মানুষ সামাজিক জীব বলেই তাঁর ভাবনায় সোশ্যাল এক্টিভিজমের জায়গাটা থাকবেই: বদরুন নাহারের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 16, 2012 1:35:21 PM

গল্পগুলো ব-দ্বীপের (২০০৬), ঢেন্ডন পা’র দেশে (২০০৮), ভাতগল্প(২০১১), হাসোই ও লেটুর গল্প

দুপুর মিত্র: আপনি ঠিক কি অর্থে বা কি কারণে মহাশ্বেতা দেবীকে ধারণ করতে চান?

বদরুন নাহার: আসলেই কি আমি মহাশ্বেতা দেবীকে ধারণ করতে চাই? আমি নিজেই তো বিষয়টি জানি না! কোন কিছু সম্পর্কে জানতে চাওয়া বা বুঝতে চাওয়া মানে কিন্তু ধারণ করা নয়। তবে বলতে পারি মহাশ্বেতা দেবী এবং তাঁর সাহিত্য নিয়ে আমি সবিশেষ জানতে আগ্রহী। তাঁর মত ব্যক্তিসত্তা ও সাহিত্য সত্তার এমন সংমিশ্রণ তো খুব বেশী দেখতে পাওয়া যায় না।

দু: গল্পগুলো ব-দ্বীপের' (২০০৬), 'ঢেন্ডন পা’র দেশে' (২০০৮), ভাতগল্প(২০১১) মোট তিনটি গল্পের বই আপনি ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছেন? বইগুলোর মধ্যে কোন গল্পটার কথা আপনার প্রায়ই মনে পড়ে এবং কেন?

ব: প্রায় মনে হওয়া গল্প কোন একটিতে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং এক এক সময় এক একটা গল্পের কথা মনে পড়ে। এর বিভিন্ন কারণ আছে বা মনে হবার কারণও ঘটে। যেমন ধরুন প্রথম বই-এর গল্প ‘হাসোই ও লেটুর গল্প”, এটির কথা মনে পড়লে যে বিষয়টি মনে হয় তা হল, হঠাৎ এক সন্ধ্যায় এক সিটিং-এ লেখা হয়েছিল গল্পটি। আবার এনকাউণ্টার গল্পটা কতদিন ধরে লিখেছি। ভাতগল্পের কথা মনে হলে অকাল প্রয়াত কবি বন্ধু তৌহিদ এনামকে মনেপড়ে। এরকম নানান সব শানে নজুল।

দু: আপনি কেন গল্পে এলেন বা কবিতা অন্য কোনও শাখায় কেন কাজ করছেন না বা আদৌ করছেন কিনা?

ব: আমার লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়ে এবং এখনও কবিতা লিখি। বিষয়টি হল কবিতাকে আমার অনেক বেশী আর্ট ওয়ার্ক বা পেন্টিংসের মত মনে হয়। আমার ভাবনার নান্দনিক রুপ দেওয়ার জন্যই লিখতে শুরু করি আর লিখতে যেয়েই সচেতন মানুষ হিসাবে সৃষ্টি হয় দায়বদ্ধতা । গল্প লেখার পেছনে আমার নিজস্ব একটা মত আছে। মানুষের জীবনে অনেক দ্বন্দ উপস্থিত হয়। অনেক কিছুই আছে আপোশ করার নয়, যা আমার বোধে আঘাত করে কিন্তু আমি বিপ্লবী নই বা পথে নেমে যাবার লোক নই। আমি আমার বোধের জন্ম দেই লেখার মাধ্যমে আর তখন এমন কিছু ঘটনা বা বিষয় আছে যা আমার মত করে আমি ব্যাখ্যা দিতে চাই যার বর্ননা বা যাকে বিন্যাসের জন্য কবিতাই যথেষ্টে নয় বলে মনে হয়, তখন আমি গল্প লিখতে শুরু করি। অনেক সময় কবিতা সবার জন্য হয় না কিন্তু গল্প সবার জন্য। সবার জন্য বলতে আমি বোঝাতে চাইছি গল্পের মাধ্যমে সবার কাছে সহজে আমার মেসেজটি পৌঁছে যাবে। বিষয়টি আরো পরিস্কার করে বলা যায় আমার বোধকে যা স্পর্শ করছে সেটা আনন্দের বা কষ্টের যাই হোক তাকে প্রকাশের দায়েই একটি কাহিনী তৈরী করি। সহজ ভাষায় লিখতে পছন্দ করি কেননা আমি চাই আমি যা লিখচ্ছি তা পাঠকে স্পর্শ করুক। আমার কাছে গল্প আমার বোধের দায় থেকে জন্ম নেয়া যা আমাদের জীবনের থেকে আলাদা কিছু নয়।

দু: আপনার গল্পগুলোয় নারী, গার্মেন্ট কর্মী, আদিবাসী এসব প্রসংগ এসেছে বেশ ভাল করে বা বলা যায় এসব নিয়েই আপনার গল্পের জগত। এই ইস্যুগুলো সোশ্যাল এক্টিভিজমের জায়গাতেও বেশ প্রকটভাবেই চর্চিত। এই হিসেবে আপনাকে যদি কেউ এনজিও লেখক বলে আপনি কি তা মানবেন? মানলে কেন না মানলে কেন নয়?

