Page 178

ওড়াকান্দী গ্রামে ডক্টর মীডের প্রথম সভা

ওড়াকান্দী গ্রামে মীড বসতি করিল।

নমঃশূদ্র সবে তাহে আনন্দিত হৈল।।

ঠাকুরের ভিটা পরে তাবু খাটাইয়া।

রহিল ডক্টর মীড আনন্দিত হইয়া।।

অবিরত ঠাকুরের কাছে আসে যায়।

প্রেমানন্দে আলাপনে সময় কাটায়।।

রীতি-নীতি-চলা-ফেরা-আচার-পদ্ধতি।

গুরুচাঁদ নিকটেতে জানিলা সম্প্রতি।।

এই ভাবে কিছু কাল যবে গত হয়।

গুরুচাঁদ প্রতি তবে মীড ডাকি কয়।।

শুন শুন বড় কর্ত্তা আমার মনন।

সভা ডাকিবারে চেষ্টা করিব এখন।।

দেখিব শুনিব সব জাতির বারতা।

চেষ্টা করে দূর করিবারে চাই ব্যথা'।।

এ-হেন প্রস্তাব যদি সাহেব করিল।

মহানন্দে গুরুচাঁদ করতালি দিল।।

প্রভু বলে “শুন মীড আমার বচন।

তোমার প্রস্তাব শুনি আনন্দিত মন।।

Page 179 start

দিন ধার্য করি দেহ সভার কারণ।

আমি ডাকি আনি মোর স্বজাতির গণ।।

বিদ্যাহীন জাতি মোর সভা নাহি চিনে।

তোমার চেষ্টায় জ্ঞান হবে দিনে দিনে।।

অতঃপর সভা লাগি দিন ধার্য হল।

ঘরে ঘরে মহাপ্রভু সে বার্তা পাঠাল।।

ঠাকুরের বাটী পরে সভা আয়োজন।

জনে জনে নমঃশূদ্র করে আগমন।।

প্রভুর ভক্ত যত 'মতুয়া ' উপাধি।

প্রভু আজ্ঞা শিরোধার্য করে নিরবধি।।

প্রধান ভকতগণে প্রভু বার্ত্তা দিল।

আজ্ঞা পেয়ে প্রধানেরা উপনীত হ'ল।।

আইল তারকচন্দ্র রসের সাগর।

'কবি -রসরাজ ' বলি উপাধি যাহার।।

প্রেমে ডগমগ তনু দুই চক্ষে ধারা।

উর্দ্ধশ্বাসে ধামে ছুটে বাহ্য-স্মৃতি হারা।।

'হরিচাঁদ “গুরুচাঁদ 'ধ্বনি সদা মুখে।

ঝলকে ঝলকে বারি বহে তার চোখে।।

গলে বস্ত্র করজোড়ে উঠিলেন ধামে।

বসন তিতিয়া গেছে শরীরের ঘামে।।

শ্রী নাট মন্দিরে যথা প্রভু সমাসীন।

ভূমিতে লুটায় যেন দীন হতে দীন।।

তারকে দেখিয়া প্রভু বড়ই আনন্দ।

মহা হর্ষে বলে কথা প্রভু গুরুচন্দ্র।।

“উঠহে তারক তুমি সাধুর প্রধান।

শুভ সমাচার কহ জুড়াই পরাণ”।।

আজ্ঞা মাত্র সে তারক উঠিয়া দাঁড়াল।

ঝর ঝর দুই চক্ষে বহিতেছে জল।।

প্রভু বলে “হে তারক মঙ্গল - ত সব?”

