সমসাময়িকের অনেকের ফর্ম ভাঙতে গিয়ে কবিতাটাই গৌন হয়ে পড়েছে: ইন্দ্রনীল বক্সীর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Dec 4, 2013 5:37:54 PM

প্রকাশিত বই: নজরমিনার

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লেখেন ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: কবিতা কেন লিখি ! বেশ জটিল প্রশ্ন , এযাবৎ এই প্রশ্নের উত্তর খুব সংঘবদ্ধভাবে কোনো কবি কি দিতে পেরেছে ? আমি দিয়ে থাকি সাধারনত – লিখতেই হয় তাই ... কবিতা আমার কাছে মননের ভাষা , অবচেতনার দলিল – একটা অস্থিরতা থাকে যা আমায় লিখতে বাধ্য করে , হয়তো সেইজন্য তার ছাপ আমার লেখাতেও পাঠক পেয়ে থাকে ।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন লেখকের কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: প্রথমত কবিতাই লিখবো কিনা সেটা জানা জরুরি , পাঠ দরকার , প্রচুর কবিতা পড়া , কবিতা বিষয়ক গদ্য ,সমালোচনা ইত্যেদি । যদিও সবসময় সব উপাদান পাওয়া যায়না , কিন্তু কবিতা পাওয়া যায় এবং তা পড়া জরুরি ।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার ভালো লাগে এবং কেন ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: আরো একটি জটিল প্রশ্ন ,যার ঠিকঠাক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয় । সমকালীন অনেকের লেখাই আমায় মুগ্ধ করে , কোনো কবির সব লেখাই যে ভালো লাগবে এমনও নয় , তবু যদি কয়েকজনের নামই করতে হয় তাহলে বলবো – রমিত দে , সুবির বোস, অবিন সেন , শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী , আষিক খুদাবক্স , ইন্দ্রনীল ঘোষ ,নীলাব্জ ,শুভ্রনীল সাগর , রোহন , রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় , অংশুমান দে., উল্কা..... নাঃ এভাবে বলা অসম্ভব , অনেকেই বাদ পড়ে গেলেন । রমিতের ঊইট , অবিনের লেখার স্নিগ্ধতা , শ্রীদর্শিনীর শব্দবিন্যাস , সুবীরাদার কাব্যময়তা ,রোহনের ভিন্নস্বাদ , উল্কার স্মার্ট উপস্থাপনা , এক এক জনের এক একটি লেখা ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় আমায় ছোঁয়...

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার খারাপ লাগে ও কেন ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: এই রে ! এটা বলতে পারবোনা । এমনকি আমার ভালো লাগে এমন অনেকের অনেক লেখাই ভালো লাগেনি বা লাগেনা –এরকমও হয় । মনে হয় জোর করে লিখেছে বা ফর্ম ভাঙতে গিয়ে কবিতাটাই গৌন হয়ে পড়েছে । লিখতেই হবে এমনতো কেউ মাথার দিব্যি দেয়নি !

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্যদশক এই দুই দশককে আপনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন । এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: কিসের মূল্যায়ন ? কবিতার ? কবিতার যদি বলো ,তাহলে বলি এভাবে দশক বিভাজন করা যায় বলে মনে করিনা , তবে আলাদা করে বোঝার জন্য যদি করা হয় তবে ক্ষতি কি ? এই দুই দশকেই মানুষ ভীষন নিস্তরঙ্গ যাপন করেছে , ফলে একটা ক্রাইসিসহীনতার ক্রাইসিস হয়েছে বলে মনে করি । সামাজিক ভাবে এমন কিছু নিঃশব্দ পরিবর্তন ঘটে গেছে যে মানুষকে সুড়সুড়ি দিয়ে আছন্ন রেখেছে – যা একটা বদ্ধতা । লেখার ক্ষেত্রেও তা একটা দিশেহারা দিক দর্শন প্রদান করেছে । এটা একটা সমস্যা । কিন্তু তারমধ্যেই ,তারই জন্য বলা যায় উঠে আসছে নতুন ধরনের লেখা – যেমন বিষয়হীন বা পরিবিষয়ী রচনা।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায় ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: কোনো ফারাক লক্ষ্য করিনি , আসলে বলতে বাধা নেই আমার বই ছাড়া মূল পাঠ অনলাইনে , সেখানে কোনটা বাংলাদেশের ,আর কোনটাইবা পশ্চিম বঙ্গের বুঝিনি । তবে যেটুকু দেখেছি বাংলাদেশের লেখায় মেধা যেমন আছে , আবেগের মাত্রাও যেন তুলনায় বেশি ।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: দিচ্ছে , ব্লগ সাহিত্যকে আরও বৃহত্তর ভৌগলিক ক্ষেত্র দিচ্ছে পৌঁছবার জন্য । এছাড়া দিচ্ছে নতুন এক প্রজাতির লেখক ।

দুপুর মিত্র: লিটল ম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ন বলে আপনার মনে হয়কি ? হলে কেন , নাহলে কেন নয় ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: নাঃ ব্লগ তুলনায় বেশী গুরুত্বপূর্ন – এমন মনে করিনা , লিটিলম্যাগের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে , ব্লগের এইতো যাত্রা শুরু । তাছাড়া ছাপার অক্ষরে সাহিত্যের আলাদা গ্রহনযোগ্যতা আছে – থাকবে । দুজনা দুজনার কাজ পাশাপাশি করে যাকনা !

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পযর্বেক্ষন কি ?

ইন্দ্রনীল বক্সী: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্যে একরকম খোঁজ চলছে বলে মনে হচ্ছে । অতীতের মহান লেখকদের শূন্যস্থান পূরনের একটা প্রয়াস। সেই হিসেবে এও এক ক্রাইসিস । যারা প্রাচীন তারাও নতুন কিছু দিতে পারছেন না , নবীনদের লেখাও প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেনা সেভাবে , একটা শূন্যতা রয়েছে , তবে তারই মধ্যে কিছু কিছু লেখা স্ফুলিঙ্গের মতো চমকিত করছে যা আশা জাগিয়ে রাখছে – এটাই আগামীর পাথেয় ।