অলস দুপুর অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন: পর্ব ০৯
অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৯
সাইটে প্রবেশের জন্য আপনাকে স্বাগতম। এটি অলসদুপুর ওয়েবম্যাগের একটি অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন। এই সংকলনে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে যারা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন, লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন, তাদেরকে বিশেষ ভাবে স্থান দেয়া হচ্ছে। আমরা জানি যে পুঁজিবাদের বিকাশের প্রক্রিয়াটিই এমন যে ইটের নিচে সবুজ ঘাস চাপা পড়ে যায়। আমরা প্রশান্তির জন্য দিগন্তের দিকেই তাকিয়ে থাকি।
অলসদুপুর সেইসব কবিদেরই খুঁজে চলেছেন। যারা নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন, কোন এক দূরে বসে লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন বছরের পর বছর। সন্ধ্যায় জোনাকির মত তার চোখও জ্বলে ওঠে নতুন কবিতায়। সেইসব নতুন কবিতাকে খুঁজে চলেছে অলসদুপুর।
অনলাইন কোন স্থান নয়। ইন্টারনেট মানে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের সাথে যুক্ত আপনি আমি। এখন আমি আপনি বিশ্বের যে কোন প্রান্তের কবিতার সাথেও যুক্ত। কিন্তু প্রান্ত তো আছে। যে এসে মিলিত হয় মুক্তির সাথে। অলস দুপুরের কাছে জেলা হচ্ছে এক একটি প্রান্ত, যে যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলা কবিতা নয়, বিশ্ব কবিতার সাথে। আমরা অলস দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কবিতা এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।
সংকলন পদ্ধতি: একজন মূল সম্পাদক থাকেন। মূল সম্পাদক থাকবেন দুপুর মিত্র। বিভিন্ন জেলা থেকে একজন অতিথি সম্পাদক নির্বাচিত করেন। অতিথি সম্পাদক তার জেলা থেকে কবি নির্বাচিত করেন এবং তাদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে মূল সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। প্রতিটি পোস্ট এক একটি জেলা বা প্রান্তের সংকলন হিসেবে গণ্য হবে। যিনি অতিথি সম্পাদক থাকবেন তার সম্পাদনা নিয়ে একটি ছোট সম্পাদকীয় থাকবে। এভাবে ছোট ছোট সংকলন মিলে একটি বড় সংকলন হবে।
যাদের কবিতা সংকলিত হবে
১. দীর্ঘদিন ধরে লিটলম্যাগে জড়িত
২. বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত
৩. সাহিত্যচর্চায় নিয়মিত
সংকলনটি চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন সময় এটি আপডেট হবে। সংকলনটি সমৃদ্ধ করতে পাঠকের প্রস্তাবনা ও মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। প্রস্তাবনা বা মন্তব্য জানান mitra_bibhuti@yahoo.com এ।
অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন: ০৯ পর্বের অতিথি সম্পাদক কবি মৌমিতা ঘোষ। তিনি ভারতের কলকাতা জেলা থেকে কবিতা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে ‘অলসদুপুর’ ওয়েব ম্যাগাজিনকে সহায়তা করেছেন। তার প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।
মৌমিতা ঘোষের সম্পাদকীয়:
'অলস দুপুর' পত্রিকার সম্পাদক দুপুর মিত্রের কাছ থেকে অনুরোধ আসে কলকাতা জেলার কবিদের নিয়ে একটি সংকলন করতে, তারা জেলা ভিত্তিক সংকলনে তৈরি করছেন এই ওয়েবম্যাগে, ভবিষ্যতে সেগুলি নিয়ে নতুন কিছু পরিকল্পনাও করা হতে পারে হয়তো। মূল উদ্দেশ্য, লিটল ম্যাগাজিনে যারা লেখালেখি করেন, এবং বহু কষ্ট করেই লেখালেখি চালিয়ে যান, দীপশিখাটি জ্বালিয়ে রাখেন, অথচ তাদের উপরে অতটা আলো হয়তো পড়ে না , তাদের লেখাগুলিকে তুলে ধরা, আর্কাইভ করে রাখা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। কলকাতা সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পীঠস্থান আপনারা জানেন। বহু ভালো কবিতা লেখা হয়। তার মধ্যে থেকে দশজনকে বেছে নিয়েছি এই সংখ্যার জন্য। বহু প্রিয় কবির কাছে পৌঁছাতেই পারিনি নিজস্ব ব্যস্ততার জন্য। তাই এই সংখ্যাটিতে যাঁরা আছেন তারা লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত, যেমন সে কথাটি সত্যি, তেমনই লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত ও ভালো লেখেন এমন অনেক কবির লেখার সঙ্গে পরিচিত করাতে পারলাম না তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এই সংখ্যায় যারা লিখেছেন , তারা হলেন অর্ঘ্য রায়, আলো বসু, অনুক্তা ঘোষাল, সুকন্যা সাহা, অরুণিমা চৌধুরী, রিয়া চক্রবর্তী, সৌরীশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভ্রা দত্ত রায় , রত্নদীপা ঘোষ ও মৌমিতা ঘোষ। সকলেই দীর্ঘদিন লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় প্রত্যেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরি বা অন্য জীবিকার পাশাপাশি অত্যন্ত সচেতনভাবে সাহিত্য চর্চাটি করে যাচ্ছেন। কলকাতার মতো ব্যস্ত শহরের নানা নাগরিক প্রলোভনের মধ্যে এরা নিভতে দেননি কবিতার আলোকবর্তিকাটিকে, পৌঁছে দিচ্ছেন খুব সাবধানে, হাতের আড়ালটুকু দিয়ে বাঁচিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
অর্ঘ্য রায়
পরিচিতি: জন্ম হুগলি জেলায়। বর্তমানে কর্মসূত্রে কলকাতা ও দিল্লিতে থাকেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। এমবিএ করেছেন পাঞ্জাব টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে কর্ণাটক স্টেট ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এডুকেশনে এমএ করছেন। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় শব্দের ঝঙ্কার পত্রিকায় ২০০১ সালে। তারপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার লেখালেখি শুরু। বাংলায় প্রচারিত বিভিন্ন প্রথম সারির পত্র পত্রিকায় প্রধানত কবিতা প্রকাশিত হয়ে চলেছে তার। এছাড়াও সমাজ সেবামূলক বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। ২০০৪ সাল থেকে সময়ের শব্দ পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করে চলেছেন।
অর্ঘ্য রায়ের কবিতা
শূন্যস্থান
দুঃখ যখন সঙ্গীবিনে
এমনই এক একলা দিনে
আমার বাড়ি আসিস যদি
এক লহমায় বৃষ্টি নদী…
ভাসিয়ে দেবে আমার এ মন
আমার মনের শুকনো উঠোন
চল দু’জনে চৌকি পেতে
গল্প জুড়ি মজায় মেতে
আমার চিলে কোঠার ঘর
ছুমন্তরে তেপান্তর
তুই যদি হোস রাজার মেয়ে
আসবো আমি নৌকো বেয়ে
ধনপতির সপ্ততরী
আয় দু’জনে কাব্য করি,
কঞ্চি কেটে কাব্য কলম
ব্যথার ক্ষতে প্রেমের মলম
আর কাঁদে না স্বপ্নপরী
তুই তো আমার ধলেশ্বরী
যা বয়ে যা মুক্তধারে...
এমন দিনে দুঃখ পাস না, দুঃখ পেলে...
কবিতা কেউ লিখতে পারে না ।
মধ্যবিত্ত
সাজানো টেবিলে চৌচির ফুলদানি
এক এক টুকরো এক একটা যৌবন
জড়িয়ে ধরেছে কে কখন কি তা জানি
সেই স্মৃতিটুকু খুঁজে খুঁজে ফেরে মন।
তোমাকে বলতে সঙ্কোচ নেই কোন
তবুও কেবলই জড়িয়ে যাচ্ছে জিভ
প্রথম যখন বলেছি, এই যে শোন...
সময় তখন ছিল না এতটা ক্লীব।
কানের পাশেতে রক্তের দাগ লেগে
মানুষ মরলে যেমন দেখতে হয়
যেমন রোদেরা জমে বৈশাখী মেঘে
রাত বিছানায় যেমন জমাট ভয়।
রক্তের দাগ যেমনটা আছে থাক
গোলাপের কুঁড়ি অবচেতনায় ঠোঁট
শাঁখ উলুধ্বনি থালায় চোদ্দ শাক
ও মেয়ে, সকালে ফুল হয়ে ফুটে ওঠ।।
অন্য অরণ্য
আমি তো দীঘি হয়েই আছি,
সমস্ত খোঁড়া ঘোড়া আস্তাবল থেকে ছেড়ে দিয়ে এসেছি
নেশাতুর এক অন্য অরণ্যে।
আমাকে এতদিন যারা গুম করে রেখেছিল,
হত্যাকারীকে রাস্তা চিনিয়ে দিয়েছিল
আমার গোপন আস্তানার
আজ দেখি, সেই সকলে পাদরির পোশাকে-
মাথা নিচু করে আছে।
এক,দুই, তিন মিনিট...
