অলস দুপুর অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৪
Post date: Jun 20, 2018 8:00:48 PM
অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৪
সাইটে প্রবেশের জন্য আপনাকে স্বাগতম। এটি অলস দুপুর ওয়েবম্যাগের একটি অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন। এই সংকলনে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে যারা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন, লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন, তাদেরকে বিশেষ ভাবে স্থান দেয়া হচ্ছে। আমরা জানি যে পুঁজিবাদের বিকাশের প্রক্রিয়াটিই এমন যে ইটের নিচে সবুজ ঘাস চাপা পড়ে যায়। আমরা প্রশান্তির জন্য দিগন্তের দিকেই তাকিয়ে থাকি।
অলস দুপুর সেইসব কবিদেরই খুঁজে চলেছেন। যারা নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন, কোন এক দূরে বসে লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন বছরের পর বছর। সন্ধ্যায় জোনাকির মত তার চোখও জ্বলে ওঠে নতুন কবিতায়। সেই সব নতুন কবিতাকে খুঁজে চলেছে অলস দুপুর।
অনলাইন কোন স্থান নয়। ইন্টারনেট মানে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের সাথে যুক্ত আপনি আমি। এখন আমি আপনি বিশ্বের যে কোন প্রান্তের কবিতার সাথেও যুক্ত। কিন্তু প্রান্ত তো আছে। যে এসে মিলিত হয় মুক্তির সাথে। অলস দুপুরের কাছে জেলা হচ্ছে এক একটি প্রান্ত, যে যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলা কবিতা নয়, বিশ্ব কবিতার সাথে। আমরা অলস দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কবিতা এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।
সংকলন পদ্ধতি: একজন মূল সম্পাদক থাকেন। মূল সম্পাদক থাকবেন দুপুর মিত্র। বিভিন্ন জেলা থেকে একজন অতিথি সম্পাদক নির্বাচিত করেন। অতিথি সম্পাদক তার জেলা থেকে কবি নির্বাচিত করেন এবং তাদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে মূল সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। প্রতিটি পোস্ট এক একটি জেলা বা প্রান্তের সংকলন হিসেবে গণ্য হবে। যিনি অতিথি সম্পাদক থাকবেন তার সম্পাদনা নিয়ে একটি ছোট সম্পাদকীয় থাকবে। এভাবে ছোট ছোট সংকলন মিলে একটি বড় সংকলন হবে।
যাদের কবিতা সংকলিত হবে
১. দীর্ঘদিন ধরে লিটলম্যাগে জড়িত
২. বিভিন্নজেলায় বসবাসরত
৩. সাহিত্যচর্চায় নিয়মিত
সংকলনটি চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন সময় এটি আপডেট হবে। সংকলনটি সমৃদ্ধ করতে পাঠকের প্রস্তাবনা ও মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। প্রস্তাবনা বা মন্তব্য জানান mitra_bibhuti@yahoo.com এ।
অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন: ০৪ পর্বের অতিথি সম্পাদক কবি সৈকত আরেফিন । তিনি কবিতা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে ‘অলস দুপুর’ ওয়েব ম্যাগাজিনকে সহায়তা করেছেন। তার প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।
সৈকত আরেফিন এর সম্পাদকীয়
একটি উপলব্ধি…
কবিদের অঞ্চল সীমানায় বাঁধতে আমার আগ্রহ নাই। কবির জন্মস্থান নয়, কবিতার মধুরতাই আমাকে আনন্দিত করে। তবুও এই পর্বের শিরোনাম ‘পাবনা জেলার কবিদের কবিতা’, এবং এর সঙ্গে আমার জড়িয়ে পড়া। দুপুরের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারার মতো ব্যস্ততা আমার সত্যি ছিল, তবুও দুপুরকে এড়াতে না পারার ফল দাঁড়ালো এই ১০জন কবির কবিতা। বলাবাহুল্য, এই কবিদের জন্ম পাবনার ভৌগোলিক সীমানায়। কিন্তু, যাঁদের কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা