বাক্যের গভীরে নতুন-নতুন চিন্তা-চেতনার প্রবেশ আমাকে আকৃষ্ট করে: শ্যামল চন্দ্র নাথের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Aug 7, 2012 5:54:34 AM

দুপুর মিত্র: গল্প লিখেন কেন?

শ্যামল চন্দ্র নাথ: মনের আলো-আধাঁরকে বুঝতে, মানবতা, বাস্তবতা এবং সর্বপোরি সাহিত্য প্রেম থেকে গল্প লিখি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব আনিসুল হক থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে আমি সাহিত্য অঙ্গনের দিকে ঝুঁকি। এবং সেই থেকেই ধরে নেই যে আমি কবি হব, লেখক হব। যদি লেখার ভিতর দিয়ে সাহিত্যকে এবং দেশকে কিছু দিতে পারি তা হলে আমি প্রীত হব।

দু: গল্প লিখতে আপনি কাদেরকে অনুসরণ করেন এবং কেন?

শ্যা: গল্পটা নিজস্ব একটা বোধের ব্যাপার। তারপরও বলবো অনুসরণ নয়। আমি বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কথা বলবো। যাদের গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হই। অবশ্যই বিষয় বিন্যাস এবং আঙ্গিকের ক্ষেত্রে এদের আলাদা করা যায়। এক্ষেত্রে মানিক বন্দোপাধ্যায় বাস্তবতাবর্জিত, কল্পনাপ্রসূত সাহিত্যের ধারা থেকে সরে এসে সামাজিক বাস্তবতার নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। এর পরে ষাটের দশকে হাসান আজিজুল হক এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথা অবশ্যই স্মরণাতীত। কারণ তাদের গল্পে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাতচল্লিশের দেশভাগ, বায়ান্ন, মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সব ইতিহাস আবেগ বর্জিত ভাষায় নির্বিকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

দু: সমসাময়িক কাদের গল্প আপনার সবচেয়ে ভাল লাগে এবং কেন?

শ্যা: মানুষের ভালোলাগা কারণে-অকারণে বদলায়। তবে আমার ভালোলাগা গল্পকাররা হলেন- হাসান আজিজুল হক, জন আপডাইক, সালমান রুশদি, টম উলফ এবং চোখ পালাহনিউক। কেন ভালো লাগে এটা বলা আমার কাছে কঠিনই মনে হয়। কারণ আপনি যখন কাউকে ভালোবাসবেন বা তাঁর লেখা ভালোবাসবেন তখন কেন ভালোবাসলেন বলা কঠিন। সত্যি বলতে কি আমি ঊনাদের লেখায় চমকপ্রদ ঘটনা প্রবাহ, গল্পের ভিতরে নিয়ে যাওয়া এবং বাক্যের গভীরে নতুন-নতুন চিন্তা-চেতনার প্রবেশ আমাকে আকৃষ্ট করে।

দু: সমসাময়িক কাদের গল্পকে আপনার বাজে মনে হয় এবং কেন?

শ্যা: এটা বলা কঠিন। কারণ কারো লেখা আমার ভাল নাও লাগতে পারে তার মানে এই না যে সে বাজে লেখক। আমার নিজের লেখা ও আমার কাছে কোন সময় বাজে মনে হতে পারে।

দু: আমরা প্রচুর পরিমাণ রাশিয়ান ফিকশন পড়ার পরও যাদু বাস্তবতার পৃথিবীতে গল্পকে নিয়ে গেছি এটা কেন?

শ্যা: যাদু বাস্তবতার পথ ধরে সব গল্প সব সময় যায় না। বাস্তব-বাস্তবই, বাস্তবতাকে আড়াল করে যাদু বাস্তবতা কি দিতে পারে সেটাই একটা প্রশ্ন। বাস্তবকে এড়িয়ে যাওয়া বা বাস্তবকে স্বপ্নের মত এড়িয়ে যাওয়া বলা যায় একে। তবে তা আদৌ শিল্প-সাহিত্যের মান অক্ষুন্ন রাখতে পেরেছে কিনা বা সামাজিক প্রয়োজন মেটাতে পেরেছে কিনা তা একটি লক্ষ্যনীয় বিষয়।

দু: আমি গল্প লিখতে চাইলে আপনি কি করার পরামর্শ দিবেন?

শ্যা: আসলে দেখুন আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত ক্ষমতা রাখি না। এরপরও বলছি, আপনি চাইলে গল্প লিখতেই পারেন। সমাজ, মানুষ, বাস্তবতা, বিশ্লেষণ এবং স্তর বিন্যাসের কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আর যত সম্ভব পড়তে হবে।

দু: কোলকাতা ও ঢাকার কথাসাহিত্যের ফারাকটা কোথায়?

শ্যা: এপার-ওপার দু’পারেই কথা সাহিত্যে ফারাক রয়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা, ওখানকার চিন্তা-চেতনা, ভাষা গত, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, ঐতিহ্যগত এবং সংস্কৃতিগত পরিবর্তন তো আছেই। এগুলোই আসলে পার্থ্যক্য সৃষ্টি করে দিয়েছে।