ব: মানুষ সামাজিক জীব বলেই তাঁর ভাবনায় সোশ্যাল এক্টিভিজমের জায়গাটা থাকবেই। আমি তো সামাজিক দায় এড়াতে পারি না। দায়বদ্ধতা আর এনজিও এক নয়, এনজিও একটি ব্যাবসা। আমাকে এনজিও লেখক বললে সাহিত্যের পাঠক হিসাবে দুর্বলতার প্রকাশ পাবে। মানা না মানার বিষয় এটা নয়। এনজিও গল্পও লেখা হয়। সেগুলো তাদের জার্নালে ছাপাও হয়। আমি কোন এনজিও তে চাকুরী করছি না। আপনার কি মনে হয় মানবিক মানুষ হিসাবে সোশ্যাল এক্টিভিজমের বিষয়টিকে এনজিও-র কাছে আমরা ইজারা দিয়েছি? এ বিষয়ে ভাবলে এনজিও কর্ম হয়ে যাবে! সমসাময়িক বিষয়কে কেন্দ্র করে গল্প লিখতে পছন্দ করি। নারী প্রসঙ্গ সবসময় ছিল এবং থাকবে, গার্মেন্ট কমী এবং আদিবাসী বিষয়টি কি আমাদের নতুন নতুন প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে নাহ? সমসাময়িক র‌্যাব-এর প্রসঙ্গেও আমি লিখেছি, এখন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলেদের নিয়ে লেখেছেন। আমি র্গামেন্ট বা র‌্যাব প্রসঙ্গ লিখছি এ সবই লেখকের কর্ম। এনজিও নয়।

দু: গল্পে আপনি বিশেষ কিছু কি করার চেষ্টা করেন? করলে সেটা কি ও কিভাবে?

ব: বিশেষ কিছু হয়ত করি না, চারপাশের জীবনটাকেই তুলে ধরি। তবে তা প্রশ্ন সমেত তুলে ধরার চেষ্টা করি। সে প্রশ্নের কোন সমাধান আমি দেই না। জানা একটি জীবনের বল পাঠকের দিকে তুলে ধরি, যদি পাঠক সেই প্রশ্নের উত্তর বক্সে কোন একদিন গোল দিয়ে বসে। পাঠক বলতে আমি সামগ্রিক জনগোষ্টিকেই বোঝাচ্ছি।

দু: সমসাময়িক কাদের গল্পকে আপনার ভাল লাগে ও কেন?

ব. সমসাময়িক বলতে আমি ধরে নিচ্ছি লেখক যে সময়ের বা বয়েসরই হোন না কেন, তাঁর বর্তমান লেখাগুলির কথা। অনেকের গল্পই ভাল লাগে লম্বা লিষ্ট হয়ে যাবে। তবে একথা সত্যি যে একজন লেখকের সব গল্প যে ভাল লাগছে তা কিন্তু নয়। যেমন ধরুন আপনি এ মেলায় দশভুজা নামের একটি গল্পের বই দিলেন তার কিছু গল্প ভাল লাগল কিন্তু অনেকগুলো ভাল লাগেনি। যারা এখনও নিয়মিত লিখছেন তাদের নাম উল্লেখ করেই বলছি- শাহাদুজ্জামান, অদিতি ফাল্গুনী, মাহবুব মোরশেদ, আহম্মেদ মোস্তফা কামাল, প্রশান্ত মৃধা, মশিউর রহমান, শাহানাজ মুন্নী, বরকত উল্লাহ মারুফ, মনিরুজ্জামান মন্ডল, তানিম হুমায়ূন, মাজুল হাসান, এমরান কবিরসহ অনেকের গল্পই ভাল লাগে।

দু: সমসাময়িক কাদের গল্পকে আপনার ভাল লাগে না এবং কেন?

ব: আমার খারাপ লাগল বলেই কোন গল্প খারাপ হয়ে যাবে না। হয়ত অন্য এক পাঠকের সেই গল্পটাই সবচেয়ে ভাল লেগে গেল। যাদের গল্প ভাল লাগে তাদেরই হয়ত কিছু গল্প খারাপ লাগে।

দু: গল্প লেখা বা লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনি কাকে বেশি অনুসরণ করেন এবং কেন?

ব: আমি কাউকে অনুসরন করছি বলে মনে হয় না। তবে আমার সারা জীবনের পাঠের একটা মিশ্র ছায়া কখনও কখনও গল্পে থাকতে পারে। ধন্যবাদ