Page 490

শ্রীমৎ যাবদ মল্লিক কর্ত্তৃক শক্তিদান

ঠাকুরের কৃপা পেয়ে সে নকুল ধায়।

নাম প্রচারের লাগি দেশে দেশে যায়।।

যশোহর জিলাধীনে হিদা নামে গ্রামে।

নাম ধর্ম্ম প্রচারিল গোস্বামী প্রথমে।।

Page 491 start

সেই গ্রামে একদিন মিশিয়া সকলে।

মহোৎসব করিবারে মতুয়ারা চলে।।

যাদব মল্লিক আর শ্রীযাদব ঢালী।

মহোৎসবে চলিলেন হরি হরি বলি।।

পার্শ্ববর্ত্তী গৃহে নাম নেপাল বিশ্বাস।

মতুয়ার প্রতি তার ঘোর অবিশ্বাস।।

মতুয়ারা নাম গানে সদা মত্ত রয়।

ঘৃণাভরে সে নেপাল ফিরিয়া না চায়।।

প্রভুর লীলার তত্ত্ব নাহি যায় জানা।

যেই বাদী তারে দলে না এনে ছাড়েনা।।

এক্ষেত্রে তেমনি দেখি সকলি ফলিল।

দিবা দ্বিপ্রহরে অগ্নি জলিয়া উঠিল।।

স্নান করিবারে সব মতুয়ারা যায়।

নেপালের গৃহে অদ্নি জ্বলে সে সময়।।

মতুয়া দয়াল কত শোন এবে তাই।

হিংসা দ্বেষ মতুয়ার প্রাণে কিছু নাই।।

অপরের দুঃখে তারা নাহি পায় সুখ।

তারে হিংসা করুক না যে যাহা পারুক।।

নেপালের ঘরে অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল।

চারিদিক হতে লোক ছুটিয়া আসিল।।

দাউ দাউ জ্বলে অগ্নি ভীষণ আকার।

মনে হয় ঘর বাড়ী হবে ছারখার।।

দূর হতে যত জনে আসিল ছুটিয়া।

অগ্নির বিক্রম দেখি রহে দাঁড়াইয়া।।

হায়, হায় সব বুঝি পুড়ে ছাই হয়।

নিরুপায় সে নেপাল কান্দিয়া বেড়ায়।।

হেনকালে সেথা ছুটে আসিল নকুল।

মানবের দুঃখে প্রাণে হইল আকুল।।

কিছু শুনিবারে নাহি করিল অপেক্ষা।

মনে মাত্র ভাব তার ‘‘কিসে পায় রক্ষা?’’

জ্বলন্ত অগ্নির মধ্যে ঝাপায়ে পড়িল।

মুহুর্ত্তের মধ্যে গৃহের চালেতে উঠিল।।

বীর মূর্ত্তি সে নকুল অপূর্ব্ব বাখান।

ব্রজস্বরে বলে কন্ঠে ‘‘জয় হরিচান।।’’

নেপালে ডাকিয়া বলে ‘‘ওহোরে অজ্ঞান!

রক্ষা যদি পেতে চাস হরি বলে কান্দ।।

মতুয়ারে যত্ন করি করাবি ভোজন।

হরিভক্ত মতুয়ারে করিবি পূজন।।’’

কান্দিয়া নেপাল বলে ‘‘আর ভ্রম নাই।

দয়া করে রক্ষা কর দয়াল গোঁসাই।।

হরিচাঁদে বিনিব যে হেন শক্তি কোথা।

দয়া করে দাও শক্তি ওহে শক্তিদাতা।।

আজিকার এ বিপদে যদি রক্ষা পাই।

মহোৎসব হবে হেথা এই ভিক্ষা চাই।।’’

নকুল ডাকিয়া বলে ‘‘ভিজা কাঁথা আন।

আগুন নিবাব আমি বলে হরিচান।।’’

