Page 577 start

অপার্থিব প্রেমাবদ্ধ দম্পতীর একসঙ্গে দেহত্যাগ

কানাই ঠাকুর নামে তালেশ্বর গাঁয়।

বাগহাট থানা মধ্যে খুলনা জিলায়।।

হেমন্তকুমারী নামে সাধ্বী পত্নী তার।

অপার্থিব প্রেমে বদ্ধ এই নারী নর।।

শ্রীগুরুচাঁদের পদে দৃঢ় নিষ্ঠা রাখে।

পতি পত্নী সর্বদায় একসঙ্গে থাকে।।

পুত্র-কন্যা-হীন দেখি প্রভু বলে তাকে।

(গ্যাপ)

“সন্তান বলিয়া তোরা পোষ এক পাখী।।”

শালিকের বাচ্চা এক রাখিল পুষিয়া।

হরি বলে দিন কাটে নিরালে বসিয়া।।

নরদেহে গুরুচাঁদ করিলেন ত্যাগ।

দম্পতী সংসারে তা’তে হ’ল বীতরাগ।।

ভক্ত কি অভক্ত যার সকলের যাত্রী।

বিরহ বেদনা দিয়ে বেড়াইল ঘুরি।।

সর্বস্ব বেচিয়া কিছু অর্থ হাতে হ’ল।

আশ্রয়ে রাখিয়া এক দুষ্ট তাহা নিল।।

অর্থ নিয়া পরে দোঁহা তাড়াইয়া দেয়।

চৈত্র মাসে লক্ষ্মীখালী হইল উদয়।।

সরল সহজ দেখি দম্পতীর প্রাণ।

দয়া করি শ্রীগোপাল দিল দোঁহে স্থান।।

জ্যৈষ্ঠ মাসে এক সঙ্গে উভয়ের জ্বর।

একসঙ্গে আসে ছাড়ে নাহি ভাবান্তর।।

সপ্তম দিবসে দেখ জ্বর বৃদ্ধি হ’ল।

হরি বলে সে কানাই জীবন ত্যজিল।।

সংবাদ জানিয়া বলে হেমন্তকুমারী।

“চলে গেলে প্রাণনাথ কিসে প্রাণ ধরি?”

শয্যা ত্যাগ করি দেবী হাঁটিয়া চলিল।

পতির চরণ তলে শয়ন করিল।।

কেন্দে কেন্দে বলে দেবী “ওগো প্রাণেশ্বর।

আজ কেন ছেড়ে যাও দাসীকে তোমার?

চিরকাল দয়া করে রাখিয়াছ সাথে।

দাসীরে ছাড়িয়া একা হও কোন পথে?

অপরাধ হয়ে থাকে দয়া করে ক্ষম।

দাসীকে লহ গো সাথে ওগো প্রিয়তম।।”

তৃষ্ণার্ত হইয়া দেবী জল খেতে চায়।

একটি ডাবের জল তারে এনে দেয়।।

কেন্দে কেন্দে জলপান সে সতী করিল।

পতির বামেতে এসে আপনি শুইল।।

সতীর প্রার্থনা কভু ব্যর্থ নাহি হয়।

পতিশোকে সতী নারী দেহ ছেড়ে যায়।।

ধন্য সতী! ধন্য পতি! ধন্য ব্যবহার।

সতীর চরণে করি কোটি নমস্কার।।

---০---