অনলাইন ভিত্তিক সাহিত্য আন্দোলনকে আমি সমর্থন করি: অব্যয় অনিন্দ্যের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 31, 2014 5:09:04 PM

 দুপুর মিত্র: ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে একটা পাল্টা মিডিয়ার গঠন প্রক্রিয়া চলছে বলে আপনি মনে করেন কি?

অব্যয় অনিন্দ্য: এটা সময়ের দাবী, প্রযুক্তির সুফল আর সহজলভ্যতাকে মানুষ তাঁর নিজের মত করে ব্যবহার করবেই। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। ছাপাখানাই সর্বেসর্বা- এধারনা পাল্টে যাচ্ছে বিশ্বজুড়েই। ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ এসব একটা বিশাল সুযোগ নিয়েই সামনে এসেছে। তাই বলে ছাপা পত্রিকা বা বইয়ের অবস্থান রাতারাতি নাই হয়ে যাবে এমন নয়। অনলাইন ভিত্তিক এই সাহিত্য আন্দোলনকে আমি সমর্থন করি। তবে এতে বিশেষ করে ব্লগ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সম্পাদনার সুযোগ ছাড়াই সব ধরনের লেখা ছড়িয়ে পড়ছে সেটা সাময়িকভাবে পীড়াদায়ক এবং সময় নষ্টকারক। একারণে অনেক সময় এগুলোকে খসড়া লেখার মাধ্যম মনে হয়।

 

দুপুর মিত্র: এখানে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখবেন। বা লিটলম্যাগের প্রতিস্থাপন হিসেবে ভাবা যায় কিনা?

অব্যয় অনিন্দ্য: সাহিত্য তাঁর গতিশীলতা আর পরিবর্তনের মাধ্যমেই সময়কে ধারন করে চলে। এই পরিবর্তনের সূচনা করে লিটলম্যাগ আর পরিবর্তনটা একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসলে প্রতিষ্ঠানগুলো সেটাকে কাজে লাগায়, অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের প্রয়োজনে বা বাধ্য হয়ে। এতে করে নতুন ধারাটা বৃহত্তর পাঠকের কাছে পোঁছানোর সুযোগ পায়। আমি বিষয়টাকে এভাবেই দেখতে চাই। এজন্য প্রতিষ্ঠান বিরোধীদের সাহসকে শ্রদ্ধা করি আর প্রতিষ্ঠানকেও একেবারে উড়িয়ে দেইনা। তবে সাহিত্যকে শুধুই বাণিজ্যিকীকরণের দিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের যে ঝোঁক তাঁর বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান।

 

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?

অব্যয় অনিন্দ্য: লিটল ম্যাগ আর প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা একে অপরের পরিপূরক, তাই অপরিহার্য বলেই মনে করি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজার, দলবাজি, পাঠকপ্রিয়তা এবং অনেক ক্ষেত্রেই মালিকপক্ষের তল্পিবাহক হয়েই থাকতে হয়। আর এইসব কারণে খোলনলচে পাল্টে ফেলার সাহস তাদের হয় না; বরং স্থিতিশীল, গতানুগতিক পথই তাদের টিকে থাকার ঝুঁকিকে প্রশমিত করে। এই সাহস আর ঝুঁকিটাকেই পুঁজি করেই নতুনত্বকে হাঁটতে শিখায় লিটলম্যাগ। আর তাই নতুন নির্মানের বংশীবাদক হয়ে থাকার প্রয়োজনে লিটলম্যাগকে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হতেই হয়। এই বিরোধিতাই সৃষ্টির নতুন ধারার নৈবেদ্য।

 

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

অব্যয় অনিন্দ্য: চিরন্তন ভাব আর বিষয়কে সামনে রেখে সময়ের দাবী মেনে প্রকাশভঙ্গিতে পরিবর্তনের সাথে এগিয়ে চলাই কবি হয়ে ওঠা। সহজাত কবিত্বকে সময়ের মোড়ক পরিয়ে দেয়াই কবি হয়ে ওঠা।

 

দুপুর মিত্র: কবিতা কি?

