বি গ্রেড সিনেমার নায়কের নাম আমরা মনে রাখি না: সম্বিত বসুর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 30, 2012 12:02:14 PM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

সম্বিত বসু: কবিতা যে কি বিষয়টা এখনও মাথায় ঢুকেনি আমার। আমি লিখতে লিখতে তারই তল্লাশি চালাচ্ছি। কয়েকজন বলছে বটে অনেকগুলোই নাকি কবিতার মতো। আমার স্বভাব এই আমি সবাইকে বিশ্বাস করতে পারলেও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারি না একদমই। কারণ আর সকলের মুখ দেখেই তো আমি বেঁচে আছি। তবু নিজের প্রতি একটা বিশ্বাস জোগাতেই বোধহয় লেখা। নিজের মুখটুকু দেখে নেওয়া। ছোটবেলায় বাবা বলত, মা বলত, দিদি দাদা, স্কুলের স্যারেরা বলত ‘পরিষ্কার করে বল। কথা আটকে যাচ্ছে কেন? আধেক কথা পেটে রেখে দিস কেন?’ আমি তো বুঝতাম না ঐটুকুন বয়সে পেটে কথা রেখে দেওয়ার আর একরকম মানে হতে পারে। বুঝলাম একদম ইদানীং কালে এসে। কবিতা পড়ে টড়ে। এই আর কি...

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

স: আমার মনে হয় এটা একটা ম্যাজিক। হ্যাঁ, ম্যাজিকই বলব আমি। এটা তো বাজার করা নয় যে সকালবেলা বৌ আদর করে তুলে চা খাইয়ে, ৩০ টাকা ধরিয়ে ৫০ টাকার বাজার আনতে পাঠাল। এক্ষেত্রে, আপনি অভ্যস্ত। নিজের হাতখরচা থেকে বেশখানিকটা উজাড় করে দিতে হয়। নইলে আপনি ঠকে গেছেন। আমি আসলে এই ঠকে যাওয়া শব্দটাতে আসতে চাইছিলাম। কবিতা সবসময়ই আমাদের ঠকিয়ে দিয়ে আসে। এই বৃষ্টি এল, আমি ক্লম ধরলাম, নামালাম, এরকম কিছু না।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

স: সমসাময়িকদের মধ্যে সুপ্রভাত রায়, ঋপন আর্য, ভাস্করজ্যোতি দাস, পার্থজীৎ চন্দ, শ্রীজিৎ, রোহন ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য সুন্দর রায়, অভীচেতা বসু, রঙ্গিত মিত্র এবং আরও অনেকেই... এভাবে নাম বলা যায় না। অনেকের যেমন দু-একটা কবিতাই ভালো। কিন্তু খুব ভালো। তারা কেবল চোখে পড়েন না বলে হারিয়ে যাবেন কি? এটা প্রায়শয়ই মনে হয় আমার।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

স: বি গ্রেড সিনেমার নায়কের নাম আমরা মনে রাখি না। তেমনি, যাদের কবিতা খারাপ লাগে তাদের নাম নিশ্চয়ই ভুলে যাই। সে অবশ্য, পরবর্তীকালে ভালো লিখলে মনে পড়বে ‘আগেও কোথায় যেন দেখেছিলুম।‘

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

স: সমস্ত দশকেরই একটা স্বর খোঁজবার ইচ্ছে থাকে। নব্বই এর যেমন, শূন্যেরও তেমন। গণেশ হয়তো মাথা খাটিয়ে বাপ মায়ের চারপাশ ঘুরে মন জয় করতে পারেন। কিন্তু কার্তিকের জার্নিটা, চেষ্টাটা, সৎ থাকাটা কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হয় আমার। কেন জানিনা বর্তমান কবিতার হালত শ্রদ্ধেয় গণশার দিকেই যাচ্ছে।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

স: বাংলাদেশের কবিতা পড়লে আমি বুঝতে পারি এটা ঐ বাঙলার। এটা প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক। আমার মনে হয় ডায়লেক্টটা খুবই আলাদা। এখনও তেমন মেদহীন বলে মনে হয়নি যে টুকু পড়েছি। অবশ্য বলতে বাধা নেই পড়েছিই খুব কম। সুতরাং এ বিষয়ে আলোকপাতের জন্য আমি ঠিকঠাক লোক নই।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

স: আমি একেবারেই বই এর দলে। তবে বই যদি বাড়ী হয়, ব্লগ অনেকটা বারান্দার মতো কাজ করছে আজকাল। মাঝেমাঝে ঘুরে আসতে কই মন্দ লাগছে না তো। তবে এটা তো সত্যি ব্লগ আছে বলেই না এখন পাঠক আমার এই লেখাখানা পড়তে পারছে। নইলে সদ্য লিখতে আসা একজনের কাছে কোণও ‘ লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক এই পরীক্ষাটা কড়টেণ বলে মনে হয়না, ব্লগ সে হিসেবে পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রচুর দরজা দেখাতে পারে।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

স: আমার মনে হয় আগের প্রশ্নের উত্তরে আমি এতই বকেছি, যে এটাও বলা হয়ে গেছে।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

স: দৈনিকে লেখা পড়া এককালে ছেড়েই দিয়েছিলাম। খুব ইদানীং আবার পড়ছি। কবিতা এবং গল্প। দুটোই। আমি লিটল ম্যাগাজিন এর পক্ষে থাকলেও দৈনিকেও তো নতুন লেখা পাই মাঝে মাঝে। বোধহয়, লিটল ম্যাগাজিনের বেশ কিছু আদমি দৈনিকে দায়িত্ব পেয়েছেন। তারাই আমআদমিদের রুচি বদলাতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। আর আগেই তো বলেছি নিজের ওপর আমার একদম বিশ্বাস নেই। তাই, লিখে রাখছি...এটা আমি তো??