অলস দুপুর অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৬

অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন : পর্ব ০৬

সাইটে প্রবেশের জন্য আপনাকে স্বাগতম। এটি অলসদুপুর ওয়েবম্যাগের একটি অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন। এই সংকলনে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে যারা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন, লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন, তাদেরকে বিশেষ ভাবে স্থান দেয়া হচ্ছে। আমরা জানি  যে পুঁজিবাদের বিকাশের প্রক্রিয়াটিই এমন যে ইটের নিচে সবুজ ঘাস চাপা পড়ে যায়।  আমরা প্রশান্তির জন্য দিগন্তের দিকেই তাকিয়ে থাকি।

অলসদুপুর সেইসব কবিদেরই খুঁজে চলেছেন। যারা নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন, কোন এক দূরে বসে লিটলম্যাগ চর্চা করে চলেছেন বছরের পর বছর। সন্ধ্যায় জোনাকির মত তার চোখও জ্বলে ওঠে নতুন কবিতায়।  সেইসব নতুন কবিতাকে খুঁজে চলেছে অলসদুপুর।

অনলাইন কোন স্থান নয়। ইন্টারনেট মানে বিশ্বের যে কোন প্রান্তের সাথে যুক্ত আপনি আমি। এখন আমি আপনি বিশ্বের যে কোন প্রান্তের কবিতার সাথেও যুক্ত। কিন্তু প্রান্ত তো আছে। যে এসে মিলিত হয় মুক্তির সাথে। অলস দুপুরের কাছে জেলা হচ্ছে এক একটি প্রান্ত, যে যুক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলা কবিতা নয়, বিশ্ব কবিতার সাথে। আমরা অলস দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কবিতা এই আয়োজনের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।

 সংকলন পদ্ধতি: একজন মূল সম্পাদক থাকেন। মূল সম্পাদক থাকবেন দুপুর মিত্র।  বিভিন্ন জেলা থেকে একজন অতিথি সম্পাদক নির্বাচিত করেন। অতিথি সম্পাদক তার জেলা থেকে কবি নির্বাচিত করেন এবং তাদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে মূল সম্পাদকের নিকট প্রেরণ করেন। প্রতিটি পোস্ট এক একটি জেলা বা প্রান্তের সংকলন হিসেবে গণ্য হবে। যিনি অতিথি সম্পাদক থাকবেন তার সম্পাদনা নিয়ে একটি ছোট সম্পাদকীয় থাকবে। এভাবে ছোট ছোট সংকলন মিলে একটি বড় সংকলন হবে। 

 যাদের কবিতা সংকলিত হবে

১. দীর্ঘদিন ধরে লিটলম্যাগে জড়িত

২. বিভিন্ন জেলায় বসবাসরত

৩. সাহিত্যচর্চায় নিয়মিত

 সংকলনটি চূড়ান্ত নয়। বিভিন্ন সময় এটি আপডেট হবে। সংকলনটি সমৃদ্ধ করতে পাঠকের প্রস্তাবনা ও মন্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। প্রস্তাবনা বা মন্তব্য জানান mitra_bibhuti@yahoo.com এ।

অনলাইন বাংলা কবিতা সংকলন: ০৬ পর্বের অতিথি সম্পাদক কবি সূর্য নন্দন।  তিনি ময়মনসিংহ থেকে কবিতা সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে ‘অলসদুপুর’ ওয়েব ম্যাগাজিনকে সহায়তা করেছেন।  তার প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।

সূর্য নন্দনের সম্পাদকীয় 

সম্পাদনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিশেষ করে কবিতা। এতে ইতিবাচক সাড়ার পাশাপাশি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নেহায়েত কম নয়। একজন কবি সময়কে ধারণ করেন তার শব্দশৈলিতে। যুগের যে যন্ত্রণা এটা একজন কবিকেই প্রথম নাড়া দেয় এবং তিনি শব্দশিল্পের মাধ্যমে কবিতায় তার রূপ দেন, সোচ্চার হয়ে অন্যকে অনুপ্রাণিত করেন। অপ্রিয় হলেও সত্য যে কবিদের মধ্যে ঐক্যের অভাব তীব্রভাবে পরিলক্ষিত। ফলে সময়ের ছটফটানি পৌঁছতে পাচ্ছে না সাধারণের দোরগোড়ায়। সম্ভব হচ্ছে না কোন ইতিবাচক বিপ্লব। শিল্পসাহিত্যের জেলা ময়মনসিংহ থেকে মাত্র দশজন কবি নির্বাচন করা সত্যিই কঠিন ও দুঃসাধ্য। এখানে বারোজন কবির কবিতা রাখা হয়েছে। যারা লেখা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। 

সরকার আজিজ

গত শতকের নয় দশকে আবির্ভূত কবি সরকার আজিজ বাংলা কবিতায় নতুন পথ অনুসন্ধানকারীদের একজন। প্রথাগত চর্চার বাইরে অবন্থান করে নিজেকে কবিতার মূলধারায় সমর্পিত করায় সচেতন পাঠকের কাছে তিনি মনোযোগ পেয়ে যান। ক্রমাগত নিরীক্ষার সমুদ্রে ভেলা ভাসান তিনি। 'চলো যাই বলিনি' থেকে, 'উত্তরে তুমি' 'জনপদে ঘোড়ামানুষ' 'যেভাবে ধনুর্বিদ্যা শেখা' 'সীমানায় কাঁটাতার' বইয়ে তিনি নিজেকে বারবার ভাঙার এবং গড়ার সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত আছেন।

তাঁর জন্ম ১, ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ কলহরি গ্রামে মাতুলালয়ে। বর্তমান নিবাস ৩৪/১ বলাশপুর, কেওয়াটখালি, ময়মনসিংহে। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলাস্থ নলদিঘী গ্রামে। সরকারি আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতক। পেশা : সরকারি চাকুরীজীবী। তিনি সমন্বিত শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ' ময়মনসিংহ জং' -এর সম্পাদক। কাগজটির জন্যে তিনি ইতোমধ্য ' লিটলম্যাগ প্রঙ্গণ সম্মাননা ২০০৮' বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১৩' ও কবিতায় 'অনুশীলন সাহিত্য সম্মাননা ২০১৮' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

সরকার আজিজ  গত শতকের নয় দশকে আবির্ভূত কবি সরকার আজিজ বাংলা কবিতায় নতুন পথ অনুসন্ধানকারীদের একজন। প্রথাগত চর্চার বাইরে অবন্থান করে নিজেকে কবিতার মূলধারায় সমর্পিত করায় সচেতন পাঠকের কাছে তিনি মনোযোগ পেয়ে যান। ক্রমাগত নিরীক্ষার সমুদ্রে ভেলা ভাসান তিনি। 'চলো যাই বলিনি' থেকে, 'উত্তরে তুমি' 'জনপদে ঘোড়ামানুষ' 'যেভাবে ধনুর্বিদ্যা শেখা' 'সীমানায় কাঁটাতার' বইয়ে তিনি নিজেকে বারবার ভাঙার এবং গড়ার সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত আছেন।  তাঁর জন্ম ১, ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ কলহরি গ্রামে মাতুলালয়ে। বর্তমান নিবাস ৩৪/১ বলাশপুর, কেওয়াটখালি, ময়মনসিংহে। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলাস্থ নলদিঘী গ্রামে। সরকারি আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতক। পেশা : সরকারি চাকুরীজীবী। তিনি সমন্বিত শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ' ময়মনসিংহ জং' -এর সম্পাদক। কাগজটির জন্যে তিনি ইতোমধ্য ' লিটলম্যাগ প্রঙ্গণ সম্মাননা ২০০৮' বগুড়া লেখকচক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১৩' ও কবিতায় 'অনুশীলন সাহিত্য সম্মাননা ২০১৮' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

অনশ্বরতার চিহ্নগুলি-১

সঙ্গীতে তান নাই

মে য়ে লি খা

সুন্দর জপি। তাই--

(মাংস 

থল থল)

 

ও জ্বা লা! জ্বা লা রে!