গেল, সে সমস্ত কবিতা আঞ্চলিকতার সীমানা পেরিয়ে সবার হতে পারল কিনা সে সম্পর্কে বলার ক্ষেত্রে আমি অপারগতা জানাতে চাই। এই অপারগতা সম্ভবত একটি আত্মোপলব্ধি, যা আমাকে অতৃপ্ত রাখে, আমি অনুভব করতে পারি—স্থান হিসেবে পাবনা হয়তো কবিদের জন্য নয়। অথবা, আমার উপলব্ধির সঙ্গে কবিরা একমত নাও হতে পারেন। না হলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু আমি এই অতৃপ্তি অব্যাহত রাখতে চাই এজন্যে যে, যেন পাবনায় জন্ম নেওয়া কবিরা আজকের চেয়ে আগামীকাল আরও ভালো কবিতা লিখতে পারেন। পাবনায় জন্ম নেওয়া একজন কবির কবিতা যদি দেশের সীমানা পেরিয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্থান করে নিতে পারে, আমার চেয়ে আনন্দিত খুব কমজনই হবেন।
পাবনাকবি ও কবিতার তীর্থভূমি হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা জানিয়ে রাখা গেল।
খান নূরুজ্জামান
ঠিকানা: গ্রাম: পাটগাড়ী, ডাকঘর: বেড়া-সোনাতলা,
উপজেলা: সাঁথিয়া, জেলা: পাবনা।
জন্ম তারিখ: ০১/০৯/১৯৭৮
শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর
পেশা: শিক্ষকতা
সম্পাদনা : খেয়া সাহিত্য পত্রিকা।
লেখার বিষয়: কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া, গান।
মোবাইল নং: ০১৭২৪-৪২৬৮২২
খান নূরুজ্জামানের কবিতা
প্রাকৃত শস্যের খামার
যাও, ঘোরো দ্বারে দ্বারে ভিখিরি স্বভাব
নাও—করুণার ঘ্রাণ, উচ্ছিষ্টের স্বাদ।
আমি যাবো না। আমি তো মাটির পটুয়া
সময়ের পেটে ফেলে ফসলের রঙ
নির্মিতির ওমে লিখি অন্নের সুনাম।
আমার মা বসে আছেন ছোনের দাওয়ায়
আউশের গরম ভাত হাতে পাখার বাতাস
আমার রুচিতে পদ্মার ইলিশ,লাউয়ের ডগা
সজনে,শিম, লাল ডাঁটার প্রকার।
আমার ক্যানভাসে মেঘ, রোদের প্রভাব
মানুষে, পাখিতে মুখে অবিরত গান
উঠোনে উঠোনে জ্বলে বীরের টোটেম
বিনাশে, বিকাশে বুকে সাহসের টান।
আমার গানে সুর দেয় মাঠের সবুজ
নিসর্গের কণ্ঠে বেঁধে মেলোডির তার
শিকড়ের দিকে রাখা নির্ঘুম দোতারা
প্রাণের বিপুলে প্রাকৃত শস্যের খামার।
দোতারা হাতে
ঘুড়ি বরাবর শুয়ে আছে সময়।
আমারও দিন গেছে শাপলা ফোটা বিলে
আউশের গন্ধে ডুবে কিশোরবেলা।
শ্যাওলার গায়ে টোকা দিয়ে
কাতল নেড়ে গেছে আমনের ছোপ।
আমার ঘুড়ি ছিলো শরৎমেঘ
দিগন্ত জানতো তার ছায়া,নাটাইঠিকানা।
ধূলিদুপুরে ঝরে গেছে রাজামন্ত্রীকাল
বটপাতা, আমপাতা,ভেন্নাবীচি খেলা।
কোন জলে বাঁচাবে বলো পুঁথিদগ্ধ জনে !
সোনাভান রাতে যে ভিড়ালো বেহুলাবাংলায় ভেলা।
আমাকে ঘিরে এক বৃত্ত এঁকেছি
বৃত্তের বাইরে বাড়াবো না পা।
মেঘবেলা কখনো হিজল বনে এলে
জৈষ্ঠ্যসুরে ডাক দিয়ে যেও
দাঁড়িয়ে আছি আজও হাতে দোতারা।
রমন রসিক
জন্মতারিখ: ২৫ জুন ১৯৭৩খ্রি.
জন্মস্থান: মাতুলালয়, দ্বারিয়াপুর, সুজানগর, পাবনা। পেশাগত জীবন: বৈজ্ঞানিক সহকারী হিসেবে বাংলাদশে পরমাণু শক্তি কমিশনে র্কমরত।
রমন রসিকের কবিতা
সম্পর্কের মানচিত্র
এক জীবনে কত দীর্ঘপথ! পথের পাশে পাহাড়, নদী, বন সম্পর্কের লোকাল ট্রেনে চড়ে ঘুরে এলাম কত স্টেশনে। কত রকম অজানা সব নাম বিচিত্র সব সর্ম্পক গ্রাম সম্পর্কের কত রকম রূপ! কত ভাবেইমেটাতে হয় দাম। পথের বাঁকে সম্পর্কের নদীসেই নদীতে উথাল-পাথাল ঢেউ ভালবাসার ছোট ডিঙি বাঁধা সেই নৌকায় উঠলো নাতো কেউ। ভুল ঠিকানায় ভুল বৃক্ষের নিচে ক্লান্তি খোঁজে শ্রান্তি নামেরছায়া। প্রতীক্ষাতো প্রহর গুনেই বাঁচে মিলতে পারে গহন মনের মায়া।
স্বরূপ
অপার নিঃসঙ্গতার ভেতরনিঃসীমঅন্ধকাররে আয়নায়
আমিআমার অর্ন্তগত আমিকেদেখতেচেয়েছিলাম।
নিজেকে চেনাটাজরুরিভেবে
আমিচিনেনিতে চেয়েছিলাম আমার একান্ত আমিকে।
আমিসেইথোকাথোকানিকষঅন্ধকারেরভেতর
সর্বাঙ্গদিয়েচিৎকারকরেবলেছিলাম, আমি!