কান্দিয়া তারক তাতে করে উচ্চ রব।।

অশ্রুজলে ভেসে বলে “মঙ্গল আলয়।

তোমার স্মরণে অমঙ্গল দূর হয়।।

দরশনে সর্ব্বশান্তি সকলি মঙ্গল।

বাক্যসুধা পানে মরা -দেহে আসে বল”।।

করুণা বিস্তার করি রাখিয়া সমুখে।

তার তলে আপনারে রাখিয়াছ ঢেকে।।

তাই এই দৃষ্টি আমি ফিরাই যেখানে।

কৃপা দেখি দয়াময় তোমাকে দেখিনে।।

এত কৃপা করিতেছে নাহি যার পার।

“তোমার কৃপাই ধন্য! কি বলিব আর।।

কৃপাসিন্ধু মধ্যে প্রভু হাবু - ডুবু খাই।

সকলি মঙ্গল প্রভু! অমঙ্গল নাই”।।

এ-হেন বচন সাধু বলিয়া তখন।

প্রভু আজ্ঞা ক্রমে করে আসন গ্রহণ।।

আসিল দেবী চরণ সাধক প্রধান।

বাণীয়ারী গ্রামে যিনি করে অধিষ্ঠান।।

ঐকান্তিক নিষ্ঠা তাঁর গুরুচাঁদ পদে।

'জয় জগন্নাথ ' বলি শ্রী চরণ বন্দে।।

তেজঃপূর্ণ বপু তার প্রেমে ডগমগ।

সর্ব্বকর্ম্মে ছিল তেঁহ সদা সুপারগ।।

বহু দেশে ভ্রমে তিনি নাম প্রচারিতে।

তাঁর যশোগাঁথা তাই উঠি চারিভিতে।।

বরিশাল, যশোহর, খুলনা জেলায়।

ঘরে ঘরে হরিনাম প্রচার করয়।।

প্রভু-আজ্ঞা পেয়ে তেঁহ ধাইয়া আইল।

ওড়াকান্দী ধামে আসি দরশন দিল।।

গুরুচাঁদ -রূপ দেখি কম্পিত শরীর।

ঘন শ্বাস বহে চক্ষে ঝড়ে প্রেম-নীর।।

“বাবা গুরুচাঁদ “বলি হুঙ্কার ছাড়িল।

আকাশ চিরিয়া যেন বজ্র বাহিরিল।।

চমকি চাহিয়া দেখে উপস্থিত জন।

প্রেমে-মত্ত সিংহ যেন করিছে গর্জ্জন।।

Page 180 start

প্রেমানন্দে মহানন্দ আইল ধাইয়া।

গুরুচাঁদে করে ভক্তি মন প্রাণ দিয়া।।

দীর্ঘ শ্মশ্রু দীর্ঘ কেশ মতুয়ার গণ।

হরি হরি বলি সবে করে আগমন।।

প্রভু পদে প্রণমিয়া সবে বসি রহে।

আজ্ঞা বিনা কোন জনে কথা নাহি কহে।।

ওড়াকান্দী,ঘৃতকান্দী, মাচকান্দী হ'তে।

নমঃশূদ্র সবে আসে নানাবিধ পথে।।

সহস্র প্রমাণ হ,ল লোক সমাগম।

সকলে নিস্তব্ধ, মানি 'সভার নিয়ম।।

হেনকালে মীড আসি ঘাটেতে উদয়।

প্রভুর নিকটে তবে সংবাদ পাঠায়।।

শ্রুতমাত্র মহাপ্রভু সভাজনে বলে।

সাহেব আসিলে মান দেখাব সকলে।।

“নমস্কার “শব্দ করি কর জোড় হও।

বৃথা আলাপন ছাড়ি চুপ করে রও।।

শ্রী বিধু ভূষণে ডাকি বলে দয়াময়।

চল বিধু চল সবে ঘাটে যেতে হয়।।

মন্ত্রীবর যজ্ঞেশ্বর রামতনু সাধু।

সহকারী রূপে তবে সাথে চলে বিধু।

আর আর মহাজন যতেক আছিল।

