কবিতা লেখার জন্য ঐতিহ্যকে সামনে রাখা দরকার: পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্তের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 2, 2012 11:46:32 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত: এর কি উত্তর হয় জানি না,তবে খুব অল্প বয়স থেকে কবিতা লেখায় অনুপ্রাণিত ছিলাম । সে সব আমার মায়ের কবিতা প্রীতির জন্যই। কেন লিখি ? ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি কবিতা,তাই লিখি। আমি কবিতার রাজ্যে নিজেকে সুলতান বলতে ভালোবাসি।

দু: কবিতা লিখতে গিয়ে প্রথম কোন কোন বিষয়ের প্রতি বেশি ঝোঁকে পড়েন।

পু: আমার কিছুশব্দ হাতের কাছে আর মাথায় এলেই আমি কবিতা লিখতে পারি। তবে একটা কিছু ভাবনা তো কাজ করেই চলেছে।

দু: ভাবনার বিষয়ে কোনগুলো প্রাধান্য পায়?

পু: তার মানে আমার টেবিলে শব্দেরা বসবাস করেন,এখন যদিও আমি সরাসরি কম্পিউটারে লিখি।তার পর খাতায় টুকে নিই। আমি ভালোবাসার কবিতা লিখতে ভালোবাসি।প্রেমের কবিতা।

দীর্ঘ কবিতা আর কবিতার সিরিজ লিখতে ভালোবাসি। ভাবনা তো আছেই,বদলে বদলে যায়। আমি খুব ভেবে লিখি না। যা মনে হয় লিখি । সাহস ছাড়া কবিতা হয় না। কি বলবো জানি না।আমার কবিতা খুবি সেকেলে,আপ্নারা পড়েন কি? মনে হয় না। না পড়াই ভালো ,আমার কবিতা পড়লে পিছিয়ে পড়তে হয়। দুপুর জানেন। আমার কবিতা কেউ সে জন্য ছাপে না।

একই তো সেই প্রেম আর প্রেম,কত খাবে বলো মানুষ,তাদের তো সময়ের দাম আছে। তবে হ্যাঁ একবার আমার কবিতায় চোখ রাখলে আর তা ফেরাতে পারবেন না।

দু: আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে এ পর্যন্ত

পু: অনেক লিখেছি কিন্তু বই নেই তো পাবে কোথায় আমার কবিতা। আমার বই নেই। আমি ভাবছি যদি কেউ একটি বই ছেপে দেয় আমার। জানি আমি রেরর্ড সেল হবে কি বাংলাদেশ কি ভারতবর্ষ। আমার অনেক পাঠকপাঠিকা। তারা ২০ বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। আমি নিজেকে গালিবের চেলা বলে জানি, তবে গালিবের চেয়ে অনেক ভালো কবিতা আমি লিখেছি।

আমার কবিতার বিষয় মদ আর নারী আর ভালোবাসা। বাংলা কবিতায় বর্তমানে নিষ্ঠার অভাব,অনুশাসন মেনে চলতেই হয়।যা খুশি লিখলেই কবিতা হয় না।

আমি আমাদের কবিতার পরম্পরা জানলাম না তো কি করে হবে?

দু: বাংলা কবিতায় অনুশাসন মেনে চলতেই হয়। এ ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?

পু: বাক্যগঠন,ছন্দ,আর যা যা কবিতার শর্ত। কবিতা লেখার জন্য ঐতিহ্যকে সামনে রাখা দরকার, এরপর পরীক্ষা টরীক্ষা যা খুশি করো। স্মার্ট হতে হয় বাক্যগঠনে। সব কিছুতেই সময়টাকে ধরতে হয়। নিজের সময়, ব্যবহারিক সামাজিক আর রাজনীতি সব কিছুই কবিতার প্রয়োজন,ইনফরমেশন গুলে খেতে হয় একজন কবিকে,কবিতার কত ডায়মেনশন।কত তার শক্তি।

দু: পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক বাংলা কবিতায় কোন বড় ধরনের পরিবর্তন আপনার চোখে পড়ছে?

পু: সে বিষয়ে কি আর বলবো? অনেক মুভমেন্ট দেখেছি রবীন্দ্রবিরোধী-শাস্ত্র বিরোধী। এংরি-হাংরি,কংক্রিট,ঊওরাধুনিক-আরো নানা আন্দোলন,কেউ কি জানেন, কোনটা ঠিক? আমার মনে হয় ক্লাসিক থাকাটাই ভালো। অনেকে লিখছেন আর অল্পবয়সীদের ভুল পথের সন্ধান দিচ্ছেন। সাহিত্যের সেরা মাধ্যম কবিতা, তাকে নিয়ে ছেলেখেলা ঠিক নয়। কবিতায় প্রমোটারি চলছে। একটি ঢাউস পত্রিকায় ১০০০কবিকে জায়গা দেওয়া আর তাদের কবিতার বই ছাপার ব্যবসা করা। আগের সম্পাদকরা প্রকৃত কবিতাই ছাপ্তেন।পেলেই হল দাও ছেপে পরে ব্যবসা হবে। এমনটা ছিলেন না, সাহিত্যের পরিবেশ তারা নষ্ট করতেন না।

দু: আপনার কি মনে হয় কবিতার বাণিজ্য প্রবণতা সাহিত্যের জন্য খারাপ কিছু নিয়ে আসে।

পু: পাঠকের সংখ্যা বাড়তে পারে,কিন্তু প্রকৃত কবির জন্ম হয় না। অনেক এলেবেলে কবির মাঝখানে তার কবিতা প্রকৃত সমাদর পায় না।

দু: আপনি কি লিটলম্যাগের সাথে জড়িত?

পু: আমি সারাজীবন লিটল ম্যগাজিনেই লিখেছি।পত্রিকাও করেছি, এখন আর করি না

দু: এখন কেন করছেন না।

পু: সময় করে উঠতে পারি না।

দু: পশ্চিমবঙ্গের লিটলম্যাগের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু বলবেন যা আপনি আশা করেন না।

পু: সবাই কিছু না কিছু ভালো কাজ করছেন।কিছু আছেন যারা ভাম্পেয়ার।

দু: কিরকম সেটা ?

পু: অতো বলতে পারবো না , বিশেষ সংখ্যার আধিক্য ক্রিয়েটিভিটির পক্ষে মারাত্বক খারাপ।বিশষ সংখ্যার কাজ করবেন ইউনিভার্সিটির ডিপার্ট্মেন্ট,লিটল ম্যাগাজিনের কাজ ক্রিয়েটিভ। ভালো সাহিত্যিক কবি প্রাবন্ধিক খুঁজে তাদের লেখা প্রকাশ করা।ব্যাবসা করা নয় বিশেষ সংখ্যার নামে ব্যাবসা

দু: আপনার লিটলম্যাগের নাম কি ছিল

পু: শব্দ,শালবনী।

দু: ধন্যবাদ দাদা আমাকে সময় দেবার জন্য ।