‘আমি’প্রতিধ্বনিত হয়ে ভাঙতে ভাঙতে
চুড়তে চুড়তে একটা বৃত্ত অথবা বলয় তৈরিহচ্ছিল।
আমি তখন নির্ভেজালঅন্ধকারেরগ্রাসে বলয় অথবা বৃত্তবন্দী।
অজানা অচেনাএক 'আমি’র বলয় আমাকে ঘিরে ঘুরছে ক্রমাগত।
আর কী আর্শ্চয! যে বলেছে 'আমি’,
সে কিন্তুআমি না!
অন্য কেউ! সেইঅন্য কেউইআমি।
রিঙকু অনিমিখ
জন্ম: ৫ এপ্রিল ১৯৮২, দ্বারিয়াপুর, সুজানগর, পাবনায় নানা বাড়িতে। পৈত্রিকবাড়ি: সৈয়দপুর (মিয়াপাড়া), সুজানগর, পাবনা।
বাবা: মরহুম আব্দুস সাত্তার, মা: রওশনারা সাত্তার।
বর্তমান ঠিকানা: রামপুরা, ঢাকা। পেশা: চাকরি। ‘সব খবর’ অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। পড়াশোনা: ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় অনুষদে ‘রেখা ও অঙ্কন’ বিভাগে স্নাতক। প্রকাশিত বই দুটি, একটি প্রকাশিতব্য। তিনটিই কবিতা। সম্মাননা: ‘বাচনশৈলী লিপিলোগো এ্যাওয়ার্ড-২০১৬’।
রিঙকু অনিমিখের কবিতা
নিজস্ব প্রতিবেদন ১০
যাকে সাষ্ঠাঙ্গ দিয়ে মনে রাখি
তাকে করি ভুলে থাকার অভিনয়
আমি কি আর দক্ষ অত
লোকের চোখে ধূলো দিয়ে
পালিয়ে বেড়াবো?
সুশোভিত ফুলের স্তবক হাতে
পেরিয়ে যাবো অনাগত কাল?
অ্যামেচার চোখ শুধু জানে
নোনতা জলের থেকে
কিভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয়;
সে কথা বলতে বারণ
কেউ যদি ভুল করে বলে তার নাম—
মুখে তাচ্ছিল্য, অন্তরে হাজার প্রণাম
নিজস্ব প্রতিবেদন—১১
বিশ্বাস করুন, আক্ষরিক অর্থেই
পায়ের নিচে মাটি নেই আমার
আছে চটি, জুতার শুকতলি আর
বড়জোর খালি পায়ে টাইল্সের মসৃণ মেঝে
মূলত, শূন্যে ঝুলে আছি—
শূন্যতার আবাসন প্রকল্পে
পোড়ামাটির বাক্সে ভরে বিক্রি হচ্ছে আকাশ; —
এইসব বিপণন ব্যবস্থায় ‘মাটি ও নোট’ দুটোতেই
মহান ব্যর্থ আমি ঝুলে আছি শূন্যে
মাটিই ভূতল, এই ভেবে
খালি পায়ে হাঁটি
দেখি, পায়ের নিচে মাটি নেই আমার;
মদ খেয়ে নয়, প্রকৃত অর্থে
একটি মাতাল ভূমিকম্পের
অপেক্ষা করছি এখন
শফিক লিটন
জন্ম :১৯৯০ সালে। সড়াবাড়িয়া গ্রামে।
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
চাটমোহর মহিলা ডিগ্রি কলেজে বাংলাবিভাগে পড়ান। বিবাহিত। কোনো কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি।
শফিক লিটনের কবিতা
বেড়াও শস্য খায়
ঘুম ভাঙে, আদৌ ঘুমাই কিনা ...
এতসব প্যাঁচালের পাশে—ঘুমোবার ফুরসত কই?
জেগেই ছিলাম, বলতে পারো ভাতঘুম আর রাতঘুম
কোন ঘুমেই বুদ্ধির দ্বার খোলাছিল না; দ্বার—
সে-তো বন্ধই থাকে। বলতে পারো চোর, আরেকটু
স্পষ্ট করে বললে সিঁদেল চোরের জন্য চাবির প্রয়োজন
নেই। ... চুরি হয়—কত জল্পনা আর কত কল্পনার
পেখম বাতাসের কান ভারী করে। কান, সে-তো
গাধারও আছে; আবার বাদুড়েরও কান নেই কি?
কান, সে-কিনা বেড়ারও আছে; বেড়াও নাকি শস্য খায়।
তাই তো বলি—আমাদের এত ফসল লুকোয় কোথায়!
