আমার এ কথা শুনলে,দেশি সাহিত্যিকরা আমাকে দাদাদের দালাল বলতেই পারে: সুরাইয়া হেলেনের সাথে অনলাইল আলাপ

Post date: Jun 22, 2012 8:41:56 AM

প্রকাশিত বই: পরমাণু পৃথিবীতে শেষ বিকেলের মেয়েটি, ঘুমের দেশে চাঁদের দেশে, যাবার বেলায় পিছু ডাকে, নি:সঙ্গ জানারণ্য-mig33

দুপুর মিত্র: আপনি কি নিজেকে নারী লেখক বলে পরিচিত করাতে চান? চাইলে কেন না চাইলে কেন নয়?

সুরাইয়া হেলেন: না, নারী পুরুষ সবাই মানুষ,আলাদা করতে চাইনা! লেখাটা কেমন হলো সেটাই জরুরি। সেটা নারী না পুরুষ লিখলো সেটা নয়!

দু: কবিতার চেয়ে কথা সাহিত্যে নারী অংশগ্রহণ বেশি। আপনারও কি এরকম মনে হয়? হলে কেন না হলে কেন নয়?

সু: শুধু কবিতা বলছেন কেন,সব সাহিতেই নারীর অংশগ্রহণ কম! নারীরা পুরুষের অনেক পরে বর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে! তাছাড়া সাহিত্যে যে স্বাধীনতা লাগে সেটা আজও নারী অর্জন করতে পারেনি,অর্থাৎ তাকে সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না!

দু: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সু: সমসাময়িক গল্পচর্চা বলতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু দেখতে পাচ্ছি না।আমাদের এখানে নিয়মিত সারা বছর জুড়ে লেখেন বা শুধু গল্প লেখাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন,এমন ব্যক্তি কম!শুধু ফেব্রুয়ারির বইমেলা আর ঈদ সংখ্যাকে ঘিরে লেখালেখি হয়।ঈদ সঙখ্যাতে আবার নতুন কোন লেখক দেখা যায় না!যারা সংশ্লিষ্ট পত্রিকাটির সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত এবং কিছু কথাকথিত নামী লেখকদের লেখাই আমরা দেখতে পাই,তাও একই ঢঙে,গৎবাধা পুরনো লেখার মতই! এরা নতুন কিছু দিতে পারছে না! আর বইমেলায় তো হুজুগে লেখা,কার কতটি বই বেরুলো তারই প্রতিযোগিতা! তো চর্চা আর কোথায়? নেই-ই বলতে পারেন!

দু: কথাসাহিত্যের কোন ধারাকে আপনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং কেন?

সু: কথাসাহিত্যের ধারা বলতে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? আামি মনে করি লেখক যে ধারায় স্বচ্ছন্দ বোধ করেন,নিজের লেখায় যা বোঝাতে চেয়েছেন,বলতে চেয়েছেন এবং পাঠক যেভাবে তার লেখাটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে গ্রহন করছে,লেখককে সেটা বুঝে, সেই ধারাই অনুসরণ করা উচিৎ। তবে স্বত:স্ফূর্ত ধারাকে আমার বেশি পছন্দ।

দু: লেখার বিষয়ের ক্ষেত্রে আপনি কোন জায়গাকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং কেন?

সু: লেখার বিষয়ের ক্ষেত্র হিসেবে আমি জীবনধর্মী,বাস্তবঘেঁষা বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিই। কারণ এই বিষয় মানুষের জীবনের সাথে মিল থাকে বলে এর গ্রহনযোগ্যতা এবং বিশ্বাস যোগ্যতা বেশি। পাঠক পড়তে পড়তে এর ভেতর নিজেকে খুঁজে পায়, নিজেকে চরিত্র ও ঘটনার সাথে মিশিয়ে ফেলে,ভাবে এ তো আমারই কাহিনি! তাই এ ধরণের লেখা সাধারণত মূল্য পায় বেশি ।

দু: লেখা নিয়ে আপনি কেমন আশা করেন? তার কতটুকু আপনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন এবং কেন?

সু: লেখা নিয়ে আমি প্রচন্ডরকম আশাবাদী। আজকাল চর্চা করার জায়গাটা পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্লগ,অনলাইন পত্রিকা,সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো,এর বিভিন্ন গ্রুপ,সবই পজিটিভ। একজন ইচ্ছে করলেই লিখতে পারছে,পাঠকও পাচ্ছে,আলোচনা,সমালোচনাও সাথে সাথেই হচ্ছে।এখান থেকে বেশ কিছু ভালো লেখক আমরা পেয়ে যাবো আশা করছি।আমার ব্যাপারে বলবো,চেষ্টাটা আছে, তবে যেহেতু আমার প্রফেশন অন্য তাই সীমাবদ্ধতাও আছে। তবু আমি নিজেকে লেখায় যতটুকু পারি সম্পৃক্ত রাখতে যত্নবান।আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা,এই লেখার জন্য আমি প্রচুর পরিশ্রম করি!২৪ ঘন্টায় আমি মাত্র ৩-৪ ঘন্টা ঘুমাই! পুরোটা রাত শুধু এই লেখালেখির পেছনে ব্যয় করি! ভোরবেলা সূর্যাদয় দেখে তারপর ঘুমুতে যাই। তারপরও পারিবারিক আরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে এসব প্রতিকূলতা মুখোমুখি সামাল দিয়ে যতটুকু পারি,লিখি! আপনারা আর পাঠক বলতে পারবে,কতটুকু আমি দিতে পারছি।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্য আর বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ফারক কোথায়?

সু: পশ্চিমবঙ্গ তো সাহিত্যে সবসময়ই আমাদের চেয়ে অনেকখানি এগিয়েই ছিলো! আমরা শুরু করলাম কবে থেকে? সেই এগিয়ে যাওয়াটুকু কিন্তু আমরা এখনও দূরত্বটুকু অতিক্রম করতে পারিনি! কিছুটা কমিয়ে এনেছি মাত্র ।বলতে দ্বিধা নেই, এদের জীবনযাত্রা,সংস্কৃতি সবই তাদের সাহিত্য চর্চার পক্ষে,তো এরা এখনও আমাদের চেয়ে এগিয়ে। ওদের একজন নগন্য লেখক,কবিও আমাদের বিখ্যাত লেখক কবিদের চেয়ে সাহিত্যমানে ঋদ্ধ। আমার এ কথা শুনলে,দেশি সাহিত্যিকরা আমাকে দাদাদের দালাল বলতেই পারে! তবে এটাই বাস্তব সত্য।

ধন্যবাদ আপনাকে ।