অব্যয় অনিন্দ্য: কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করতে না পারাই হয়ত কবিতার পরিবর্তনকে আলিঙ্গনকামী চিরগতিশীল স্বভাবের জন্য দায়ী। আমার মতে, পুঞ্জিভূত শব্দমালা যখন বিস্তৃত অনুভূতিকে ব্যঞ্জণাময় করে প্রকাশিত হয় সেটাই কবিতা। আমি অকবিতা আর কবিতার বিতর্কে যেতে চাই না।

 

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

অব্যয় অনিন্দ্য: সাম্প্রতিক কবিতা সরলতর শব্দ বা ভাষা কিন্তু গভীরতর ভাব ও ব্যঞ্জনা বহণ করতে চাইছে বলে আমার মনে হয়। অনলাইনে যোগাযোগ সহজতর হওয়ায়, দুই বাংলায় কবিতার বিনিময়ও বেড়েছে, এতে আবেগ আর গঠনগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মেদ ঝরছে।

 

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

 অব্যয় অনিন্দ্য: অবশ্যই করে। যেমন, বর্তমানের কবিদের মধ্যে হাংরি আন্দোলনের উপজাতগুলো একেবারে স্পষ্ট।

 

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

অব্যয় অনিন্দ্য: আসলে কবিতা যখন এসে যায় তখনই লিখি। সেটা হতে পারে কোন দৃশ্য দেখে, কোন খবর পড়ে বা যে কোন সময়ি। আর প্রথম ধাক্কায় আবেগটা থাকে বেশী। পরে সেটাকে মেদ কমিয়ে সমকালীন ছাঁচে নিয়ে যাবার চেষ্টা করি।

 

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

অব্যয় অনিন্দ্য: বিশ্ব কবিতা কথাটাই বিশাল। একসময় বিশ্বসাহিত্য বলতে শুধু ইউরোপীয়ান সাহিত্যই বোঝাত, পরে আমেরিকান সাহিত্যও স্থান লাভ করে। আর ল্যাটিন, আফ্রিকান বা পূর্ব-এশীয় দু-একজন শক্তিমান কবির কথাই শুধু আলোচিত হতে পেরেছে। এই বিশাল পরমণ্ডলের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে বলার মত যোগ্যতা আমার এখনো হয়েছে বলে মনে করিনা। তবে কয়েকটা দেশের ইংরেজী কবিতার সমসাময়িক ধারাটার দিকে একটু নজর দিয়ে আমার মনে হয়েছে, বাংলায় কবির সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবেই বেশি, আর সাম্প্রতিক নিরীক্ষাও বাংলায়ই বেশী হচ্ছে ।

 

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

অব্যয় অনিন্দ্য: স্কুলজীবনে পাঠ্য বইয়ের মত করে ছড়া, কবিতা লেখার বাতিকগ্রস্থ ছিলাম। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির ম্যাগাজিনে লিখেছি।

 

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

অব্যয় অনিন্দ্য: নিজের পৃথিবীটাকে অন্যের পৃথিবীর সাথে মিলাতে কবিতা আমাকে একটা আশ্রয় দান করে। বৃহত্তর অনুভূতি সংক্ষিপ্ত ভাষায় বহুমুখী ব্যঞ্জনা নিয়ে প্রকাশের যে সুযোগ কবিতা দেয়, সেটাকে উপভোগ করি বলেই কবিতা লিখি। আসলে না লিখে পারি না। ব্যঞ্জনাময় কিছু দেখলে বা মনে আসলে কীসে যেন একটা সুড়সুড়ি দেয়।

 

দুপুর মিত্র:  আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?

অব্যয় অনিন্দ্য: ব্যক্তিগত উপলব্ধিই আমার কবিতা লেখার পটভূমি। আর এই উপলব্ধিকে প্রভাবিত করে সময়, রাজনীতি, প্রকৃতি, প্রেম, কাম, সমাজ, পরিবার সবকিছু। তাই এগুলো সবই আমার বিষয়। অনেকেই সমসাময়িক কবিতাকে বিষয়হীন হিসেবে আখ্যায়িত করেণ, আমি সেটা মানতে নারাজ। কবিতার বিষয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

 

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার বলে মনে করেন?

অব্যয় অনিন্দ্য: কবিতা হচ্ছে সাহিত্যের সবচেয়ে ডাইনামিক মাধ্যম। তাই পরিবর্তনকে ধারণ করার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এই পরিবর্তন যেমন কবিতার গঠন, বিষয়, ভাষায় হতে পারে আবার একই সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক পটভূমিও বিবেচ্য। প্রস্তুতির জন্য পঠন মহাগুরুত্বপূর্ণ।