... অতএব তোকে চুপি চুপি বলি শোন্
তোদের রান্নাঘরের বেড়া খুলেই রাখিস
পাতা ও পতঙ্গ: একটি কবিতার জন্য
কখন লিখেছে গান কেউ, কার বুকে বেজেছিল
বেদনার নীল নীল জ্বালা? কুঠারের শব্দ
নেমে এলে, জ্বালানীকাঠে এত কেন
ঘাম ঝরে পড়ে? ও বড়ুচণ্ডীদাস,
সব সখীরে পার করিতে নিবা কত আনা—
রাধাহীন খেয়াঘাটে উদোম প্রজন্মের চর্যাকারেরা
যাহিদ সুবহান
জন্ম : ১৯৯০ সালে। সড়াবাড়িয়া গ্রামে।
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
সরকারি ফোন কোম্পানি বিটিসিএলে কর্মরত। বিবাহিত ও এক কন্যা সন্তানের জনক। কোনো কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি।
যাহিদ সুবহানের কবিতা
বঞ্চনার দীর্ঘ কোরাস
অমানিশার হাতছানি পৃথিবীর বুকে প্রতিনিয়ত
ঘড়ির কাটায় এখন দুঃসময়ের দিনযাপন
উল্টোপথে ঘুরছে যেন পৃথিবীর চাকা
বোবাকান্নার আহাজারি শুনি চারিদিক
যারা পৃথিবীকে খাওয়ায় প্রতিদিন
তারা খেতে না পেয়ে দীর্ঘ করে ভূখাদের মিছিল
স্লোগানে বিভোর হয় পৃথিবীর বাতাশ
যারা পৃথিবীকে নিত্য পোশাকে আবৃত করে
অথচ চেয়ে দেখো তাদেরই পোশাক নেই
তারা আজ উলঙ্গ প্রায় তোমাদের পৃথিবীর বুকে
চিলেরা এখন পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজা
ব্যবধান বাড়ছে মানুষের-সময়ের
বলি চোখ মেলো সময়; নেমে এলো দুর্দিন
দেখো কারা গাইছে বঞ্চনার দীর্ঘ কোরাস ...
বৃত্ত জীবন
আমাদের একটা জীবন বৃত্তের
যেন নিরন্তর ছুটে চলা সূর্যের মত
পরিচিত একই কক্ষপথে পুণঃযাত্রা
বড়জোড় কেন্দ্র থেকে জ্যা অথবা
ব্যাস থেকে ব্যসার্ধের দুরত্ব আমাদের
আলোকবর্ষের শুরু থেকে শেষ।
সময় চলে যায় অবিরাম সময়ের মত
কাকতারুয়ার মত ঠায় চেয়ে থাকি আমরা
খুঁজে চলি জীবনের নতুন কোনো কক্ষপথ
তবুও সময় আসুক সময়ের প্রয়োজনে
হাসিমুখে উল্টাই ক্যালেন্ডারের রঙিন পাতা
আরো সবুজ হয়ে উঠুক আমাদের বৃত্ত জীবন ...
যাহিদ সুবহান, আটঘরিয়া, পাবনা। মোবাইল নং: ০১৭২৩৯৯৯১৪৭
শফিক আনাম
জন্ম: ১৯৭৪ সালে। গ্রাম: শারির ভিটা। গ্রামটি পাবনার বৃহত্তম বিল গাজনার বুকের মধ্যে। সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর।
বিবাহিত।
এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
শফিক আনামের কবিতা
শিকারী
১
খুলো না বুকের আব্রু
হাওয়ায় নিষেদের ভাইরাস
বিলি কাটে সংস্কার ধর্মে
ঘোরে জল ভদ্রাসনে
নেচে ফেরে ধিরিঙ্গি পায়
দিকচিহ্ন আর দিগন্ত একাকার বলে
মাটিতে এঁকেছি উল্কি কিছু
বৃষ্টির পদচ্ছাপে মুছে যায় তাপ
ও মেয়ে জ্বেলো না জ্বলনের দাগ
দিকচিহ্ন দিগন্তে রেণুকায় করে খেলা
আমাদের ছেলেরা বিধাতার পাপ
আর মেয়েরা পাপের ফসল।
স্বপ্ন কন্যার আদর নিয়ে বুকে
আমাদের বালক বেলা ঘুমিয়ে যায়
আর স্বপ্ন দেখে : অর্জুনের ধনুকী টংকার
স্বপ্ন থেমে যায়—স্বপ্তপদী রঙ
রাঙা পায়ে বাড়ে বড়
অশরীরি জ্বীন
সূর্যগ্রহণের সৌরভ ঢেকে রয়
সময়ের কাসুন্দি লতা আর সমুদ্র মন্থন
শরীর জানে
কালো কালো বিড়াল শুধু টেনে নেয় বিমূর্ত ইঁদুর
ইন্দ্র বাজায় আজও বিজয়ের ঢাক