অথচ সেদিন তুমি আমাকে মেহমান বলে ডাকতে
আর আমি তোমাকে আসমান বলে জানতাম
তবুও এই সব অসমাপ্ত পরিচয়ের
আজ আর অন্য কোন ডাকনাম নেই।
ফাঁকা আস্তাবল, সহিস, কোচোয়ান
আর সমস্ত ফেরিওলা-
আমার কাছে এখন আর মাথা হেঁট করে
মাইনে চাইতে আসে না।
আলো বসু, কবি।
আলো বসু
পরিচিতি: জন্ম --১৯৬০ , ১০ই ফেব্রুয়ারি, স্নাতক: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষ্ণনগর নিবাসী চারণ কবি স্বর্গীয় বিজয় লাল চট্টোপাধ্যায়ের প্রিয় ভাইজি । ওঁর অনুপ্রেরণাতেই স্কুলবেলা থেকেই ডায়েরি লেখার অভ্যেস । ক্রমশ কবিতা আসে । জীবনের নানান আকর্ষণের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের অনাস্বাদিত অক্ষরের লোভেই বারবার এই বাংলায় ফিরে আসার সাধ।
ক্যাম্প ফায়ার
আজকাল বর্ষা রঙের কিছু মেঘ
আমাদের নিজস্ব কেল্লার আকাশে
ঘোরাফেরা করে বারমাস
সমস্ত উষ্ণতায় জল ঢালতে থাকে
যখন তখন
কী ভীষণ শীত অন্দরমহলের জীবনধারণে !
আমি তো ওদের নাম দিয়েছি নির্বাপক l
তবু এই যে ঘূর্ণায়মান চাকার সঙ্গে
উঠে আসা শীতকে স্বাগত জানাই ,
সে তো কেবল একটা মেদুর উত্তাপ
উপভোগ করব বলেই
কিন্তু নির্বাপকের দল পেছন ছাড়ে না যে !
তবে এসো, কিছু আগুন বর্ণ জড়ো করি
তারপর তার চারদিকে গোল হয়ে বসে
ক্যাম্প ফায়ারে মেতে উঠি ,
গাই সুখজাগানিয়া গান ... ...
জানি, তোমরা হেসে উঠলে
কিন্তু বিশ্বাস কর, এমনটা হতে পারে, হয়
আমি শুনেছি
শীতকালে জঙ্গলে শাখামৃগের দল
অগ্নিবর্ণ কুঁচ জড়ো করে চারপাশে গোল হয়ে বসে l
ওরা মনে করে ওরা আগুন পোহাচ্ছে I
সামান্য কথা
তারপর ঘৃণায় জড়িয়ে যেতে যেতে একদিন ভালবাসার জন্য মন কেমন, জীবন রচনা অনিবার্য মৃত্যুর গন্তব্যে, হতাশার গর্ভে নিভে যাবার আগেই আশা নামের বাতিঘরে পারের ঠিকানা ভেসে উঠল। আরও আছে শোন, শোক-দুঃখ-আঘাত-সংঘাতে সুখ যেন বলকে বলকে ঘন, রক্তাক্ত হতে হতে ঈর্ষার চকচকে ফলায় একদিন ঠিক বন্ধুর মুখচ্ছবি, এখন শুধু প্রাণের আলাপ নির্লিপ্তি ও শান্তির এই লোভ-ক্ষোভময় চালচিত্রে। সব রকম অন্ধকারই ছোট বড় আলো ছড়াচ্ছে ছবিটিতে তাই অন্ধকারের এইসব সঙ্গী সাথীদের কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারি? এইটুকুই বলার, আর কিছু নয়।
ভাত, ভাষা, ভালোবাসা
দিও, জানলা দরজা এভাবেই খুলে দিও
যাতে ঘর জেলখানা মনে না হয়
এভাবে নয় যাতে ঘর আর বাইরের দেয়ালটা
অর্থহীন হয়ে পড়ে
জ্বালিও, গৃহসজ্জায় আমদানি’র এলইডি
তবে, আত্মপ্রকাশের আলোভাষাতেই
জন্মদাগ ফোটে
যাও , বিশ্ববাজারে যাও ...
গ্রহণ করো, সংগ্রহ করো
খেয়াল ক’রো, রক্তে লেখা সম্পদ
বাস্তুহারা হয় না যেন
যে কোন রঙেই রাঙাতে পারো বোল-বাণী
পরিযায়ী ভ্রমণে মনে রেখো ফিরে আসা আছে
নিজস্ব জলের কাছে মুখ ধুয়ে ফেলো, মায়ের দেওয়া
আটপৌরে অক্ষর জড়িয়ে নিও যাপনে
ছড়িয়ে দিও যেমন সন্ধ্যাদীপের আলোয় ধূপ-ধুনো গন্ধ
শিশুর প্রথম চলার নিচে কলসিপোঁতা মোহর
বৃক্ষের পায়ের তলায় শিকড়
দিও, সন্তানের মুখেভাত দিও,
ভাষা দিও ভালোবাসা মেখে
ভাত, ভাষা, ভালোবাসা ছাড়া,
ঝড় ওঠে এইখানে, পাতা উড়ে যায়
ইতিহাস থেকে
চলো লেটস গো
ডাকঘর মনে রেখেছে সেই ডাকের কথা
যাকে স্ট্যাচু বলেই দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেছি সুখ ধরতে
সুখ কত দ্রুতগামী করে মানুষকে আহা! তাই পতনও থাকে
অনেক রকম, মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার মত পতন, কত কিছু খসে পড়ে শরীরী অলঙ্কার যেমন চলার ছন্দ যেখানে শিল্প দ্বৈত অনুবাদে, সেই নূপুর জোড়াটি ফিরিয়ে নিতে আসব না জেনে নিজে নিজেই তুলে রেখেছো ‘গো’ বলতে বলতে
স্থবির কপাল আনাড়ি, গো –স্ট্যাচু খেলায় বার বার নিথর পাথর বানিয়ে কেটে পড়েছে খিলাড়ি সকল
তখন কোন খেলা জানতাম না কেবল দৌড়ে যাওয়া আমার আনন্দের নাম, ম্যারাথন একটা সুখের খেলা
শেষ ধাপে ভিক্ট্রির কোন ধাপেই নেই জেনে শ্লথগতি সারাৎসার ঘেঁটে জানাচ্ছে এখানে দৌড় কত দ্রুত বড় কথা নয়, ছন্দে পা ফেলাটাই শিল্প আর কী আশ্চর্য ঠিক এমন সময় তালহারা, ছন্দছাড়া পদযুগলকে ফিরিয়ে দিতে আসছো সেই ছন্দ! বলছো ----‘’নূপুর পড়বে? জ্যোৎস্নার
গান বাঁধবে আবার দগ্ধ ক্ষত পা – দু'খানি ?
অনুক্তা ঘোষাল, কবি।
অনুক্তা ঘোষাল
কবি পরিচিতি– নাম অনুক্তা ঘোষাল। জন্ম উত্তর কলকাতার দমদমে। ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি, অভিনয়, সঞ্চালনা ও ছবি আঁকায় প্রথাগত শিক্ষালাভ । এছাড়া কবিতা লেখার সখ সেই ছোটবেলা থেকেই। এ.বি.টি.এ আয়োজিত আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় জেলাস্তরে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। কলকাতা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয় নিয়ে শিক্ষালাভ। ডিডিবাংলা ও ২৪ ঘন্টা চ্যানেলে সঞ্চালনার অভিজ্ঞতা। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে নিজের লেখা দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। প্রথম বই ‘কলমবলবে' এবং দ্বিতীয় বই‘ কালকথা'। বর্তমানে বি.কম অনার্স ও পি.জি.ডি.এইচ.আর কমপ্লিট করে এম.বি.এ পাঠরতা। পুরস্কার– [১]চুঁনীকোটালস্মৃতিসম্মান [২] রঙ্গনসাহিত্যসম্মান।
কথাসব
আমাদের গান ভেসে যায় চেনা পথে
আলো হয়ে জ্বলে প্রতিবেশীদের ঘরে।
যারা যেতে চায় তারাও হয়ত জানে
রাস্তা ফুরোবে খই রেখাটার পরে।
অভিযোগ গিলে শান্তি কিনেছি যত
সব মুছে গেছে চেনা আঘাতের টানে।
মধ্যবিত্ত ব্যথায় পুড়েছে, তবু
কত ভেজা চোখ রোদ্দুর খুঁজে আনে।
হাতছাড়া গেছে, পিছুটান নেই মোটে
এমন প্রেমিক অগণিত,আমি চিনি।
যারা ভুলে গেছে তারাই বলতে পারে
অভ্যেস শুধু আত্মার কাছে ঋণী।
জোট বেঁধে আসা শব্দের ভিড় ঠেলে
একাস্থাণু শুধু অতীতের হাতছানি।
পৃথিবীর দেহ ছোটো হয়ে গেলে কাল
দিয়ে যাব প্রিয়, কবিতার পাতা খানি।
সেইকথা
আজও সেই কথা বাকি পড়ে আছে, জমা রয়ে গেছে সব
যে কথার বুকে স্তব্ধতা হাসে, যে কথায় ফোটে রব।
যে কথায় ওঠে বিরল বাতাসে ছুঁয়ে থাকা আনচান
অবারিত সুর, সেও দিয়ে যায় জমে থাকা অভিমান।
যে কথার বুকে স্থির অবকাশ দুচোখের হাসি খোঁজে,
শূন্যতা ঘিরে ঘর বাঁধা সুখ সে কথার ভাষা বোঝে।
যে কথায় ভেজেরা ত্রিবিরান এক পশলার মেঘে
শব্দিত কাল প্রতি লহমায় বিরহের সাথে জেগে।
যে কথায় মাখে মলিন প্রহরে মিশে থাকা স্মৃতি হেম
সে কথার ডোরে অবিরত হাসে তোমার আমার প্রেম।
তোমার আমার
তোমার চোখে আদর জড়ায়, আমার কাঁধে প্রেম আঁচলা।
তোমার হাতে মেঘ জমে ভার বৃষ্টি ওড়াও দুই পশলা।
কোন ফাঁকে নাও রোদ চুমুকের মিষ্টি আমেজ ফের একাকী
তবুও তুমি প্রেম বোঝ কই, সত্যি বড় এক রোখা কী?
