সপ্তর্ষি বিশ্বাস এর একগুচ্ছ নতুন কবিতা

Post date: Mar 8, 2011 3:21:48 PM

সপ্তর্ষি বিশ্বাস

বসবাস: বেঙ্গালোর, ভারত

প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ: পাপের তটিনী ধরে, যুগল বন্দী

তোমার বন্ধ মুঠি

তোমার বন্ধ মুঠি এখনো আমারি জন্য ত্রি সংসার আগ্‌লে রেখেছে ।

হাত পাততে ভয় হয় তাই,

ভয় হয় ভিক্ষুবেশে দুয়ারে দাঁড়াতে।

প্রতি প্রাতে সূর্য্যদেব এসে দেখেযান তোমার এই অপচয় আর

প্রতিটি রাত্রি এসে বিরত করতে চায়

তোমাকে এ ছেলেখেলা থেকে –

তথাপি এ ত্রি সংসার তুমি কেবল আমারি জন্য

আগলে রেখেছো মুঠোকরে...

ভীত আমি — ভিতু আমি – কেবলি পালাতে চাই, তবু

নীরবে প্রতিটি ভোর তোমারি আলোর ডানা দিয়ে

চক্ষুদান করেযায় অন্ধ আমাকে ...

কবে তুমি নিজে এসে চুপে

খুলেদেবে বন্ধ মুঠি তব ?

মুক্তি দেবে এ ভীষণ দায়ভার থেকে?

০৩/১০/২০১০

তোমার সৃষ্টির পথ

তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছে আকীর্ণ করি

মন্দির-মশজিদ আর নিদ্রাহীন পাপের প্রহরী।

কূটিল হিংসার জালে বেঁধেছে সে সহজের সরল বিশ্বাস,

যদিও সে অন্তরালে পদে পদে প্রবঞ্চিত তবু

নিষ্কম্প অঙ্গুলী তার লিখেচলে চেতনায় তুমুল সন্ত্রাস –

তোমার জ্যোতিষ্ক দেখে যে পথিক ধায়

সে যে চিরস্বচ্ছ , সহজ বিশ্বাসে সে যে চিরসমুজ্জল,

তথাপি দেখো সে আজ নিজের সত্যেরি কাছে নিজে অসহায় –

ফিরায় আহত মুখ সকল মন্দির আর মশজিদের থেকে

নিজেও নীরবে পোড়ে আপনারি অন্তর্গত তুমুল ঘৃণায়।।

০৩/১০/২০১০

তোমার হাতটি, প্রিয়...

একটি শব্দের মুখ এঁকেযাবো বলে

এতো শব্দ, এতো দাঁড়ি-কমা,

একটি চোখের চাওয়া লিখেযেতে চেয়ে

এতো মুখ, অনেক উপমা।

একটি দিবস চেয়ে এতো রাত ধরে

একা একা বহু পথে চলা,

একটি নৈঃশব্দ চেয়ে এতো সুর,গান –

জনান্তিকে এতো কথাবলা।

একটি নিবিড় রঙ খুঁজেপেতে চেয়ে

এতো রঙ, হিজিবিজি রেখা –

তোমার হাতটি, প্রিয়,ছুঁয়েযাবো বলে

এতো হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখা।।

৫/১০/২০১০

বাদলা রাতে একলা পাগল

মেঘের ভারে আকাশ পরে নুয়ে

ঘনায় আঁধার বাঁশের পাতা ছুঁয়ে

বাদল মেঘে মাদল বাজে ঠিক

কার সে ঘুড়ি হারিয়ে দিগ্বিদিক

দেখলো চেয়ে তারার ঝিকিমিক।।

দিনগুলি যায় মেঘের মতন ভেসে

রাত্রি আসে রাতের ছদ্মবেশে

দিবস নিশি কিসের যেন খোঁজে

হারায় রোজই – কেবল নদী’ই বোঝে

এই হারানো নয় হারানো মোটে

এগিয়ে চলা সাগর পানে ছুটে।

মেঘ ভেসে যায় – মেঘ ভেসে যায় বনে –

সে কোন অকূল সাগর সন্তরনে ...

আকাশ এবং তুমি’ই শুধু স্থির?

যায়না জানা। ডাক ওঠে ঝিল্লীর।

নদীর পারে নেভে শ্মশান,চিতা –

আজো তোমায় প্রথম রাতের দ্বিধা

জড়িয়ে থাকে; তাই আসোনা ঘাটে ...

অন্ধকারে জোনাক সাঁতার কাটে।

জড়িয়ে আনে চাঁদের দুচোখ ঘুমে,

বাঁশের ঝাড়ে কার যেন ফিস্‌ফাস ...

পথিক পেরোয় বাঁশের সরু সাঁকো,

সাঁকোর নীচে কঙ্গাবতীর লাশ

স্নান করে আজ উতল ধারা জলে

জানিনা এই অচেনা সব ছবি

আমার কাছে পাঠায় সে কোন তারা ...

