লেখার চেয়ে অনেকেই দল নিয়ে মেতেছেন: জুবিন ঘোষের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 5, 2012 1:28:54 PM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

জুবিন ঘোষ: মানুষের থ্যালামাস অংশটা খুব জটিল দুপুর। এটাই আমাদের Relay Station, এখানে আমাদের যাবতীয় আবেগ, আচরণ, অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়। কখন সেই সেরিব্রা স্পাইনাল রস কীভাবে তাড়িত হবে কেউ বলতে পারে না । ছোটবেলা থেকে যে সব শব্দ আমরা শিখি ঘটনাচক্রে সচেতন (Consciously) বা অবচেতনভাবে (Sub-consciously) সেই শব্দগুলো হঠাৎই আমরা কোনো একদিন সাজিয়ে ফেলি । প্রথমে সেটা একটা বাক্য হয় । কখনো সেই বাক্যটাই হয়তো একটু অন্যরকম চেহারা নেয় , তার মধ্যে কোথাও যেন একটা গর্ভাবস্থা লক্ষ্য করা যায়, কোথাও একটা সম্ভবনা উসকে দেয় । সাধারণ একটা মানুষ থেকে কবি হয়ে ওঠার হবার প্রাথমিক স্তরটাই হলো সেটা – কবি হল সে যে সেই সম্ভবনাটাকে প্রথমেই চিনতে পারে, তাকে একটু সাজাতে ইচ্ছে হয়। আগে বা পরে কিংবা একেবারে বাক্যের পেটের মধ্যে নতুন শব্দ যোগ করতে বা ছেটে দিতে ইচ্ছে করে । এই ইচ্ছেটা হল দ্বিতীয় তাড়ণা – বলতে পারেন কবিতা মতো একটা লেখা হয়ে ওঠার আরেকটা সিঁড়ি। সেভাবেই দাঁড়িয়ে যায় অপরিণত বা পরিণত কিছু পঙক্তি । প্রথম লেখার ক্ষেত্রে কোনও “ইজম” মানে না – সেটা যথার্থই হয়ে উঠতে চাওয়া বা হঠাৎ হয়ে ওঠা প্রথম সন্তানের মতো। দেখবেন সদ্য প্রসূত যদি না কাঁদে, তবে তাঁকে ঝাকিয়ে বা পেছন থেকে থাবড়া দিয়েকাদাতে হয় । প্রথম বাক্যটার পরে এই থাবড়া দিয়ে কাঁদানোর চেষ্টাটাই হলো সেই সদ্যজাত কবির প্রথম কাজ। এই থাবড়া দিতে দিতেই কবি একদিন শিখে যান কতোটা জোড়ে থাবড়া দিলে কবিতাটা সোচ্চার হয়ে উঠবে। এই সময়টায় কবি তার নিজস্ব ভাষার সন্ধান করছেন । দেখতে দেখতে একদিন আর থাবড়া দিতে হবে না , জন্মলগ্নেই বাচ্চাটা কাঁদতে শুরু করে – তখন বুঝতে হবে কবি তাঁর নিজস্ব ভাষা পেয়ে গেছেন।

কিছু ক্ষেত্রে কবিতার লেখার নেপথ্যে অপ্রাপ্তি, মোহপ্রাপ্তি, ঘটনা দ্বারা তাড়িত এবং কবিযশপ্রার্থী ব্যাপারটাও দেখা যায়। আমি অনেককে এমন দেখেছি যে অপ্রাপ্তি ও নির্জনতা একজন মানুষকে কিছু লেখার জন্য খাতা পেন টেনে নিতে হচ্ছে, যে কথাগুলো আমরা বলতে পারি না তাকে এই শিল্পের মাধ্যমে আমরা ফুটিয়ে তোলবার চেষ্টা করি, কখনো তা সোচ্চার প্রতিবাদ হয়ে প্রতিকবিতার রূপ নেয়, কখনো নির্জন শব্দতরঙ্গে লুকিয়ে থাকা নীরব বেদনা হয়ে ওঠে।