তোমার প্রেমে স্বপ্নসকাল, ঘরফেরা পথ যায় হারিয়ে,
আমার ঘরে বাতাস ঢোকে মনকে মনের রাত পেড়িয়ে।
আলতো আদর শরীর ভেজায়, আহ্লাদি ক্ষণ আঁকড়ে রাখি।
তোমার ঠোঁটের আদর মাখা দু’ এক কলি আজও বাকি।
তোমার হাতে ফাগরঙালাজ, আমার বুকে সেই শিহরণ,
তোমার আঙুল শব্দ ভোলায়, গল্পে আনে উথাল প্লাবন।
আমার সবই খেই খোয়া সুর, তোমায় ভাসায় অঝর ধারা
এক মুঠোরোদ প্রেম ঢেলে যায়, মন ওড়ে আজ ছন্ন ছাড়া।
তোমার চোখে সুখ অসুখের রঙিন ছবির স্বপ্ন ফেরি,
আমার বুকে ফের হাঁটুজল, বৃষ্টি তবু আসতে দেরি।
চুপ চিঠিতে গল্প ছড়ায়, স্মৃতির খোপে স্বপ্নফোটে
তোমার চোখে বর্ষা যখন আমার মেঘ ও গর্জে ওঠে।
একটি অন্য প্রেমের কবিতা
যখন আমি একলা বিরান পথে
হাঁটছি একা হাজার লোকের ঢলে,
শিহরণের শেষ লহমাটুকু
আজও লেগে শরীরি বল্কলে।
সনির্বন্ধ রাতের ফিসফিসানি
না হওয়া শেষ কথা গোলমেলে।
ভালোবাসা পাঠিয়ে দিলাম তোকে
বহুদিনের জমা চোখের জলে।
হারিয়ে গেছে অবুঝ অন্তরালে
গলার নীচের অঙ্গীকারের ছাপ।
অপূর্ণতার ফুটন্ত বিভ্রমে
ক্ষুণ্ণ প্রেমের সূক্ষ্ম পরিমাপ।
সুকন্যা সাহা
পরিচিতি: ঠিকানা -২৪৫/১ এস কে দেব রোড , কলিকাতা -৭০০০৪৮
জন্ম- ২৩/০৩/১৯৭৭
শিক্ষা- বিএ, এলএলবি,
কর্মক্ষেত্র- হাইকোর্টে প্র্যাকটিস বর্তমানে রাজ্য সরকারী কর্মচারী
কবিতা লেখা-১৯৯৯ সাল থেকে, প্রথম কবিতার বই "অন্তর মহল"। বর্তমানে পরিচিতি ছোট গল্পকার হিসেবে।
লেখা প্রকাশিত হয়েছে - আজকের সম্পূর্না (কবিতা), শুভম সাময়িকী (কবিতা), সানন্দা (ছোটোগল্প) প্রথম আলো -(কবিতা ), ফেরারি কাব্য সংকলন , কালি কলম ও ইজেল (কবিতা) এছাড়া অসংখ্য লিটল ম্যাগ যেমন- শব্দমালা, মউল, যুগসাগ্নিক ইত্যাদিতে।
প্রকাশিত কাব্য সংকলন - নতুন সাক্ষর , প্রেম ও প্রতিবাদের পদাবলী, দুই বাংলার একশ কবির কবিতা ইত্যাদি গ্রন্থে।
চলভাষ -৮৩৩৫৮৩৩১১৩
ই মেল - sh_skny@yahoo.co.in
বারুদ গন্ধ
এই উপত্যকা থেকে এখনও নিভে যায়নি বারুদ গন্ধ
সাদা বরফের উপর থেকে মিলিয়ে যায়নি তাজা খুনের দাগ
তবুও সকাল সকাল স্কুল বসেছে রোজকার মতই
ফুটফুটে ছেলেমেয়েগুলো দৌড়তে দৌড়তে আসছে
বইয়ের ব্যাগের ভেতর পিস্তল লুকানো বুকে ছাইচাপা জিহাদের আগুন
চীনার গাছগুলিতে আজও বরফ পড়ছে আগের মত
ডাল লেক জমে যাচ্ছে বরফে ---
সমস্ত উপত্যকা বরফে বরফে সাদা হয়ে যাওয়ার আগে
প্রতিশোধ তুমি ঘুমিয়ে পড় শেষবারের মত।
কলারটিউনস
এখনও একই আছে কলার টিউনস, যাতে তুমি চট করে চিনতে পারো;
এমনকি নাম্বারটাও বদলাইনি; যদি ফোন করো কোনদিন ...মনে আছে
শ্রেয়া ঘোষালের গলা তোমার প্রিয় ছিল, আর অনেক খুঁজে পেতে এই
গানটাকেই কলার টিউনস করতে বলেছিলে তুমি ...একবার ফোন করে দ্যাখো
সেই পাতা ঝরা দিন, হাতে হাত রাখা বিকেল, গঙ্গা পাড়ের সূর্যাস্ত,
একই জায়গায় আছে ... এমনকি সেই রিংটোন কলার টিউনস পর্যন্ত শুধু তোমার
ঠিকানাটাই আমি জানি না ...নিউইয়র্ক, না নিউজার্সি কোথায় যেন ! চাইলে চিঠি
লিখতে পারো এমনকি ই-মেলও ... আমার ঠিকানা সেই একই আছে ...
এমনকি রিংটোন, কলার টিউনসও ...
দীঘার সালতামামি
১
যতদূর চোখ শুধু জল আর জল
এখানে পথ হারাবি বল অতল ?
২
ঘন ঝাউবন আর দূরে বালিয়াড়ি
দুজনে একলা হলে চুমু খেতে পারি ?
৩
যতদূর তুই গেলি আমিও গেছি ততদূর
জোয়ার ভাঁটার খেলা দীঘা থেকে শঙ্করপুর ।
৪
সারাপথ সাথে ছিল নিভে আসা এক ফালি চাঁদ
মোহনার কাছে এসে হঠাৎ ই তুই জলপ্রপাত।
৫
রূপোলি আঁশের গায়ে লেগেছিল আদরের ঘ্রাণ
ঢেউয়ের মাথায় মাথায় ভেসে গেল ভোরের আজান।
৬
আদরের ছোঁয়া লেগেছিল তোর চিবুকে কপালে
ভোরের সূর্য ছুঁয়ে দিল ঘুম ভাঙা মাঝিদের জালে---
৭
যে লোকটা হেঁটে গেল বেহালা বাজিয়ে একা
সে কি জানে জীবনের মানে কাকে বলে একসাথে থাকা?
৮
দুদিনের স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসি পুরোনো শহরে
জেগে থাকে জলছাপ ফেলে আসা ভিজে রোদ্দুরে।
ইস্টিকুটুম
প্রতি বছর ইলেক্ট্রিক ট্রেনটা এই সময় একটুকরো বসন্ত নামিয়ে দিয়ে যায়
আর ইস্টিকুটুম পাখিটা ডেকে ডেকে বলে যায় কেউ এলো? কেউ এলো?
শাল পলাশের আগুনরঙ ক্যানভাসে বাসন্তি রঙের ছিটে
ঘূর্ণি হাওয়ায় উড়তে থাকা শিমুল তুলো আর শাড়ির আঁচল
ইস্টিকুটুমটা শুধু ডেকে যায় বসন্ত এসে গেছে ...
তোমার শহর আছে তবুও এই সময়টা লাল মাটি তোমায় টানে
উথাল পাথাল ঢেউ বুকে নিয়ে তোমায় রিসিভ করি স্টেশানে
বাঁশি আর মাদলের সুরে চাঁদের আলোয় বানভাসি
শুধু ইস্টিকুটুম বলে ওঠে ভালোবাসি ভালোবাসি...
অরুণিমা চৌধুরী
লেখক পরিচিতি: জন্ম ৮জুলাই, ১৯৭৫। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী। লেখালেখির সূত্রপাত ছোটবেলায় ডায়েরির পাতায়। মূলত কবিতা লেখাই নেশা। পড়তে ভালবাসি দেশী-বিদেশি সাহিত্যের যে কোনো শাখা। ক্যান্সার সার্ভাইভার, ফলত লেখায় নিজস্ব জীবনের ছবিই বারবার উঠে এসেছে বিষাদের হাত ধরে।
১. ঠিকানা ব্যক্তিগত এবং
পরম যত্নে লুকিয়ে রাখা আচারের বয়াম মহার্ঘ্য বলেই বুঝি দেখা সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনা
বখাটে রাত্তির, যত দূরে যাবি ততো সন্দিহান
হবে চরাচর আমি আর বাসা খুঁজব না, আমি আর জল চেয়ে
জিজ্ঞেস করব না," কেমন আছ!"