সাহেবে আনিতে সবে ঘাট প্রতি গেল।।

এদিকে ডক্টর মীড নামিয়াছে কূলে।

তাহা দেখি সবে দ্রুত সেই দিকে চলে।।

প্রভু যবে সাহেবের নিকটে আসিল।

“নমস্কার বড় কর্ত্তা! “ সাহেব কহিল।।

নমস্কার উচ্চারণ করে গুরুচন্দ্র।

হাতে হাত ধরি দোঁহে করে করমর্দ্দ।।

শ্রী বিধুভূষণ তবে বাহুরি আইল

মহাপ্রভু সাহেবেরে পরিচয় দিল।

এই গ্রামে বাস করে চৌধুরী উপাধি।

ধনে, জনে, কুলে, শীলে, মান্য নিরবধি।।

চৌধুরী বংশেতে এই বংশের প্রধান।

শ্রী বিধুভূষণ নাম অতি গুণবান।।

ত'বে ত ' সাহেব হস্ত প্রসারণ করি।

শ্রী বিধুভূষণে হস্ত দেয় অগ্রসরি।।

এই ভাবে ভীষ্ম দেব আর যজ্ঞেশ্বরে।

ক্রমে ক্রমে মহাপ্রভু পরিচয় করে।।

অতঃপরে সভাপ্রতি চলিলেন সবে।

সকলে বসিয়া যেথা রয়েছে নীরবে।।

অগ্রে মহাপ্রভু চলে মীড চলে পিছে।

সাঙ্গ পাঙ্গ পিছে পিছে ছুটিয়া চলেছে।।

পুত্তলিকা -প্রায় সবে রয়েছে বসিয়া।

সাহেব আশ্চর্য হ'ল সে ভাব দেখিয়া।।

যেই মাত্র গৃহ মধ্যে সকল পশিল।

একসাথে সব লোকে উঠিয়া দাঁড়াল।।

'নমস্কার ' শব্দ উঠে চারিদিক হ'তে।

'নমস্কার ' শব্দ মীড বলে আচম্বিতে।।

চারিদিকে ধীরে ধীরে মীড দৃষ্টি করে।

অভূত-অপূর্ব্ব শোভা দেখে চারিধারে।।

এক দিকে দাঁড়ায়েছে মতুয়ার গণ।

সেই দিকে মীড দৃষ্টি করে ঘনে ঘন।।

দীর্ঘ শ্মশ্রু দীর্ঘ কেশ গলে দোলে মালা।

পরিধানে এক বস্ত্র স্কন্ধ দেশে তোলা।।

সুদৃশ্য চেয়ারে মীডে প্রভু বসাইল।

মীড পত্নী তস্য পার্শ্বে উপবিষ্টা হ'ল।।

বাম পার্শ্ব ভাগে প্রভু আপনি বসিল।

দেখিয়া সকল লোকে জয় ধ্বনি দিল।।

অন্য অন্য প্রধানেরা বসে চারিভিতে।

বসিল সভার লোক আনন্দিত চিতে।।

অতঃপর সভাজনে প্রভু ডাকি কয়।

“শুনহে স্বজাতি সবে মম অভিপ্রায়।।

হেথা বসিয়াছে দেখ মীড মহাপতি।

পাদ্রী রূপে বঙ্গ দেশে করিছে বসতি।।

Page 181 start

দুঃখী জনে দয়া করে দীনে বাসে ভালো।

অন্ধ জনে জ্বেলে দেয় জ্ঞান-চক্ষু-আলো।।

বহু দুঃখ ভোগী মোরা দেখিয়া নয়নে।

মোদের মঙ্গল তরে এসেছে এখানে।।

কতই দুঃখেতে দেখ কাটিয়াছে কাল।

বান্ধব ছিলনা কেহ এমনই কপাল।।

কৃপা করি হরি তাই মানুষে পাঠা'ল।

পতিতে জাগাতে দেখ মীড্ হেথা এল।।

যা' কিছু বেদনা আছে কহ তাঁর ঠাঁই।

অবশ্য পাইবে পথ কোন চিন্তা নাই।।”