এই রকম হাজারো নেপথ্য কারণের মধ্যে আমার কবিতা লেখার পেছনে আদৌ কোনও কারণ আছে বলে আমি জানি না। বেশিরভাগ সময়েই সৃষ্টির ও আবিষ্কারের আনন্দে আমি কবিতা লিখি। আমি মনে করি লেখাটাই আমার কাজ, আমি লিখতে ভালোবাসি কেউ দেখুক বা না দেখুক। আমি যখন শুতে যাই, যখন ট্রামে থাকি, যখন একা থাকি, যখন খাই, কোনও একটা লাইন এইভাবেই জন্ম নেয়। উঠে পড়ি, লাইনটা লিখে রাখি যেখানে জায়গা পাই। মাঝে মাঝে হারিয়েও যায়; আর সেটা হারিয়ে গেলে খুব কষ্ট হয়। আমি ভাবি, নানান বিষয় ও রহস্য নিয়ে ভাবি, কখনো নির্জন শ্মশানে পড়ে দেখি নাভিকুণ্ডের চলে যাওয়া, তাকে নিয়ে একটা ভাবনা আসে। আসলে কবিতা আমার কাছে একটা ভৌতিক প্রচ্ছায়া, তাকে কিছুতেই আমার দেহ থেকে ছাড়াতে পারি না। তবে আমার কবিতার মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ থাকে, তাকে আমি এড়াতে পারি না, আমায় কিছু বলতে হবে ... এখনো কবিতায় অনেক কিছু বলা বাকি ...

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার ?

জু: কবিতা লিখতে বসা মানে কোনো সেমিস্টার টেস্ট, ইউনিট টেস্ট বা বা পাশ করে বেরোনোর বাধ্য বাধকতা থাকা পরীক্ষা নয় যে প্রস্তুতি থাকতে হবে! কবিতা লেখবার জন্য প্রস্তুতি বলে আদৌ কি কিছু হয়? আসলে কবিতা লেখার জন্য লেখার টেবিলে বসতে হয়, কবিদের দেখার পরিসীমা ও বিস্তৃতিকে বাড়াতে হয়। উপাদানগুলোকে চিনতে হয়। জানি না এটাকে প্রস্তুতি বলব কি না! অনেকেই বলেন প্রকরণ, আমি নিজে দেখেছি প্রকরণ জেনে ও তাকে মিলিয়ে কবিতা কবিতা হয়ে ওঠে না , প্রকরণটা বাহ্য, আসলে বোধটা খুব জরুরি। তার সঙ্গে জরুরি শিল্পবোধ। দেখার ভঙ্গীটাকে আলাদা হতে হবে । আসলে প্রতিভা থাকলেই হয় না, লিখতে লিখতে ভাষাটা তৈরি হয়। যে কোনো শিল্পের মতো এটাও কবিকে চর্চা করতে হয়। প্রকরণ মিলিয়ে ছাঁচে ফেলে দিলেই কবিতা হয় না । ভালো কবিতা হয়ে ওঠার জন্য ভীষণভাবে সেই ম্যাজিকটা দরকার যার মাধ্যমে কিছু মানুষ তার সঙ্গে সম্পর্ক (রিলেট) করতে পারে। আগেকার সময় হলে বলতাম না পড়াটা দরকার , কিন্তু এখনকার সময় অন্য কবিতা পড়াটাও খুব জরুরি। অনেক কথাই লেখা হয়ে গেছে। তার পুনরাবৃত্তি কখনই কাম্য নয়। আমার নিজের কাছে মনে হয় কবিতার মধ্যে কোনো একটা দর্শন থাকা ভীষণ জরুরী । মানুষ কবিতা পড়ে কেন, সে নিজেকে খুঁজে পেতে চায়, তার মধ্যে নিজেকে খোঁজে, কোনও একটা অদেখা প্রাপ্তিকে খোঁজে। কবির ওপর সে আস্থা রাখে, কেন? কারণ কবি হল সেই শ্রেষ্ঠ জীব যে সেই মানুষটার হয়ে কথা বলে। এই দায়িত্বটা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কবিরা ভুলে যান। এখন এই যেগুলো বললাম সেগুলো ছাড়াও কবিতা হয়ে ওঠার ভুঁড়িভুঁড়ি উদাহরণ আছে, কিন্তু কতদিনই বা সেগুলো টিকে থাকে? আর একটা জিনিস কোথাও না কোথাও কিন্তু প্রতিভার মূল্যটা থেকেই যায়! প্রতিভা ও চর্চার যুগলবন্দী, তার সঙ্গে যাপন, প্যাশন , ভাবনার ব্যাপ্তি ও প্রতিবার নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে , গভীরতা ও সব শেষে পোয়েটিক শোল কবির জন্য খুব জরুরি। আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি ভালো মানুষ না হলে ভালো কবিতা লেখা যায় না। নইলে কবিতার মধ্যে কুটিলতা চলে আসবেই । মানবতা বিরোধী কোনো কিছুই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এই জন্যেই নিজের ভেতরের অন্ধকারগুলোর সামনে কবিকে বারবার দাঁড়াতে হয়, তাকে দূর করতে হয়। পোয়েটিক শোল কথাটা ইংরাজি অভিধানে এমনি এমনি আসেনি।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

