পুরস্কারে যখন অর্থ যুক্ত থাকে, তখন তো বস্তুগত লাভের কথা ফেলে দেয়া যায় না: কবি শুভাশিস সিনহার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 31, 2012 6:34:38 AM

দুপুর মিত্র: ত্রিপুরার কবিতার তুলনায় বাংলাদেশের কবিতা কেমন?

শুভাশিস সিনহা: ত্রিপুরার বা আসামের বাংলা কবিতার সাথে পার্থক্য খুব বেশি নেই, তবে সেখানকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার কবিতার সাথে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কবিতা সেখানে কেবল কবির শিল্পাকাঙ্খার সাথেই শুধু যুক্ত নয়, তার একটা সাংস্কৃতিক অস্তিত্বেরও অংশ, একটা সামষ্টিক বেদনাবোধ রয়েছে সে কবিতার ভেতরে।

দু: আপনি দীর্ঘদিন ধরে কবিতা ও নাটকে জড়িত। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

শু: কবিতা ব্যক্তিক থেকে সামষ্টিক বোধে যেতে চায়, আর নাটক চায় সামষ্টিক থেকে ব্যক্তিক বোধে পৌঁছুতে।

দু: বাংলা কবিতা অতিমাত্রায় চর্চিত হবার পরও এর তেমন কোনও বিকাশ ঘটেনি। আপনি কি তাই মনে করেন এবং কেন?

শু: বিকাশ নিদ্বির্ধাবিভক্ত ব্যাপার নয়। তাই হুট করে বলা হয়তো সম্ভব না। তারপরও বলা যায়, শিল্পমাধ্যম হিসেবে এখনো বাংলা কবিতায় টোটালিটির একটা কাঠামো গড়ে ওঠেনি, অর্থাৎ ভাষার পরিচয়টা উঠিয়ে দিলে বলতে পারা যে এটাই বাংলার এখনকার কবিতা, যা এভাবে বিকশিত হয়েছে...

দু: ঢাকার সাহিত্য মফস্বলের সাহিত্যের ওপর অতিমাত্রিক চাপ প্রয়োগ করছে। বা ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটছে। আপনার কি এরকম মনে হয়? বা হলে কেন?

শু: প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের সময় বিষয়টা সেরকম হয়তো না, তবে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আকাঙ্খার মধ্যকার একটা স্নায়ুযুদ্ধ আছে বলে মনে হয়।

দু: আপনি কাদের কবিতাকে বেশি অনুসরণ করেন এবং কেন?

শু: সজ্ঞানে করি বলে মনে হয় না, অ-জ্ঞানে করে থাকলে সেটা তো আর আমি বলতে পারব না ! না কি?

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং কেন?

শু: অনেকেরই। কিন্তু এই 'সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায় না কওয়া সহজে।'

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনি বাজে কবিতা মনে করেন এবং কেন?

শু: অনেকেরই। আবারও এই 'সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায় না কওয়া সহজে।'

দু: ভাল কবিতা লিখতে চাইলে আপনি আমাকে কি করতে বলবেন?

শু: পরিবর্তনের মধ্যে- চিন্তার, কল্পনার ও নির্মাণের ব্যাপক স্বাধীনতা ; আবার তারই সাথে কবিতায় স্মার্টনেসের আড়ালে কাব্যিক আশা ও পাকাপোক্ত হয়েছে। ভাল কবিতা পড়া, মুগ্ধ ও উদ্বুদ্ধ হওয়া, এবং পরণে সব ভুলে গিয়ে একদম নিজের মতো করে লিখতে বসা।

দু: আদিবাসী মিথ বা অন্যান্য সাহিত্য উপাদান বাংলা সাহিত্যে অনুপ্রবেশ করেনি এখনও তেমন। আপনার কি এরকম মনে হয়? হলে কেন?

শু: যেটুকু প্রসঙ্গ বা অনুষঙ্গ এসেছে, সেটা কেবল নির্মাণের উপাদান হিসেবে, সৃষ্টির প্রাণশক্তি হিসেবে নয়। শিল্প-সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমেই এ- নিয়ে বেশি কাজ হয়েছে মনে করি।

দু: আপনি খুব অল্প সময়েই অনেকগুলো সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার কি সাহিত্যকে কি কিছু দেয়?

শু: খুব বেশি নয়। সাহিত্য আর থিয়েটারে সমানভাবে যুক্ত আছি, আর বাংলা ও আমার মাতৃভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী - দুভাষায় লিখি বলে সেরকমটা হয়ে থাকতে পারে। পুরস্কারের প্রভাব বিষয়ক রসায়নটা খানিক দুরূহ। এ নিয়ে একদমই ভাবতে বসিনি। তবে পুরস্কারে যখন অর্থ যুক্ত থাকে, তখন তো বস্তুগত লাভের কথা ফেলে দেয়া যায় না।

দু: নাটকে বাংলাদেশ অনেক কিছু করতে পেরেছে। আপনার কি তাই মনে হয়? হলে কেন? না হলে কেন?

শু: মঞ্চনাটক বাংলাদেশের অসামান্য সৃষ্টিশস্যে ভরপুর শিল্পের উঠান। বাংলাদেশের মানুষ এখনও দ্বিমাত্রিক মনুষ্যমায়ার চেয়ে ত্রিমাত্রিক কিংবা চতুর্মাত্রিক জীবন্ত মানুষের বাস্তবতা ও সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে ও তাতে আলোড়িত হতে চায় বলে সেই উঠানে গিয়ে বসে।