: অনেকে বলেন বাংলা ভাগ হয়েছে তো কি হয়েছে আমাদের ভাষা সংস্কৃতি এক। আমি মনে করি অর্থহীন কথা এটা একটা। কাঁটাতারের বেড়া দুটো দেশকে যেমন এফোঁড় ওফোঁড় করে চিরে দিয়ে গেছে তেমনি বাংলা ভাষাটাকেও। কলকাতা আর ঢাকার বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির ভাবনা জগতের ব্যবধান এখন অনেকটা জুড়ে আছে। একটু একটু করে এটা গড়ে উঠেছে। এখন এটা মোটামুটি দৃশ্যমান।

পঞ্চাশের দশকে শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের বাংলা কবিতার সমৃদ্ধি নিয়ে আমি গর্ববোধ করি। ভারতীয় বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক অধ্যায় রাজনীতির টেবিলের বলি দেশভাগ আর বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। কবিতার বেড়ে ওঠার পালে মুক্তিযুদ্ধ দিয়েছে হাওয়া। আর তাই শূন্য হাতে যখন পঞ্চাশের ঢাকাই কবিতার কবিরা শুরু করেন ষাট, সত্তরের কবিরা তাকে মহীরুহে পরিণত করেন। কবিতার ভাষা সৌকর্যে কিংবা উপমা বয়ান, এক্সপেরিমেন্টে ঢাকার কবিতা কলকাতার কবিতার থেকে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই বরং রাজনৈতিক ও সমাজ চেতনার দিক থেকে আমাদের কবিতা আলাদা মাত্রায় উজ্জ্বল যা কলকাতায় আমরা কিছু কম পাই। কবিতায় লোকজ সুর, আত্ম ক্লেদ, নাগরিক যন্ত্রণার প্রকাশ কিংবা যুদ্ধোত্তর বাস্তবতা নিয়ে বাংলাদেশের কবিতা তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

রেজওয়ান তানিম: বিগত পাঁচ সাত বছরের মধ্যে অভাবিত উন্নতি হয়েছে ব্লগের। ব্লগের চাহিদা এখন কত বেশি সেটা বোঝা যায় প্রতিমাসে একটি বা দুটি কমিউনিটি ব্লগ খোলার সংবাদ থেকে। ব্লগের সংখ্যা যত বেড়েছে ব্লগার সংখ্যা সেই হারেই বেড়েছে কিন্তু ভাল মানের লেখকের সংখ্যা বৃদ্ধি উল্টো ক্রমে আছে। মানসম্মত লেখক সংখ্যা বৃদ্ধি এরকম উল্টো ক্রমে কেন গেল ?

আমি মনে করি এর পেছনে লুকিয়ে আছে ব্লগ কনসেপ্টটাই। ব্লগের মূল কাজ আসলে পাঠক তৈরি। লেখক তৈরি নয়, পাঠ করে পাঠ প্রতিক্রিয়ার চর্চা পাঠককেই মননশীল করে, লেখককে প্রস্তুতির সুযোগ কমই দেয় ব্লগ। উল্টো কিছু ক্ষেত্রে তরুণ লেখক যে কিনা কলম চালাতেই শুরু করেছে ব্লগে, অল্প কদিন লেখার ফাকেই বেশ বড় সংখ্যক পাঠক গোষ্ঠী তৈরি তাকে তার লেখার যথাযথ মান সম্পর্কে ধারণা নাও দিতে পারে। লেখকের নিজে থেকে তৈরি হবার জায়গায়, তার নিজের চর্চাকে ঋদ্ধ করবার জায়গাটা আমি মনে করি তার খেরোখাতাতেই হওয়া উচিত।

বাংলা ব্লগ কালচার যখন শুরু হয় সামহোয়্যার ইনের হাত ধরে তখন যারা ব্লগ লিখতেন তারা আগে থেকেই সুপরিচিত এবং মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত লেখক ছিলেন। দেখা গেছে সেই সময়ে তাদের সাথে মতবিনিময় কিংবা ভাবনার অনুরণনে প্রচুর নতুন লেখক তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে মূল ধারার এসব লেখক ব্লগের অব্যাহত সময়ের চাহিদা কিংবা তার গতির সাথে তাল মেলাতে না পেরেই হোক ব্লগ ছাড়লেন। এর পরেই ব্লগের মান পড়ে গেল। তবে এখনো লেখক জন্ম হচ্ছে, তবে তার থেকে পাঠক বাড়ছে অনেক বেশি। আমি মনে করি ব্লগের সবথেকে ইতিবাচক দিক এটাই।ব্লগে যারা লেখেন তাদের সবাইকেই উপলব্ধি করতে হবে, ব্লগে লিখতে এসে তারা পাঠক হিসেবে বাড়তি কিছু পাচ্ছেন সে হল লেখকদের সাথে মতবিনিময় কিংবা লেখাটি সম্পর্কে যুক্তিযুক্ত ভাবনার প্রকাশের সুযোগ।