রোগমুক্তির পর

এক

চি ম টি 

হাই--

ধোঁয়া উঠে দেখা যায় 

শাঁই 

শাঁই--

 

কেউ এলে বলি,

কো নো সী মা নাই--

এটা-ই সপ্তম সুর

এর পর নাই

কিছু

না ই রে! 

অনশ্বরতার চিহ্নগুলি-৪

হাতি নামের গল্পকে যদি চামচিকা বলি গল্পের ঢঙে ব্ল্যাকহোলও তখন কোনো ছিদ্র যা অনেকটা পিঠার গুড়া চলার চালুনের মতই মিহিন কণা কণা ছেদা-এর মতনই।

সুহাসিনী নদী, তুমি কই? কই গিয়ে গোলগাল ভোজের আয়োজন থুয়ে সমবায় সমিতির কাজে-বেকাজে লেগে যাও! 

যাক, একটা দিন এইভাবে যেতেই পারে- যা পরা যায় না তা মূলত মটরদানার ভেতরে যে ক্যালিওগ্রাফি থাকে- সেইখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা। যদি পারি সমিতি না-হউক সমবায়ী হতে বাঁধা কী। এই গোলচে দেশপ্রেমগান আর ইউরিয়া সারে মাথা বড়দের এ্যনিমেশান সুঁইয়ের পেছনেও যেমন একটা ছিদ্র থাকে। হকিং সাহেব তো এরও চেয়ে ছোট তেলাপোকা। কেননা পেঁপেবীজের আবরণের অমসৃন ছাল-বাকলই চামচিকা হাতী আর তেলাপোকাদের সুড়সুড়িই প্রকৃত সভ্যতা অথবা হতে পারে সব আবিষ্কারই হা-ডু-ডু হা-ডু-ডু খেলা। যেমন: ডিনেমাইটের ইতিহাস

জঙ্গনামা-৯

এরকমই একদিন 

একটা মেলট্রেন দিয়ে যাচ্ছিলাম। নাচ আর নাচের চেহারায় ভরপুর কামড়াগুলো ওঁই-ঢিবির মতন একটা একটা কবিতা। 

কেউ খাচ্ছে আর 

কেউ-বা হাতের উন্নতিরেখা বরাবর রং-বেরং টানছে। 

ও আমার রঙিলা রে...  

আমরা তখনো ঘুমে। অথবা

আরো রং রং রঙিলা রে...

জঙ্গনামা-৫

আমরা নিজেরাই ভালোবাসা আর আরো আরো প্রেমকে গিট্টুদিয়া বাঁধিয়া রাখি। তাই নদীও হা হা কা র করে। আমরা পাখির ডানা থেকে পালক খসিয়ে রংতুলি বানাই। আমরা আরো জানি না যে ঘাসেদের মুক্তিও শুধুই কোনোমামুলি বিষয় নয়। মা নু ষ যদি বুঝতো দুষ্ট ওইগুলাইনরে গোয়া দিয়া কিছু একটা দলেবলে ঠেলে গুঁজে দিতো...

আশিক আকবর

আশিক আকবর। জন্ম: বহ্মপুত্র পাড়। হৈয়ারকান্দি। বেগুনবাড়ী। সদর ময়মনসিংহ। তারিখ আটাইশ চৈত্র।  সন লেখা খাতা হারাইছে। পিতার দশম এবং প্রথম জীবিত সন্তান। ভাইবোন তেত্রিশ জন। বর্তমানে জীবিত তের জন। সবার বয়সে বড়।

লেখাপড়া, বাংলায় স্নাতক। বাংলা একাডেমীর ফেলোসীপ।

মূলতঃ লিটলম্যাগ আর ফেইসবুকে লেখেন। দৈনিক সাপ্তাহিক মাসিক পত্রিকায় লিখেন না। অনলাইনে এখন লিখছেন কম কম। কাউকে লেখা পাঠান না। লেখা ফেইসবুক থেকে নিআ ছাপাতে হয়। বাংলা একাডেমীর বানান রীতি মানেন না।

প্রকাশিত কাব্য চারটি। যৌথ একটি । শ খানেক এর উপরে গান লিখেছেন। বর্তমানে বুদ্ধি বেচে ভাত খান। কবিতা লিখে ভাতের দাম মিটান। গ্রামে থাকেন। হঠাৎ হঠাৎ ভ্রমণে বের হন। ‘ফেইসবুকে ক্লাশ চলছে বলে’ একটা মহাজাগতিক জ্ঞান চর্চা কেন্দ্র চালান।

 

 বাংলার কাব্য ০৪

মেঘ ভাঙা সিদ্ধার্থের পূর্ণিমার পরের রাতে,

তুমি কি জেগে আছো?

তোমার জানালায় চাঁদ দেখা যায়?

বারান্দায় কি চাঁদ আসে?  ব্যাঙেরা গাইছে গান, ঝিঁঝিঁরা ধরেছে কোরাস।

টিনের ফুটায় চাঁদ এসে ডাকলো আমায়।

এই হতে চাওয়া গভীরের রাতে জানালাকে,

জানালাকে খুলি,

কদলী পাতার উপরে,  মেহগনির ডালপাতার ছায়ার অদূরে,

গুবাক গাছের ছড়ানো ডাগগারে ছুঁয়ে চাঁদ,

কাছাকাছি কোনো তারা নাই,

ঘুঘুরা পোকারা,

ঘুমের নুপুরেরা থেকে বাজছে খুব,

অখাদ্য ফলের কডুরার গাছ করছে ইশারা,

ডিম অলা মাগুর ধরতে কেউ কি নেমেছে মাঠে?

নাকি টহল দিতে দিতে গোপন গেরিলা দল দূর গাঁয়ে চলে গ্যালো?

কাঠাল গাছের উপর এসে গেছে চাঁদ,

উঁকি মেরে তাকে দেখছি এখন,

ঘুমিয়েছে কামিনীর ঝোঁপ,

কুলের গাছের ডাল,

এই বেলা চায় ধারালো দা এর ঠুক ঠুক কোপ,

নতুন কচি কচি সবুজ সবুজ ডাল,

কে উঠিবে গাছে?

দক্ষিণ বাংলার ভূমি এখনো জাগেনি,

কৃষকেরে কেউ কানে কানে বলেনি,

ভ্রাত,

এই দিকে এই এক বিশাল সম্ভবনা,

চাঁদের জোয়ারে বেঁধে

জল থনে তোলা লাখ মাইল দেশ।

দেশের বাড়িতে কি আছো?