জৈবিক ফসফরাস জ্বেলে আধারের রূপ।
কাপালিক আমি শুধু মরণের আলে
কপোলে পলল জমে নদী পথ ভোলে
ফারাক্কি ফাঁদে যদি ফুঁসে ওঠে পাললিক মরু
সন্ন্যাসীর চিমটায় ফের গজাবে শিঙ
কাপালিক পুড়ায়ে মাটি মাটির জনন
প্রজননপুট জ্বলে নির্জলা ভূম
ম্লেছনি লুকায় মুখ
জোনাকিরা যুদ্ধে গেলে সূর্যের ঘরে
ঘর ভরা অন্ধকার গ্রহণের কালে
শিরশির শিরদাঁড়া ভয়-দ্রোহ জ্বালা
শিরেতে চন্দন ফোঁটা
লক্ষির মায়ায় জড়াজড়ি
দেবতারা স্বর্গে করে বাস
দাসেরা চাষবাস, প্রথা শিকার
সামনে চারণ ভূমি বলগা হরিণ মৃগনাভী কস্তুরী সুধা
পিছনে হিম শৈত্য
“সাধু সাবধান”
শৈলশির আর তন্তুর সংকোচনে
ঋদ্ধ শিরদাঁড়া
এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো মুষিক পেকিন,
কালো কালো
২
আহা! আমাদের কাল
জলের নেশায় জ্বলে জীবন আর ভুল জোসনার অহংকারী চোখ
মেঘ বৃষ্টি স্বপ্ন
বৃক্ষের বালিহাঁস ডানা
সাদা কাল প্রতিবেশ
ভেসে ওঠে ছাই রঙা নাভিমূল
নাভিমূলবালিয়াড়ি হাঁসের গীতল পেটি
এ দৃশ্যের আরো একটু দূরে
আরো দূরে দূরে শূন্যতার চৈতন্য বিলাস
ঘায় স্বপ্ন! ঘায় গোঙানি!
আহা! বালিয়ারী ডানা
তবু তুমি ভেসে থাক গাঙ্গুরের জলে
জল কী নিরেট নিদ্রা যায় বালিয়ারী ঘরে
শরীর ছুঁয়ে থাকে অশরীরি জীন
ভূতের ইবনে আদমের দাস
দেবতারা স্বর্গে করে বাস
সুরেরা ইউসুফের
ইসরাফিল বাজা তোর শিঙা
তথাস্থ আমিও
ছাড়ব না বাঁশের বাঁশি
মনু বাজা কাঁসি
হলে হবে ফাঁসি
কাঁপে আঁখি
রাঙা রাখি
দেহ আজ বৈদেহী বিভূঁই
আনাম ভূমি বিরান চর চড়ে না বাবা ভোলানাথ
জানো কি হাল হকিকত জেনানা সুরাত
পাকা রেল সড়কের মত শুয়ে আছে আমাদের বিশ্বাস
হরেক রকম যতু যাদব হেঁটে চলা
হেঁটে হেঁটে চলে যায় বেদনার মৌ ফুল
লবণদানির পাকাগাজ যেন শীতের শুভ্র বাতাস
উঁকি দিয়ে দেখে নেয়
চটে ঘেরা আমারই আবাস নিবাস
জোনাকির যুদ্ধে কেনা আলোর পসরা
ফেরী করে গুরু শিষ্য
শীত গ্রীষ্ম উত্তর দক্ষিণ
এই বোধও নির্বোধ বলে দিয়েছে মেনকা দাসী
সঙ্গমে প্রণয়ে আতংকের জলাতঙ্ক গোনে গোনরিয়া দাঁত
[ শুধু দাঁতালেরাই যৌন সম্ভোগে শ্রেণিভেদ মান্য করে]
সিবিলিস সুখী বড় জরায়ুজঠর
জরায়ু জঠর জ্বালাময় যোনিমুখে
অক্ষম পৌরুষে
টিউব বেবির স্বপ্ন মগ্নতায়
ঢেলে দেই কনডমের সঞ্চিত বীজমন্ত্র
আমারও ইচ্ছে করেতুলি ফুল, ছিঁড়ি পাতা
সূর্যের মেরুণ কামরায় ছুঁয়ে দিলে প্রজাপতি পাখা
স্পর্শে জেগে ওঠে রেণু
পরপারাগি অনুরণন আর পারমাণবিক আহ্লাদ
যেন হ্লাদী গণমন্ত্র
অভাবীর সুখ নিয়ে ধনির দুলালী ঘোরে
ঘোরে নন্দন আশে
ত্রাসে ভাসেরুগ্ণ চাঁদের মাসির স্বপ্ন বাসর
অপুষ্ট স্তনে বাড়ে আত্মজের লেহন
মস্তক ঠুকে চলে অসতর্ক জননীর তালু
আর আলু থালু কেশে লাগে সযত্ন পরশ।
প্রতিমা মুখগুলো ছুঁয়ে দিলে
দেবতা চোখগুলো মুছে যায়
রেটিনায় জমে জল প্রতিচ্ছবি পদচ্ছাপ
আহ্নিকে দাঁড়িয়ে মাগঙ্গার প্রণামী ভুলে
মস্তকে তুলে রাখি শূন্য হাত
এই আমার দেহমুদ্রা মুদ্রাদোষ।
আলোকিত আদম ভূমি ঢুকে যায় কালো গহ্বরে
আর জোসনাস্নাত জলাভূমিতে জ্বলে ভূতের চোখ
জৈবিক ফসফরাস জ্বলনে আত্মার পাপ।
