আমার কাছে প্রকৃতিভাবে আসলেও কিছু নিরীক্ষা থাকে: আঁখি সিদ্দিকার নিরীক্ষা
Post date: Sep 15, 2017 3:47:21 AM
আঁখি সিদ্দিকা কবিতা লিখেন। নিরীক্ষা নিয়ে আমি তার সাথে ফেসবুকে কথা বলছিলাম। উনি বলছিলেন যে,আমার কাছে প্রকৃতিভাবে আসলেও কিছু নিরীক্ষা থাকে।যেমন,কবিতায় একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করি। শিল্পীর উপাদান রঙ তুলি আমার উপাদান শব্দ আর তার প্রয়োগের মাত্রা জ্ঞান সাথে যুক্ত হয়।আমার ছোট ছোট আবেগ আর অভিজ্ঞতা আর পুরোপুরি হয়তো বর্তমানকে উপস্থাপন করতে পারি না,তবে আগামী সময়কে তুলে আনে হয়তো।কবিতাগুলো খুব বেশী দীর্ঘ হয় না।মেদহীন হয়,আরেকটু নিরীক্ষার জায়গা হয়। যেমন ট্রান্সফরমাল আর্ট যেমন একটা সিনেমা বা উপন্যাস বা আমার দেখা কোনো চিত্রও আমাকে কবিতা দিতে পারে। তাহলে এবার তার কবিতা পড়ে আসা যাক।
চোখ-১
পাঁচ নম্বর জংশনে তোমার বাড়ী
যাত্রার মুখোমুখি সিটে বসা দুপুর
রৌদ্র-পতনের ছায়া বড়ো হতে থাকবার পরও
পোঁছতে পারলাম না
তুমি আমি তোমার শহরে মিলিয়ে যাবো
এই জংশন থেকে অন্য জংশনে
তোমার ক্লাস ফোরে যাওয়া বৃত্তিপাড়ার ব্রোথেলে
যাবারও ইচ্ছে ছিলো
নন্দীর এখন হয়তো শেষ বিকেল
তুবুও ;
উজোনগ্রামের মুকুল এখনও কি
তোমার মুখোশ দরজায় কড়া নাড়ে?
গনগনে দুপুরে সুমিতা কি এখনও
চালশে চোখ নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে ভিড় ব্যস্ত বাস স্টপে?
কুকুর-ছেউড়-মানুষ-হট্টগোল-টার্মিনাল
সব পেরিয়ে যখন পৌঁছলাম দুপুর নেমে
গেলো মধুবাজার।
কাক সন্ধ্যায় মুঠোভর্তি অন্ধকার নিয়ে
তোমার সামনে দাঁড়ালাম
তখন ফিরবার তাড়া
আর তোমার
সপ্তার্শয চোখ॥
চোখ - ২
দরজাটা খুলে দাও চোখ
একগুচ্ছ মেঘ হয়ে এসেছি
এতিম স্টীমারে চেপে ;
স্টেশনের বৈদ্যুতিক ঘন্টায়,
শহরতলির কিছুই মনে নেই
সাইপ্রাস গাছের ছায়ায় চাঁদের আলো
পাহাড় হয়ে গেছে,
সন্ধ্যার দেয়ালে ঠেস দিয়ে
রাত চাই না।
দরজাটা খুলে দাও চোখ
আমি আরও একবার আগুন চাই
বর্ষার কঠিন শীতল জল চাই।
আঁখি সিদ্দিকা এর আগে কোন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,নিরীক্ষা মানেই নতুন আরেকটি জগতের দ্বার খোলা। আমার ভীষণ আনন্দ হয় সেই দরজার কড়া নাড়তে কিন্তু নিরীক্ষামূলক লেখালেখি আমাদের এখানে খুব কম হয় আর যেটুকু হয় তা হাতে গোনা কয়েকটা ছোট কাগজের লেখকদের মধ্যে। এ ধরনের লেখা কেবল ছোট কাগজেই ছাপে। সাধারণে তা সহজে পায়না। এজন্য আমাদের দেশের দৈনিকের সাহিত্য পাতায় ও নিরীক্ষামূলক কাজ ছাপা উচিত। নিরীক্ষামূলক লেখায় বর্তমান সময়ের চিন্তা-চেতনা এবং চাহিদা বোঝা যায়। এছাড়া সততার বহিঃপ্রকাশ ও হয়,আমার তাই নিরীক্ষামূলক প্রথার বাইরের লেখা বেশ পছন্দ।
তার মতে, বাংলাদেশে নিরীক্ষাধর্মী কবি আছেন।যেমন তানভীর মাহমুদ,সোহেল হাসান গালিব,সিমন রায়হান, রাসেল রাইয়ান, অনুপ মন্ডল,জুয়েল মোস্তাফিজ। এরা কবিতাকে ভাঙতে চাইছে।ফর্ম,আর্ট,আবার চিত্রময়তাও,আগের কবিতার ঘরানা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা।আবার এ্যাবাষ্টার্ক ফর্মে উপস্থাপনও দেখা যায়। এবার আরও কিছু কবিতা পড়ে আসা যাক।
চোখ - ৩
১৯৮২ সাল সেপ্টেম্বর তখন
মৌসুমী হাওয়ার দিকে নেমে যাবে
রংপুর;
বিপরীতনীলে ধূসর পাখিদের বাঁকা ঠোট
মৌন খেয়ালী চুলে ইচ্ছের পুতুল
দূরবীন খুলে যে চোখের উষ্ণ নিমন্ত্রণ
দেখেছি তা এলো না তখনও
রংপুরের তেরছা বিকেলে
এক ঝাঁক পাখির মাস্তুলে
তখনো সন্ধ্যা নামেনি
পোড়াঘোরদারে তোমার গৃহসুলভ হাসি
নিয়ে ফিরে এলাম ;
তারপর থেকেই অপেক্ষা
দ্রাবিড় চোখের।
চোখ - ৪
তোমার চোখের গভীরে সন্ধ্যার আলো
চিবুকে ভোরের ঘাস ;
দুঃখ পল্লবে ছাওয়া
তোমার হৃদয়ের উপরিভাগ
পেটের ফুটপাত জুড়ে স্বাধীনতা
কেবল মেজে আনা বাসন কোসনের মতো
তোমার আজকের দুপুর ;
তোমার মগ্ন শরীরে উৎসব
মরুর-নীলের মতো আর্শ্চয তোমার করিডোর ;
তোমার হাত ঘড়ির পাঁচিলে ঠেস দিয়ে
ঘুমায় আমার অসংখ্য চোখ।
চোখ - ৫
তোমার চোখের ভেতর সে
যে স্বপ্ন বাঁচে
তা আমার বিস্ময়
পাহারা দেয়া সময় আর
কাঁটাতার ছুঁতেও পারে না
না হওয়া কথাদের
তাই নৈঃশব্দেই হোক
তোমার আমার গেরিলা যোগাযোগ।
আঁখি সিদ্দিকার কবিতাগুলোতে সত্যি তার নিরীক্ষার স্বপ্নগুলো পাঠকের সামনে টেনে আনে। তার নিরীক্ষা আমাদের নতুন জগতের সন্ধান দেবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।