বারান্দায় আসছে কি চাঁদ?

তাকে কি শাদা কালো টুপিই পরাচ্ছো?

আছি আমি,

মনে করে এসো একদিন।

আ. আ

১৪২৫, বৈশাখ।

 

নীল পাঞ্জাবী

দিন এমন আসবে কে জানতো!

ঈদ,

কেউ বলছে না,

এই লাগবে, সেই লাগবে।

আশ্চর্য! 

নির্লিপ্ত আমার মধ্যে জাগ্রত হচ্ছে,

ঢিলে ঢালা নীল পাঞ্জাবী পরার লোভ।

ওহ!

তোমার কাছে যাবো বলে,

নীল পাঞ্জাবী পরলাম যে দিন,

হলের বুর্জোয়া রাজনৈতিক ছাত্ররা বেধরক পেটালো সে দিন।

এতো ঘুম এলো,

কাজী নজরুল এর মাজারেই নিদ্রালাম।

ও রাতে নীল পাঞ্জাবী আকাশে নিলো ঠাঁই।

স্বাক্ষী আশির কবি সরকার মাসুদ।


সেই সব দিন গেছে,

প্রেম ও প্রতিশোধ স্পৃহা রয়ে গেছে।

সত্যি সত্যি ঈদ এলে,

কয়েকটা কোরবানী না করে ক্ষমা করে দেবো।

সেমাই ক্ষীর খাওয়াবো।

আর আকাশ থেকে নামিয়ে নীল পাঞ্জাবীটা পরবো।


রেল স্টেশনে

 

এই সেই জীবন

যেখানে পাখি কথা বলে

যেখানে বোচকা বাচকি গুছাতে গুছাতে

হুইসেল ছাড়ে মানুষ

স্টেশনে

স্টেশনে

রাত বাড়ে

কেউ না কেউ বাঁশের বাঁশির সুরে

কারো কারো করে সর্বনাস

রাত বালিকার খোলা ঘরে তবু জ্বলে না আগুন

পেটের পাথর নামে না আর

মাথার মধ্যে আনন্দ অপার

তবু কোনো ট্রেনই ইস্টিশনকে বগিতে তোলে না

লাশ ঘরে জীবন্ত বন্যলতা

নন্দের নলে ভরে দেয়

গন্নকোক্কাস

সিফলিস

এই সেই জীবন

যেখানে মহিলা মশাও মায়ের নরম স্তনের রক্ত চুষে খায়


আ.আ

রেলস্টেশন। মমিসিং

 

গ্রামে যাচ্ছি

.  

পকেটে নিলাম নতুন বাজার

পকেটে নিলাম কাচারী ঘাট

নিলাম বহ্মপুত্র পাড়

নিলাম রেলওয়ে স্টেশন

কাচিঝুলি মোড়

কাঠগোলা বাজার

চরপাড়া হাসপাতাল

বহ্মপুত্রটার ঐ পাড়

বোম্বাই কলোনি

ভবিষ্যত বাংলা গ্রাম

টাঙ্গাইল বাস স্টেশন

তাজমহল

নিভৃত পল্লী

সানকি পাড়া

গোহাইল কান্দি

মাসকান্দা

দিগারকান্দা

এগ্রি ভার্সিটি

আনন্দমোহন

পকেটে উপছে পরছে আমার

ছিঁড়ে পরছে পকেট

পকেট ভর্তি সব ফেলে মার কাছে যাচ্ছি

মা ডাকছে

মা সবুজ শ্যামলের মধ্যে গ্রামে থাকেন।

ময়মনসিং

আমি গ্রামে যাচ্ছি।

খারাপ লাগলে

কিছু একটা করতে  চাইলে

গ্রামে এসো।

.

আ.আ

হান্নান কল্লোল

হান্নান কল্লোল কবি, গল্পকার, অনুবাদক, সংগঠক জন্ম: ২২ এপ্রিল ১৯৬৮ খ্রি গৌরীপুর, ময়মনসিংহ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: নীল দহন, প্রণয় ও পরিত্রাণের গল্প, দর্পিত দংশন এবং কবিতাগ্রন্থ: বারুদবসন্ত 

রতিবৈরি  ঋতুরাগ

 

আমার আকাশ জুড়ে যখনই নীলাভ মেঘের উড়াউড়ি,

বিচ্ছিরি হাসিটি ছড়িয়ে চলে এলে কে তুমি ধুমসি রমণী!

আলোকমালা অল্প যা ছিলো দ্রুতলয়ে চলেই তো গেলো।

তোমার প্রচ্ছায়ার ভেতরে কুয়াশার ডানায় ঝুলতে ঝুলতে।

কালচে কামিজে তোমার শিকারি পাখিদের স্কেচ আঁকা যে!

কোলে বসিয়ে রসিয়ে তোমাকে উষ্ণীব চুমু খেতে পারছি না।

বরং বুর্জোয়া পিপাসাই নিবারণ করবো ফেনায়িত কফিমগে।

আচ্ছা, রুদ্ধঘরে পাখাটা চালালে কোনো অসুবিধা হবে নাতো!

বিবাগি বাতাস কি স্তনযুগলের বোঁটায় কামদ শিহরণ জাগাবে?

আরে খুলে ফেলতেছো জামা, পাজামাও হাঁটুর ওপরে তোলা।

মেদল পেট, থলথলে নিতম্ব নাহয় লম্পটের কাছে মেলে ধরো।

আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ! লাল গর্তাবলি আজ ঢেকেই রাখো।

চামড়াঘেরা মাংসপিণ্ডে মাখনের স্বাদ আসলে পাই না কখনওই।

আর কী বলবো তোমাকে! অপ্রশম্য অনেক যাতনা জমেছে মনে।

হয়তো তাই রমণ-সংগীতেও ঘুরেফিরে মরণ-চিৎকার শুনতে পাই।

নাহ, চলেই যাও। করিডোরের অন্ধকারে দাঁড়াও গিয়ে কামিনী হয়ে।

আনুগত্যের বিষাদে নতজানু শতোশতো কামুক পুরুষ পাবেই পাবে।

বেজার হলে খুব! সৌজন্যের মতো জঘন্য মিথ্যাচার চাই না আর।

সরি, কেজো কতো কাজ পড়ে রয়েছে আমার। কিছু অন্তত করি।

বাগানের কচিকচি দুর্বাঘাসগুলি ছেঁটে দেওয়াটা খুবই জরুরি।

বালতিভরা গোসলের জলে রাখতে হবে এক মগ বরফকুচি।

ও, ব্যাপার কী! বৃক্ষের স্থাণুতায় বুঝি দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি!

তুফানি শক্তিবলে শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে নাকি?

