কবিতা আর যে কোনও শিল্প মাধ্যমের মতই প্রস্তুতি দাবি করে বলে আমার বিশ্বাস: শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Aug 30, 2012 10:14:57 AM

সহযোগী সম্পাদক: কৌরব,

কবিতার বইঃ

দহনখাতা থেকে, উজ্জীবন, জাদুপাহাড়ের গান, চিতাবাঘ শহর, বৌদ্ধ লেখমালা ও অন্যান্য শ্রমণ।

অনুবাদঃ

আন্তোনিও মাচাদোর নির্বাচিত কবিতা পথ তৈরি হয় চলতে গিয়ে মূল স্প্যানিশ থেকে অনুবাদ, পনেরো-দাবিদ রোসেমান-তাউব-এর ১৫টি কবিতার অনুবাদ।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার কাছে পরপর কতগুলো ছবি বা ঘটনা জড়িয়ে গিয়ে উপস্থিত হয় যাদের আমি এড়াতে পারিনা, কথায় লিখে ফেলার একটা তাগিদ আসে, তাই লিখে ফেলি। একধরণের স্বাভাবিকতা বলতে পারেন।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: অনুভূতি প্রকাশে হয়ত প্রস্তুতি লাগে না। কিন্তু কবিতা আর যে কোনও শিল্প মাধ্যমের মতই প্রস্তুতি দাবি করে বলে আমার বিশ্বাস। কবিতা পড়া শুধু নয়, নানা দিকে অনুভূতিকে সজাগ রাখা দরকার মনে হয়। আর পড়া ও অন্যান্য দেখা তাকে কাঙ্খিত একটা চেহারার কাছে পৌঁছে দিতে পারে। কবি শিখবে লেখার উচিত অনুচিতের দিকটা। ব্যাকরণের দিকটা। অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের সঙ্গে বিনিময়ের দিকটা। আমার মনে হয় এটাই প্রস্তুতি।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: যে কোনও কবিতা পাঠকের মত আমার কাব্যরুচি আসলে ৩০ বছর আগের কবিতাকে ঘিরে বেশি আবর্তিত হয়। সমসাময়িকদের মধ্যে যখন স্বীকৃতি পাওয়া নিয়ে আকুতি দেখি মনে হয় তাঁদের প্রিয় কবি কি সমসাময়িক কেউ? না। কারণ কোনও সমসাময়িক নিজের বড় কবি আর কাউকে ভাবেন বলে মনে হয়না! Jokes apart, আমার কবিতার মধ্যে নতুনত্ব্বের সন্ধান করেন যাঁরা তাঁদের বেশি ভালো লাগে। একটু ঝুঁকি নিয়ে লেখা।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: একই জায়গার কাছাকাছি থাকে উত্তর। আমার প্রথাগত পথে চলা কবিতা পছন্দ নয়। সমসাময়িকদের যাঁরা সেই পথে হেঁটেছেন তাঁদের এড়িয়েই চলি।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: পশ্চিমবঙ্গের ৯০ কবিতার একটা বড় অংশ আবর্তিত হয়েছে বিখ্যাত হওয়ার ঝোঁকে। আর সেটা করার জন্য তাদের লিখতে হয়েছে সম্পাদকের রুচি মত কবিতা। আমি এরকম কবিকেও চিনি যিনি কাগজ বুঝে কবিতা দিতেন। কিন্তু এদের কবিতা মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আমার নেই।

শূন্য দশকে এসে কবিতা অনেক বেশি মুক্ত হয়েছে। এখন ইন্টারনেটের কল্যাণে নবীনতম কবিকেও পড়ার সমস্যা নেই। আর এর ফলেই হয়ত কেটেছে খ্যাতির জন্য সবকিছু করতে পারার মোহটা। নতুন ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা করতে ভয় পায়না। আমি অনেক বেশি নন্দিত থাকি এই দশকের কবিতায়। তবে মূল্যায়ন করার আমি কে? ১৫/২০ বছর পরে হয়ত একটু আভাস বোঝা যাবে।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার বাংলাদেশের কবিতা খুবই কম পড়া। অতএব বলতে পারবনা। ইদানিং ইন্টারনেটের ফলে যাদের লেখা হাতে পাচ্ছি মনে হয়না তাঁরাও পরীক্ষামূলক কবিতা লিখতে পিছপা হন। কৌরব করার ফলেও বেশ কিছু বাংলাদেশের তরুণের লেখা হাতে পাই। ভালো লাগে।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: এই ব্লগ ব্যাপারটা খুবই নতুন আমাদের এখানে। ফলত কিছু দিচ্ছে কিনা বলা মুশকিল। তবে একটা মুক্ত প্রকাশ মাধ্যমতো বটেই। এবং এখানে আর্থিক ব্যাপারটা নেই। ফলে সম্ভাবনা বাড়ছে। আমি স্পেনে/লাতিন আমেরিকায় দেখেছি সেখানে বিশেষ কোনও ব্লগে লেখার সুযোগ পাওয়াকে খুব বড় করে দেখা হয়। একেবারে পত্রিকার ভূমিকাটাই নিচ্ছে ব্লগ।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: এখানেও আমার মত সোজা সাপটা। লিটল ম্যাগের পাঠক একটা গোষ্ঠীকে ঘিরে আবর্তিত হয়। সে দিক থেকে ব্লগ বা ওয়েবজ়িন অনেক বেশি পাঠকের কাছে যায়। কিছু ব্যবহারিক সমস্যা আছে। এখনো বয়স্করা হয়ত ওয়েব-এর সঙ্গে ততটা পরিচিত নয়। তবে আস্তে আস্তে বাড়ছে। এটা আমার কাছে খুব ইতিবাচক একটা দিক। তাছাড়া পাঠকের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হওয়া যায়। এই মুহূর্তের চেহারায় ব্লগ/ওয়েবজ়িনের ভূমিকা ছাপা পত্রিকার চেয়ে বেশি।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলাদেশের হাল বলতে পারবনা। পশ্চিমবঙ্গে এটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায় বন্ধু বান্ধব পড়ে। আর কবি নিজের ও বন্ধুদের লেখা পড়েন। তবে সেখানে মুখ দেখাদেখির একটা খেলা আছে। যেটা ওয়েবজ়িনের ক্ষেত্রে নেই।