লিটলম্যাগাজিনের মধ্যে এক ধরণের গ্রুপিং বন্ধুকৃত্যের প্রবণতা থাকে, ব্লগ উদার: শোয়াইব জিবরানের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Oct 30, 2013 9:27:56 AM

প্রকাশিত বই:

কাঠ চেরাইয়ের শব্দ (১৯৯৬), বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

দুঃখ ছেপে দিচ্ছে প্রেস (২০০৩), মঙ্গলসন্ধ্যা, ঢাকা।

কমলকুমার মজুমদারের উপন্যাসের করণকৌশল (২০০৯), বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

উঠানগুচ্ছ উঠান জুড়ে (২০১০), শুদ্ধস্বর, ঢাকা।

কমলকুমার চরিতম্ (২০১০), শুদ্ধস্বর, ঢাকা।

বিষয়ঃ কবিতা কথা ও শিক্ষা (২০১১), ধ্রুবপদ, ঢাকা।

বার্ড এন্ড ডাস্টস ফ্রম দ্য ইস্ট (২০০৯), স্বাতন্ত্র্য, ঢাকা।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

শোয়াইব জিবরান: একখণ্ড গু- কে বা একটি গোলাপকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি কেন গন্ধ ছড়াও? তাহলে কী উত্তর পাওয়া যাবে! আসলে গন্ধ বা সুগন্ধ ছড়ানো তাদের উভয়েরই সত্তার অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ্। এটি না করে তারা পারবে না। লেখা তেমনি আমার সত্তার অংশ। না লিখে পারবো না। আর আমি দুটি ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত। এর একটি হচ্ছে এ্যাজমা আর অন্যটি হচ্ছে লেখারোগ। এ্যাজমা দম বন্ধ করা ভয়াবহ অসুখ। তবে এটি সাধারণত যখন-তখন হয় না। সাধারণত শীতকালে আক্রান্ত হই। তাই একটা প্রস্তুতি থাকে। তবে লেখা রোগটি যখন-তখন দেখা দেয়। প্রস্ততি সব সময় থাকে না। মাঝে মাঝে এ সমযে বিব্রতকর অবস্থায়। ফেলে। চুমু খাচ্ছি তো কবিতার চরণ মনে এলো। কী ভয়াবহ। এ রোগের সাথে সিফিলিস রোগের মিল আছে। মাঝে মাঝে মনে হয় সেরে গেছে। লেখারোগ নেই। ভাল আছি। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার দেখা দেয়। বড় যন্ত্রণার মধ্যে আছি রে ভাই।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

শোয়াইব জিবরান: প্রথমত সহজেই আক্রান্ত হতে পারে এমন একটি সংবেদনশীল মন। আর পাঠ। পাঠের কোন বিকল্প নেই। বিচিত্র বিষয়ে পড়াশুনা। চটি থেকে মহাভারত। কবিতা থেকে কসমোলজি।যার পড়ার বিষয় যত বিচিত্র হবে তার লেখা ততো ভাল মানের হবে। আর তার সময় পর্য়ন্ত লেখালেখি কতদূর গেছে সে বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার। শব্দের ওজন, ভাষার গাঁথুনি সম্পর্কে স্থপতির ধারণা থাকতে হবে। ছন্দজ্ঞান থাকা দরকার। ওটা শব্দ সংস্থানবিদ্যারই অঙ্গ।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

শোয়াইব জিবরান: অনেকের কবিতাকে ভাল লাগে। নাম বলে অন্যদের মন খারাপ করে দিতে চাই না। তবে ধারা বললে বোঝা যাবে। সাম্প্রতিক কবিতার মধ্যে দুধরণের প্রবণতা স্পষ্ট। একটি ধারা খুবই বকোয়াজ প্রবণ। ঘোষণা প্রবণ। কবিতার নামে বাণী প্রদান, ঘোষণাপ্রদান, বোম্বাস্টিক কথাবার্তা বলা। আহা উহু ধরণের কবিতা। এগুলো আসলে এসেছে নজরুল, সুকান্ত, নির্মলেন্দুগুণবাহিত হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এ কবিদের সে পরিমাণ প্রতিভা নেই। তবে খুব হাততালি, ফেসবুকে লাইক পাচ্ছে। হিট করছেন। আর আরেক ধরণের কবিতা আছে খুব অন্তর্মুখি। মৃদু। জীবনানন্দধারাবাহিত। দ্বিতীয়ধারার কবিতাগুলোকে আমার ভাল লাগে। সম্প্রতি জহির হাসানের কবিতাকে ভাল লাগছে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

