অতি আধুনিক কবিদের কবিতা আমাকে টানে না: কৌশিক ভাদুড়ীর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Aug 27, 2014 3:41:52 AM

 

প্রকাশিত বই: এরকাগ্রাফ

 

দুপুর মিত্র: অলস দুপুর ওয়েবম্যাগে প্রকাশের জন্য বেশ কিছু প্রশ্ন আমি কৌশিক ভাদুড়ীর কাছে পাঠাই। উনি ঠিক প্রচলিত কায়দায় উত্তর না দিয়ে একটু ভিন্নভাবেই আলাপটা সেরে নেন। ভিন্নতা আমাদের বেশ ভালভাবেই আকৃষ্ট করে যদি সেখানটায় ভাবার মত, জানার মত কিছু একটা থাকে। উনি প্রথমে এসব ছাপাতে রাজি হন নি। বেশকিছু দিন আলাপটা গোপনেই পড়ে ছিল। পরে আবার হঠাৎ তার কাছে প্রকাশের আগ্রহ দেখালে উনি রাজি হয়ে যান। এখানে হুবুহু তার পাঠানো আলাপটাই প্রকাশ করা হল। পড়ুন কৌশিক ভাদুড়ীর আলাপ।

 

কৌশিক ভাদুড়ী: প্রিয় দুপুরবাবু প্রশ্নমালা পাঠালেন! আমিও সম্মানিত। কিন্তু প্রসঙ্গ হোলো আমি কী ভাবে ততটা গুরুত্বের অধিকারী হতে পারি? হাতে গোনা কয়েকটি ওয়েবম্যাগে হাতে গোনা কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। ছাপা কাগজের কাছে এখনও পৌঁছইনি। ৫২ বছর বয়সের আগে কোনো রকম পত্রিকাতেই লেখা পাঠাইনি। কিছুটা পরীক্ষামূলক কিছুটা আগ্রহের বশে বাং ১৪১৮-এ পরবাস ওয়েবম্যাগে লেখা পাঠাই ও ক্রমে সে লেখা প্রকাশিত হয়, ব্যাস এইটুকুই। পেশাগত ভাবে আমি ভারী শিল্পের শ্রমজীবী মানুষ, যাকে বলে ব্লু-কলার বা সয়েলড-কলার। কবিতাপত্র দেশ পত্রিকায় আগে পড়তাম, আজ থেকে ৩০/৩৫ বছর আগে হাওড়ায় বাড়িতে থাকতে, মিথ্যে বলব না, দু একটা কবিতার বই-ও পড়েছি।বুঝতেই পারছেন যেটুকু পড়েছি তাতে পড়েছি বলা চলে না। অতি আধুনিক কবিদের কবিতা আমাকে টানে না, বরং বাংলাদেশের তরুণ কবিদের লেখা ভালো লাগে। ওখানে অনেকটামাটির গন্ধ (down to earth) পাই। পশ্চিমবঙ্গের কবিতা ভীষণ ভাবে কলকাতাকেন্দ্রিক, মেট্রোপলিটান। কবিতার জগতে একাডেমিক্স যাপনশৈলীর আদি প্রভাব-প্রাধান্যের সাথে সাথে চলচিত্র ও নাটকের কারিগরিগত চিন্তা ভাবনাও কবিতার বিষয় হয়ে উঠছে। কবিতার জগতে পিস্যান্টরা চিরকালই কোনঠাসা, তাঁদের কবিতাকে লোক-কাব্যের বেশি স্বীকৃতি কখনই মেলেনি। তবে স্টেশন মাস্টার, পোস্টমাস্টার, থানার দারোগা এঁরা প্রথাগত ভাষা শিক্ষার সুবাদে নিজেদের কবিতাকে কিছুটা পদবাচ্য করতে পেরেছিলেন, এখন বোধ হয় সে আশাও পরাহত। ওনাদের কথা নাকি সব লেখা হয়ে গেছে বিগততে! সুতরাং ওনাদের কবিতা থাকা উচিত নয়, অনুভূতি শূন্য না হলেও সে অনুভবের প্রকাশ আর কখনই নন্দনের কুঠুরিতে বসবাস যোগ্য নয়! আর কারখানার কর্মচারী মধ্যমান সম্প্রদায়, তাঁরা ভারতের একূল ওকূল কোনো কূলেরই নন, না ট্রেড-ইয়ুনিয়ন স্বীকৃত দুটো স্লোগান দিয়ে কবিতার বোঝাটা হালকা করতে পারেন, না বড়বড় ম্যানেজার পদভুক্ত হয়ে নবাবি চলে দুটো কথা বলে কাব্য-ফুরফুরে হতে পারেন। বাংলাদেশের ব্যাপারটা আঁচ করি একই, অবিশ্যি আপনি ভালো বলতে পারেন! সুতরাং বুঝতেই পারছেন, আপনার নিক্ষিপ্ত রশ্মি একটি কৃষ্ণগহ্বরে আপতিত, প্রতিফলন আর কতটা উজ্জ্বল হতে পারে! তদুপরি আমি উড়িষ্যার এক প্রত্যন্তেথাকি....কিছু কিছু ভালো লাগার ওড়িয়া কবিতা অনুবাদ করে এক-আধটা ফেসবুকেই ছেড়ে দিই, আর কোথায় দেব?! বাংলাদেশের সর্বশ্রী মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, অঞ্জন আচার্য আমার ভালো লাগে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় আমাকে যতটা ছায়াদৃত করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নয়। সর্বোপরি জীবনান্দ বাঙালির কাছে এবং স্বম্ভবত সংবেদনশীল জগতের সবমানুষের কাছে অপরিহার্য। জয় গোস্বামী ভালো লাগে, মনে পড়ছে ওনার প্রভাবেই লিখেছিলাম: 'ফ্যালানির মা ঘা-এর আগুন ঢাকবে সে কোন ছাই/ ফ্যালানির মা ফুরিয়ে যেতেও রাস্তা জানা চাই।' আসলে সংবেদনশীল মন সামান্য তালিম পেলে খেউর না করে যেটা করে আমার লেখা তাই, বিলাপ, ক্যাথার্সিস যাই বলেন। সেটা কবিতা বাচ্য কিনা পাঠকের বিচার্য রচয়িতার নয়। দেখেছেন কি পাগল ছাড়া কেউ দেওয়াল মুখো হয়ে বকবক করে? একটা এড্রেসি দরকার পড়ে, আমার ক্ষেত্রে সেই এড্রেসি-টাই অন্তর্জাল মাধ্যম। অনেক শুভেচ্ছা রাখলাম। দয়া করে এই প্রলাপগুলো ছাপবেন না!.... এতটা আড়াল হওয়ার চেষ্ট মোটেই ভাল নয়।.... দুপুর বাবু সত্যি কথাই বলেছি। এর বেশি কিছু দেওয়ার সামর্থ বা শক্তি কোনটাই আমার নেই। আপনারা সহ্য করেন, এটাই আমার প্রাপ্তি!....