অনাবাদী জমিগুলো উর্বরতার আকর
আর বর্ষণে ক্ষয়ে যায় লাঙ্গলের ফলা
এই আমার জয়
এই আমার জ্বালা।
আলাউল হোসেন
জন্ম: ১৯৮২ সালে। গ্রামের নাম হরিদেব পুর। সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
বিবাহিত। এক কন্যা সন্তানের জনক।
এখন কাশীনাথপুর বিজ্ঞান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। ‘করতলে ধুলোমেঘ’ নামে একটি কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে।
আলাউল হোসেনের কবিতা
মেয়েটি, সেতার ও আমি
মেয়েটি সেতারের তার ঘষে
রাত জেগে সুর তোলে
রিনরিন শব্দ কানে শোনার জন্য
সেতারে, হৃদপিন্ডের অনাহূত দুয়ারে
শুদ্ধ সঙ্গমে যাওয়ার ইচ্ছেয়
ঊারবার অঙুলের প্রেম টোকায় জীবনের
স্বাদ খোঁজে রাগের মূর্ছনায়।
আর আমি ব্যালকনিতে দাঁড়াই
দেখি পূর্নিমায় চাঁদেও রূপের বন্যা, নীলাকাশ
অতঃপর মেঘ জমে জমে আঁধারে ডোবে সময়
বাতাসে ঢেউয়ে রাগে সুর, বানী
শুনে শুনে আমিও
মেয়েটির রসিক বন্ধু হয়ে যাই...
আকাশ বলে কিছু নেই
ঘুড়িকে আকাশের বাড়ি পাঠাবো বলে
সুতো ছাড়তে থাকি;
মেঘ সমান সুতো ছাড়লেও
আকাশের নাগাল
পায় না।
অতঃপর ঘুড়ির বোবা কথা—
আকাশ বলে কিছু নেই।
শফিউল শাহিন
জন্ম: ১৯৮২ সালে। গ্রামের নাম বিষ্ণুবাড়িয়া। সাথিয়া উপজেলায়। ‘কম্পাস’ নামে একটি প্রকাশিত পত্রিকার সম্পাদক।
দুটো কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম কবিতা গ্রন্থের নাম ‘পিঠে নির্গত হলো ডানা।‘
শফিউল শাহিনের কবিতা
গন্তব্য
আমি যখন কোথাও যাই না
তখন আমি ভিতরে ভিতরে বহুদূর।
আমি যখন সবার কাছে যাই
ভিতরে ভিতরে আমি তখন
নিজের কাছে থাকি।
অন্য কোথাও যেতে গিয়েও দেখি
ভুল করে নিজের কাছে পৌঁছে গেছি।
দেখি নিজের ভিতরে নিজের সৌরভে
মথিত হয়ে আছে এক একটা পালক ও পাখি।
সুগন্ধি নিদ্রা
রাত্রিতে যেসব গাছ স্বপ্ন
দেখে তারাই সাধারণত সুগন্ধি ছড়ায়।
তেমন নিদ্রা মগ্ন উদ্ভিদের নাম হাসনাহেনা।
আর যেসব গাছ সৌন্দর্যময়
তারা অন্যদের স্বপ্ন দেখিয়ে থাকে।
শিতে আমাদের বাগানই হয়ে ওঠে রান্নাঘর
গাছে গাছে ঝলসে ওঠে গোলাপ
যেন রান্না হচ্ছে এক টুকরো লাল মাংস।
যদিও দু-একটা গাছে ধরে আতরের শিশি
তুলোর মতো ফুলও রাখে
আমাদের নাসিকায় দংশনের চিহ্ন।
আমি গোলাপের ভিতর থেকে
নিংড়ে নিয়েছিলাম শিশিরের ভাস্কর্য।
আমি কাঁটাকে ফসিল করে
রেখে দিয়েছিলাম আমারই আঙুলে।
গোলাপের গায়ের লাল শিশিরকে
অনেকবারই গোলাপের লালা ভেবেছি—রক্তিম লালা।
নরম সুগঠিত পরাগ কেশরভিজে থাকে নিজস্ব মধুতে।
শেখ শামীম
জন্ম: ৯ জুন ১৯৭৮। গ্রাম ও ডাক: আহাম্মদপুর, উপজেলা: সুজানগর, থানা: আমিনপুর, জেলা: পাবনা।
পেশা: মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক
কোনো কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। কাঙ্ক্ষিত মন’ নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
শেখ শামীমের কবিতা
পঙ্ক ও পুষ্প-১
রাতের আঁধার সাঁতরাই প্রাণপণে—
ভোরের প্রত্যাশায়;
আহা! ভোর আসে নি আমার জীবনে
তবুও অপেক্ষায়
থেকে
পাই নি এতটুকু সোনারোদ!
