বিজয় দিবস ২০১০ বিশেষ সংখ্যা

হাসান কামরুল এর কবিতা

অনেক দিনের প্রশ্ন

(জাতীয় চার নেতার স্মৃতির উদ্দেশ্যে)

কারাগার তুমি কার?

জনগণের না সরকারের!

অপরাধীর না বিচারপতির

বুদ্ধিমতির না নির্বুদ্ধিতার?

অনেক পরে জানতে পেরেছি

বিচার, অপরাধ, কারাগার সবকিছুই ক্ষমতার।

সানু-মজিদের গল্প

প্রতিদিন রুটিন করে বাবা জর্দ্দা নুরানী জর্দ্দার সংমিশ্রিত তোমার পানের পিক আমাদের দেয়ালে ভালোবাসার অসীম বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে।

তোমার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার বিমর্ষরূপ আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে

যেন মনে হয় কোনদিন আমি মেয়ে মানুষ দেখিনি!

লাউ গাছের ডগার সাথে তোমার কথোপকথন, গাছের সাথে নারীর সাবলীল সম্পর্ক

ভালোবাসার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি কতক বিষয়ে তোমার পারদর্শীতায় পরম হিংসুটে আজ ক্রোধ,

কোনটি প্রিয় তোমার কাছে,গরু, বাছুর না গোয়াল ঘর

নাকি খরের স্তুপ থেকে খর খোয়াতে গিয়ে লুকিয়ে রাখা কান্তি!

নাকি তৃপ্তির হাসিতে সন্তুষ্ট তোমার চিত্ত, গাভীর তিলন থেকে দুধ পাওয়ার আশায়।

আত্মসংবরণ

বুঝেনা কোনো, কথা কয় ঘন

করে ঠন ঠন মাথা ভন ভন

লোক সম্মুখে হাসিলে বলে উল্লুকে

এমন লোক পাবি নাকি এই মল্লুকে।

সৈনিক পরাভুত নয়

আমি সিংহের ন্যায় গর্জন করে শিয়ালের ন্যায় পালিয়ে যাবার জন্য জন্ম গ্রহণ করিনি

আমি ওতোটা উদ্ধত নই যতোটা বাহির থেকে আমাকে দেখছো

আমি প্রতারক নই বলেই প্রতারণার বিরুদ্ধে আজ এতো সোচ্চার

আমি কোনোদিনও বিশ্বাস করিনা "জোর যার মুল্লুক তার" ।

আমি অতি সাধারণ, সাধারণই ছিলাম আজীবন

সাধারণই থাকতে চেয়েছি মরনপণ।

ভিন্ন যা দেখছ আমার ভিতর সবই ভিন্নতর

হৃদপিন্ড থেকে উদর

গ্রাম থেকে শহর সর্বদা

আমি শতো সহস্র লাখো

আমাকে দেখো

আমি চিরসবুজ অবিকল

মরে যেতে পারি বলেই সত্যতে অবিচল।

অদিতির কবিতা

নিঃসঙ্গ নির্বাসন

কেন্দ্রহীন কোন কক্ষপথে আমি

প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাই;

পরিধির বাইরে থেকে আমায় টানে অগুণতি নক্ষত্র-ভাতি।

কি এক দুর্বার আকর্ষণে তবু অন্ধকারকেই প্রিয় করে রাখি,

নিশাচরী মন গোপনে লুকায় তার বীতশ্রদ্ধ উপস্থিতি!

মুষ্টিবদ্ধ হাত প্রবল বিদ্রোহে শরীর গুটায়,

স্পর্শের স্নায়ু আবেগে যেন তার ভিন্ন কোন উষ্ণতা চাই,

আলুথালু খোঁপার বাঁধন এলিয়ে পড়ে আঁচলে লুটায়,

অবিশ্রান্ত এই শির, কার কোলে যেন তার পাবার ছিল ঠাঁই।

কাকে যেন ডাকবে বলে_

স্বরযন্ত্রে হঠাৎ কাঁপন উঠেছিল,

পরক্ষণে প্রতিধ্বনি-

কর্ণকুহরে রটিয়ে দিল,

বিদ্রুপ স্বরে, 'একাকিনী!'

ঊষার লগন কি বা সায়াহ্ণ,

আমার আরক্ত চোখে সবই রক্তিম লাগে।

দেয়ালে টাঙানো সেলফ-পোর্ট্রেটে,

হাসির অলংকার দেখে

আমার-

ভী-ই-ই-ষণ ঈর্ষা জাগে!