যারা মারা গেছে তারা এই
শর্তাধীন বেঁচে থাকার উর্ধ্বে
যাক কেউ অন্তত হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে!
আমার প্রণাম নেই, স্পর্শ নেই, আমি জানি
সমস্ত দেখনদারির প্রেক্ষাপটেই প্রবল ও
বিতর্কিত একাকীত্ব
এ বাড়িতে আমার পায়ের ছাপ সন্দেহাতীত নয়
ও বাড়িতে আমি যাই না
ঠিকানা ব্যক্তিগত এবং
সচ্ছলতার গন্ধে আমার অসুখ করে....
২.
এই প্রথম তুমি মৃত্যু ছুঁয়েছ
জল থেকে উঠে আসছে বেবাক নীল, এতো নীল তীব্রতায় ফুসফুসও হাঁমুখ
শ্বাসে আটকে আছে বিবর্ণ শ্যাওলার স্তূপ
জলের ভিতরে এতোটুকু শব্দ নেই
অথচ কারা চেঁচিয়ে উঠল জয়কালী
কেমন ডুবে গেলো খড়মাটির দীঘল কাঠামো
তখনো গাল ও কপালে সিঁদুর মাখামাখি
কি পরিপাটি উজ্জ্বল পারঘাট!
একটা গোটা সংসার তলিয়ে গেলো আর
এই প্রথম সে বাধ্য মেয়ের মতো আগুনে সঁপে দিচ্ছে সধবা আঙুল, প্রিয় আঙুরলতা চুল
বাদামী চোখের তারা
সামান্য হাওয়াটুকু স্পর্শ করছে আগুন,
থিতিয়ে যাওয়া পলির কোমল
তারপর ধূ ধূ শূন্যতা...
৩.সময়ের ঋণ
বালির ভেতর ডুবে যাচ্ছে ঋণ
বিস্ফোরণ এর শব্দ থাকে না
সুতো ছিঁড়ে বাড়ি বদলে যায়
অস্পষ্ট হয়ে আসে ছবি....
এই মৃত ভ্রূণ, মাছি
আগলে বসে আছি মৃত সময়ের ঋণ
আত্মার গভীর জলে
সপাটে ধাক্কা মারে যান্ত্রিক শব্দতীর
প্রথা মেনে 'ধন্যবাদ' ফিরে আসে
জন্মদিনের দৃশ্যে ঢুকে পড়ে নিঃশব্দ বিস্ফোরণ।
৪.হলুদ আয়ুরেখা
সে আমাকে জন্মের কথা বলে, জন্মদোষের কথা বলে
রাহুগ্রস্ত পথের কথা ভেবে, যেন তার চিন্তা হয়, এমন ভাঁজ পড়ে কপালে
সে আমাকে অতীত খুঁড়ে তুলে আনে
ছেঁড়াখোঁড়া শুকনো পাতার মতো..
যাবতীয় দোষ কালঘাম মৃত্যুর কথা
স্বীকার করে নিয়েছি...
এত কর্মক্ষম, (অথবা অক্ষম কী জানি!) চাইলেই ঘর ভেঙে দিতে পারি, লাগিয়ে দিতে পারি আগুন
সপ্তাহান্তে এমনটা সে প্রতিবার বলে
আমি অতশত কীইবা বুঝি...
আমার রক্তহীন হাত দু’টো
হলুদ আয়ুরেখা দীর্ঘ, বড় দীর্ঘ আয়ত চোখ... তবুও পায়ের তলায় শীত
সে যত দোষের কথা বলে আমি ততো বেড়ে উঠি আগাছার মতো সে বাড় উন্মত্তের মতো, আগাছার মতো
জন্মের শোধ বাড়তে বাড়তে চাঁদের কিরে কাটি, শতায়ু হয়ো তুমি
আহা ভাত! আহা জল... সামান্য ওষুধপালা! আর কিছুটি নেবার নয় !
সৌরিশ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরিচিতি: সৌরিশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম শ্যামনাগরে। ১৯৮১ সালের ১৪ই মে মাসে শ্যামনগরে উত্তর ২৪ পরগান জেলায়। বর্তমানে কর্মসূত্রে কলকাতা নিবাসী, ছোট বয়স থেকেই লেখা অভ্যাস থাকায় জীবনের হারিয়ে যাওয়া টুকরো পাতায় স্থান পেয়েছিল লেখারা,
তাদের ছাপা অক্ষরে প্রথম আত্মপ্রকাশ ২০১৬ সালে 'যুগসাগ্নিকের' শ্রাবণ সংখ্যায়। এরপর থেকেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। ২০১৬ সালে প্রকাশিত বাংলা দেশের 'ভোরের কাগজ' ও' প্রথম আলো ' পত্রিকায় ২০১৮ সালে সংবাদ একদিন এ প্রকাশিত হয় গল্প এবং কবিতা, ২০১৮ তে নিউ জার্সির 'আনন্দলিপি' থেকে প্রকাশিত হয় গান্ধারী বিষয়ক প্রবন্ধ।
ছাপা অক্ষরের পথ চলার পথে সৌরিশ চান কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গান সর্বত্র থাকুক তার সহজ বিচরণ ...
মুক্তির জানালা
সভ্যতার সীমানা ছাড়িয়ে যেতে যেতে যেদিন হারিয়ে গিয়েছিলাম নিরুদ্দেশে,
শ্মশানের বুকে পড়ে থাকা আধপোড়া মাংসে লেখা হয়ে গেছিল আমার দিনলিপি,
আর সিগারেটের ধোঁয়ায় উড়তে থেকেছিল আমার আত্মার আকুতি।
সেদিন ঘোমটার আড়ালে বসন্তের রোদ সেঁকে নিতে নিতে খ্যাঁক খ্যাঁকে হাসিতে ফুটে উঠেছিল আমার মৃত্যুর ফরমান।
আমি ঘুম ঘুম চোখে শেষ বারের মত তোর হাতটা চেয়ে ছিলাম,
তুই বারোয়ারি রঙ ঘসে দিয়েছিলি আমার চোখে মুখে, গলায় জড়িয়ে দিয়েছিলি ফাঁসুড়ের মালা।
সময়ের সাথে আমার চোখ দু’টো যখন ঠেলে বেড়িয়ে আসছিল,
নিঃশ্বাস যখন আটকে যাচ্ছিল গলার কাছে অবিন্যস্ত ভাবে ছুটে চলেছিল আমার পা,
তখুনি ঠিক তখুনি দেখেছিলাম তোর হাত ছুঁয়ে আছে স্বপ্নের রামধনু আগামীর প্রতীক্ষায়।
সুখে থাক তুই সুখে থাক মুক্তির জানালায় ।
বলয়ের ওপারে
তখনো তোর মেঠো হাত ছুঁয়ে রয়েছে জীবনের শেষ অবলম্বন
তালু থেকে মুছে যাওয়া ভাগ্যরেখা চুয়ে নেমে আসছে রক্তস্রোত
অসার শরীরে ঘিরে ধরছে বিদেশি লার্ভা
অস্ফুট ঠোঁটে ধ্বনিত হচ্ছে অন্তিম শব্দ
সে শব্দের বুকে গর্জে উঠছে কামান
লুন্ঠিত হচ্ছে ছিন্ন ভিন্ন মাথা
সে মাথার শিরা উপশিরায় ভেসে চলেছে সে শব্দ
ভাসতে ভাসতে মিশে যাচ্ছে বারুদ মেশা হাওয়ায়
সে হাওয়ার ডানায় ছড়িয়ে পরছে এদেশ থেকে ওদেশ
সাগর পেরিয়ে মরুভূমি পেরিয়ে এ বলয়ের কোণায় কোণায়
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে জমে উঠছে জেহাদি আওয়াজ
এখন আর এক নয় দুই নয় হাজার হাজার মুখ থেকে নির্গত হচ্ছে
একটাই শব্দ
একটাই ভাষা " বন্দেমাতারাম " ...
