রনি অধিকারীর নতুন কবিতা ও তার নিরীক্ষা

Post date: Aug 30, 2017 6:23:15 PM

নিরীক্ষা বিষয় নিয়ে অনেকেই অনেক ভাবে ভাবেন। ভাবেন এবং তার মতো করে কাজ করার চেষ্টা করেন এবং সফলতার স্বপ্ন দেখেন আর দেখান। কবি রনি অধিকারীকে আমরা কমবেশি সবাই চিনি। নিরীক্ষা নিয়ে তারও বেশ ভাবনা চিন্তা আছে।

আমি আজ হাঁটতে হাঁটতে তার কথাগুলো ভাবছিলাম। কবি রনি অধিকারী মনে করেন অতীতের অভিজ্ঞতা,বর্তমানের রুচি এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নচারণ -এই তিনের মিথস্ক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় কবিতার অন্তরাত্মা ও অবয়ব। তার একটি কবিতার উদাহরণ দেয়া যাক -

একটি উজ্জ্বল ঘোড়া

রনি অধিকারী

পায়ে হেঁটে ক্রমাগত রাতের আকাশে

সবুজ মেঘের সিঁড়ি বেয়ে

একটি উজ্জ্বল ঘোড়া নেমে এলো বুঝি!

ক্রমশ ঘোড়াটি নাচে চোখের গুহায়।

ভীষণ প্রলুব্ধ করে অশুভ আত্মারা

অন্ধকার অক্টোপাসে মৃত্যু বাসা বাঁধে...

মধ্যরাতে অশ্বক্ষুর দ্বন্দ্বে নিরন্তর

জ্বলন্ত চিতায় দেখি মৃত্যুর নোঙর।

সত্যিই কি আমরা অতীত, ভবিষ্যৎ আর বর্তমানের সাথে মিলে গেলাম। কোথা থেকে ঘোড়া আসে, তারপর মৃত্যু, তারপর জ্বলন্ত চিতা।

উনি নিজেকে উত্তরাধুনিক কবি বলে মনে করেন। সমালোচনা করেন আধুনিকতার। তার মতে আধুনিক বাংলা কবিতা যতটা না বিষয়ের,তারও বেশি আঙ্গিকগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার। কথাটি ভাববার। আঙ্গিকগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে আমরা আধুনিকেরা খুব বেশিই ভাবি। এবং এর দাপটে কি হারিয়ে যাচ্ছে আমরা যা বলতে চাই সুর আর স্বর। তাই যদি হয় এটা কি শিল্পীর চাওয়া হতে পারে ? কথাই যদি না থাকে, বলারই যদি কিছু না থাকে, তাহলে আমরা লিখি কেন? উনার আরেকটি কবিতা পড়ুন-

শূন্য থেকে শূন্যতায়

রনি অধিকারী

সমস্ত শরীরে প্রার্থনার পরশ পেয়ে

রাতকানা রাজহাঁসগুলো

ছুঁয়েছে নিরন্তর স্তব্ধতাকে।

জ্যোৎস্নার আড়ালে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে হাসতো

কপোতাক্ষ জলের শান্ত সেই মেয়ে। এখন সে

স্বপ্নের বুকে মাথা রেখে কান পেতে শোনে

অন্ধকারে বৃষ্টির শব্দ...

স্বপ্নীল মায়ার অবাধ চোখের সেই মেয়ে

চেতনার চূড়ায় লাজুক নূপুর পায়ে,

নিবিড় জ্যোৎস্নার ভেতর হেঁটেছিলো

শূন্য থেকে শূন্যতায় ভেসে।

তিনি বলছেন কবিতায় কাব্যময়তা,রহস্যময়তা ও গীতলতা সৃষ্টি করলেই কবিতার নিরীক্ষা গুরুত্ব বহন করবে । এছাড়া কবিতার স্বর-সুর, মিথ এবং চিত্রকল্পে তার স্বাতন্ত্র্য ও উজ্জ্বলতা বহন করে। তার আরেকটি কবিতা পড়ুন-

ভাসে না স্বপ্নের ভেলা

রনি অধিকারী

হিম যুগ থেকে সেই অবদি মন্দিরা অস্থির বসে থাকে দেবদারু গাছের তলায়

উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটকে আষ্টেপৃষ্টে শাসন চালায় প্রতিনিয়ত...

রোদ্দুর মাখা ঝুলন্ত ছায়াগুলো ভিড় করে মন্দিরার মুখে। ক্রমশ ট্রেনের

হুইসেল শোনা যায়... সমস্ত লোমকূপ কেঁপে ওঠে, এ যেন এক স্পন্দিত হৃদয়-

আচানক ছুঁয়ে যায় বৃষ্টির পরসা। হয়তো ট্রেনটি দৌঁড়ে এসে কস্তুরির গন্ধ ছড়াবে!

দিন-মাস-বছর-শতাব্দী আর অজস্র রোদ্দুরগুলোও একে একে বিদায় নেয়...

এ ক্ষুধার্ত পরাজয়ের সময়। ট্রেনে জঙ ধরে, জঙ ধরে মন্দিরার শরীরে ,

জঙ ধরে স্বপ্নে ; মূলত ভাসে না স্বপ্নের ভেলা অন্ধকার অক্টোপাসে।

উনার নিরীক্ষার জগত হয়ত এমনই। কাব্যময়তা, রহস্যময়তা আর গীতলতা নিয়ে। রনি অধিকারীর কবিতাগুলি হয়ত আমাদের সেদিকে নিয়ে যায়। হয়ত মনে করিয়ে দেয়, নিরীক্ষার অজস্র জগতের মধ্যে এও আরেকটি জগৎ। তার এই নিরীক্ষা সফলতা আমাদের আরো বেশি কবিতা প্রেমিক করে তুলুক।

তার কবিতার বই। আকাঙ্খার জলসজ্জা(২০১১), গল্পের বই চার দেয়ালের গল্প(২০১২)। উনি অনুভূতি নামের একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছেন।

ধন্যবাদ সকলকে।