সাহিত্যিক নীতিবাক্য বলতে বসেন না: সায়ন্তনী পুততুণ্ডের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jan 21, 2014 6:04:08 PM

প্রকাশিত বই: ছায়াগ্রহ, নন্দিনী, আনন্দধারা।

দুপুর মিত্র: আপনি কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন ?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: খুব ছোট বেলা থেকেই। স্কুলে পড়াকালীন অল্প অল্প লেখা শুরু করেছিলাম। ক্লাস সেভেন অর্থাৎ ১৯৯৭ এ প্রথম প্রকাশিত ‘চশমা’। তারপর ‘সাহানা’ পত্রিকায় বেশকিছু থ্রিলারও লিখি। এভাবেই হাতে খড়ি আর কি।

দুপুর মিত্র: আপনার সবচেয়ে সফল কাজ কোনটা?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: এখনও পর্যন্ত সফল কাজ করে উঠলাম কই? ( হাসি)। যেদিন করতে পারবো নিশ্চয়ই জানাব।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখায় আপনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন সমস্যায় বেশি পড়েন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: সমস্যা তেমন কিছু হয় না। তবে বিষয়টা বেছে নেওয়াই আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এবং নিজেকে কোনো ধরাবাধা গণ্ডীর মধ্যে দেখতে চাই না বলে সাবজেক্ট পাল্টে পাল্টে লিখতে হয়।

দুপুর মিত্র: লেখার সময় আপনি কি শিডিউল করেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: না । নির্দিষ্ট কোনো্ শিডিউল নেই।

দুপুর মিত্র: আপনি কি কম্পিউটারে লিখেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: আগে লিখতে পারতাম না। ইদানিং পারি। তাই লিখি।

দুপুর মিত্র: গল্প আর উপন্যাসের ভেতর আপনার পছন্দ কোনটাতে বেশি?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: টেস্ট ক্রিকেট আর ওয়ান ডে - দুটো যেমন দুরকম, তেমনি উপন্যাস আর গল্পের মজা সম্পূর্ণ আলাদা। দুটোতেই আমি মজা পাই।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখার সাথে ধৈর্য্যের সম্পর্ক আছে কি?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: অবশ্যই। ধৈর্য্য না থাকলে আর যাই হোক, ঔপন্যাসিক হওয়া কষ্টকর।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে কি আপনি আউটলাইন করেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: নিশ্চয়ই। কী নিয়ে লিখছি, কী বলতে চাই, কেন লিখব কিংবা কতটা লিখব- তার সম্পূর্ণ ধারণা না হওয়া পর্যন্ত আমি লেখায় হাত দিই না।

দুপুর মিত্র: আপনার গদ্য শৈলী কি আলাদা? কিভাবে এটা আলাদা?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: এই রে! এটাতো পাঠক বলতে পারে। (হেসে) আমি কী করে বলি?

দুপুর মিত্র: নিজের কোন কাজটির জন্য খুব তৃপ্ত বোধ করেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: এখনও পর্যন্ত সেই সৌভাগ্য হয় নি। আমি প্রচণ্ড খুঁতখুঁতে। সহজে তৃপ্ত হই না।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বিশেষ কোনো পাঠককে সামনে রেখে লিখেন না বিশেষ অডিয়েন্সকে?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: হ্যাঁ , সেই বিশেষ পাঠকটি আমি নিজেই।

দুপুর মিত্র: সাহিত্যের কি সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে? এ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: আমার মনে হয় না তেমন কোনো্ বাধ্যবাধকতা আছে। লেখক যদি আচমকা নিজেই রঙ্গমঞ্চে ঢুকে বলতে শুরু করে ‘ইহা অন্যায় ইহা কখনই করিবেন না’ তবে সেটা ঈশপের গল্প হতে পারে সাহিত্য নয়। ( জোরে হেসে) সাহিত্যিক নীতিবাক্য বলতে বসেন না। তবে হ্যাঁ সাহিত্য শব্দটা তো ‘সহিত’ শব্দ থেকে এসেছে। তাই সমাজ সম্পর্কের সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকাটাই বাঞ্চনীয়।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখার কক্ষ নিয়ে কিছু বলুন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: লেখার ঘরটা আমার খুব পছন্দের। বড় বড় দুটো জানলা আছে। প্রচুর বই আছে। জানলা দিয়ে তাকালে আমগাছ, নারকেল গাছ দেখা যায়। সোনালি রোদ্দুর রোজ সকালে বলে -‘সুপ্রভাত’। গদিওয়ালা বিছানায় দিব্যি আয়েশ করে লিখতে পারি। লোকে প্রচুর স্পন্ডেলেসিসএর ভয় দেখায়। কিন্তু’ সেই ভয়ে কম্পিত নয় আমার হৃদয়’।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বেশি পড়া পছন্দ করেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: হ্যাঁ ।

দুপুর মিত্র: আপনি কি গল্প খুব দ্রুত শেষ করতে পছন্দ করেন।

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: পড়ার ক্ষেত্রে দ্রুত পড়ি। লেখার ক্ষেত্রে খুব দ্রুত নয়, খুব আস্তেও নয়।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লিখতে আপনি সাধারণত কতটুকু সময় নেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: আবার কনফিউজিং প্রশ্ন। এই প্রশ্নে ৩২ পাটি বের করা ছাড়া উপায় দেখছি না। উপন্যাসের ভলিউমের উপর সময় নির্ভর করে। উপন্যাস জন্ম দেওয়া তো বাচ্চার জন্ম দেওয়া নয় যে ঠিক ন’ মাসই লাগবে।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোনও গল্প বা উপন্যাসের কিভাবে শুরু করতে জোর দেন? চরিত্র না বাক্যকে? না কোনও ডায়ালগকে?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: বিষয়কে। তারপর প্রয়োজনে আসে চরিত্র, বাক্য ও ডায়লগ।

দুপুর মিত্র: লেখে ফেলার পর কি আপনার কখনও এমন হয়েছে যে পুরো লেখাই মানে গল্প বা উপন্যাসকে আপনাকে নতুন করে লিখতে হয়েছে?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: না। ওতখানি সর্বনেশে কাণ্ড এখনও হয়নি। তবে রিএডিট তো করতেই হয়।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে আপনি কি সমাপ্তি ঠিক করে রাখেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: একটা মোটামুটি ধারণা তো থাকে ঠিকই। তবে উপন্যাসের দাবি অনুযায়ী পাল্টেও যেতে পারে।

দুপুর মিত্র: আপনি শেষ পৃষ্ঠা লেখার আগেই কিভাবে গল্প বা উপন্যাসের শেষটা ঠিক করেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: ওটা আমি করিনা। ওটা আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যায়। উপন্যাস কখনও কখনও নিজেই সমাপ্তি বুঝে নেয়।

দুপুর মিত্র: লেখালেখিকে কি সংগ্রাম মনে হয় আপনার?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: যাব্বাবা! সংগ্রাম কেন মনে হবে? আমি লেখালেখিকে উপভোগ করি। সংগ্রাম কাকে বলে জানি না। তবে আমি সংগ্রাম করি না। সৃষ্টি করি।

দুপুর মিত্র: লেখার পর আপনি সাধারণত কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করেন?

সায়ন্তনী পুততুণ্ড: না পাগল নাকি! ( জোরে হেসে) কোনো একজনের সাথে শেয়ার করলে বাদবাকিরা কি আমায় ছাড়বে?