প্রয়োজনে নির্মম হতেই জানি, জিউসের চাইতেও বেশি।

ধুরু, মোহগ্রস্ত করার কিছু নেই আর। কান্না থামাও এবার। 

বোকাদের প্রার্থনাকালে কতো অশ্রু অহেতুক গড়িয়ে পড়ে।

নাহ্, থাক এখানে! ভাষা যে মজে যাচ্ছে যৌনগন্ধি আমেজে।

বরং খুলাখুলি বলে ফেলি তোমার প্রতি আমার সর্বশেষ কথাটি:

কবিপুরুষের চারুস্পর্শ পেতে নারী ও মানুষ হয়ে আসতে পারো তুমি।

 

 অতঃপর নতুন নিয়মে আমি করিব বিশ্বসৃজন 

 

পিংপং বল আমারে ডেকে নিয়ে নীরবে বলে,

দেখো প্রতিটি পতনেই ভিন্নতর উত্থান থাকে।

 

ঝুরুঝুরু ঝরে পড়ে শীতাগম মেহগনিপাতারা।

 

উল্লম্ফন গতিবেগে ধেয়ে আসে উল্লুকছায়া।

প্রলম্বিত মোহমায়া জানে না মরুবিজয়গাথা!

রিক্তসিক্ত মনোছায়া পেতে পারে কূলকিনারা?

 

ললিতরাগে কবির কল্পনদী বয়ে চলে নিরবধি।

প্রবহমানতা খোঁজে খাঁচাবন্দি মাছরাঙা পাখি।

গভীরতা কখনও মাপামাপির মানেই বোঝেনি।

উড়ালযানে কেন যে জ্বলে নিবুনিবু নিয়নবাতি!

 

আমি নিকষনীল আন্ধারে লিখি খোয়াবি অহি:

একদিন এসে যাবে সাম্যবোধের মাহেন্দ্ররজনী।

 

অতঃপর নতুন নিয়মে আমি করিব বিশ্বসৃজন।

 

 বিদায় জানাতে পারিনি কমরেড

 

বিপ্লবের ডাক পেলে সাড়া দেবে কে, আছি আমি, জবাবে বলেছিল সম্প্রতি-ওয়ান নিহত লোকটি এবং সে একবার এসে ব্যাপারটি সিরিয়াস ছিলো কিনা বুঝতে চেয়েছিল, এবং-টু কমিউনিস্ট লোকটি অভিমানে সিপিবি থেকে বিদায় নিয়েছিল, এবং-থ্রি প্রকাশক লোকটি কবিতার বই হলেই ছাপতো আর একদিন গড়ে উঠবে কবিতার সমাজ এমনটি ভাবতো , এবং-ফোর কবি লোকটির একটি বাউলমন সাথে থাকতো, এবং-ফাইভ আউলা লোকটির মধ্যে একটি আউলিয়া-ভাব দেখা যেতো, এবং-সিক্স নির্ভীক লোকটি বেকুবি স্টাইলে ধর্মরীতি-রাজনীতি-সমাজবিধি নিয়ে আনকাট বলতো আর আন-এডিটেড লেখতো, এবং-সেভেন হাস্যোজ্জ্বল লোকটি স্বপ্নঘোরে কমিউনিজম এসে গেছে দেখতো, এবং এভাবে এবং-হানড্রেডের পরে বাংলাদেশি লোকটি বুলেটবিদ্ধ হয়েছিল, এবং এবং সে মরে যাওয়ার আগে স্ত্রী-সন্তান-প্রিয়জনসহ মুক্তবুদ্ধির মানুষগুলি তার চোখে ভাসছিলো, এবং সমস্ত এবং শেষে একজন শাহজাজান বাচ্চুর জীবনকে অসমাপ্ত রেখে চলে যেতে হয়েছিল।

 

নিশুতি জড়াজড়ি 

 

যাকিছু জড়ো ও জড়োসড়ো এবং বোবাকালা তারাই আজরাতে তোমারেআমারে জানাবে ডেকে মনখোলা কথাকলি। না-ভাষার দৃশ্যকাব্য থেকে ফুটেউঠা চিত্রপটে যদি না-ই বাজে নীরবতার মেলোডি, কানপেতে শুনে নিয়ো জীবনের প্রতিধ্বনি। আমিতো তুমুল যাতনাপাতে পালাতে গিয়ে প্রবল আনন্দবাতাসে ফিরে এসে বারবার বুঝে নিয়েছি পরিত্রাণের সূত্রাবলি। অনাদি তুমিআমি বাদে বাকি সবই বাকি-বকেয়া রেখেই মেনে নেবে অথবা টেনে দেবে সর্বব্যাপি সমাপ্তি। আমরা অবিশ্যি অবসানের প্রতিপাদে যাত্রাশেষেও অস্তিত্বের জমিনজুড়ে নিভৃতে পুতে রাখি অনশ্বরতার গতিজড়তাগুলি।

মানস সান্যাল

মানস সান্যালের জন্ম অক্টোবর ৩০, ১৯৮২।  বাবা মৃণাল কান্তি সান্যাল, মা সুমনা সান্যাল। ময়মনসিংহের সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে চলে যান ঈশ্বরগঞ্জে, মামারবাড়িতে।  দিদিমাতা মঞ্জুরাণী বাগচীর অভিভাবকত্বে ঈশ্বরগঞ্জ বিশ্বেশ্বরী পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করার পর আবার ময়মনসিংহে ফিরে আসেন।  সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। 

পেশাগত জীবনের শুরু গৃহশিক্ষকতা দিয়ে।  তারপর ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক, একটি এনজিওতে প্র্যাকটিক্যাল ইংলিশের ইন্সট্রাকটর হিসেবে কাজ করার পর ২০০৮ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। 

লেখালেখির শুরু ২০০০ সালের গোড়ার দিকে।  কবিতা দিয়ে শুরু।  কবিতা ছাড়াও গল্প, গদ্য, আলোচনা এবং উপন্যাসে আগ্রহ রয়েছে।  তবে কবিতাই তার কাছে প্রথম এবং শেষ উপলক্ষ্য - জীবনকে দেখার, উদযাপনের উৎসব।  ২০১৪ সালে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো তার প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘আহত জামার জন্য শোক প্রস্তাব‘। ২০১৬ সালে মেঘ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ ‘তারার আলোয় কোনো ছায়া হয় না’। 

স্ত্রী নিবেদিতা চক্রবর্তী এবং একমাত্র পুত্র ধীমান সান্যালকে নিয়ে বর্তমানে কিশোরগঞ্জে বসবাস করেন। 

লিরিক্যাল সিনড্রোম

 

শিলালিপি তুমিও দেখেছো চন্দ্রালোকে

গায়ে মেখে ঘুরেছো চন্দ্রালোক

অনেকেই ঘোরে- কেউ কেউ চকোর হয়ে যায়

 

তবু এই সত্য জেনে রেখো চন্দ্রমুখী-

চাঁদের ওপর কারো ব্যক্তিগত মালিকানা নেই

 

কনফেশন বক্স থেকে বলছি

আয়নায় পর্দা দিতে নেই।  ওই দ্যাখো দূরের পাখিরা কি রকম উতলা আজি।  কি রকম অনায়াসে এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে পাড়ি জমায়।  ডানাই ওদের সম্বল।  কোনো ক্রেডিট ব্যালেন্স নেই। কালো অক্ষরের কাছে একবার নতজানু হতে শিখলে, বাকিটা জীবন ঝুঁকে হাঁটতে হয়।  যেন ছায়া হারিয়ে গিয়েছে।  হারানো হিয়ার খোঁজে জঙ্গল ও উপকূল ঢুঁড়ে বেড়াচ্ছে মিঠাকাঁকড়ার দল। 

তোমাদের বলিনি কখনো, পেঁপে পাতার সাথে খুব আত্মীয়তা ছিলো এককালে।  কিন্তু সে যাযাবর-স্বভাব একদম সইতে পারে না।  ফলে, একটা নরম সরম ডালের মাথায় চড়ে বসলো সে এবং আমি বেদুঈন পাখিদের বাক্যালাপ শিখবো বলে সায়াহ্ন সকাল ডিঙিয়ে এলাম।  সেই থেকে মর্ম বলাকার সাথে বসবাস।  ওড়াউড়ি।  ঠিকানাবদল।  বারংবার। 

আয়নায় পর্দা দিতে নেই, স্বয়ংবরা; যখন-তখনমুখ দেখতে হলে পাতালের দিকে যেতে হবে তবে।  ততটা দূরত্ব নিশ্চয়ই তুমি চাওনি কখনো!