জু: কার কথা ছেড়ে কার কথা বলি বলুন তো ? একজনের কথা বললে আর একজন মনে লাগবে । আমার সবার কবিতাই ভালো লাগে । অদিতি বসু রায়, শ্রীজিৎ, রাজদীপ রায়, ভাস্করজ্যোতি, রাজদীপ পুরী , রঙ্গীত মিত্র, তন্ময় মণ্ডল (অকাল প্রয়াত), রিপণ, বিদিশা সরকার, নির্মাল্য বন্দোপাধ্যায় আকাশলীনা, রাহুল বিদ, রমিত দে, সৌরভ দে, কিশোর ঘোষ, অনন্যা সিংহ, ইন্দ্রনীল ঘোষ, শুভম শুঁই, সোমব্রত সরকার, নির্বাণ, সুপ্রভাত, সঞ্জয়, সৌভিক, দেব মাইতি, মোহম্মদ সেলিম, অনিমিখ, দেবায়ূধ চট্টোপাধ্যায়, এষা ঘোষ, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, বিপ্লব মজুমদার, নভনীল চট্টোপাধ্যায়, কিশলয় ঠাকুর, হিমালয় জানা, জিৎ মুখোপাধ্যায়, কুবলয় বসু, অনির্বাণ ঘোষ, মনোজিৎ, অনুপম মুখোপাধ্যায়, জুঁই সরকার, বাংলাদেশের পিয়াস মজিদ, মেঘ অদিতি, বিধান সাহা, তুহিন রায়, সাজ্জাদ, শৌনক দত্ত তনু সবার কবিতাই ভালো লাগে, তবে অনেকে হারিয়ে গেলেন যোগ্য পরিচর্চার অভাবে। অনেক ক্ষেত্রেই লেখা রাজনীতির শিকার হয়ে। বাংলাসাহিত্যে আজও আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে আছি। লেখার চেয়ে অনেকেই দল নিয়ে মেতেছেন। এতে বাংলা সাহিত্যের ক্ষতিই হচ্ছে ।

তবে ভালো লাগে যখন দেখি আমাদের পরবর্তী একটা তুমুল স্রোত আসছে। তারা এখন পাগলা ঘোড়ার মতো পা ঠুকছে। সম্বিত বসু, মিলন চ্যাটার্জী, রিক সৌরক, অনিন্দ্যসুন্দর রায়, সায়ন দাশ, ছন্দম মুখোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম রায়, সৌরভ মুখোপাধ্যায়, শ্রেয়া , রাজর্ষি ঘোষ , রাজণ্য রুহানি , সায়ক , নির্মাল্য চ্যাটার্জী , ঐন্দ্রিলা , পৃথা বারি, পৃথা রায়চৌধুরী, অত্রি , সুচেতা রায়, ঋষভ মণ্ডল , নিশান চ্যাটার্জী, শুভ্রনীল সাগর, সোমনাথ দে, রুদ্র, প্রীতম রায়, সুমি, অয়ন দাশগুপ্ত। এই স্রোতটা কিন্তু খুব শীঘ্র বাংলা সাহিত্য দখল করতে আসছে ।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