মরীচিকা সবই— তবুও মেলেছি চোখ
আহত পথিকের মত
তোমার উঠোনে শুয়েই না হয় হোক—
না হয় হই আরও নত
তবু চাই আলো, কিছু শুভবোধ।
প্রেম চাই, ভালোবাসা চাই
চাই স্বচ্ছ প্রতিশ্রুতি
চাই স্বপ্ন তোমার কাছে—
আর বেঁচে থাকার তীব্র আকুতি।
পঙ্ক ও পুষ্প-২
হঠাৎ-ই দেখা।
তবে রবীন্দ্রনাথের মতো নয়—
রেলগাড়ির প্রশ্নই আসে না
লালরঙের শাড়ি দূরে থাক
বলতে গেলে এটা তেমন কিছু নয়—
কেবল হঠাৎ দেখা হওয়াটা রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো।
উজ্জ্বল সূর্যের নীচে, মেঠোপথের ধারে
তার সঙ্গে দেখা হওয়ায় মনে হলো
কালো রঙেরও একটা তীব্রতা আছে।
তবে কি তীব্রতাটুকুই সব!
আঙুল তুলে ডাকা নেই
পুরনো কোন স্মৃতি নেই
কেবল বিভোল বালিকার ছন্দ তুলে—
চলে যাওয়া তো আছে
দিনের আলোর গভীরে ডুবে থাকা
রাতের তারার উপমা নেই
হাহাকার নেই
বেদনা নেই
কেবল হঠাৎ দেখার মুগ্ধতা আছে।
মজিদ মাহমুদ
জন্ম ১৬ এপ্রিল ১৯৬৬, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামে। এম.এ (বাংলা), ১৯৮৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি ঠিক রেখে কখনো সাংবাদিকতা, কখনো শিক্ষকতা; আর পাশাপাশি সমাজসেবা। প্রকাশিত বই: কবিতা— মাহফুজামঙ্গল (১৯৮৯), গোষ্ঠের দিকে (১৯৯৬), বল উপখ্যান (২০০০), আপেল কাহিনী (২০০১), ধাত্রী ক্লিনিকের জন্ম (২০০৫), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), কাঁটাচামচ নির্বাচিত কবিতা (২০০৯), সিংহ ও গর্দভের কবিতা (২০১০), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১১), দেওয়ান-ই-মজিদ (২০১১), গ্রামকুট (২০১৫), কবিতামালা (২০১৫)। প্রবন্ধ ও গবেষণা— নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র (১৯৯৭), কেন কবি কেন কবি নয় (২০০১), ভাষার আধিপত্য ও বিবিধ প্রবন্ধ (২০০৫), নজরুলের মানুষধর্ম (২০০৫), উত্তর-উপনিবেশ সাহিত্য ও অন্যান্য (২০০৯), রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ-সাহিত্য (২০১১), সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা (২০১১), রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ (২০১৩), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৪), সন্তকবীর শতদোঁহা ও রবীন্দ্রনাথ (২০১৫), ক্ষণচিন্তা (২০১৬)। গল্প-উপন্যাস— মাকড়সা ও রজনীগন্ধা (১৯৮৬), মেমোরিয়াল ক্লাব। শিশু সাহিত্য— বৌটুবানী ফুলের দেশে (১৯৮৫), বাংলাদেশের মুখ (২০০৭) সম্পাদনা— বৃক্ষ ভালোবাসার কবিতা (২০০০), জামরুল হাসান বেগ স্মারকগ্রন্থ (২০০৩); পর্ব (সাহিত্য-চিন্তার কাগজ) অনুবাদ— অজিত কৌড়ের গল্প (২০১৬), মরক্কোর ঔপন্যাসিক ইউসুফ আমিনি এলালামির নোমাড লাভ এর বাংলা অনুবাদ ‘যাযাবর প্রেম’ ই-মেইল : mozidmahmud@yahoo.com
মজিদ মাহমুদের কবিতা
চোখ বন্ধের সময়
এখন আমার চোখ বন্ধের সময়
এখন আমি নিজের খাটে নিজের মত ঘুমাই
পাশের ঘরে হাঁটছে বৌদি ফাটছে একা বোমায়
আমার এখন চোখ বন্ধের সময়
কাব্য লেখার শখ ছিল যা অতীতকালে ঘুমায়
এখন আমি নিবিড় যত্নে হয়তো গেছি কমায়