কী দুর্দান্ত ছবি আঁকা শিখে গেছো তুমি, এখন তাহলে আর ঝুমঝুমিগুলো হাতে তোলো না, তাই না? পেয়ারা গাছের গায়ে একবার দেখেছিলাম, সূর্যচিহ্নিত সবুজ হাসতে লেগেছে, সামান্য হাসিতেই দু’গালে টোল, আরেকটু কাছে গিয়ে দেখি, এ্যাত কিছু কারসাজি নয়, রোদেরই শারা বুঝতে পেরে কাঁদছে। 

এমন দুপুর।  নিরালা নির্জন।  কিছুটা পরিত্যক্তও।  বুকে হাওয়া এসে লাগে।  বড় অপরাধ হয়ে যায় মাঝে মাঝে।  তখন নৌকা কেমনে হয় সংগীত। আর পাল তুলে দিচ্ছে যে ছেলেটি, তাকেও নিকট আত্মীয়ের মতো লাগে।    

একদিন জলজ ছিলাম।  ফিনছিলো। কান্নার সাথে নোনাস্বাদ মিশেছিলো না।  আজ, এ্যাতদূর এসে, ঝুমঝুমিগুলোকেও ভুলতে বসেছো, সবুজলতা।  অথচ তোমার কান্না আর রক্তের প্রবাহে মিশে আছে সমুদ্রলবণ। 

এখন তোমার দাপাদাপি আর নৃত্য কুশলতা সমার্থক লাগে।  তবু আঁকতে থাকো।  এঁকে যাও।  দ্যাখো, গগনটিলার পাদদেশে একবার যে ফুল আমি দেখেছিলাম, নাম-না-জানাফুল, কারো দুঃস্বপ্ন থেকে স্মৃতি নিয়ে তাকেও আঁকতে পারো কি-না!

প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গেছে।  এবার আমরা অভিশাপ কুড়াতো বসবো। 

জানি তো, দশম দিগন্তের অন্যপাশে থাকে শোক, পাপ আর পূণ্যের হিসাব মেলাতে চাইছে কেউ। ধরে নিচ্ছিতাও এক অধ্যায় – হয়তো একাদশ।  তাহলে তখন কোথায় লুকিয়ে ছিলো জলভরা চোখ যখন গোপনে তেতে উঠছে পায়ের তলার মাটি, ছেলেছোকরারা অনন্তনীলের দিকে তাকিয়ে মুখস্ত করছে উপপাদ্য!

শেষাবধি পাঠ্যতালিকার বাইরে আমরা কেউ যেতে পারি নাই।  তবু সময় এক বিরাট শিরস্ত্রাণ। বকুলঝরা পথে পথে দৌড়ে যায় শিকারীর দল – কী তাদের অহংকার, কত অনায়াস; হাতের ইঙ্গিতে মুছে দিতে জানে কালোপিঁপড়ের শ্রম।

তত অনায়াসে কোনো গুটিপোকা রেশম ছড়ায়।  সারা মুখে হাসিও থাকতে পারে।  বাক্স খুলে পড়তে আরম্ভ করেছ বিরসংকেত। 

প্রতীক্ষা ব্যতীত আর কোনো পথ নাই। 

এতকাল হরষ কুড়িয়ে এবার আমরা অভিশাপ কুড়াতে বসবো।  এসো, বসে পড়া যাক। 

 

এহসান হাবীব

সম্পাদকঃ শূন্য 

কাব্যগ্রন্থ- টীকাভাষ্য, শাদা প্রজাপতি, কন্সপিরেসি অব সাইলেন্স। 

জন্ম: ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ যশোদলপুর, কিশোরগঞ্জ। তার পৈত্রিকনিবাস গৌরিপুর। বর্তমান নিবাস ময়মনসিংহ সদর। 

২. ফোন লাইন থেকে দূরে আছি, অনলাইন থেকে আরো দূরে।  ছেড়ে যাচ্ছি শীতের 

তীব্রতা, খড়ের সন্তাপ।  ব্যপ্ত চরাচরে বালির সাম্রাজ্যে গোপন পরিব্রাজন। 

ধুলোচারি আজ পার হয়ে যাচ্ছি নদী, চায়ের দোকান, সস্তা সম্পর্কের সব্জিক্ষেত। 

ফোনলাইন থেকে দূরে আছি, আছি তো অনলাইন থেকেও। পৃথিবীর সমস্ত খবর 

গূহ্য রেখে আজ তছনছ হবে যোগাযোগের সবকটি নিরাপত্তা বলয়। তুমুল 

পাগলামী হবে আজ দূরের বন্দরে।

ফোনলাইন থেকে দূরে আছি, অনলাইন থেকে আরো দূরে। সহসাই ফিরছি না 

আর মুখোমুখি তাসের টংঘরে।  

 

৩. এই যে সহজিয়া সড়ক যার নির্ভুল নিশানা আমাকে প্রতিদিন একটি নকশিকাঁথার 

কাছে নিয়ে যায়। প্রতিদিন একটি চাঁদ গোল হয়ে হেসে ওঠে আমার টেবিলে। 

আর যারা বসে আছো ঘিরে তারা একেকজন ক্লান্ত প্রাণ- যেন খারেযমের শেষ 

বাহাদুরের দুর্ভাগ্যের সঙ্গী। প্রতিটি চন্দ্রালোকে যাদের তাড়িয়ে বেড়ায় বাদশা 

খাকান। অথচ বহু বহু রাত্রি আমি কাটিয়ে দিয়েছি চরের বালিতে, বহু বহু মুক্তো 

আমি কুড়িয়ে পেয়েছি ধুলায়। কত তার কোথায় খরচ করে বসে আছি 

নিঃস্ব হাল্লাজ।

 

বহু বহু মুক্তো আমি লুটিয়ে দিয়েছি ধুলায়। তবু এই নিঃস্ব সড়ক কেন যে 

ল্যম্পপোস্টের মতো ঝুলিয়ে রাখে তাদের অব্যক্ত দীর্ঘঃশ্বাস!