এত যদি গুরুচাঁদ বলে সবাকারে।

জয় জয় ধ্বনি উঠে সভার ভিতরে।।

“জয় গুরুচাঁদ জয় মীড মহামতি।

জয় ধ্বনি করে সবে হৃষ্ট হয়ে অতি।।

আসন গ্রহণ তবে গুরুচাঁদ করে।

মীড দাঁড়াইল পরে সভার ভিতরে।।

সকলে উন্মুখ হ'য়ে তাঁর প্রতি চায়।

ধীরে ধীরে কথা মীড সভাজনে কয়।।

“ভক্ত মহোদয় গণ! এই কথা বলি।

এদেশে অতিথি আমি শুনহে সকলি।।

মোর কার্য রীতি যত বড়কর্ত্তা ঠাঁই।

সকলি বলেছি কিছু বাকি রাখি নাই।।

মোর প্রভু যীশুখ্রিষ্ট দীনে করে দয়া।

তাঁর ভাব পালি ' দিয়ে মন -প্রাণ -কায়া।।

এই দেশে কাণ্ড দেখি বড়ই অদ্ভূত।

মানুষে মানুষে হিংসা-কার্যে মজবুত।।

ইতর পশুর প্রতি যতটুকু দয়া।

মানুষে মানুষে নাহি তার কোন ছায়া।।

আদি অন্ত সে বৃত্তান্ত বড় কর্ত্তা মোরে।

বলিয়াছে দুঃখে মোরে প্রহরে প্রহরে।।

নমঃশূদ্র আদি যত দরিদ্রের গণ।

শিক্ষা, দীক্ষা হীন হ'য়ে কাটিছে জীবন।।

জমিদার মহাজন ধনে মানে উচ্চ।

দিনে রাতে তা ' সবারে করিতেছে তুচ্ছ।।

মানুষের অধিকারে করিয়া বঞ্চিৎ।

আজন্ম অন্যায় রাশি করেছে সঞ্চিৎ।।

সেই সব লোক যারা শিক্ষা দীক্ষা হীন।

অন্তরে বাহিরে সদা দুঃখেতে মলিন।।

তাহাদের দুঃখ রাশি দূর করে দিতে।

এসেছিল যীশুখ্রিষ্ট এ-মর জগতে।।

তাঁর যে আদর্শ তাহা রহি ' নিজ শিরে।

মোরা সবে ঘুরে দেখি দেশ-দেশান্তরে।।

তোমাদের উপকার যদি কিছু হয়।

সেই ভাবি মোরা দেখ এসেছি হেথায়।।

এই গুরুচাঁদ যিনি তোমাদের নেতা।

তাঁর কাছে জানিয়াছি তোমাদের ব্যথা।।

যথাসধ্য চেষ্টা মোরা অবশ্য করিব।

পালিব প্রভুর নীতি নতুবা মরিব।।

ধন-বল জন-বল কিছু নাহি চাই।

বসতি গড়িয়া র'ব জমি যদি পাই।।

জমি কিছু দান চাই বসতি করিতে।

তাহার ব্যবস্থা সবে কর বিধিমতে।।

বড়কর্ত্তা গুরুচাঁদ বলে মোর ঠাঁই।

বিদ্যাশিক্ষা পেলে নাকি কোন ভয় নাই।।

তাঁহার বচন আমি শিরোধার্য করি।

শিক্ষা লাগি দেখি আমি কি করিতে পারি।।

স্থান যদি পাই কিছু স্কুল গড়িবারে।

ছাত্র যদি পাই তা'তে পড়িবার তরে।।

অবশ্য গড়িব স্কুল নাহিক সন্দেহ।

স্কুল লাগি স্থান কিছু সবে মোরে দেহ।।

মধ্য ইংরাজী স্কুল করিয়াছ সবে।

সেই স্কুল হাই স্কুল করিতেই হবে।।

আমার ধর্ম্মের শিক্ষা যদি সেথা দেয়।

গৃহাদি করিয়া দিব আমরা তথায়।।

Page 182 start

আমার ধর্ম্মের বাণী সবে বলিবারে।

অধিকার দিতে হবে সরল অন্তরে।।

“মিশন “ গড়িব আমি ধর্ম্ম প্রচারিতে।

তার লাগি জমি কিছু মোরে হবে দিতে।।

এই মত প্রতিশ্রুতি যদি আমি পাই।

অবশ্য করিব কার্য কিছু ভুল নাই।।

বিবেচনা করি সবে দেহ গো উত্তর।

যাহা কবে বল মোরে সকলে সত্বর।।”

এতেক বলিয়া মীড বসিল তখন।

সভাজনে কাণাকানি করে সর্ব্বজন।।

মৃদু গুঞ্জনের ধ্বনি উঠে চারিভিতে।

কোন কিছু কোন জন পারে না বলিতে।।

হেন কালে দাঁড়াইল জ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর।

“চুপ কর “ বলে সবে জুড়ি দুই কর।।

নিস্তব্ধ হইল সভা স্তব্ধ সিন্ধু প্রায়।

সাহেবে উদ্দেশ্য করি যজ্ঞেশ্বর কয়।।

“শুনহে ডক্টর মীড, মোদের বারতা।

সকল বুঝিনা মোরা যত বল কথা।।

আমাদের কর্ণধার অই বড় কর্ত্তা।

তাঁর সাথে হইয়াছে নাকি কথাবার্ত্তা।।

এ জাতির শুভা-শুভ পতন-উন্নতি।

সবাকার মূলে উনি সর্ব্বকালে গতি।।

উহার উপরে আছে সবার নির্ভর।

উনি যাহা করে তাহা মোদের সবার।।

অকূল সমুদ্রে জানি উনি কর্ণধার।

তাঁর ইচ্ছা বিনা ইচ্ছা নাহি কারো আর।।”