বারান্দাতে হস্তে গোলাপ দেখবে যারা ক্ষমায়
আমার এখন চোখ বন্ধের সময়
আটের দশে কাব্য লিখে এখন থাকি রোমায়
শীতের পাখি আসার কালে রাজধানীতে জমাই
অলস বাঁচা আর কত দিন কেবল বলি- যম আয়
আমার এখন চোখ বন্ধের সময়
একটা জীবন পার করেছি সত্যি ছিলাম হামায়
ভাগ্নে হয়ে ছিলাম যত বাপের শ্যালক মামায়
বেঁচে থাকার ক্ষুদ্রতা সব বলতে গেলে ঘামায়
আমার এখন চোখ বন্ধের সময়
একটু ভালো থাকার জন্য সমস্তটা কামাই
খাচ্ছে যে সব লুটেপুটে শাশুড়ি আর জামাই
নিজের ঘরে নিজের গৃহী কতটা আর নামায়
আমার এখন চোখ বন্ধের সময়
সত্য সুখে বশত করো পুষ্প আঁক জামায়
বলতে শেখ আত্মজারা- যা করে তা মামায়
ঘর করেছে বাহির যারা- কি করে আর থামায়
এখন আমার চোখ বন্ধের সময়।
বজ্রপাতের গান
মরণ তুমি বজ্রপাতে আসো
মাঠের কাজে ন্যাস্ত কৃষক মারো
জলোচ্ছ্বাসে ঘর ভেঙেছ কারো
সিডর কিংবা আইলা যদি আসে
শক্তি তোমার কার বাড়িতে নাশে
ঘূর্ণিঝড়ে উড়াল দিয়ে বায়
কে মরেছে মাতাল বাসের পায়
বানের জলে বন্দি কারে রাখো
কার ভরাক্ষেত খরায় করো খাকও
জাতধর্মে জেহাদ ক্রুসেড হলে
মরণ তুমি কারেই বা নাও কোলে
গরীব ছাড়া কে-ই বা তোমায় স্মরে
হয় না আসন ধনীর রুদ্ধ ঘরে
তুমি হয়তো গুলি খাবার ভয়ে
নামহীন সব খাজা বাবার হয়ে
নিচ্ছ তুলে ইঁদুর মারার কলে
ঘুমের ব্যাঘাত হয় না তারই ফলে
বজ্র তোমার কোথায় আসল বাবা
অসহায়দের বক্ষে মারো থাবা
তুমিও কঠিন নৃপতি এক বটে
গরীব মারার বুদ্ধি তোমার ঘটে
যাদের ঘরে খাদ্য থাকে কম
যাদের শিশু অসুখে ধুকপুক
তাদের মারতে কাঁপে না তোর বুক
জন্ম থেকে বইছ বায়ু শীতল জলের নদ
উল্টাতে কি পার তুমি বড়লোকের মদ
অক্ষত রয় সে-সব বাড়ি পাথর দিয়ে গাঁথা
উড়িয়ে নিতে পার কেবল গরীব লোকের কাঁথা
এবার না হয় একটু হানো ক্রুদ্ধ তোমার বান
ভাল্লাগে না শুনতে কেবল সমীরণের গান।
সৈকত আরেফিন
জন্ম : ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০। গ্রামের নাম: আহাম্মপুর দক্ষিণ।
বিবাহিত।
এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে পড়ান।
সৈকত আরেফিন এর কবিতা
দুটো কবিতা
১
আমি কোন চিত্রশিল্পী নই
তবু যদি অলৌকিক কিছু ভর করে আমার মধ্যে─
যদি শিল্পীর দক্ষতা নিয়ে
নিখুঁতভাবে এঁকে ফেলি তোমার পোর্ট্রেট─
তুমি কীভাবে রিএ্যাক্ট করবে
চোখের তারায় কি বোঝা যাবে
তোমার স্নান-জলের গভীরতা!
নিছক কাগজে আঁকা ছবি
তোমাকে
কী আর আনন্দ দেবে!
তারচেয়ে জনান্তিকে
বরং একটা তাজা গোলাপই তোমাকে দেব─
ন্যাচারাল জিনিস, আর কিছু না হোক
বুক থেকে দুঃখ শুষে নেবে।
২
চাঁদের জনপ্রিয়তার কারণ যে জোসনা
তা না বললেও চলে।
কারণ
ক্লাস টু-য়ে পড়া বাচ্চা মেয়েটিও
বিজ্ঞান বই পড়ে জেনেছে
মূলত চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই।
অথচ দেখ
আমরা ঘুরেফিরে কেবলই জোসনারাতেই
বনে যেতে চাই
প্রেমিকার কপালে দিই চন্দ্রের টিপ!
মনে মনে ঠিকই জানি
চাঁদ আসলে সূর্যের কন্যা
যতই সে প্রচণ্ড হোক─ভেতরে গোপন থাকে
পিতার হৃদয়─যত উত্তাপই দিক।