প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা করলেই একটি লিটলম্যাগ মহৎ হয়ে যাবে বিশ্বাস করি না: অনার্য তাপসের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 10, 2014 6:25:52 PM

প্রকাশিত বই:  ঢাকাই জামদানী: এ কনসাইস হিস্টরি ইনক্লুডিং ১০১ ডিজাইনমোটিফ (শাওন আকন্দ ও অনার্য তাপস )।

 

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?

অনার্য তাপস:আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যে লিটলম্যাগ জিনিসটা নেই। আছে বন্ধুর চাকরিসূত্রে আমার পরিচিত একটি স্থানীয় পত্রিকায় কবিতা ছাপানোর সুখময় স্মৃতি। তবে আমার মনে হয়,লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়টি যার যার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। লিটলম্যাগ কে/কারা করছে তার/তাদের বিচার বিবেচনার উপর বিষয়টা খানিক নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা করলেই একটি লিটলম্যাগ মহৎ হয়ে যাবে- বিভিন্ন ঘটনাপরম্পরার নিরিখে এটা আমি বিশ্বাস করি না। আবার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অযাচিত সুযোগ নেওয়াকেও আমি ঘৃণা করি।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

অনার্য তাপস: সময়,অভিজ্ঞতা এবং উপলদ্ধির মুখোমুখি হওয়া।

দুপুর মিত্র: কবিতা কি?

অনার্য তাপস: সময়,অভিজ্ঞতা এবং উপলদ্ধির বয়ান।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

অনার্য তাপস: বহুমুখি। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের কথা। উদার যৌনতা আর উত্তরাধুনিকতার কথা। কেউ কেউ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরোধীতার কথাও বলতে চান, তবে সেটা যথেষ্ঠ বলিষ্ঠ বলে মনে হয় না। এটাও কিন্তু একধরণের প্রবণতা। বিষয়বস্তু কিংবা উপমা হিসেবে লোকজসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহারের প্রতি অনীহা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা। লোকজসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার না করা আর ব্যবহারের প্রতি অনীহা দুটো আলাদা জিনিস।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

অনার্য তাপস: হয়তো করে, হয়তো করে না। দুটোই। একটা আন্দোলন হলেই সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে যাবে এটা ভাবা যায় না। আবার কিছুটা পরিবর্তন যে হবে না সেটাও ভাবা যায় না। আন্দোলনের সাথে কারা জড়িত, কোন সময়ে আন্দোলনটা হচ্ছে, এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটটা কী সেটার উপরও নির্ভর করে অনেককিছু। অবিভক্ত ভারতে একভাবে, পাকিস্তান আমলে একভাবে আবার স্বাধীন বাংলাদেশে একভাবে  সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খেয়াল করুন যে পাকিস্তান আমলের সাহিত্য আন্দোলন কবিতাকে বিভিন্নভাবে নাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই কালপর্বে আমরা বাংলা, বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কবিতা পাই। আবার এর ঠিক উল্টো মনোভাবের কবিতাও খুঁজলে পাওয়া যাবে এই সময়ে।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

অনার্য তাপস: এর কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে আমি কবিতা তখনই লিখি যখন মনে হয় এখন একটা কবিতা লেখার সময় হয়েছে। সেটা একটা কবিতা লেখার একদিন পরেও হতে পারে আবার একবছর পরেও হতে পারে। কোন ঠিক নেই। সময় এবং সমসাময়িক অভিজ্ঞতা ঠিক করে দেয় কোন ধরনের কবিতা লিখব, কিভাবে লিখব।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

অনার্য তাপস: দেখুন, বিশ্বকবিতা নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে না। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়তই নানাধরনের কবিতা লেখা হচ্ছে যার কথা আমরা জানিই না। দুএকটি ভাষায় খুব অল্প পরিমান কিংবা বিখ্যাত দু একজন কবির বিখ্যাত কিছু কবিতার বই পড়ে বিশ্বকবিতা বোঝা যায় না। তাই এটা নিয়ে আলোচনাও আমার কাছে বাতুলতা মনে হয়।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

অনার্য তাপস: বেশিরভাগ বাঙ্গালী ছেলের মতো প্রথম যৌবনে, প্রেম করতে চাওয়ার বাসনা থেকে।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

অনার্য তাপস: আগেই বলেছি কবিতা আমার কাছে সময়,অভিজ্ঞতা এবং উপলদ্ধির বয়ান। এই সময়, অভিজ্ঞতা এবং উপলদ্ধিকে ধরে রাখতেই কবিতা লিখি। এটা পাঠকের জন্য যতটা, নিজের জন্য তার চাইতে বেশি।

দুপুর মিত্র: কবিতা লিখতে আপনার কতটুকু সময় লাগে?

অনার্য তাপস: কখনো এক বসাতেই হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় আমি সময় নিয়ে কবিতা লিখি। একটা খসড়া দাঁড় করিয়ে রাখি। তারপর সেটাকে কাঁটাছেড়া করি। শব্দ বদলাই। লাইন বদলাই। মানে কবিতাটাকে চূড়ান্ত করার জন্যে আমি বেশি সময় নেই।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?

অনার্য তাপস: আমার জীবনযাপন থেকে,আমার চারপাশের মানুষের বেঁচে থাকার মধ্য থেকে। মানুষের জীবন এবং তার যাপন প্রণালী সাহিত্যের সব শাখাকেই সমৃদ্ধ করেছে। কবিতাকেও। আর, সব মহান কবির মতো আমিও জীবনের ভীষণ শক্তির বাইরে নই। আমার জীবনযাপন প্রণালী সরল বলেই জীবন প্রবলভাবে আমার কবিতার অংশ।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার বলে মনে করেন?

অনার্য তাপস: কবিতা লেখা অপার্থীব আনন্দের বিষয়। আমি মনে করি শুধু কবিতা নয়,সাহিত্যের যেকোন শাখা নিয়ে কাজ করার জন্য একজন মানুষের মননে বিদগ্ধ হওয়া প্রয়োজন। উপলব্ধির কাছে নিবেদিত হওয়া প্রয়োজন। প্রচুর তথ্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ নয়,উপলব্ধিটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি উপলব্ধি করার পক্ষে, অভিজ্ঞতা অর্জন করার পক্ষে। আপনি যদি উপলব্ধির মধ্যে দিয়ে যেতে থাকেন, একটা বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে যেতে থাকেন; একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা আপনার আসতে বাধ্য।