তাই নিতে হয় শব্দের রং-তুলি,

বাদ্‌লা রাতে নিঝুম ঘুমায় পাড়া।

দূরের মাঠে শেয়াল ফেরে ডেকে

খাতা এবার গুটিয়ে নিতে হবে

সকল তারাই ডুব্‌লো একে একে

ঘুমিয়ে পড়ার সময় হলো তবে?

৩/১০/২০১০ –৮/১০/২০১০

ছোট্ট আমার মেয়ে

ছোট্ট আমার মেয়ে

বেড়ায় নেচে গেয়ে

ছোট্ট দাদা’র সাথে

আব্দারে ঝগড়াতে

সকাল দুপর কাটে

সূর্য্য গেলে পাটে

ঘুমায় দুজনাতে।

তখন সবই নিঝুম লাগে এতো

যেন এ এক নিঃস্ব হানাবাড়ি

যেযার কোঠায় নিজের মতন পোড়ে...

কেন যে রাত যায় না তাড়াতাড়ি ...

৩/১০/২০১০

সীমা : একটি প্রায় অনুবাদ কবিতা

যে সকল পথগুলি প্রতিটি সন্ধ্যায়

মিশে যায় আঁধারের গা’য়

তাদের কোন্‌টি ধরে আমার সকল চলা গিয়েছে ফুরিয়ে

আমি তা জানিনা।

সে কার ইঙ্গিত,হায়, রচেযায় আমাদের যাত্রাপথ গুলি ...

আমি কি পাথর তবে? আমি কি পুত্তলী?

সকলেরি সীমা আছে?

আছে কোনো ষ্পষ্ট পরিমাপ?

স্মরনই কী মুক্তি তবে? বিস্মরণই পাপ?

বইগুলি সারাদিন টেবিলে ছড়ায়

এলোমেলো ছায়া,

জানি এই রাশিকৃত পুঁথিদের ভিড়ে

একটি সে বই আছে যেটা

কোনোদিন পড়াই হবেনা।

একটি দিরজায় কবে

খিল এঁটে

চিরতরে এসেগেছো তুমি,

একটি দর্পণ আজো প্রতীক্ষায় একা জেগেআছে,

একটি শালিক পাখি তোমার এই ঘোড়ানিম গাছে

কোনদিনই ফিরবে না আর

সকল স্মৃতির ভিড়ে একটি সে স্মৃতি আছে যার

ছায়াতলে গিয়ে তুমি কোনোদিনই দাঁড়াবেনা আর ...

কোন্‌ দোর,কোন স্মৃতি,কোন পাখি, কোন গাছ তার

জানোনা কিছুই তবু সে কার নিয়মে

তোমাকেও ভুলেগিয়ে আলো হয় এই অন্ধকার।

৮/১০/২০১০

একটি দুয়ার

যে সকল পথগুলি গোধূলির অতলে হারায়

তাদের একটি পথধরে

তোমার সকল পথচলা

সুনিশ্চিত গিয়েছে ফুরিয়ে –

যদিও একদা তুমি সেইপথ ধরে

করেগেছো বহু আনাগোনা

অন্তরালে তুমি তার ঠিকানা জানোনা।

সকল স্মৃতির ভিড়ে একটি সে স্মৃতি আছে যার

ছায়াতলে গিয়েতুমি কোনোদিন দাঁড়াবেনা আর ...

কোথায়,কখন, কবে তুমি

বন্ধকরে এসেগেছো,চিরতরে,একটি দুয়ার...

৫/১০/২০১০

মাতাকে মনেপড়ে

মাতার স্মৃতি নিয়ে শরৎ আসে ফিরে মনের নদীতীরে শুভ্র কাশ

আকাশে ফেলে ছায়া অতল এ’কি মায়া গো মাতা তব এই পট্টবাস

সাজায় ধরণীকে সাজায় পাপীকেও বাজায় ঘাসে ঘাসে অমল গান

মাতার সাথে আসে শেফালী ফুলগুলি আহা সে ফুলগুলি পুণ্যবান

দেখোনি মুখ ঐ মেঘের নির্মাণে দেখোনি ঐ চোখ আকাশময়?

অন্ধ তুমি হায় রবে কী চরদিনই ব্রাত্য জন্ম এ এ ভাবে ক্ষয়

হবে কি দিনে দিনে হবে কি রাতে রাতে ছুঁয়েও দেখবেনা শেফালী ফুল?

ছেলেরা ভুলকরে তথাপি মা কভু কখনো না করেন কিছুই ভুল

আমিও ক্ষমা পাবো তুমিও ক্ষমা পাবে শুভ্রমেঘ লিখে বারতা ওই

মাতা যে এসেছেন বসাবে তাঁকে কোথা রেখেছো পেতে তাঁর আসন কই?