এমত কহিল যদি সাধু যজ্ঞেশ্বর।

সভা জনে দিল সায় সবে একত্তর।।

তবে ত ডক্টর মীড প্রভু পানে চাহে।

ধীরে উঠি মহাপ্রভু কিছু কথা কহে।।

স্বজাতির প্রতি প্রভু তবে ডাকি কয়।

“শুন সবে মোর মনে যত কিছু লয়।।

আমি বুঝি রাজ শক্তি সাহায্য ব্যতীত।

পতিত জনের কভু নাহি হবে হিত।।

রাজ পুরোহিত মীড তাহে শক্তি মন্ত।

আমি বলি তাঁহা হ'তে দুঃখ হবে অন্ত।।

মীড যবে আসিবারে করিল মনন।

তোমাদিগে’ সব কথা বলেছি তখন।।

সেই কথা মনে সবে করহে এখন।

মোর ইচ্ছা করিবারে জাতির তারণ।।

আমি বলি মীড যদি এই দেশে রয়।

অবশ্য মঙ্গল হবে নাহিক সংশয়।।

যা কিছু করিবে মীড সবে ইহা জান।

মোদের মঙ্গল হবে এই কথা মান।।

তাই এই ইচ্ছা আমি করিয়াছি মনে।

অবশ্য মীডেরে রাখি বিশেষ যতনে।।

যে ইচ্ছা করিবে মীড সে-ইচ্ছা আমার।

অকুল পতিত নিয়ে দিলাম সাঁতার।।

যাহা কিছু চাহে মীড সব আমি দিব।

জাতি যদি জাগে তবে কিবা না পারিব?

অতঃপর মীডে চাহি প্রভু বলে হাসি।

“জমি চাও জমি লও নাশ দুঃখ রাশি।।

কতখানি জমি মীড চাহ মোর ঠাঁই।

যাহা চা'বে তাহা পাবে কোন চিন্তা নাই।।

যাহা ইচ্ছা কর তুমি তাতে বাধা নাই।

পতিত উদ্ধার হোক্ এই মাত্র চাই।।

প্রভুর বচন শুনি মীডের বিষ্ময়।

মনে ভাবে হেন জন 'না দেখি কোথায়।।

যতকাল এই দেশে আসিয়াছি আমি।

বহুলোক দেখিলাম নানা স্থানে ভ্রমি।।

বিশেষতঃ নমঃশূদ্র বলি যারা কয়।

সবাকার রীতিনীতি জানি পরিচয়।।

কিন্তু এই বড়কর্ত্তা শ্রী গুরুচরণ।

কোন জনে নাহি দেখি ইহার মতন।।

Page 183 start

এ- যেন জ্বলন্ত অগ্নি - আগ্নেয় পর্ব্বত।

রূপে গুণে কুলে শীলে মহামান্য সৎ।।

ইহাকে বেড়িতে মনে যা ' করি যুকতি।

বেড়াজাল ছোট হয় লজ্জা পাই অতি।।

কি জানি দয়াল যীশু কি দিয়া কি করে।

বাঁধিতে আসিয়া বাঁধা পড়িনু প্রকারে।।

তব ইচ্ছা পূর্ণ হোক ও হে পরমেশ।

এই কর্ম্মলীলা বুঝি জীবনের শেষ।।

এতেক ভাবিয়া মীড প্রভু পানে চায়।

দেখে মৃদু মৃদু হাসে প্রভু রসময়।।

মীড চাহি প্রভু তবে হাসি কথা কয়।

“নীরবে কি চিন্তা কর মীড মহাশয়?

যাঁর কাজ সেই করে মোরা উপলক্ষ্য।

যা' হোক তা' হোক ফল তাতে নাই দুঃখ।।

কারে দিয়ে কোন কার্য প্রভুজী করা'বে।

সেই চিন্তা করে বল কিবা ফল হবে।।

আর বলি শুন মীড মনোগত কথা।

বাঁধা পড়ে ' --যদি থাকে পরাণে মমতা।।

কেবা কারে বাঁধে নিজে না বান্ধিলে।

মন-বান্ধা পড়ে যদি, ঠিক বান্ধা হলে।।

বিস্ময়ের পরে মীডে জাগিল বিস্ময়।

মনে ভাবে এই ব্যক্তি সামান্য ত নয়।।

আমার মনের মধ্যে যে চিন্তা জাগিল।

এ মানুষ কোন সুত্রে তাহা টের পেল।।

অপরের চিন্তা-পাঠ-বিদ্যা বটে আছে।

এই ব্যক্তি কভু কিবা সে বিদ্যা শিখেছে।।

কি জানি কেমন হ'ল আজিকে ঘটনা।

আর স্তব্ধ থাকা মোর উচিত হবে না।।

এত ভাবি মীড তবে উঠিয়া দাঁড়া'ল।

প্রভু পানে চাহি তবে বলিতে লাগিল।।

“ বড় কর্ত্তা! মোর বার্ত্তা বলি তব ঠাই।

এই কার্যে আমি দশ বিঘা জমি চাই।।

দশ বিঘা জমি যদি মোরে কর দান।

তোমার জাতির কার্যে আমি দিব প্রাণ।

কি জানি আজিকে মোর কেমন হইল।

মোরে দিয়া এই সব কে যেন বলা'ল।।

নিশ্চয় বুঝিনু ইহা যীশুজীর কাজ।

তোমার কাজের ভার স্কন্ধে নিনু আজ।।”