 

৬. আমি খুব ভীরু এবং মূর্খ; অজানা পাপের ভয় সারাক্ষণ তাড়া করে ফেরে। 

প্রতিদিনের সখ্য আর কথার নৈবেদ্যে, ভালোবাসা সহোদরা ডেকেছিলো। আহা 

সাব-কনশাস! পুষ্পভা- যতো পূর্ণ হয়েছিলো তার সব অশ্রু নিয়ে ভরিয়েছো 

ব্যক্তিগত কলস। যেন পাপ। যেন কলি অন্ধকার।  মায়া সভ্যতা নিয়ে গড়া এক 

গুপ্ত বিহার।

আমি খুব ভীরু এবং মূর্খ।  পাপ ছেড়ে যাওয়ার ভয় ঘিরে থাকে সারাক্ষণ।  এই যে 

আপনি। আপনি নন- আপনার ব্যক্তিগত পাপ আমাকে ছেড়ে গিয়েছে।

নীহার লিখন

 জন্ম ৩ অক্টোবর; শেরপুর।, বর্তমানে ময়মনসিংহে বসবাস। ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পেশা : অধ্যাপনা (মার্কেটিং)। প্রকাশিত বই— ব্রহ্মপুত্র [কাব্য; মেঘ প্রকাশন, ২০১৭] আমি আপেল নীরবতা বুঝি [কাব্য; প্রিন্ট পোয়েট্রি, ২০১৭] ব্ল্যাকহোল ও পড়শিবাড়ী' সম্পাদিত ছোটকাগজ : উৎপথ 

ভর

ডানাগুলো পাখির জন্যে কখনো কখনো অভিশাপ 

যেমন আমি কথা বলতে শিখেছিলাম বলেই বুঝি

এই যে এতো এতো চিহ্নের অবয়বে ভেসে আসে ক্রোধের পাহাড়, কেবল তাকিয়ে দেখতে হয় 

তার উপর আকাশ, বিকৃতদেহ নিয়ে ঝুলে পড়ে সময়ের কোন এক দিকে

 

পাখি ও আমি নির্বিকার বাড়ি থেকে পথ

পথ থেকে বাড়ি, এই করে করেই ভর বয়ে চলি পৃথিবীর 

অথচ আমাদের নিজস্ব কোন ভরই নেই

 

ভাড়াটে

 

আমার শৈশবে, এক ভাড়া বাড়িতে একটি পরিবার বহুদিন বাস করে চলে গেলো কোথায় যেন

তারা  ছাদের গোলাপ ফুলের টবটি নিয়ে যায়নি

বহুদিন সেই টবে একটা মৃত গোলাপগুড়ি পঁচে গেলো 

 

বহুদিনপরে, আরো এক ভাড়াটে পরিবার সেখানে বাস করে গেলো।তাদের একটি বোবা মেয়েছিলো।

ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতো। অনেক কথাই বলতো।কাউকে দেখতে দেখলেই দৌড়ে চলে যেতো। আর ফিরতো না সারা দিন 

 

পচনশীল গোলাপ গাছ ও বোবা মেয়েটার দৌড় 

কোথায় যে আছে, এর পরেও ও বাড়িতে  অনেকেই বাস করে গেলো...

 

চিঠি

 

বহুদিন হলো চিঠি পাইনা,তার খবর আত্তি জং ধরে পড়ে আছে লাল বাকশোতে 

লোহার জং খসে পড়ে যায় টিপের শৈশব

কপালের জায়গাটায় প্রবল বিরোধ 

আমাদের  ঋতুবদলের কথাগুলো বহুদিন হয়ে গেল এই বাক্সে ফেলি না, কেউই আর ফেলে না নাকি!

 

বহুদিন হয়ে গেলো আমাদের বয়স।  এখন আর কেউ কারো ত্বকের বিমর্ষতায় প্রাণ খুলে মন খারাপের কথাগুলো বলি না। তেমন বিস্মৃত কোন কাঁপনগুলোর খোঁজ খুঁজিনা... বহুদিন এভাবেই হয়ে যায় 

জড়দের নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা সব গাছ সন্মুখে চেয়ে আছে....

শুভ্র সরকার ( ফেব্রুয়ারি ৯. ১৯৭৯), জন্ম ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার লাঙ্গুলিয়া গ্রামে।  পিতা- সুরেশ সরকার। মাতা - জয়ন্তি সরকার।

অতি সাধারণ জীবন -যাপনে অভ্যস্থ এই কবি স্বভাবে লাজুক। কবিতার মাধ্যমে কবি তার ব্যাপ্তি,  বিস্তৃতি,  গভীরতাসহ সবকিছুতে নিজস্বতার পরিচয় দিয়েছেন।

তিনি শিল্প সাহিত্যের ছোট কাগজ মেরুদণ্ড - এর সম্পাদক।

মধুপুর বনে

মধুপুর বনে সকাল আসে

সেটা বুঝা গেল শাদা শাদা ফুলে

লাবণ্য একা হতে চেয়ে

ফুটে আছে দূরে


ভাঁজে ভাঁজে পথে এ হাওয়া ফিকে

ভাঙা সাঁকো আর পথ একসঙ্গে থাকে

উচ্ছিষ্ট নির্জনের শব্দকালে

ফুরফুরে প্রজাপতি নেই ফানুসে

গাছে গাছে গীত উড়ে হাঁটার মিছিলে

 

গারোদের বাড়ি যাই

গারোদের চলতি সিজনটা বড়ই সুনসান

গারোদের বাড়ির দিকে কাঠের ভাষা

রোদবিয়োগে হারাই

ছোট ছোট ঘর, ছোট ছোট লোকালয়

তবু গাছের পঙ্গুজুড়ে কচি নির্মাণ

 

যে যা বলে বলুক লোকজনে

হাত সেঁকে নেব আমি আজ

রোদের আদরে

এমন দিনে কারা যেন গেছে দূরে

কারা কারা নেমে গেছে ঘর পাঁচিলে

 

মধুপুর ; মধুপুর বনে সকাল আসে

পাখিরা অপেরা গড়ে

পাতাশোভা হিমে....

 

পাঠাপালা বাড়ির দিকে

 

কাঠ চেরাইয়ের শব্দ পার হলেই

পশ্চিমাদের বাড়ি। তারা মূলত পাঠাপ্রেমী।

বাড়ির বউ ঝিয়েরা পাঠা পালে

আর ছাগল এলেই পাল দেখায়

 

কালো পিচের রাস্তা ধরে

তাদের পাতা খসা দিন উড়ে

সদূরে ল্যাংড়াবাজার। দূরগামী মানুষের দীর্ঘ সড়ক।

 

বেটা ছাওয়ালরা সে বাজারে চা খেতে বসে

কিছুক্ষণের জন্য মেঘরঙে চুপচাপ ভিজে 

যেখানে বাড়ির বৃদ্ধারা

খোলা ছায়ার নিচে বিষণ্নতা পোহায়

 

একটি ইজিবাইক কাঁপুনি দিয়ে চলে গেলে

কার মুখ তবে মনে করে হাওয়া এসে

বয়ে নেয় জর্দ্দার ঘ্রাণ

 

যে কোন দিকের গাছে গাছে পাখিরা ডাকে

শিথিল ভঙ্গিমায়

প্রজাপতি, বেদনানাশক

পাবে না যারে রোদ বিহিন তরুলতায়

 

তাকানো পাঠার দল গুতায় শিং

থেকে থেকে খসে পড়া বাকলে

কামনার সারাক্ষণ

পাঠার নাকের ডগায় ওঠে জপ

 

তবে আয় উঠোন শিশুর

তর্কে হারিয়ে যে রীতি

কাটাকুটির এক্কা দুক্কা দুপুর দেখি

দেখি আকাশ। শাদা শাদা মেঘ।

মেঘে মেঘে ভেঙে পড়ে যে মেঘের ঘর

খাদে নেমে আসে একটা সুড়ল চাঁদ।

 

মধ্যাহ্ন

মধ্যাহ্ন ঘনিয়ে এলে দেখি

মায়ের কপালজুড়ে তিলকের বাগান

 

মগ্ন রোদে পুড়ে বাড়িটার বয়স ফুরায়

তখন আদর জড়ানো ডাক ছোটে

ঝাপটা মারে পালিত বিড়ালের পিঠে পিঠে

 

এমন মধ্যাহ্ন মোড়া মধ্যবিত্ত পরিবার

একই রকম লাগে

তবু যেন একই রকম হয় না কখনও....