আসন পেতে রাখি এই যে ধূলো মাটী সেইতো হে মাতা তোমারি ক্রোড়

এই যে হাহাকার এই যে চীৎকার এসব সকলিতো তোমার সুর

তুমি যা দানকর তাতেই গানকরি তাতেই আগমনী ও বিসর্জন

তৃতীয় নয়নের বিভাতে ছুঁয়ে দিও ব্রাত্য জনেদের একটি ক্ষণ।। – ১২/১০/২০১

শ্লোক

চেয়েছো তুমি তাই লিখেছি শ্লোক এই শব্দ সে’ও তো তোমারি দান

আমিতো তৃণ শুধু আমিতো ধূলোবালি লিখিয়ে নাও তবু কত’যে গান

আঁকিয়ে নাও ছবি যেমন চাও তুমি তুমি’ই রং-তুলি জোগাও, হায়

তুমি না চাইলে হে দিবস যায় ভেসে ‘লিখবো’ বৃথা এই প্রতিজ্ঞায় ।।

– ১২/১০/২০০১

পুতুল নাচের ইতিকথা

কবিতার কাছে শরীরের বহু ঋণ –

কবিতারো আছে শরীরের কাছে দেনা,

যদি যায় রাত পরশের জাদুহীন

ভোরবেলা কেউ হয়েওঠে আনমনা ...

এখন শরৎ এসেছে আবার উড়ে,

শরৎ কখনো শরীরের ঋতু নয় ...

যতোই বোঝাই তবুও সেযায় ফিরে

হরিণীর খোঁজে ঘুরে ফেরে বনময়...

শরীর!শরীর!কুসুম, তোমার মন –

– নাই জেনে ওই ছোটোবাবু গেলো চলে,

পুতুল নাচের ইতিকথা কি গহন

ক্ষতহয়ে আজো রজনীর দেহে জ্বলে ...

মনেপড়ে সেই প্রথম পোড়ার দিন –

টেবিলে একাকী মোমবাতি যায় গ’লে।।

– ১৫/১০/২০০১

গান শুধু গান –

ভেঙ্গেযাবে, এভাবেই,সমূহ নির্মাণ,

কেবলি পাহাড় কিছু, সমুদ্রেরা, আর

গীতিবিতানের শেষে বাঊলের গান –

মেধা থেকে মুছেদেবে সমূহ আঁধার।

কেবল যেসব কথা এতাবৎ তুমি

বলেগেছো মনে মনে বৃক্ষদের কানে

যেসব মেঘের ছায়ে নুয়েছো আভূমি

প্রতি পদক্ষেপ তব তারা শুধু জানে।

সেতুগুলি ভাঙ্গে দেখো, চূর্ণ শিলালিপি

পায়ে ঠেলে চলেযায় অশ্ব, পদাতিক –

মেঘের নিগড়ে গড়া সব জলছবি

মুছেযায় – ঘুরেগেলে বাতাসের দিক...

ভেঙ্গেযাবে, এভাবেই,সমূহ নির্মাণ,

কথাগুলি ডুবেযাবে, গান শুধু গান –

– ১৫/১০/২০০১

ভাসান

মাতাকে ভাসিয়ে দিয়ে আজ

যখন ফিরবো একা ঘরে

মাতার হাতের কারুকাজ

তারা হয়ে জাগবে শিয়রে।

তারায় তারায় মুখ, মা’র

ছুঁয়েযাবে এ’চোখ আমার,

দুই চোখ ভেসেযাবে জলে –

একা একা আপন অতলে

গড়েনেবো পুনরায় মা’কে,

মা ছাড়া একলা ভয় লাগে –

১৭/১০/২০১০

এপার বাংলা ওপার বাংলা ...

আসলে তো সেতু এক,ভাষা,

কাঁটাতার বেড়া আর ভিসা –

পারহয়ে কাছাকাছি আসা ...

জ্বলে ওই দেখো শতভিষা।

তাই লাগে সবকিছু চেনা,

ভালবেসে শুধে যাই দেনা –

গানে গানে একে অপরের ...

ইতিহাসে ভুল ছিল বলে

এসেছি আরেক পারে চলে,

বেড়া ভেঙ্গে ফিরেযাবো ফের...

১৭/১০/২০১০

চাঁদ

চারিদিকে পাতা আছে ফাঁদ

তবু যাও, ছুঁয়ে দাও চাঁদ –

যদি তারা না’ও হও তবে

লহমায় আলোক ছড়াবে

জোনাকির মতো একা একা

পথিকের পথের কিনারে

হয়েছিল শবরীরো দেখা

দেবতার সাথে – নদীপারে –

চারিদিকে পাতা আছে ফাঁদ

তবু যাও, নিয়ে আসো চাঁদ।।

১৭/১০/২০১০

পাঠকদের প্রতি, ধন্যবাদের বদলে...

আমার আখর গুলি যদি

ছুঁয়েযেতে পারে তোমাদের

তবেই গোপন এক নদী

মোহনায় যেতেগিয়ে ফের

ডেকেনেবে সাথে করে জ়েনো

মনে মনে তোমাকে আমাকে

হতে পারে হয়তো এমনও

সাড়া দিয়ে আখরের ডাকে

একটি কবিতা নীল জলে

লিখেচলি আমরা সকলে

১৮/১০/২০১০