সতী
এই মেয়ে;
তুই মিছেই আজ স্বপ্ন দেখিস
দু’হাত ভরা শাঁখা পলায়
মিথ্যে তুই দু’চোখ আঁকিস
আয়নাডোবা জীবন ভেলায়
অন্ধকার আজ ঘনিয়ে আসে
শহরজুড়ে তোর আকাশে
সিথির সিঁদুর, ঘোমটা, টিপ
মিথ্যে সব পুড়েই গেছে
পুতুল খেলার কয়েক বছর
বিষাদ ঘরে বিষণ্ণতায়
ধূসর মেঘে হারিয়ে গেছে
সতীর সাজে চিতায় ওঠায়
সর্বনাশের বাদ্দি বাজে
এধার ওধার সবখানেতে
ওঠনা মেয়ে দাড়া রুখে
পুতুল ফেলে অস্ত্র হাতে
দু’চোখ মেলে দেখ না মেয়ে
কাপুরুষের ভিড় জমেছে অট্ট হাঁসির ডঙ্কা বাজে
তোর ভেতরেই ধরিত্রী মা
হাজার মায়ের সংজ্ঞা খোঁজে
যাস না মেয়ে তুই যাস না হেরে
গহীন রাত আজ অস্তাচলে
তোর শরীরের রক্তধারা
বিদ্রোহিণীর কথা বলে
যাস না মেয়ে তুই যাস না হেরে
যাস না মেয়ে তুই যাস না হেরে
যাস না মেয়ে তুই যাস না হেরে ।।
শুভ্রা রায় দত্ত
পেশা: শিক্ষকতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা: সাম্মানিক স্নাতক,কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (বি.এইচ.এম.এস)। আনুসঙ্গিক: সংগীত ও সাহিত্যচর্চা । সরকারি ও বেসরকারি দূরদর্শন চ্যানেলে সংগীত পরিবেশন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত অ্যাকাডেমির পুরস্কার ও শংসাপত্র লাভ। লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশ।
তখন একুশ
ঝাঁকড়া চুল আর হাল্কা ভীষণ মনখারাপে
হাসলে গালে টোল পড়ে যায় এমনি বাঁকা
দেখতে তো নেই,আড়চোখে তাই দেখার পাপে
চশমা জুড়ে গভীর কাজল সামলে রাখা
পড়লো মনে কী দুর্দিনে এসব কথা
যখন নাকি জ্বরের উপর কপালপোড়া
সিঁদুর দিয়ে নাম লিখেছি পতিব্রতা
আলোয় এবং অন্ধকারে ভুবন জোড়া
ফাঁদের থেকে সামলে আছি গভীর ক্ষত
নরম তৃণের আড়াল পেলে লুকিয়ে মোছে
শ্বাপদ শরীর কাটলে আঁচড় অবিরত
ভরাট হয়ে যাবেই শুধু হাত খরচে
বেহাত হলে ফের জোড়া দিই আয়না আদল
টোলের নীচে উদাস দিনের রোদ ঝরোখা
মেঘের পাশে হঠাৎ নামে তীব্র বাদল
নামের শেষে সইসাবুদে একলা বোকা
দেখতে নিষেধ.... ভাবলে কে আর বুঝতে পারে
টোল পড়া সেই হাসির মানে.....অন্ধকারে....
জলটুংগি
ছুঁয়ে দাও হাত
স্পর্শপ্রপাত
আদুরে জল
মৌলি বাসনা
শীকরে ভাসো না
সে নিষ্ফল
হতে পারে তাও
করতলে দাও
আবীর-দাগ
পার হও রাত
অন্তর্ঘাত
মৌ-পরাগ
হচ্ছে, সে হোক
অরণ্যলোক
ছায়ার ডাক
ছুঁয়ে দাও হাত
জলপ্রপাত
দু’চোখে থাক
মেঘের পরে মেঘ
দুপুর জুড়ে মেঘের কাছাকাছি
এখন তবে অপেক্ষাতেই আছি?
ট্রামলাইন আর রাস্তা পারাপার
সেই কবেকার নিজস্ব সংসার
বানভাসি হয়...এই তো ছিলো
জানা
মেঘের গল্পে অন্য মালিকানা
লিখছে যখন বৃষ্টি, কানাগলি
মফস্বল আর সিক্ত শহরতলি
গল্প বলছে ছদ্ম কানামাছির
কলকাতাতেই অন্য হাওয়ায় বাঁচি....
দুপুরবেলা মেঘের কাছাকাছি
বৃষ্টিজলের অপেক্ষাতে আছি.. .
কথায় কথায়
এসব কথা বলা কি দরকারি?
তার চেয়ে এই একলা নদীজল
মেঘলা দুপুর এই ভাব এই আড়ি
আজকে শুধু চুপকথাটি বল...
আজকে আমি ঢেউ গুণেছি মোটে
একটি দু’টি তারপরে তোর চোখ
ছিনিয়ে নিলো নামতা অকপটে
আজ কথারা বাউন্ডুলে হোক
হোক না সবাই আজকে ঝাউয়ের পাতা
উড়েই যাক না জল পেরিয়ে দূরে
কথার মধ্যে যেমন তীক্ষ্ণ ব্যথা
লুকিয়ে রাখিস মৌন-নিপুণ সুরে
তেমন করে ডাকবি কি আজ কাছে?
তোর কথারা আমার ঠোঁটে আছে
তোর কথারা আমার ঠোঁটে বাঁচে
কী দুঃখ... বলো
এখন মগ্ন চরাচরে রাত্রি এসে বসেছে নিঝুম
কী দুঃখ বলো....অবকাশ, এখনো নির্ঘুম
এমন বিষাদনীল, এমন কাজলছোঁয়া জল
কী দুঃখ বলো....তেমনি আশ্চর্য অতল
ভেঙে দেবে....তাহলেই শোক মুছে যাবে?
নিজেকে হত্যা করে কোথায় পালাবে....
কী দুঃখ....একজন্ম, ঘুম নেই নিশাচর আলো
আমাকে পাথর ভাবো...ভাবো আর বলো
কী দুঃখ..আজন্ম....মৃত্যুহীনা....বলো...
রিয়া চক্রবর্তী
জন্ম মৃত্যু জন্ম
ফিনিক্সের চিতাভস্মে
পুনর্জন্ম আমার,
পুরনো যন্ত্রণাগুলো
বিসর্জন দিয়েছি
চিতার আগুনে।
পৃথিবীর নাড়ী ছিঁড়ে
জন্ম যে গ্রহের,
জন্মবিন্দুতেই
ফের বিস্ফোরণ,
অন্ত শুদ্ধস্নান,
শূন্য থেকেই ফের
শুরু পথ চলা।
একা
মাঝে মাঝে একলা রাতে
জেগে থাকতে বেশ লাগে।
বেশ লাগে অপমানের অনুভূতিতে
ঘৃণার ঘন কুয়াশায় জ্বলে যেতে।
কে যেন বলেছিল ভালোবাসে,
ভালোবেসে ভুলিয়ে দেবে দুঃস্বপ্ন,
আজ ভুলে গিয়ে নিজের সাথেই একাকার।
বসন্তের রাত জলে ভিজতে বেশ লাগে ।
বেশ লাগে যখন মিঠে রোদের
ছোঁয়া নিয়ে আসে সকাল।
কাল হয়তো ছিলাম খুব চেনা,
আজ আমি আলেয়া অজানা।
অজানা ঘর, অচেনা জানলায়
মেলে দেওয়া নীল কষ্টগুলো,
একা একা রয়ে যাবে আমৃত্যু।
হাওয়া এসে ডাক দেবে ।
মাঝে মাঝে মনে পড়বে,
ফেলে আসা দিনগুলো।
সব সম্পর্কের নাম হয় না,
উদ্বাস্তুর মতোই ঘুরে বেড়ায়।
আমি ছাড়া তেমন একলা
কেউ থাকবে না জানি।
শুধু স্মৃতিরা ভিড় করে
আসবে অবরে-সবরে।
কার ঘরে ভীড় করে ভালবাসা!
কার চিতা জ্বলে নিভৃতে নিঃসঙ্গ!
এরকম বেশ লাগে যখন দেখি
মনে পড়া নেই, মনে রাখা নেই।
এখন এই একলা আগুনেই
পুষে রাখা সুখ দুঃখ বেশ লাগে।
বেশ লাগে বসন্তের কুয়াশায়
জ্বলে যেতে অসম্মানের চিতায়।
রঙরসিয়া কাব্যকথা
দিনের ফাটলের মধ্যে দিয়ে দেখা যায় রাতের রূপকথা
শূন্যতা আর তারার মধুর মিলনে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন আলোর পথ।
বসন্তের উষ্ণ দুপুরে যখন আসবে কবিতা
একটু নুন, একটু চিনি মেশাবার সাথে সাথেই
বুভুক্ষু নিঃসঙ্গতা ঝাঁক বেঁধে আসবে
শান্তির জন্য আবারও মেশাতে হবে
একটু ভালোবাসা, একটু আন্দাজ মতো রং
তৈরি হবে তোমার কবিতা।
বিকল্প তাদের পরিবেশন করবে কিছু সুখের মুহূর্ত,
আজকাল আবার কবিকে কবিতা লেখার সময়
শিল্পের দিকে, রঙের দিকে লক্ষ্য রাখতেই হয়,
তখনই কবিতা তৈরির সাথে সাথেই
তৈরি হবে জ্যামিতিক রঙ্গভূমি।
প্রত্যেকটি শব্দই নিজেদের সাজাবে
সরল নিষ্পাপ সৌন্দর্যে,
উপভোগ করবো নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসের সাথে।
উৎসারিত দুর্বার শব্দেরা মিছিল করবে
দীর্ঘ, মহৎ ও নৈপুণ্যে অর্জিত হাত ও মাথায়
অনায়াস ব্যবহারের জন্য-
দুর্দম ঘোড়সওয়ারদের
অশ্ব চালনায় প্রকাশ পাবে।।
একটি কবিতার জন্য
একটি কবিতা লিখব বলে
এক আকাশ রোদ্দুরকে সাথে নিয়েছি
ঘুম ভাঙিয়েছি সব শব্দের
ইজারা নিয়েছি যত স্বপ্নের
এঁদো পুকুর থেকে শব্দগুলোকে তুলে
স্বপ্নের সাথে শুদ্ধ হতে দিয়েছি,
স্বপ্ন আর শব্দের ছোঁয়ায়
এঁদো পুকুর হলো পদ্মশোভিত,
স্বপ্নগুলো হলো পদ্মগন্ধা নারী,
ঠিক তখনই শুরু হলো
তাদের অলৌকিক খেয়া পারাপার ...