শোয়াইব জিবরান: উপরে বলা প্রথম ধারার কবি বা হিটকবিকূলকে। কারণটিও ব্যাখ্যা করেছি।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

শোয়াইব জিবরান: সত্তর দশকে বাংলা কবিতায় তারল্যের একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। দু একটি ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে বলছি। আশির দশকে তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা প্রচেষ্টা ছিল। নব্বই সে প্রচেষ্ঠাকেই উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। শূন্যদশক মূলক সে ধারাকে বেগবান করেছে। নব্বইতে কবিতাকে অন্তর্মুখী করতে গিয়ে খানিকটা বিমূর্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শূন্যদশকে কবিতায় সে প্রবণতাগুলো কে তুঙ্গ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দশকের কবিরা এখান থেকে না সরলে চরায় আটকা পড়তে পারেন।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

শোয়াইব জিবরান: ফারাক অনেক জায়গায়। পশ্চিমবঙ্গের কবিতার ভাষা শুষ্ক। খড়িওঠা মহিষের চামড়ার মতো। নাগরিক। বাংলাদেশের কবিতার ভাষা প্রাণবন্ত। অষ্ঠাদশী তরুণীর মতো। আর জলমাটি গ্রাম্যতা ভেজা। বেশিকথা বলবো না। দাদারা আর তাগো এদেশীয় ধামাধরারা রাগ করিবেন।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

শোয়াইব জিবরান: আমি যখন ব্লগে বা ফেসবুকে লিখি একধরণের স্নায়ুবিক চাপ অনুভব করি। অস্থিরতা থাকে। দ্রুততা থাকে। বৃহৎ আইডিয়ার বা বড় লেখা সেখানে দিতে পারি না বা দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি না। অন্যদের লেখার মধ্যেও এ প্রবণতাগুলোকে লক্ষ্য করি।এখন দিচ্ছে কী দিচ্ছে না এটি বলার সময় এখনও আসেনি। ব্লগের একদশক এখনও যায়নি। হয়ত এগুলো থেকে অনেক লেখা টিকে থাকবে। হয়ত থাকবে না। ফতোয়া দেওয়ার সময় এখনও হয়নি।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

শোয়াইব জিবরান: ব্লগকে লিটলম্যাগাজিনের প্রতিপক্ষ করে তোলার মানে নেই। একটি অন্যটির পরিপূরক। লিটলম্যাগাজিনের মধ্যে একধরণের গ্রুপিং বন্ধুকৃত্যের প্রবণতা থাকে। ব্লগ এক্ষেত্রে উদার। ইচ্ছে হলে যে কেউ লিখতে পারে। সম্পাদনা নেই। একবারে সহি আদি ও আসলরূপের লেখা। আর সেখানে যেহেতু পাঠক প্রতিক্রিয়া বা দ্রুত পাওয়া যায় সে কারণে লেখা সম্পর্কে একটা মূল্যায়ন সরাসরি থাকে। আমি জাহাঙ্গীরনগর থেকে শব্দপাঠ বের করতাম ১৯৯২- ৯৩ সালের দিকে। প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি এখন। তবে লিটলম্যাগাজিনের গুরুত্ব কথনও কমবে না। বরং ব্লগগুলো লিটলম্যাগাজিনের লেখার একটি ভাল উৎস হতে পারে।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

শোয়াইব জিবরান: দৈনিকের সাহিত্যপাতা আমার পড়া হয় না। বাসায় বউ প্রথম আলো রাখে। সাহিত্যপাতাটি জঘন্য।