এ মত ডক্টর যদি বলিল বচন।

প্রভুজী ডাকিয়া সবে বলিল তখন।।

“সভাজনে শুন সবে আমি যাহা কই।

দশ বিঘা জমি দিতে প্রতিশ্রুত হই।।

গ্রাম্য- মধ্যখানে দেখ পশ্চিম পাড়ায়।

আমার কতক জমি আছে নিরালায়।

সেই জমি মীডে আমি করিলাম দান।

আর যদি লাগে দিতে না করিব আন্।।

এই বাণী প্রভু যবে সভাতে বলিল।

“ধন্য ধন্য “ রব তবে চারিভিতে হ'ল।।

উল্লাসে ডক্টর মীড দাঁড়ায়ে তখন।

নিজ কর দিয়া করে শ্রী কর মর্দ্দন।।

সভাজনে প্রতি তবে মীড ডাকি কয়।

“ কিছু কথা শুন যত ভদ্র মহোদয়।।

যে-মহৎ কার্য আজ বড় কর্ত্তা করে।

কোন ভাষা দিয়া ব্যাখ্যা করিব তাঁহারে।।

যত কাল এই দেশে করি ঘোরাঘুরি।

ইহ সম শ্রেষ্ঠ - আত্মা কারে নাহি হেরি।।

ইচ্ছা যদি করে ইনি আপন উন্নতি।

কেহ রোধিবারে নাহি পারে তাঁর গতি।।

অধিক কহিব কিবা এই মহাজন।

যদি খ্রীষ্ট-ধর্ম্ম ইনি করেন গ্রহণ।।

নিশ্চয় করিয়া আমি বলি সবাকারে।

ভারতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ নর হ'তে পারে।।

কিন্তু এই কার্য আজি এ মহাত্মা করে।

তদোধিক শ্রেষ্ঠ বলি মানিনু ইহারে।।

Page 184 start

পতিত স্বজাতি ছাড়ি কোন ধন মান।

ইচ্ছা নাহি করিয়াছে মহাত্মার প্রাণ।।

পতিত জনের তরে সকলি ছাড়িল।

নিশ্চয় বুঝিনু আজি পতিত তরিল।।

যে কথা বলেছি আজি সভাজন ঠাঁই।

সে কার্য করিব আমি কোন বাধা নাই।।

যেই জমি বড় কর্ত্তা করিলেন দান।

সেই জমি পরে মোরা উড়াব নিশান।।

মিশন গড়িব তথা করিব ইস্কুল।

করিব ডাক্তারখানা নাহি হবে ভুল।।

যেই ইচ্ছা বড় কর্ত্তা করিয়াছে মনে।

তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ মোরা করিব যতনে।।

অধিক কি কব আর যীশুর কৃপায়।

নমঃশূদ্র ধন্য হবে কহিনু নিশ্চয়।।

যেই জাতি নেতা রূপে গুরুচাঁদে পায়।

সে-জাতি উদ্ধার হবে কহিনু নিশ্চয়।। “

এতেক কহিয়া দেয় বহু ধন্যবাদ।

শ্রীকর মর্দ্দনে পুনঃ জানায় আহ্লাদ।।

সভা ভঙ্গ হল প্রভু করেন ঘোষণা।

সবে যায় পথে পথে করিয়া রটনা।।

“আর ভয় নাই মোরা উদ্ধার হইব।

বড় কর্ত্তা গুরুচাঁদে কভু না ছাড়িব।।

সাহেব করিবে স্কুল নাহিক সন্দেহ।

বাকি নাহি র'বে শিক্ষা পাইবার কেহ।।

হরি - পুত্র গুরুচাঁদ মোদের সহায়।

এ - জাতি উদ্ধার হবে নাহি আর ভয়।

বলা বলি করি সবে গৃহ পানে ধায়।

শুন এবে কিবা হ 'ল প্রভুর আলয়।।

---০---