আমার আর কবিতা লেখা হলো না।
রত্নদীপা দে ঘোষ
পরিচিতি: জন্মস্থান কুচবিহার। বর্তমানে কর্ণাটকের বাসিন্দা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দশটি। আবাসের বসত জড়িয়ে বাতাসের ধুলোমুঠিতে পাখিগহনার স্বাদ নিতে নিতে বেঁচে থাকা। আয়নায় দর্পণের কাহারবা, নদী-বন্দর আর নাম না জানা পাহাড়কণিকার মধ্যে নিয়ত কবিতাকেই খুঁজছেন। কবিতার ভেতরে কাউকে খুঁজছেন। হয়তো নিজেকে। অথবা অন্য কাউকে। হন্যে হোয়ে খুঁজেই চলেছেন। এই হন্যেটুকুই রত্নদীপা।
১
আমার ভেতরে এসো। সত্য সুন্দর আর সুন্দরমের লালিত্য দেবো।
আমার ভেতরে এসো। শৌর্য আর বুদ্ধিমত্তার বেহাগ দেবো।
মাথার ওপর সপ্তঋষি। জন্মদেবতা খুলে দেবে বর্ণমালার পিঞ্জর। পানামুক্ত মরুত।
একবার এসে তো দ্যাখো। আয়াতের সুবাসে পৃথিবীকে শেষমেশ দ্যাখায় ক্যামন।
দ্যাখো অই। শ্রেষ্ঠ সময় জানাচ্ছে পীযূষের উদগম। বলয়ের পৌর্ণমাসী।
হেঁশেল-উনুনে বৃদ্ধ হচ্ছে ঝিনুকের ধুলো। ভাবো তো।
কতদিন ধুলোর রুটি চেখে দেখেনি। তোমার চোখ।
২
আজ পুন্যাহুতির সুগন্ধিকা। আজ তোমার আরাধনার তবকে আমার বহুমুখী জ্যা-মুখ। অন্ধকারের ডান দিকে ফুটে ওঠা পাশাখেলা। কে হারে ? জেতেই বা কে ? কোথায় রূপ ? রূপকের অরূপ কোথায় ? শস্যের তীর্থমগ্নতায় অনিকেত ঘূর্ণন।
আজ এমন পুন্যাহুতির প্রকল্প। মানিক্যের সামনে দাঁড়িয়ে আজ আমাকে একটা নাম দাও। এমন একটি শরসন্ধান যাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
মানুষ হে। তোমাদের কুসুমডিঙার ধন প্রজনন আগ্রাসন সব।
সব আমারই পরমা মুখাবয়ব।
আমিও তোমার অনুপম. দুঃখ-হরষিত। ডুব ছলকানো একাঙ্ক।
৩
তোমাকে পাঠাচ্ছি বার্তা। অমোঘ নির্মিত যে তেপায়া তুরীয়। তার ঝকঝকে রচনাপাঠ।
তোমার গতির বার্তাটি ঝকঝকে। আমার তো তেমন কোনো দুরন্ত নেই হে পয়গম্বর। তবু পড়ি তোমাকে। পড়তেই থাকি।
প্রাক-কবিতা জড়ানো শিশুফণার খিলখিল শুনতে পাই। আরোগ্য- আবাসের প্রতিটি অভিষেক। সম্রাটের মাঝের বাদশায় ভেসে আছে যে দুর্দান্ত গুঢ়কথার গুচ্ছমূল। অতলান্ত মূর্ছনা।
থাকি তারই অপেক্ষায়। তোমার কাছে পুনরায়। পূর্ণতায়। মধুক্ষরণের কালটুকু। অশ্রুর পেখম। ময়ূর সমেত। ময়ূরীহীন যেন তোমাতেই পৌঁছই...
তোমার পঞ্চায়েত-ছোঁয়া রাগপদ্ম। তোমার অমরায়। ধুকপুক করি হে।
৪
তুমি আড়ম্বর হইচই। তৃষ্ণার তৎসম।
স্থির হও এবার। কতকাল আর ঘুরবে আপেলজগতের গত পঞ্চাশবছরে। কতকাল আর দোলসিন্দুকের দুলুনি। মুহুর্মুহুর লয়। রাতজাগা স্বরঅভ্যেসটি। আজো গ্যালো না তোমার।
নির্জন হও। আরও নির্জন। প্রেক্ষাপটের দুন্দুভি বরং। আঁকো আবহকায়া। কল্লোলের বিদ্যালয় খুঁটে ত্রিভুবনের পাঠশালাটি খুঁজে পাও। ভালবাসতে শেখো।
না-ভালবাসার মোড়ক।মোড়কের শেষ দোটানা। শুরুর এগারো পংক্তি।
মালঞ্চচিত্রীহে। তোমাকে বেঁধে আছি বিহানে। কারুঅভ্রের দালানে। ফাঁকে ফাঁকে। পরম্পরার পেট। বুক। বাঁধভাঙা। চাকভাঙা চারাদের বনানী। রাঙাচ্ছে হরিৎ।
মোহরে ভরাট।
তাড়া নেই। ফিরে এসো। কুশলাদির নিটোলে।
মৌমিতা ঘোষ
পরিচিতি: জন্ম: ২১ মার্চ ১৯৭৮
পড়াশোনা : নৃবিদ্যায় (অ্যানথ্রোপলজি) স্নাতকোত্তর।
ছোটবেলা থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে যুক্ত।
ছোট বড় সংবাদপত্র ও পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন।
ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমানভাবে জনপ্রিয় তার লেখা।
প্রিয় সখ: রান্না
প্রিয় মানুষ: মা
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : চারটি।
" চেয়ে আছো আকাশ জুড়ে"।
" শুভ সংবাদ এসো" ; সপ্তর্ষি প্রকাশন
" আনমন মেঘ"; সপ্তর্ষি প্রকাশন
" একটু এগিয়ে এসো"; প্রতিভাস
প্রকাশিতব্য গ্রন্থ:
" টুকরো কথার রাত"; অশোকগাথা প্রকাশনা।
" কোন সে পথের ভুল" ; বইতরণী।
আবৃত্তি ও সঞ্চালনাতে সমানভাবে জনপ্রিয়।
এক পৃথিবী লিখব আমি
এক:
"এক পৃথিবী লিখব আমি"...অত সহজ নাকি এক পৃথিবী লেখা? না, নয় তো।
তবু লিখব। তবু লিখেই চলেছি। যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম প্রথম, সে দেখা ছিল দূরের, পথের, ভীড়ের।আজ যখন দেখি সে দেখা দূরে থাকার মধ্যের ফারাকটুকু ভরিয়ে তোলার, সে দেখা পাশাপাশি পথ চলার, সে দেখা ভীড়ের মধ্যে চোখের ইশারাটুকু পড়ে ফেলার।
" এক পৃথিবী লিখব আমি" ঘন বর্ষার দিনে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তোমাকে না নিজেকে? কী করে লেখা যায় এক পৃথিবী? খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হলনা কিন্তু। খুব সহজে ধরা দিল সেই পৃথিবীর খোলা উঠোন। আমাদের নিজেদের কোন ঘর নেই। হবেও না। বানাতে ও চাইনি।ঘর বানালে তার দেয়াল ও থাকে আর তাতেই তোমাকে দেখাটা আটকে যায়। আমাদের পৃথিবী ওই খোলা উঠোনেই। ওই নিত্যদিনের রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের সাতকাহনে।রোদে নাহয় পুড়ুক শরীর, বৃষ্টি ভেজাক আঁচল, ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে যাক মাঝখানে জমিয়ে তোলা ঝগড়া, তবু খোলা উঠোনে ই জমুক এ ঘরকন্না। আকাশের নীচে থাক " এক পৃথিবী।"
"এক পৃথিবী লিখব আমি।" হ্যাঁ। পারি। পারব ঠিক। দেখো। আমার গোটা আকাশটা তো একজনের চোখে এসে মেশে , তার চশমার কাঁচের উপরে দোল খায় আকাশ। তার চশমার উপরেই আলোর খেলা , গাছেদের পাতার ছবি। সেই চশমাকেই বানিয়েছি এক পৃথিবীর আকাশ।
ফোলা ফোলা গালে চুমু দিয়ে কিছু বসার জায়গা বানিয়েছি। ওখানেই কথারা, শব্দরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে প্রজাপতি ডানা মেলে কবিতার খাতায়। ঠোঁটের যে কোণটায় চুমুর পরের পরিতৃপ্তিটুকু লেগে থাকে, সেখানে আমার ঘুমটুকু পেতেছি।
দুই:
