বাংলা ভাষা চর্চার দিক থেকে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে: সুব্রত পালের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 17, 2012 8:52:27 AM

কবিতায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

সুব্রত পাল: সাদা পাতার ওপর এলেমেলো অক্ষরগুলো আমাকে টানে। না লিখে থাকতে পারি না। প্রাণের আনন্দ, দু:খ, আবেগ, এগুলো মাঝে মাঝে এত বেশি নাড়া দেয়, যে সেগুলো ভাষার আকারে প্রকাশের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। লেখার পর প্রাণ শান্ত হয়।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

সু: যে ভাষায় তিনি লিখছেন, সে ভাষার প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। ভাষার সম্পূর্ণ দখল থাকতে হবে। শব্দ চয়নের প্রতি যত্নবান হতে হবে। ছন্দ জ্ঞান থাকা জরুরি এবং ছন্দ জেনে, ছন্দ ভাঙ্গা সব থেকে ভাল। এছাড়া যে বিষয়ের কবিতা সেই বিষয়টিকে আত্মস্থ করতে হবে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

সু: অনেকের লেখাই ভাল লাগে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, জয় গোস্বামী, কুষ্ণা বসু এর মধ্যে অন্যতম। প্রত্যেকের লেখার আলাদা ধরণ আছে। কোনও অনামী কবির কাব্যগুণ আছে এমন লেখাও ভাল লাগে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

সু: আমি কারও নাম উল্লেখ করতে চাই না। অনেক লেখা নিশ্চয়ই তেমন ভাল লাগে না। বিশেষ করে কিছু লেখায় যখন দেখি, কয়েকটি লাইন আসাধারণ, কিন্তু সেই টান গোটা কবিতায় নেই। তখন মন খারাপ হয়ে যায়।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

সু: দুই দশকের মূল্যায়ন করার মত পান্ডিত্য আমার নেই। তবে এটুকু বলতে পারি যে, ভাষা এবং গঠনগত অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে কবিরা আগের থেকে অনেক বেশি সাহসী হয়েছেন। ছন্দ অনেকটাই ফিরে এসেছে। চিত্রকল্প ব্যবহারে, মধ্যবিত্ত জীবন অনেক বেশি ওঠে এসেছে, যা কবিতাকে সাধারণ জনমানসে পৌঁছে দিয়েছে।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

সু: দুই বংলা মনে-প্রাণে এক। ভৌগোলিক সীমারেখায় কখনও তাকে আটকানো যায় না। আমরা ভাষায় এক, সংস্কৃতিতে এক। বাংলাদেশ নিয়ে একি স্বপ্ন দেখি। দুই দেশের কবিতার চরিত্রের কোনও ফারাক আঝে বলে মনে হয় না। বরং বাংলা ভাষা চর্চার দিক থেকে দেখতে গেলে, বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

সু: নিশ্চয়ই। আধুনিক তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্লগ অনেক বেশি আকর্ষণীয়। যদিও ইন্টারনেট ব্যবহারকারি ছাড়া অন্যদের কাছে ব্লগের কোনও গুরুত্ব নেই। তবে সুখের কথা, ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে, ব্লগ আগামী দিনে বেশি সঙখ্যক পাঠকের কাছে সাহিত্য পৌঁতে দিতে পারবে।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

সু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমার মনে হয়। লিটলম্যাগের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সেই কারণেই তার নামের সাথে লিটল কথাটা যুক্ত। ব্লগের সে সীমাবদ্ধতা নেই। ব্লগ অনেক বেশি আন্তরিক। আমি আমার নিজের ব্লগেই বেশি লিখি। ফলে আমি ব্লগের পক্ষেই কথা বলব।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

সু: এখনও বেশিরভাগ পাঠক দৈনিক সাহিত্যই পড়েন। প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকরাও দৈনিকেই লিখেন। দৈনিক সাহিত্যের অবদান ও গুরুত্ব চিরকালীন। তাকে বাদ দিয়ে সাহিত্যের ষোলকলা হবে না। ব্লগ একটা সংযোজন মাত্র।

দু: নিজেকে আন্যের লেখা থেকে কিভাবে পৃথক করেন?

সু: আমার লেখা সম্পর্কে মতামত আমার পাঠকেরাই ভাল দিতে পারবেন যে তা অন্যের থেকে কতখানি পৃথক বা আদৌ পৃথক কিনা। তবে আমি সহজ-সরল লিখতে চেষ্টা করি। দুর্বোধ্য লেখা আমি লিখতে পারি না। বিশেষ করে আমি কবিতা তাদের জন্যে লিখি, যারা আধুনিক কবিতা সম্পর্কে উদাসীন, আধুনিক কবিতার প্রতি যাদের অনীহা। কতটা সফল সেটা আমার পাঠকেরাই বলবেন।