জু: সমস্ত মাধ্যমেরই কিছু উপযোগিতা থাকে। অল্টারনেট মিডিয়া হিসেবে ব্লগও বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরছে পাঠকের বিশালত্বের সামনে । কবি ও লেখকদের উৎসাহিত করছে । আজকাল অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে ব্লগগুলোতে। সবচাইতে বড় কথা ভৌগোলিক ব্যবধানকে কমিয়ে আনছে। প্রিন্টেড ম্যাগাজিন যারা পড়তে পারেন না, সহজেই তারা ব্লগ খুলে এখন বাংলা পড়তে পারেন। এটাও তো একটা প্রাপ্তি কবি ও পাঠক উভয়ের কাছেই। ডাইরেক্ট ইণ্টার অ্যাকসনটা বাড়ছে। তবে বিশাল কিছু পাল্টে দেবার মতো কাজ হচ্ছে বলা যাবে না। কিছু কিছু ব্লগ সত্যি ভালো। আপনার অলস দুপুরেও বেশ কিছু পদক্ষেপ ভালো লেগেছে।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

জু: এখনো ছাপার অক্ষরের কালির স্বাদ আলাদা, তার স্ট্যাটাসও আলাদা। ব্লগগুলোর এই জায়গায় পৌঁছতে আরও সময় লাগবে। মানুষ এখনও আন্তর্জালের সঙ্গে সেভি হয়ে উঠতে পারেনি । এখনও বাংলা সাহিত্যের ১০ শতাংশও ইন্টারনেটমুখি নয়। পাড়ার সাইবারকাফেগুলোয় বাংলা ইউনিকোড খুঁজে পেলে এখনও তা হীরকপ্রাপ্তির সামিল। লিটলম্যাগের এখনো তার গুরুত্ব হারানোর সময় আসেনি। বাংলা সাহিত্যে শুধু ব্লগ বা এফবির কবিরা কূলগোত্রহীন কবিদের মতোই।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

জু: এক কোথায় বলতে পারি নব্বই এর দশকে হুড়মুড়িয়ে একসঙ্গে অনেকজন অনেকজন প্রতিনিধিত্ব করার মতো কবি পেয়েছিল, সেদিক থেকে দেখতে গেলে শূন্য দশকে আমরা অনেকজন বাদ দিলে একটা গোটা দশকের প্রতিনিধিত্ব করার মতো কবিদের অভাব অবশ্যই পরিলক্ষিত হয়। শূন্য দশক নিয়ে আমার অনুভব একটা কবিতার মাধ্যমেই বলি -