হাজার কাজের ব্যস্ততার থেকে একটু ছুটির ঘুম।মেঘলা দুপুরের গড়িমসি আর হাতটা তোমার গায়ের উপরে রেখে আবার আহ্লাদে শুয়ে থেকে অপেক্ষা করা একটু দুষ্টুমির , একটু দস্যুতার। আদরের মাঝখানে আমাদের সংসার পাতা। খুব স্বাভাবিক আদরের। খুব সুস্থতার । খুব গভীর নিঃশ্বাসের, নিশ্চিন্তির।এক পৃথিবী এমনি করেই লেখা হয়ে যায়। ধরো তুমি তাকালে খুব গভীর ভাবে। আমি চশমাটাকে ভাবলাম বটগাছ আর চোখদুটোকে তার ফাঁক দিয়ে দেখা সূর্য।আর সে সূর্যে হাত বাড়ানোর ইচ্ছের নাম দিলাম
" আগুনপাখি।"
আবার ধরো তুমি খেতে চাইলে , আমি বিরিয়ানি রাঁধতে বসলাম, মশলা নিয়ে খুঁতখুঁত করলাম, চাল একটু জড়িয়ে গেছে বলে চোখে জল এসে গেল আর তুমি গড়িয়ে পড়া জল গাল থেকে ঠোঁট দিয়ে নিলে শুষে আর সেদিন আমরা রসগোল্লা খেয়ে কাটালাম; আর গোটা দুপুরটা হয়ে গেল মিঠে ঝর্ণার জল।
আমি একটা লাল রঙের শর্ট ড্রেস পরতে চাইলাম, তুমি কিছুতেই পরতে দিলে না বলে আমি গাল ফুলিয়ে রইলাম, সেই তুমি দু মাস পরের এক নিরালা ছুটির দুপুরে আরেকটা চমকে দেওয়া পোশাক ধরিয়ে দিয়ে বললে পরে নাও, বেরোব। আমার চোখের চকচকে খুশিতে তখন ধরা পড়ে সেই এক পৃথিবী। এমন ই সহজ যাপনচিত্রের মাঝে ফোটা ছোট ছোট চন্দ্রমল্লিকা হল সেই এক পৃথিবী লেখা। যা এমনিই লেখা হয় থোকা থোকা ফুটে থাকা পাহাড়ি ফুলের অকারণ ভালোবাসার মতো।
এক পৃথিবী লিখব আমি। লিখে ফেলবই।
তিন:
পথ চলি যখন, সময়ের ঠিক থাকেনা। হাঁটতে হাঁটতে কখনো অনর্গল কথা, কখনো এক্কেবারে চুপ। শুধু নিঃঝুম রাত আর ঝুমুঝুম পথ চলা। কখনো কোথায় কামিনী ফুটে আছে দেখতে গিয়ে কুকুরের তাড়া, কখনো পথের ধারে যে বাড়িটার ফটক বেয়ে উঠেছে মাধবীলতা সেখানে চুপ করে থমকে দাঁড়িয়ে থাকা।তারপর ফেলে আসা পথের মায়ায় সারাজীবনের জন্য শিউলিফুলের গন্ধ জড়িয়ে আরেকটু কাছাকাছি হাঁটা। চোখে লেগে থাকা আকুতিটুকু, " ফিরতেই হবে?" শেষমেষ ধুলোয় কিছু অকারণ মনকেমন লেগে থাকে আর আমাদের ছায়ারা মিশে যায় অন্ধকার থেকে আরেক অন্ধকারে। লেখারা পথ হাঁটতে থাকে।।
এমনি করেই লিখে যাব , বুঝলে হু হু। রোজ বাঁচি তাই রোজ লিখি।রোজ শুতে যাই আর স্বপ্ন দেখি। তাই রোজ লিখি। রোজ মন ছুঁতে চায় ঠোঁটের মায়া , তাই রোজ লিখি। রোজ ভালোবাসি। তাই রোজ লিখি...রোজ।
চার:
কখনো অনেক দিন দেখাই হয়না। মাঝখানে লেখা হতে থাকে ধূ ধূ সব বিকেল। সেসব বিকেলের ডানা থেকে রঙ খুলে নিই আমি , শব্দের পাখায় তখন ক্লান্তির ক্লিষ্ট ছাপ।তখন আচমকা মন খারাপের বাজ পড়ে একেকটা পাতায়। জ্বলে পুড়ে যায় অতীত-ভবিষ্যতের সব সম্ভাবনার কথা। সেইসব দিনে অভিমানের পারদ নামতে দিইনা। অভিমান আমাকে দিনরাত্রির কাব্য লেখায়, লেখায় অসংলগ্ন সংলাপের গ্রন্থি। এক পৃথিবী চলতে থাকে। দিনের বেলা অন্ধকার ঘনিয়ে আসে । গোটা রাত পেঁচার চোখে জাগি। রাতের বুক চিরে কিছু আর্তনাদ টাঙিয়ে দিই দেওয়ালে দেওয়ালে।পৃথিবী কাঁদে, এক সমুদ্র কান্না বুকে নিয়ে। একটা দুটো অক্ষর ধুয়ে যায় নোনা জলে।সবটা কিছুতেই মোছেনা।
পাঁচ.
"এক পৃথিবী লিখব বলে ঘর ছেড়ে সেই বেরিয়ে গেলাম"...গেলাম কোথায়? সেই চিরকেলে চেনা পাবটার জানলার ধারের সিটে যেখান থেকে বৃষ্টিধোয়া রাস্তা দেখা যায়।দেখা যায় ঝাপসা হয়ে যাওয়া সন্ধে কী করে ডানা মেলে রাতের আলো মাখে গায়।নাম না জানা ভিড়ে নিজেকে মিশিয়ে আমি একলা হতে চাই। নেশা চড়ে। খাতা কলম খুলে বসি , লোকের অবাক দৃষ্টিকে গ্রাহ্য করিনা। লিখতে থাকলে গেলাসে গেলাসে আগুন ধরে, চামচের টুং টাং এ তোমাকে মিস করি, গুনগুন গান গাই। পৃথিবী টলে উঠলে ফিরে আসতে হয়। 'গহীন বন' নেই আমার। গহীন অন্দরমহলে কিছু নীল পর্দা ওড়ে । দুঃখের হাত ধরে আমি ঢুকে পড়ি সেই একলা থাকার বিলাসিতায়, অমিতাভ বচ্চনের মতো বলি; " আমি আর আমার একাকীত্ব অনেক সময় কথা বলি এখানে বসে। তুমি থাকলে এখন জোর করে তোমার অ্যাটেনশন পেতে পদ্য শোনাতাম,কিছুক্ষণ পরে গায়ে ঘেঁষে বসতাম, আর বিরক্ত করতাম। তুমি থাকলে কতক্ষণ আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে? ঘুরে তাকাতে। বেসামাল হতে। ঘাড়ের পাশে লিখতে অসংযমী কবিতা। এইসব কথাই ঘুরে ফিরে আসে আমি আর আমার একাকীত্বের মধ্যের কথোপকথনে।" এমনি করে কিছু অলীক কথোপকথনে ভরে পৃষ্ঠারা, আর তোমার হোয়াটস্অ্যাপ স্ক্রিনে চোখ রাখতেই মন আনচান, লেখা রা আবার মিলিয়ে দেয় আমাদের। লেখারা জিতে যায়।
ছয়.
বৃষ্টি নামে জেতার আনন্দে। এ বৃষ্টি বাঁশি বাজায়। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ গায়ে মাখে। বাঁশির সুরের সাথে খেলা করে জল। সর্বনাশ ডাক দেয় তোমার চোখে। তোমার খোলা শার্টের বোতাম পাপকে ভালোবাসতে শেখায়। পাপকে ভালোবেসে আমি পাকে পাকে জড়াই সাপের মতো।শরীরে শরীর ঘষা খেয়ে বিদ্যুত জ্বলে ওঠে।শিৎকারে কিছু বজ্রগর্ভী মেঘ জানান দেয়' ফুরিয়ে যাইনি।" পুরোন কিছু অভিমান হিসহিস করে প্রতিহিংসায়। অজগরের মতো গিলে নিতে চাই বর্তমান যা আমাদের মাঝখানে বিচ্ছেদ আনতে চায়। গিলে নিতে চাই ক্ষণস্থায়ী সবকিছু।এক পূর্ণাঙ্গ জীবনের নেশা দুলে ওঠে। বাঁশির সুরে দুলে ওঠে শরীর। বৃষ্টি বাড়ে। বৃষ্টি বাড়তে থাকে। " ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি" নামে খাতার উপর।
সাত.
ফিরে আসতে হয় বলে ফিরে আসি। আবার একঘেয়ে ফ্যান ঘুরতে থাকে মাথার উপরে। আবার রঙচটা নাইটি মেলা হয় উঠোনের দড়িতে । আবার কথারা মুক্তি খোঁজে। আবার মেঘলা বিকেল ঘুমিয়ে পড়ে পরম আয়াসে। আর মাঝরাতে এক জ্বলন্ত সূর্যের ক্ষোভ পোড়ায় বিছানা, বালিশ। আলমারির মধ্যে শেষ দেখা হওয়া শাড়িটা বের করে কোলের উপরে রেখে চুপ করে বসে থাকি। মেলে দিই সে শাড়ি বুকের উপরে । শাড়ির গায়ে অসংখ্য অনুভূতি নদী হয়ে বইতে থাকে। আঁচলে কিছু হ্যাঁচকা টান লাগে। রাত খসে পড়ে ক্লিভেজে। আমি নগ্ন হই শব্দদের কাছে। আড় ভেঙে যায়। ইচ্ছে লিখতে শিখি নতুন করে।এক পৃথিবী লিখব আমি , ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই। কিছুতেই নিভে যাওয়া চলবেনা
আট.