ভ্রম

একদিন বলেছিলে,

আমার কন্ঠে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই

তোমার কানে, তোমার নাম হয়ে বাজে...

তোমার আটপৌরে জীবনের আটপৌরে ভাবনায়,

আমি এক অন্যরকম উপস্থিতি।

দিন- রাত্তিরের হিসেব জানা তুমি

গোধূলির মায়া খুঁজে নিয়েছিলে আমার মাঝে।

বলেছিলে, তোমার সরলরেখার শেষ বিন্দু আমি,

উন্মাদ ব্যস্ততায় এক রত্তি স্বস্তি।

বর্ষায় বলেছিলে,

প্রকৃতির স্নিগ্ধ সবুজের মতই আমার সজীবতা

তোমার অরণ্যে নিত্য অনুরণিত হয় আমার নিঃশব্দ পদধ্বনি...

বলেছিলে, জীর্ণ পাতার মত ঝরিয়ে দেবে আমার বিমর্ষতা,

ঝিনুকের মত আগলে রাখবে স্বপ্নের পরশমণি।

সেদিন দেখেছিলাম,

আমার অশ্রুধারায় তোমার দিশেহারা অস্থিরতা;

ঠোঁটের কোণে আঙুল তুলিতে এঁকেছিলে হাসি...

আনন্দাশ্রু, সেও যে একইরকম নোনতা-

বুঝেছিলে তুমি, আমাতে তোমার মোহন সর্বনাশী।

সৌন্দর্যকে কে না ভালোবাসে বল?

বড় সাধ হয়, ভালোবাসি...

ভালোবাসি কাব্যকথার সেই মিথ্যে আরাধনা!

বলেছিলে,

তোমার তৃষ্ণার্ত হৃদয়াকাশে আমি রংধনু হয়ে এসেছিলাম,

বলনি...

একবার বৃষ্টি ঝরে গেলে তুমি আর আকাশের পানে ফিরে চাও না।

সুরাইয়া হেলেন

ওম্ শান্তি

ইট পাথরের রাস্তার পাশে

ডাস্টবিনের উপচে পড়া বর্জ্যে

সবুজহীন ন্যাড়া শুষ্ক মৃত

খটখটে গাছের শীর্ণ ডালে

অথবা ছাদের পানির ট্যাঙ্কের

গলিত লাশের গন্ধে,

জবাই করা লাশের রক্তের ঘ্রাণে

আনন্দিত নয়,

শংকিত উদ্বিগ্ন কালো কাকেরা

ধ্বংসের গানে রত অবিরত !

শস্য শ্যামল সবুজ বসুন্ধরায়

শকুনীদের ওড়াওড়ি অনাগোনা !

আমি আর শকুন কাক চিল নয়,

দেখতে চাই নীলকণ্ঠ,শুভ্র বক,

হলদে বউ কথা কও,

সিঁদুর পরা বুলবুলি

আর শুনতে চাই দোয়েলের শিষ

ময়না-টিয়ার স্বাগতম ধ্বনি,

’ইষ্টি আইছে পিঁড়ি দাও

ওম্শান্তি ওমশান্তি ওমশান্তি

শান্তি আইছে বসতে দাও ।’

সেই হেমন্ত

মনে পড়ে,মনে পড়ে কি সখা?

এমনি এক হেমন্তের সন্ধ্যায়

কত গল্প কবিতা গানে কেটেছে সময়

ধোঁয়াশা কুয়াশা জড়ানো ভালোবাসায় !

মনে কি পড়ে না,একটুও না

সেই নবান্নের উৎসবে আনন্দে

হারিয়ে যাওয়া হৃদয়ের ভেতর

কী এক নৃত্যপাগল ছন্দে !

ভুলে গ্যাছো সেই হেমন্ত

সেই কার্তিক,সেই অঘ্রাণ

ভুলেছো সেই গুবাক তরুর সারি

সেই আলোছায়া আবছা বাতায়ন !

নেট-তরুণ

‘ব্রোথেল হোমগুলো ঢাকার কোথায় জানো কি তুমি?’

ছোটবেলায় পুরনো ঢাকার টিপু সুলতান রোডের

কাছের কোন এক গলিতে ঢুকে পড়েই

অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েছিল একটি ছেলের চোখে !

