Page 260

“নমঃ কুলপতি” শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ

উনিশ শত এগার অব্দে লোক গণনায়।

সেন্সাস বহিতে নমঃশূদ্র লেখা হয়।।

অষ্পৃশ্য চন্ডাল গালি ঘুচাল ঠাকুর।

আর এক কান্ড হয় চিরস্মরণীয়।

রাজা বলে ‘বঙ্গ-ভঙ্গ রদ করি দিও।।

দুই বঙ্গ হল এক বাঙ্গালীর সুখ।

রাজধানী গেল দিল্লী এই যাহা দুঃখ।।

যুক্ত বঙ্গে লাট লর্ড কারমাইকেল।

পরম পন্ডিত তিনি খোলা ছিল দেল।।

বহু গুণে বিভূষিত আছিলেন তিনি।

বাঙ্গালী ভোলেনি আজো তাঁর মূর্ত্তি খানি।

ফরিদপুরেতে তেঁহ করে আগমন।

তাঁর দরশনে প্রভু পেল নিমন্ত্রণ।।

প্রভুর দক্ষিণ-হস্ত সে ডক্টর মীড।

তাঁকে ডাকি বলে মীড করহে বিহিত।।

স্থির হল এক সাথে মিলি কয়জন।

“ডেপুটেশনের” কথা হইল তখন।।

লাটের লঞ্চেতে যাবে প্রতিনিধিগণ।

নিবেদন করিবেন সব বিবরণ।।

মুখপাত্র হবে মীড নমঃশূদ্র পক্ষে।

লাট সঙ্গে কথা হবে পদ্মানদী বক্ষে।।

সেইভাবে ক্রমে তবে হল আয়োজন।

নমঃশূদ্র গণে প্রভু বলিল তখন।।

‘রাজ প্রতিনিধি লাট আসিবে জেলায়।

নিমন্ত্রণ করিয়াছে যাইতে তথায়।।

Page 261 start

তোমরা চলেছ সঙ্গে যার যার আশা।

জাতীয় জীবনে জাগে উন্নতির ঊষা।।

আধার কাটিয়া আলো করে ঝলমল।

কে কে তোরা যাবি সঙ্গে চল চল চল।।

প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিল জনে জনে।

সকলে আসিয়া বলে প্রভুর চরণে।।

এ জাতির ভার কর্তা তোমার উপর।

নিজগুণে কর তুমি যে ইচ্ছা তোমার।।

আমরা অবোধ শিশু বল শক্তি নাই।

দয়া করে যাহা দাও তাই মোরা পাই।।

যারে যারে সঙ্গে নিতে তব অভিপ্রায়।

শ্রীমুখের আজ্ঞা পেলে যাইবে নিশ্চয়।।

এতেক কহিল যদি যতেক প্রধান।

চারি জনে সাথে নিয়া চলে ভগবান।।

শ্রীবিধু চৌধুরী আর ভীষ্মদেব দাস।

পূর্ণ মল্লিক আর যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস।।

মীড গেল সাথে সাথে সারথি সাজিয়া।

পত্রিকাতে সব কথা নিলেন লিখিয়া।।

ঊনিশ শ বার অব্দে জুন মাস জানি।

লাট সম্ভাষণে চলে প্রভু গুণমণি।।

যথাকালে উপনীত হইল জেলায়।

অগ্রভাগে ম্যাজিষ্ট্রেট সম্মান জানায়।।

জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট হন বড়ই কর্ম্মিষ্ট।

তাঁহার শাসনে লোক ছিল শান্ত শিষ্ট।।

মীড করে পরিচয় গুরুচাঁদ সনে।

সাহেব বলিল কথা মধুর বচনে।।

প্রভুর যতেক কীর্ত্তি কহিল প্রভুর।

“মনঃকুলে তুমি শ্রেষ্ঠ শুনহে ঠাকুর।।

লাটের নিকটে আমি করেছি জ্ঞাপন।

তিনি মহাসুখী জানি সব বিবরণ।।

মিষ্টার ন্যাথান ছিল কমিশনার।

লাটেরে বলেছে তিনি সব সমাচার।।

বড়ই সন্তুষ্ট আমি তব আগমনে।

চল এবে যাই সবে লাটের সদনে।।

এতবলি দলবলে লাটর সদনে।

চলিলেন গুরুচাঁদ জাতির কারণে।।

যবে দেখা হল লাট একদৃষ্টে চায়।

দেখিয়া অবাক হল ভাবে বোঝা যায়।।

ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় করাইল তাঁরে।

হাত ধরি লাট তাঁরে অভ্যর্থনা করে।।

ম্যাজিষ্ট্রেট জানাইল সব বিবরণ।

নমঃশূদ্র করে নাই কোন আন্দোলন।।

অতঃপর মীড কহে মুখপাত্র রূপে।

নমঃশূদ্র কোন পড়ি ছিল অন্ধকূপে।।

ধীরে ধীরে পরিস্কারে মীড কথা বলে।

একমনে শোনে লাট অতি কুতুহলে।।

বলা শেষ হলে লাট বলিল তখন।

“বড়ই সন্তুষ্ট আমি শুন মহাজন।।

রাজভক্ত নমঃশূদ্র বুঝিলাম সার।

রাজশক্তি নমঃশূদ্রে করিবে উদ্ধার।।

আর সুখী শুনি আমি ঠাকুরের কথা।

ইহাকে করিনু আমি নমঃশূদ্র নেতা।।

নমঃশূদ্র-কুলপতি হইলেন ইনি।

অদ্য হতে রাজা তাঁরে লইলেন চিনি।।

“নমঃশূদ্র কুলপতি” লাটে আখ্যা দিল।

হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।

--০--