কত অপমানের স্মৃতি উসকে দেয় শব্দরা। কত শত প্রেম মিছিলে ধরে হাঁটতে থাকে স্মৃতির সরণিতে।মন নয়, শব্দরাই ধরে রাখে সমস্ত দাগা দেওয়া বিশ্বাস, এক মূহুর্তের কত শত ভুল। সহস্রাধিক ভুল উঠে এসে আঙুল তুলে প্রশ্ন করে । শব্দরাই বুঝিয়ে সুঝিয়ে তখন ক্ষতের প্রলেপ হয়। এক পৃথিবী না লিখলে কে নেবে দুঃখদের? কে নেবে চোখের জল? অপমানের দাগ? লেখারা বোধহয় সমুদ্রের চেয়ে বড় আধার পুষে রাখে নিজের মধ্যে। তার ই মধ্যে সকল ব্যথার অবসান, সকল আনন্দের উৎস। ঘুম "ঘুম চাঁদ আর ঝিকিমিকি তারা " হল কবিতারা। মায়াবী জ্যোৎস্না ছড়ায় তোমার আমার দুই পৃথিবীর সংযোগস্থলে। এক পৃথিবী লিখতেই হবে। অপমানের শোধ নিতে। এক পৃথিবী লিখতেই হবে অদৃষ্টে খারাপ লিখে দেওয়া লাইনগুলো ঘ্যাচাং করে কেটে দেওয়ার জন্য।এক পৃথিবী লিখতে হবে দুটো চোখের ফিকে হয়ে আসা তারা একটু ভালোবাসা পেলে টুনি বাল্ব হয়ে জ্বলে দেখানোর জন্য। 'একশো রকম স্বপ্ন ' দেখতে চাই।তার জন্য স্পর্ধা লাগে। শব্দের শরীরে কিছু অমিত শক্তিধর স্পর্ধা রাখা। তাই স্বপ্নের পথে শর্টকাট নিই। একাই লিখি প্রেমিকের আকাঙ্ক্ষা ও প্রেমিকার আকুতি। নিজেই পৌঁছে যাই রূপকথাদের কাছে। জেনো, জিতবই। তোমার ডানায় ওড়ার আকাঙ্ক্ষাটুকু এঁকে ফেলব শেষমেষ।
কিছু কিছু দিন বিদ্যুতরেখার মতো মিলিয়ে যায় আকাশে। চোখ ধাঁধানো হঠাৎ ঝলকানি মুহূর্তে আশার আলো নিভিয়ে দেয়। এত তীব্রতার আসলে পরিণতি থাকতে নেই।আর থাকতে নেই বলেই স্বাভাবিক নিয়মে সকাল থেকে মাজাঘষা করা সাজ ব্যর্থ হয় চকিতে। সাজ থাকে, পরিকল্পনা থাকে, ঠোঁটের কাঁপন ও থাকে। কিন্তু ওই যে তীব্রতা ধরে রাখতে পারবেনা রিখটার স্কেল তাই মহাসমুদ্র হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিন্দুতে ই তার পরিসমাপ্তি।এক ফোঁটায় শেষ আকণ্ঠ তৃষ্ণা। সম্ভাবনারা ভেঙে পড়ে । বিষাদসিন্ধু দুলে ওঠে।
অথচ ভেসে পড়ার কথা থাকে আদরের নৌকায়।কথা থাকে মেঘের ঘুঙুর পড়া চলনের পথ অনুসরণ করে আমরা অনেক দূর হাঁটব। কথা থাকে আঙুলে আঙুল মানেই কিছু স্ফুলিঙ্গ। কথা থাকে কথার মালা গাঁথার। কথা থাকে মেঘের বাটি উপুড় করে তুমি বুক ধুয়ে দেবে। কথা থাকে " আজ দুজনে মন্দ হলে মন্দ কী?..."
কথা থাকে রংমশাল জ্বলার। আর তুমি তো জানোই তীব্র আলোর ঝলকানির ঔজ্জ্বল্য র থেকে নিভে যাওয়ার মাঝখানের পথটুকুতে আমি কবিতার খাতা খুলে বসি। দু লাইন বিষাদে মেশে তীব্রতা আর নিজেকে অভিশাপ দিয়ে যাই ক্রমাগত। আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে এইসব অসংলগ্ন দুঃখ বিলাস থেকে।এক পৃথিবী লেখার আগে আমার নিষ্কৃতি নেই। নেই অবসর।
নয়.
"ভালোবাসি" বলে এগিয়ে আসে অবসন্ন বিকেল। তার শরীরে দীর্ঘ ক্লান্তি। চোখের মাসকারায় লেগে থাকা অষ্টমীর নেশা ধুয়ে যাচ্ছে জলে, আর বিকেলটা বড় কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তালকাটা, ফেঁসে যাওয়া তবলার মতো। তুমি তো জানো সুর কেটে যাওয়াতে আমার বরাবরের আপত্তি। চেনা পাবটার চামচের , গ্লাসের নড়াচড়ার আওয়াজেও আমি কথা খুঁজে পাই, সুর খুঁজে পাই। আজ সবটাই বেখাপ্পা। যেন সানাইয়ের বোল বাজছে, কান্নাটা কিছুতেই বাজছেনা। এরকম সময়ে খুব ঝাপসা হয়ে আসে চোখ।বানভাসি হয়। আর প্রচন্ড ভিড়ে একার কান্না খুব সহজেই লুকোনো যায়। ভিড় উদাসীন হয়। ভিড়ের দায় থাকেনা কে কোথায় পড়ে থাকল দেখার। ভিড় শুধু চলে যায় নিজস্ব গতিতে।তার যাওয়া আছে আসা নেই। সেরকম ভিড়ের এক কোণে থমকে আছি আমি। সমস্ত কলকাতা ভিড়ে , আলোতে মিশছে; আমি ছায়াটুকুতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। কোন বন্ধু নেই। নির্বান্ধব একটি মানুষ বড় অপ্রয়োজনীয় উৎসবে।সে ই আসলে তালটুকু কেটে দিচ্ছে। সেই সাক্ষাত রসভঙ্গ।উপলব্ধির হাত ধরে আমি ডুবতে ডুবতে ভাসতে চাইছি। চাইছি একটা চেনা গলা বলুক " বাড়ি এসো। " ওটাই তিথির সন্ধিস্থলে আমার আগামীদিনটি এনে দেবে অচেনা, মনকাড়া সুরে।
এভাবে ফুরিয়ে যাওয়া যায়না উৎসবে। আমার এক হাত ছুঁয়ে আছে নিষিদ্ধ ওষুধের স্ট্রিপ; অন্যহাতে সন্ধিপুজো র প্রদীপ। এখন ডানহাতটুকু টেনে এনে জ্বালিয়ে ফেলতে হবে দীপশিখা। এক পৃথিবী লেখার আগে ঘুমালে চলবেনা। এসো। লিখছি। লিখেই চলেছি।
দশ.
বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকে লেখা। আঙুল চলেনা। মগজে কারফিউ চলে। ভাবনারা দাগা দেয়। আরে সবসময় দাবী করলে চলে? কখনো চিন্তারাও অন্ধ হয়। বন্ধ করে পাখা। আর কবিতার খাতায় তখন অশ্বডিম্ব প্রসব করা কাঁড়ি কাঁড়ি । কিন্তু কথা দিয়েছি যে ! এক পৃথিবী লিখতে হবে। হাওয়ারা দেওয়াল তুলুক, ঝড় উঠুক অভিমানী বাতাসে; মেঘের মধ্যে থেকে বেজে উঠুক বাজের আওয়াজ, লিখতে হবে। থামার উপায় নেই।প্রতিশ্রুতিরা খেলা করে চোখ বুজলে, আর চোখ খুললে কবিতার খাতা। সুন্দরের খোঁজ করি। খবর কাগজ দেখায় আদিবাসী রমণীর যোনিতে গেঁথে যাওয়া মাছ ধরা ত্রিফলা বড়শি। নিজের অস্তিত্বে সংকুচিত হয়ে পড়ি। সমস্ত অক্ষর ব্যর্থ আমার ঘৃণা লিখতে, ব্যর্থ জানাতে আমার বিবমিষা। আঙুল গড়িয়ে কালি নামে। এ কালি কার মুখে মাখাব? ঝপ করে মলাট বন্ধ করে খাতা । বিদ্রোহ করে। আমি দিশেহারা ঘুমিয়ে পড়ি খাতায় মাথা রেখে।মাঝরাতে রক্ত ফিনকি দিয়ে ওঠে আমার শরীরে। আদিবাসী রমণীর রক্ত দুলে ওঠে আমার নাড়িতে। খোলা চুল ভেজে শোণিত স্রোতে। আমি জেগে উঠি ওর নেতিয়ে যাওয়া শরীরের উপরে ভর করে । আমার হাতে অক্ষর, পায়ের মলে অক্ষর, গলার মুণ্ডমালায় হাজার অক্ষর সেজে ওঠে। ওর কথা লিখব আমি। ওর রক্তের কথা। ওর ধীরে ধীরে নুয়ে পড়ার কথা, ওর অভিশাপের কথা। নাই বা লিখলাম আজ অনুরাগ, রক্তরাগে ছোপানো বিকেল। এক পৃথিবীর কান্না লিখব আমি।
না লিখলে ক্ষমা নেই...নেই কোথাও।