 

সারাজাত সৌম

 

জন্ম : ২৫ এপ্রিল ১৯৮৪, ময়মনসিংহ

পেশা : চাকুরি, প্রকাশিত বই : একাই হাঁটছি পাগল (কবিতা; জেব্রাক্রসিং, ২০১৮)

 

 

শোভা

 

কিছু ফুল শূন্যতার মতো হালকা-লাল

যেন কেউ এসে দেখে যায়-

                         টিকটিকির শোভা

ভরাট এই ঘরে-

থেকে থেকে শরীরের উপর 

হায়! না ঘুমানো আমার ছেলেবেলা-

কতো কি -শয়তানের খেলনার মতো

                         ভেসে যাচ্ছে দূর-

মর্মর পোশাকের স্তুপ

যদিও আম্মা ভালো লাগে-

          যদিও গান গায় কেউ এই রাতে

আমি কি আসিনি তখনো!

 

নয়মাস -

একটি মানুষ যেন অন্ধকার-

               দুর্গন্ধ থেকে লাফিয়ে এলো

তবু আরো কিছু ফুল শূন্যতার মতো

দূরে বসে ছুঁড়ে দেয় হল্কা-

হালকা-লাল

            যে পুরুষটি বেঁচে থাকে অবশিষ্ট

সেও পুড়া -দিগ্বিদিক ছড়ানো চন্দনের ডাল


সংকেত

 

মাথার ভেতর ঝিরঝির স্ক্রিন-

আমাকে সংকেত পাঠাচ্ছে শরীর

 

সোনালি ক্লিভেজ-

এন্টেনায় বসা দুটি পাখি 

তারা কি চোখের ভলিউম-

 

উড়তে থাকা শব্দের ঢেউ

যেন তরঙ্গ নিয়ে খেলা, এই বোতল-

বিদ্যুৎ বিভায়-

এনামেল প্লেটের পাশে 

ঝগড়া করে যাচ্ছে রোজ

 

অথচ তারা সংকেতময়-

নখে -চুলে আর জিহ্বায়

চিনির উল্লাস থেকে বেরিয়ে এসে

দূরে-

 

একটি কালো পিঁপড়ার দল

পথে ঘুরে ঘুরে করতাল বাজায়।

শাহ্জাহান জহির

শাহ্জাহান জহির জন্ম - ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮২, তারাকান্দা, ময়মনসিংহ। সম্পাদক 'নীলকণ্ঠ' 

১.জলচক্রের উৎক্ষিপ্তম্যাগমা

কখনও কখনও কবিরা হয়ে যায় কবিতা

চিত্রকল্প মোড় নেয় নতুন গল্পের দিকে

গল্পের কথক হঠাৎই থমকে যায়

পৃথিবীর চেনা আর অচেনা শব্দের মেলবন্ধনে

 

আমরা তখনও হাঁটতে থাকি নদীপথ সমুদ্রে

আর হাঁটতে হাঁটতে পানির উৎস খুঁজি

বৃষ্টি আর জলচক্রের উৎক্ষিপ্ত ম্যাগমায়।

 

৩.ধূসরমৃত্তিকা

 

রাতগভীর হলে কবিতার এলো-শব্দ

মেতে উঠে সে এক আদিম খেলায়আর

আর জরায়ুতে পুঁতে দেই কবিতাবীজ

 

আঁধারে জন্ম নেয় আমার কবি সত্তা

আমিও জাগরিত হই অজানা স্বপ্নে

শব্দ লিপিকায় সৃষ্টি হয় কবির কবিতা

 

তুমি তখন আলো জালো কলঙ্ক ভয়ে

মোছে ফেল আঁধারের চিতনকশাচিত্র

 

অতঃপর তুমি আমি মিশে যাই কবিতাহীন

অনুর্বর কোন মাঠ কিংবা ধূসর মৃত্তিকা।

 

৪.বাসনানদীর

 

অতঃপর জংধরা জোছনায়

নদীপথ হেঁটে গেলো গন্তব্যে

অচেনা পথিকের পদচিহ্ন

আর শূন্যে বালুচর রাতের নীরবতা

আমিও হাঁটি ক্লান্তিহীন

নদীর বাসনায়।

রিয়েল আবদুল্লাহ 

সম্পাদক : রূপান্তর ময়মনসিংহ 

দরিরামপুর,ত্রিশাল, ময়মনসিংহ 


১. কালো কফিনের ডানা

মৃতদের কফিনে আটকে থাকে আত্মার অহম,

মরিচিকা মায়ায় উড়ে যায় অন্ধকারের কালো বাঁদুর,

কেউ কেউ বলে-বাঁদুর নাকি মৃত আত্মার প্রতিচ্ছবি।

 

আমাদের পাড়ার ছেলেরা কফিন কাঁধে চলে যায় শ্মশান অবধি—

উন্মাদ ছেলেগুলো কফিন পুড়ায় বিড়ির আগুনে;

কফিনের ভেতর আত্মা আর বাঁধা থাকে না—

উড়ে যায় শিস দেয়া দোয়েলের মতো—

তাকে সারস চোখে চেয়ে দেখার বৃথা চেষ্টা করা;

আত্মা উড়ে যাচ্ছে গাংচিলের ছায়ার মতন ধ্রুপদী তালে।

 

দুপুরহীন আত্মা একদিন উড়ে আসবে বৈচিত্রহীন আকাশে।

আত্মম সংলাপগুলো বীভৎস চিৎকারে হাওয়ায় মিশে যাবে। 

তোমাদের বাড়ির কার্ণিশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখো —

মৃত আত্মাগুলোর সাবলীল কীর্তিকলাপ।

 

প্রেমের ছোঁয়া পেলে হয়তো ফের জেগে উঠতে পারে বিবশ আত্মাগুলো। 

কালো কফিনের ডানা মেলে উড়ে যেতে পারি তুমি ও আমি একাকী অথবা সঙ্গীবিহীন।

 

৩.পথপ্রদর্শক 

মাঝে মাঝে যারা অন্ধকারে আছে,

তাঁদের অন্ধকারেই রেখে দিতে হয়;

যখন ওরা আলোতে আসে—

ওদের চোখ খুলে যায়—ওরা পথভ্রষ্ট হয়।

 

ওরা আলোর সন্ধানদাতাকে মূল্যায়ন করে না;