সে দৃশ্য আজো ভাসে—

দরজায় দরজায় লাল ঠোঁট আর গাল-পালিশ লাগানো

লাশের মতো সাদা পাউডার মাখা মৃতদেহগুলো

ভূত-পেত্নীর মতো দন্তবিকশিত করে হিঁহিঁহিঁ হাসছিলো,

ভয় পেয়ে ছেলেটি দৌড় দিয়েছিলো—

ছেলেটি এখন বারিধারায় ।পুরনো ঢাকা অনেক দূর !

গুলশান বনানীতে খোঁজ করছে হন্যে হয়ে,

এক বন্ধু জানালো,ডি.ও.এইচ.এস-এর এক

সম্ভ্রান্ত বাড়িতে ঐ রকম এক হোম বানিয়েছে

মস্ত নামী-দামী এক সমাজ সেবিকা !

মফস্বলের মেয়েদের দাসীবৃত্তি,স্বামী-পিতার নির্যৃাতন;

গ্রাম্য-মোড়ল আর যৌন অত্যাচার থেকে বাঁচিয়ে

ঠাঁই দিয়েছে প্রাসাদোপম বাড়িতে ।

বিদেশি কসমেটিকস ফ্যাশনেবল ড্রেসে পাল্টে ফেলেছে

গ্রাম্যতা—স্পোকেন ইংলিশে হাই হ্যালো,

বাংলাভাষার জড়তা গেছে কেটে,

মোবাইল ফোন হাতে আর কানে…হ্যালো—

ভার্সিটির মেধাবী উচ্চাভিলাষী মফস্বল বালিকাও

যোগাযোগ রাখে ঐ আন্টির সাথে,

সময়ে অসময়ে,প্রয়োজনে,মানিব্যাগের টানাটানিতে

নতুন শাড়ি ড্রেসে শহুরে বান্ধবীর সাথে পাল্লা দিতে

মোবাইল কলে চলে আসে—এদের মূল্য একটু বেশি !

কলেজ অথবা ভার্সিটি গার্ল--ভার্জিন,কুমারীত্ব,হাসালে !

বস্তাপচা বুলি,--সতীত্ব হারানো স্মার্টনেসের নমুনা,

তা নয় তো জাতে ওঠা যাবে না—

ওপর মহলে আনাগোনা—মেয়েটি বলছিলো—

বন্ধুর জ্ঞান দেখে ছেলেটি উত্তেজিত !

‘এ্যাড্রেসটা এখুনি দে দোস্ত—

যা জোস্ খবর এনেছিস !’

মধ্যবিত্ত বন্ধুর মুখ শুকনো,‘না না,

খারাপ রোগ এইডস,সিফিলিস-গণোরিয়া—’

‘মিডিয়া শিখিয়ে দিয়েছে সুরক্ষা পদ্ধতি—

নিশ্চিন্ত নানা ব্রান্ডের নাম কে না জানে !’

‘তবু কিন্তু থেকে যায়—মুখের লালা,দংশন—’

‘হা হা হা;এত চিন্তার কী আছে?

আগে উপভোগ পরে—কী রে,কী বলিস?

এই হ্যাঁ,হ্যালো হ্যালো—’

ছেলেটির মা তার ব্যস্ত ডাক্তার স্বামী আর

ছোট্ট শিশুটিকে ছেড়ে চলে গেছে

আমেরিকা-প্রবাসী এক উচ্চবিত্তের হাত ধরে!

বারিধারার ট্রিপ্লেক্স প্রাসাদোপম বাড়ির

নিরালা নিজ রুমে শুয়ে ছেলেটি নেটে চ্যাট করে

গভীর হতাশায় ডুবে গিয়ে বলে,

‘জানো আমার জীবন দীপু নাম্বার টু-এর মত !’

ছেলেটি একটি প্রাইভেট ভার্সিটির বি.বি.এর ছাত্র

আই..ডি.—orion_33bd, নাম অনিরুদ্ধ,সে বলেছিলো---

নির্ঘুম নীরব হেমন্তের রাত

শুভ: ঘুমিয়েছিলো বিশ্ব চরাচর

সাথে তুমি ও তোমার শহর

আমার দু’চোখ জেগেছিলো নির্ঘুম

রাত্রির প্রতিটি প্রহর…

সুর: তুমি ছিলে নির্ঘুম

আমিও জেগেছি নীরবে

কথা বলেছি হৃদয়ে হৃদয়ে

মূক হয়ে যাওয়া ভালোবাসার উৎসবে!

অনুভবের দরোজায় করেছি করাঘাত

তুমি শোন নি কি?

সঙ্গী ছিলো হেমন্তের রাত !