শূন্য দশক

হাত ধরে রাখো

পাশে রাখো সরবিটেড

যে কোনও মুহূর্তে হারিয়ে যাবে

ঘনিয়ে আসবে কাকসন্ধ্যা

খড়ের গাদায় মৃত প্রজাপতি

সুঁচের মতো হারিয়ে যায়

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

জু: আগেই বললাম সবার লেখাই ভালো লাগে, আলাদা করে আমি কবিকে দেখি না, বরং কবিতাড় উপাদানকে দেখি, বুনট কতোটা মজবুত হলো, কবিতাটা কতোটা মানুষের হয়ে কথা বলছে সেটাই প্রধান বিচার্য। কারুর কারুর কোনো কোনো কবিতা অপছন্দ হতে পারে, কিন্তু সেই কবির হাত দিয়েও একটা দুর্দান্ত কবিতা বেরলে আমি উচ্ছ্বাসিত হই। সুতরাং ব্যাক্তিস্বত্ত্বা হিসেবে কবিতাকে না দেখাই ভালো। আমার কাছে কবিতা ভালো লাগার প্রধান শর্ত কবিতার সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও তার দর্শন। সেই কবিতাটা আমায় কিছু দিতে পারছে কি না, তার থেকে আমি বিশেষ কিছু পাচ্ছি কি না। ডেস্ট্রাক্টিভ দর্শনকে আমি এড়িয়ে চলি, কবিতায় আমি খুঁজি বিষণ্ণতাকে কাটিয়ে ওঠবার উপাদান। কবিতায় যখন দৃশ্যের বা প্রকৃতির, বা চারিত্রিক কিংবা ভালবাসার পাওয়া না পাওয়ার বর্ণনা থাকে, তার মধ্যে থেকে কোনও বিশেষ অনুভূতি ফুটে ওঠে কি না সেটাই আমি প্রতিদিন খুঁজি। কবিতায় একটা ম্যাজিক থাকবে, এমন একটা কিছু যা এক সঙ্গে অনেকগুলো মানুষকে পাগল করে দেবে, তবেই তো কবিতা। নইলে কবিতার মতো দেখতে কিছু ঝুরি ঝুরি লেখা পাঠকদের সামনে পরিবেশন করে কোনো লাভ নেই। কবিতায় পরীক্ষানিরীক্ষাও আমার পছন্দ, কিন্তু কোনো “ইজম” বা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেলেও তার মধ্যে সেই ম্যাজিক অনুভূতির উপস্থিতিটা ভীষণ দরকার। মনে রাখতে হবে তথাকথিত অনেক “ইজম-ই” কিন্তু এই বিশাল পাঠকবর্গকে কিছু দেয় নি, এগুলো পাঠ্যপুস্তকেই মানায়। তাতে সাময়িক কবি খ্যাতি মেলে কিন্তু টিকে থাকা যায় না। সমসাময়িকতা ও চিরকালীনতার মধ্যেও কিন্তু আপেক্ষিক অনুভূতি রয়ে যায় , সেটা ধরিয়ে দেওয়াও একটা কবির কাজ । অনেকেই বলেন নিজের জন্য লিখছি , নিজের জন্য তো ছাইপাঁশ অনেক কিছু লেখা যায় , কিন্তু যখন কবি সেটাকে পাঠকের সামনে আনছে তখন কিন্তু একটা দায়িত্ববোধ থেকেই যায় । নইলে এই ভাবে চলতে থাকলে কবিরা কিন্তু তার সামাজিক অবস্থান হারাবে । কবি মানে সে যে সাধারণ মানুষের থেকে অনেক বেশি কিছু দেখে । মনে রাখতে কবি একজন দ্রষ্টা । অনেকসময়েই কিছু কবিতার শব্দের পর শব্দের অর্থহীন ব্যবহার ও চাতুর্য আমায় সেই কবিতা থেকে বিমুখ করে । তবে আজকাল কবিতা লেখার থেকে ক্ষমতা দখলের খেলা বেশি হচ্ছে । ব্যাক্তিগত ভালো লাগা বা না লাগার ওপরে দলভুক্তি করে দেবার প্রয়াস বাংলা সাহিত্যের পক্ষে খুব একটা ইতিবাচক দিক নয় ।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

জু: আমি এভাবে ফারাক দেখি না । ভৌগোলিক দিক থেকে ও চেতনায় একটা সূক্ষ্ম ফারাক যদিও আছে , আসলে বাংলাদেশের কবিতায় প্রকৃতি ও জলবায়ু অনেক বেশি ধরা দেয় , কবিতা বাংলাদেশের রক্তে রয়েছে , সব ধরণের কবিতাতেই বাংলাদেশ দারুণ কাজ করছে তবে প্রকৃতিবর্ণনায় বাংলাদেশ অগ্রণী । পশ্চিমবঙ্গের কবিতায় অনুভূতি ও নিরীক্ষা অনেকবেশি । সামাজিক অস্থিরতাটা খুব চোখে পড়ে । তবে অবক্ষয়ের রূপ দুটো দেশেই সমান । বানলাদেশের অনেক কবিই যেমন আমার ভীষণ প্রিয় , তেমনি পশ্চমবঙ্গের কবিরাও । কবিতার একটা চোরাস্রোত কিন্তু দুটো দেশের মধ্যে দিয়েই বরাবর বয়ে গেছে । পশ্চমবঙ্গ যদি আমার পিতা হয় , বাংলাদেশ তবে আমার মা ।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

জু: বুঝতে পারছি আপনি কী জানতে চাইছেন । তবে আমার মনে হয় যে যার নিজের ক্ষমতা মতো ভালোই কাজ করার চেষ্টা করছেন ।