ভাবে,সে বৃথা ব্যক্তি– 

এ ছিলো তাদের পূর্বাধিকার

পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত কিছু ;

অথচ আলো না দেখালে 

অন্ধকারেই থেকে যেতো তাঁরা চিরদিন।  

 

৫.মেঘের ভূমিকা

মাঝে মধ্যে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাই 

এতটুকু তোমার কথা আসে না 

কেবল গাছ লতা পাতা লিখেই শেষ হয়ে যায়

বরাদ্দকৃত সামগ্রিক স্থান।

 

চোখ আঁকার চেষ্টা করি 

কদম পাতার মতো চোখে লৌহিত্যধারা বয়

চোখের কাজল গলে মেঘ হয়ে যায়

ভেসে যাই–মেঘসমূদ্র মৈথুনে জলে ভেজা চোখ 

মেঘবতী বাতাসে শুকিয়ে কাঠ হয়।

 

পৃষ্ঠাগুলো একের পর এক ফুরিয়ে যায়

রুটি ও মদের মতো

অন্তস্তলের চিলেকোঠায় দাড়িয়ে আকাশে উড়িয়ে দিই চুম্বন

সে চুম্বন মেঘের পাখায় ভরদিয়ে তোমার উঠোনে যাবে

তুমি স্নান করে নিয়ো-আত্মশুদ্ধির ঐতিহ্যে মেঘের ভূমিকা অফুরান।

সূর্য নন্দন

২১ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সূর্য নন্দন।  "প্রতিচ্ছবি" নামে ২০০৮ সালে প্রথম সম্পাদনা করেন একটি ছোটকাগজ। এ ছাড়াও সম্পাদনা করছেন সাহিত্য বিষয়ক কাগজ "অনুশীলন আড্ডা"। ‘মাটির নোলক’ তার প্রথম কবিতার বই।  অন্তর্মুখিতা তার স্বভাব বৈশিষ্ট্য।  সূর্য নন্দন  অনুশীলন সাহিত্য সংসদ ও পাঠাগারের একজন একনিষ্ঠকর্মী। 

 

সময়ের সুর 

 

প্রতিরাতে রাতজাগা পাখির আর্তনাদ

স্নিগ্ধ ভোরের প্রত্যাশায় খুলি চোখ

দুপুর গড়িয়ে বিকেল ছুঁই ছুঁই

বিষণ্ণ লাগে

একাকী দাঁড়িয়ে কাশবন

উড়ে প্রজাপতি, লাফায় ঘাসফড়িঙ

চায়ের দোকানে ঝড় 

চূড়ায় চূড়ায় জ্বর

পালতোলা নৌকোয় ভেসে ওঠে সুখ

বুলেটবিদ্ধ মুক্ত বাতাস, পরিযায়ী পাখি

পানকৌড়ির রক্তে লালচে জল

কাঁদে বিকেল, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রক্তাক্ত রাত

ঘুমুতে পারিনা আমি, ভোর দেখব বলে

সেই ভোর-

বিষণ্ণ আকাশ সমস্তরাত কেঁদে কেঁদে 

ভিজিয়েছিল যে শহর, গ্রাম

হাঁটুজল মাড়িয়ে ছুঁয়েছিলাম যে-সুর 

তেমন একটি ভোরের খুঁজে

জেগে আছি রাতের পর রাত

চোখ মেলে দ্যাখি- দুপুর পেরিয়ে বিকেল ছুঁই ছুঁই

পারিজাত বলছে 'আসবেই ভোর'

আর কত দূর

কত দূর 

সেই ভোর 

 

টাঙ্গুয়া

 

নীলাকাশের পরি, নীলজলের ঢেউ 

উড়ে ডাহুক

টাঙ্গুয়ার জলে নৃত্য করে 

চেনা চেনা সুখ

কড়চডালে ফিঙের উৎসব 

ওপাড়ে নৈসর্গিক বঞ্চিত পাহাড়

এ পাড়ে লাল নীল ক্ষরণ 

স্মৃতির চোখে নাড়া দেয় শতাব্দীর বদন

 

ফাঁদ

অঃতপর ভালবাসা সাদা  মেঘ হয়ে 

আকাশে উড়ে

গাঙচিলের পালক ভিজে যায় অশ্রুতে 

পেছনে ফেলে আসা নদী, পথ

সম্মুখে অন্ধকার 

আহত সাদা বক কাঁদে শিকারির ফাঁদে

অমর্ত্য আতিক

শৈশব-কৈশোর ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায়, জন্মগ্রাম ‘পাগলা’। শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বীজ তার রক্তে বিধে আছে আজন্ম এক সৃষ্টিমুখর দ্রোহের মতো, সেই উদ্দীপনা ও বিলোড়ন থেকেই রাজধানী শহরে নির্মাণ করেছেন নিজস্ব সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্টান ‘চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ’। বাবা-মায়ের দেয়া নাম : আকিকুল ইসলাম, একাডেমিক নাম : আকিকুল ইসলাম আতিক, লেখক নাম : অমর্ত্য আতিক, পড়াশুনা বিএ/বিএসএস।  সম্পাদিত সাহিত্যের কাগজ চর্চা ও সঙ্গ।

রন্ধনশালা

 

চাল ধুয়া পানির ভিতর দিনে পাঁচ পাঁচবার

ডুবে মরে আমার প্রজাপতি মন।

তুমি রন্ধনশালায় রঙিন মনে

থকথকা ততা ভাত টিপে

সিদ্ধান্তে উপনীত হও।

 

পাঙ্গাসের ঝোলে

ভেসে উঠা চর্বির ভিতর

খুঁজে বেড়াও তৃপ্তি পরিসর,

পরম তৃপ্তি চরম হলে পুনর্বার

মরার

মন

শুধু রন্ধনশালা রন্ধনশালা করে।

 

কুটুম পাখি

 

বাড়ির জঙলায় কুটুম পাখি ডাকলে মনে হয়

এই বুঝি আসছে মেহমান। আমি উলোহা খাওয়ার

লোভে অধির আগ্রহে পথ চেয়ে বসে থাকি পৈঠায়─

আম্মা পর্দা সরিয়ে খেড়কিতে রাখেন চোখ,

এবারের মেহমান যেন হয় নানার বাড়ির কেউ;

কতদিন যাওয়া হয়না জন্মগ্রামের ভিতর!

না কেউ আসে না। আমি ফিরে আসি ঘরে।

আমার মন শুধু উলোহা উলোহা করে।

মায়ে পুতে আসার আশে বান্ধি বুক─

আব্বা কোমরে খালুই বেধে ডোবায় নামেন...

 

অবশিষ্ট জীবনানন্দ

 

মিছিলেই বেড়ে ওঠে যৌবন; মিছিলেই ঝেড়ে

ফেলে কষ্টের কালিমা কুড়াই মঙ্গলসূত্র;

আর তুমি কাক্সিক্ষত মোহে সমস্ত ঘর ল্যাপে

লোক দ্যাখানোর ছলে খোলা রাখো দুয়ার

ফিরেই আমি অবশেষে

তোমার মাঝে খুঁজি অবশিষ্ট জীবনানন্দ, আর

চেতনার আকাশে উড়াই শাশ্বত শান্তির কপোত।