শুনেছি অব্যক্ত সুখের যন্ত্রণার ধ্বনি

তবুও কেটেছে রাত স্বপ্নের জাল বুনি

এই ভালোবাসা বেদনার চিরন্তন সাথী

জানি আমি,জানো তুমি,

তবুও জ্বেলেছি প্রেমের বাতি !

ইয়াসমিনের কবিতা

১. আত্মকথন

আমি প্রতি রাত জাগি- আর তোমাকে ভাবি

তবুও ক্লান্ত হয়না আমার মনের জমিন

সারারাতে যাতে কর্ষণ করে ফলাই তোমাকে

তুমিই ক্লান্ত হও, সৃষ্টি হতে হতে আমাতে!

নিয়ত রাতে শরীর ও মন অবসাদে ভোগে না তোমার

পরম তৃপ্তি জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড় সহজে

তুমি কি জান, রাত জাগা একাকিত্বে কে আমার সঙ্গী হয়?

দেয়ালে ঝোলানো ঘড়িটাই আমার পরম বন্ধু!

সে আমার সবটুকু মনযোগ দখলে রাখে সারারাত,

তার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমি বাধ্য হই।

এপাশ ওপাশ করে যখন অস্থির হই-

ক্লান্তি নিয়ে যখন ঘরময় শুধু হাঁটি,

পান করো চঞ্চল তৃষ্ণার জল-

তবুও সে ছুটে চলে বিরামহীন,

ফিসফিসিয়ে কানে এসে বলে-

`কবিতা লিখ, এখন সময় হয়েছে কবিতা লেখার।'

আমি লিখতে বসি.... কিন্তু কবিতা হয়না আমার।

এবার সে তাড়া দেয়

বলে, `ভোর যে হল'

আমার ভোর হয়না, আমার রাত হয়না,

আমার কবিতা হয়না-

আমি কবিতার পাতায় শুধু তোমাকে আঁকি।

আমার প্রতিটি রাত কাটে তোমাকে এঁকে

আমার প্রতিটি দিন কাটে তোমাকেই ভেবে।

২. আমি পারিনি

ঘড়ির কাঁটাটা আজও ছুটছে আগের মতোই

তার সাথে তাল দিয়ে সূর্য উঠছে, ডুবছে।

কেটে যাচ্ছে সকাল, দুপুর, সন্ধা, ভোর-

পাগলটা ভালবেসেছিল আমায়, জীবনকে তুচ্ছ করে,

কিন্তু আমি পারিনি….

সে চলে যাওয়ার সময় এলে সে বলেছিল-

আমি চাইলেই সময়কে দাঁড় করাবে ঘড়ির কাঁটায়

সাগর- নদীকে ফিরিয়ে দেবে পাহাড়ের বুকে-

ভালবাসার ঊষ্ণতায় ঘটাবে প্রেমের অগ্নুৎপাত!

আমি পারিনি কিছুই..

তাকে বলেছিলাম পাগলামীটা ছেড়ে দিতে

ভালবাসাকে নিলামে তুলে সর্বোচ্চ মূল্য নিতে

সে শুধু তার অশ্রূর ঝরণা ঝরিয়েছিল!

আমি সেই জলে অবহেলার মরুতে ফলিয়েছি ফসল।

ঝরে ঝরে নিঃশেষ হয়ে পাগলটা চলে গেছে

শুধু আজও আমি পারিনি তাকে ভুলে যেতে

সে ভালবেসেছিল আমায়-

শুধু আমি পারিনি.....

৩. পাখি

ও পাখি, ও চিল, শোন-

আমাকে একটু উষ্ণতা এনে দেবে?

তোমার ঐ দু'ঠোটে ভরে

অথবা পালকের ভাজে করে

হৃদয়ের উষ্ণতা

এক চিমটি উষ্ণতা আমার চাই।

সিক্ততায় থেকে থেকে হিম হয়েছে অন্তর

বরফ জমে হয়েছে জড় পাহাড়

শীতলতার জ্বালা যে নিদারুণ পোড়ায়

দেবে কি একটু উষ্ণতা এনে?

তুমি তো যেতে পারো সূর্যের খুব কাছে

দু'চোখ মেলে উত্তাপ ভরো অন্তরে

রোদের আলোয় তোমার হৃদয় সাজে

আমাকে দেবে কিছুটা উষ্ণ আলো?

