বিষয় ও শব্দের নিরীক্ষায় বর্ণশ্রী বকসী
Post date: Sep 4, 2017 3:04:46 AM
বর্ণশ্রী বকসী। কবিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। হয়ত এই কারনেই উনি কবিতার নিরীক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন শব্দকে।
উনার কথায়- আমি কবিতা লেখার ব্যাপারে খানিকটা খামখেয়ালি হলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে পছন্দ করি। কোনো বিষয় যদি একবার মাথায় ঢোকে তবে কবিতা লিখিয়েই ছাড়ে।এই ধরনের লেখাগুলো মূলত নিরীক্ষামূলক।
শব্দের নানা কলা-কুশলের সাথে সাথে উনি বিষয়ের বৈচিত্র্যকেও গুরুত্ব দেন। উনার একটি কবিতা পড়া যাক-
ডাইওনিসিস বা জানু জন্ম
বর্ণশ্রী বকসী
গল্পের খোঁজ করতে করতে দূরে চলে যাই
মিথ কিংবা সত্য কাহিনি
ভারতবর্ষ হয়ে বহু দূর গ্রীক পুরাণে
সুরা ও থিয়েটারের আন্তঃসম্পর্ক কী ?
হয়তো বা সূক্ষ্ম রেখার দাগে
রয়ে যায় অনেকটা সুখ-
ডাইওনিসিস তোমার জন্মের গল্প
হেরার চক্রান্তে গর্ভবতী মা তোমার
ঢলে পরে মৃত্যুর কোলে!
স্নেহময় পিতা অপরিণত ভ্রুণকে
নিষ্প্রাণ মাতৃগর্ভ থেকে স্হান দেয় নিজের
জানুতে,কেটে প্রবেশ করায় সেই
অজন্মা শিশুর ভ্রুণ পায়ের ভেতরে
তারপর সেলাইয়ের ক্ষত,
সময়ের গতিময় নির্দিষ্টকালে
জানু ছেঁড়া সন্তান পৃথিবীর কোলে।
উনি বলছেন-‘ডাইওনিসিস'কবিতা লেখার নেপথ্যে রয়েছে গ্রীকদেবতা ডাইওনিসিস সম্বন্ধে জানার আগ্রহ, যেটার উৎস একজনের তাঁর সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ। “আমিও গ্রীক পৌরাণিক সুরা ও থিয়েটারের দেবতাটির কাহিনি পড়ে অস্হির বোধ করছিলাম লেখার জন্যে আর সেই পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল এই কবিতাটি।'
আগেই বলেছি, কবিতা লেখার সময়ে শব্দ ব্যবহারে বৈচিত্র্য পছন্দ করেন উনি। ব্যবচ্ছেদ কবিতাটি পড়ুন-
ব্যবচ্ছেদ
বর্ণশ্রী বকসী
সারেঙ্গির সুর ভেসে যায়
নূপুরের মধুর বোলে-
দূরের থেকে দেখা অজানা
সম্পর্কের বোহেমিয়ানায়
নর-নারীর আত্মার ব্যবচ্ছেদ ।
পৃথিবীর নাভিকুণ্ডে জেগে থাকে
যে কুণ্ডলিনী শক্তি তার থেকে
জীবনের চক্রবৎ পরিবর্তন ,
ছুঁয়ে থাকা অহংবোধের কিনারে
আজও শুয়ে আছে সেই বালিকা
যার আধো বুলিতে মন ভিজে যায়!
ভাঙা রাস্তার ইট ও পাথরে
ক্ষয়িষ্ণুতার মর্মস্পর্শী ছাপ
অচেনা তত্ত্বকে খুঁজতে গিয়ে
শাণিত ছুরির ফলায় ফালাফালা
সংকেতের দালানে বসে
চিহ্নের ঘরবাড়ি সন্ধ্যাভাষায় ।
এই কবিতায় উনি শব্দ নিয়ে কাজ করেছেন। তার ভাষায়- সেমিওটিকস প্রিয় বিষয় বলে শব্দ ব্যবহার অনেকসময় সাংকেতিক আবহ তৈরি করে। এই আমার কবিতা রচনার ভূমি,আমার চিন্তায় ।
বর্ণশ্রী বকসী যে দুটো বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, এই দুটোই লেখার আত্মা বলা যেতে পারে। বিষয় আর শব্দ। এই দুটো বিষয়ের নিরীক্ষা আমাদের নতুন আলোর সন্ধান দিতেই পারে।