লেখকের মান উন্নয়নে ব্লগের খুব বেশি কিছু করার নেই কেননা ব্লগের মত খোলা এবং নিজের লেখা তুলে ধরার এরকম সহজ মাধ্যম থেকে প্রকৃত সমালোচনা পেয়ে নিজেকে শোধরানো কঠিন কাজ। সবাই এটা পায়না কেননা বেশির ভাগ ব্লগারই পাঠক, সেই হিসেবে লেখক নন।

তাই বলে ব্লগ কালচারকে আমরা নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেকতে চাই। ব্লগার সংখ্যা বৃদ্ধি ইতিবাচক এ অর্থে যে আদতে ব্লগিং কনসেপ্ট পাঠক বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিগত বছরগুলোতে বইমেলায় দেখা গেছে তরুণ এবং অল্প পরিচিত লেখকদের মধ্যে যারা ব্লগার তাদের বই বিক্রির হার ব্লগার নয় এমন তরুণ লেখকদের তুলনায় কম। সাহিত্যকে ব্লগ যদি আর কিছু নাও দেয় এরকম কিছু পাঠক উপহার দিলেও চলবে। কেননা ঢাকায় কলকাতার মত সাহিত্যের বিশাল পাঠক গোষ্ঠী নেই যা ব্লগ কিছুটা হলেও সৃষ্টি করছে। এই জন্যে আমি মনে করি সব লেখক কবিদেরই ব্লগকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

রেজওয়ান তানিম: ব্লগ কমিউনিটি আসলে কখনোই এ্যাবসলিউট সাহিত্যের স্থান নয়। এ জিনিসটা বাংলাদেশে ও ভারতের বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে যারা সাহিত্য চর্চার মাধ্যম হিসেবে ব্লগকে নিয়েছেন, তাদের দু জায়গার অভিজ্ঞতাই বলে দেয়। বাংলাদেশে ব্লগ কমিউনিটি বা ব্লগ কালচার পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়, কিন্তু কোন সাহিত্য ব্লগ নেই, সে অর্থে- যা শুধু সাহিত্যকে পুঁজি করে বিপুল সংখ্যক পাঠক বা ভিজিটর ধরে রাখতে পেরেছে। ভারতে এত এত সাহিত্যের সমঝদার পাঠক কিন্তু ব্লগ গুলোতে সেরকম পাঠক অংশগ্রহণ নেই। তাই যদি শুধুমাত্র সাহিত্যকে কেন্দ্র করে ব্লগের কথা বিচার করি সেক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত ব্লগ খুব বেশি বলার মত কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। ব্লগীয় সাহিত্য মূলত নানা মাত্রিক ব্লগ কমিউনিটিতেই ভূমিকা রেখেছে এখন অব্ধি বেশি।

আমাদের একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না লিটল ম্যাগ আন্দোলনের ভাবনা পর্যায় থেকে শুরু করে সক্রিয় সংগ্রামের সময় প্রায় অর্ধ শতাব্দী কাল। তাই লিটলম্যাগের যে ব্যাপ্তি ঘটেছে, এত দীর্ঘ কাল পরিক্রমার পরে তার যে স্থান সেখানে ব্লগ পৌছাতে আরো অনেক অপেক্ষা করতে হবে। আর তাই আমি এখনো বলব, দিন শেষে প্রিন্ট মিডিয়ার কোন বিকল্প নেই

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

রেজওয়ান তানিম: সর্বাধিক প্রচলিত দৈনিক গুলোতে লেখার কোয়ালিফিকেশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভবত চুল দাড়ি পাকিয়ে, লাঠি বাগিয়ে হাঁটা। ও কাজ না করতে পারলে বাদ। তাই বর্তমান সাহিত্য চর্চার গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করবার বেলায় ও প্রসঙ্গ বাদ রাখলেও খুব একটা ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। দৈনিকের গোষ্ঠী ও এলিটতন্ত্র ওর মত চলুক, সাহিত্য তার নিজের মত। বর্তমানের দৈনিকের সাহিত্য, সাহিত্যের সামগ্রিকতার প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব সাম্প্রতিক সময়েই হারিয়েছে ভাবলে বিরাট ভুল হবে, আসলে সে তা হারিয়েছে আশির দশকেই। ওই ভগ্নদশা খেকে উত্তরণের চেষ্টা দু চারটা দৈনিক বাদে বেশিরভাগে সে রকম লক্ষণীয় নয়।