আমার হৃদয় গলে ঝর্না হওয়ার স্বপ্ন দেখে

নদী হয়ে পেতে চায় সাগরের সঙ্গম

বাস্প হয়ে উড়তে যাবে আকাশে

সূর্যটাকে ছুঁয়ে শোধ করবে এ উষ্ণতার ঋণ।

শুধু এক চিমটি উষ্ণতা আমার চাই-

দেবে কি ?

৪. কষ্ট মিশে স্পর্শসুখে

অনেকদিন হল দেখা হয়নি তোমার

যদিও কথা হয় ফোনে ,তাতে কি মন ভরে ?

আজ সন্ধায় তোমাকে ভেবে মনটা ভারী হল অনেক,

আমি তখন ছুটে গেলাম ছাদে ।

আকাশটার মেজাজও ভাল মনে হচ্ছিল না আজ

কাল বৈশাখীর চেহারায় সাজছিল কয়েকদিন ধরে।

বাতাস বইছিল এলোমেলো।

ছাদের পাশে আম গাছটার মুকুল ঝরছে ঝির ঝির

গন্ধটা বাতাসে মিশে ভরিয়েছে মাদকতায়।

তোমার ফোন পেলাম-

তুমি জানতে চাইলে আমি কেমন আছি,

এতদিন তোমাকে না দেখে আমি কেমন থাকি বল?

আমি ছাদে আছি জানতে তুমি বললে, ‘আকাশে চাঁদ আছে কিনা’।

বললাম ‘পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে আছে’

তুমি বললে, ‘ঠিক তোমার মনের মতো!’

আমি বললাম ‘মনটাও তো একটা আকাশ’

এবার তুমি আমাকে কবিতা শোনাতে থাকলে

আমার মন খারাপ হলে বানিয়ে বানিয়ে তুমি কবিতা বল।

তোমার হাসানোর চেষ্টা বিফল হল না আজও।

আমি যেন স্পর্শ পেলাম তোমার প্রেমের

আর নিমিশেই সব কষ্ট মিশে গেল সেই স্পর্শসুখে।

কথার ফাঁকে তাকালাম ছাদের লাউয়ের মাচায় ,

চাঁদের আলোয় লাউ ফুলগুলো তারার মতো জ্বলছিল।

ছাদটা যেন অন্য একটা আকাশ!

মেঘ কেটে চাঁদটি আকাশ থেকে নেমে এসেছে যেন ছাদে!

তোমাকে বললাম, ‘আজ চাঁদের পূর্নিমা বুঝি?’

তাই মেঘগুলো যেন লজ্জ্বায় পালিয়েছে কোথাও

তুমি বললে , ‘তোমার হাসিতে চাঁদকি লুকাতে পারে মেঘে?’

৫. অবশেষে তুমি এলে---

অবশেষে তুমি এলে---

আর কোন বিকেলের অপেক্ষা না করে

এক নির্জন দুপুরেই

তুমি চলে এলে।

পিছনে ফেলে অনেকটা পথের ক্লান্তি,

তুমি এলে।

এসে কড়া নাড়লে আমার দরজায়।

আমি প্রস্তুত ছিলাম না কোন ভরদুপুরে পেতে তোমায়।

দু'চোখের কোণ ভিজে এল তোমাকে পাওয়ার খুশিতে।

আমার প্রতীক্ষার আর্তনাদ অবশেষে তোমাতে পৌঁছায়

বেদনার অশ্রু বাস্প হয়ে বাতাসে মিশে ছুয়েছে তোমায়

কষ্টগুলো আঁধারে মিলে বাড়িয়েছে তোমার রাতের হিংস্রতা

তাই দুপুরের আগেই আজ তোমার বিকেল হলো,

সেই বিকেল,

আমার অপেক্ষার বিকেল।

দু'হাত বাড়িয়ে তুমি দাঁড়ালে দরজায়

আমার বিরহবিধুর প্রাণটা যেন জীবন পেল ।

তুমি এলে কাছে,

এসে ভিজিয়ে দিলে আমায়

ভালবাসার ঊষ্ণ বৃষ্টিতে ।

তোমাকে পেয়ে মনে হল -

তুমিতো দুরে ছিলে না কোনদিন

নিঃশ্বাসের প্রতিটি পলে তুমি ছিলে

কখনো তোমাকে টেনে বুক ভরিয়েছি

কখনো তোমাকে ছেড়েছি পরম শান্তিতে।

তুমি ছিলে,তাই প্রাণও ছিল

বিরহ বেদনায় ওষ্ঠাগত হয়ে।

ভালবাসার সার্থকতা তো বিরহে পূর্ণ

তাইতো এতো ভালবাসি বিরহকেই।