বীর্য্যবন্ত সে গোস্বামী যবে ইহা বলে।

জল কাঁথা নিয়ে লোক ধায় দলে দলে।।

প্রভুর করুণা গুণে মুহুর্ত্ত ভিতরে।

দাবানল শান্ত হল পলকের তরে।।

অগ্নি যুদ্ধে জয়ী হবে নামিল নকুল।

তারে দেখে নরনারী সবে প্রেমাকুল।।

গোস্বামী যাদব যাঁর উপাধি মল্লিক।

ঘন ঘন নকুলেরে করেছে নিরিখ।।

মহাভাব তাঁর প্রাণে হইল উদয়।

ভাবাবেশে নকুলেরে বক্ষে ধরি লয়।।

কার্য্যগুণে নকুলের হল ভাগ্যোদয়।

বক্ষে ধরি গোস্বামীজী নকুলেরে কয়।।

‘‘নকুল যে! যেই কার্য্য আজিকে করিলি।

হরিচাঁদ কৃপাগুণে ধন্য হয়ে গেলি।।

যে কার্য্য করিলি তুই কিবা দিব আর।

তোরে দিনু সব শক্তি যা কিছু আমার।।’’

কান্দিয়া নকুল বলে ‘‘দয়াল গোসাই।

আমাকে করহে কৃপা শক্তি নাহি চাই।।

Page 492 start

শক্তি দিয়ে কি করিব কৃপা যদি পাই।

রণে, বলে কোনখানে ভয় মোর নাই।।’’

এই ভাবে প্রেমালাপ ভাবালাপ হল।

অতঃপর মতুয়ারা সিনান করিল।।

মহোৎসব বাড়ী সবে হল উপস্থিত।

আনন্দে সবার চিত্ত প্রেমে পুলকিত।।

হেনকালে সে নেপাল দিল দরশন।

অবিরল নেত্রজল বহিছে তখন।।

কেন্দে বলে ‘‘দেখ মোর ভক্তি শক্তি নাই।

দয়া করে মোর গৃহে চলুন গোঁসাই।।

শ্রীহরিচাঁদের নামে দিব মহোৎসব।

দয়া করে মতুয়ারা চলিবেন সব।।’’

গোস্বামী যাদব তবে করুণা করিল।

দয়া করি নেপালের গৃহেতে চলিল।।

মহাভাব সেইখানে হইল কীর্ত্তন।

দলে দলে লোকজন করে আগমন।।

যাদব ডাকিয়া বলে নকুলের প্রতি।

‘‘মনোমত গান কর নকুল সুমতি।।’’

যাদবের আজ্ঞামতে নকুল তখন।

গান করে মহাভাবে হইয়া মগন।।

অশ্বিনী গোঁসাই কৃত ভাবাঙ্গ সঙ্গীত।

গান শুনে সকলের চিত্ত বিমোহিত।।

‘‘মনে এক বাঞ্ছা ছিল ঘটল না আমার।আমার হৃদিপদ্মে হরিচাঁদে-সাজায়ে মিলাব চাঁদের বাজার।।’’ভক্ত কবি অশ্বিনী গোঁসাই-

গান শুনে ভাবে মত্ত যাদব মল্লিক।

ভাবাবেশে স্থানকাল নাহি কিছু ঠিক।।

নকুলের প্রতি কৃপা দ্বিগুণিত হল।

ভাবে মুগ্ধ হয়ে সাধু নাচিতে লাগিল।।

সারা অঙ্গে ফুটে ওঠে আনন্দ কিরণ।

নকুলেরে করিলেন অঙ্কেতে ধারন।।

জননি যেমনি লয় আপন শিশুরে।

সেইমত গোস্বামীজী ধরে নকুলেরে।।

পুতুল অঙ্কেতে যথা শিশু করে খেলা।

নকুলে অঙ্কেতে করি দেয় কত দোলা।।

ভাব দেখি গৃহবাসী সকলে অজ্ঞান।

ডুবিল কঠিন ধরা বহে প্রেমবান।।

প্রহর অবধি চলে কীর্ত্তনের খেলা।

গগনে হইল তবে দ্বি-প্রহর বেলা।।

যাদব গোস্বামী তবে হইল সুস্থির।

মতুয়ারা দিল সবে জয় জয় ভীর।।

স্নান করিবারে সব করিলেন মন।

জনে জনে অঙ্গে করে তৈলের মর্দ্দন।।

নেপাল আসিয়া বলে যাদবের ঠাঁই।

‘‘এক মণ চাল পাক হয়েছে গোঁসাই।।

লোক পরিমাণ যাহা করি অনুমান।

পঞ্চ শতাধিক হবে এই হয় জ্ঞান।।

কি উপায় দয়াময় বলুন এখনে।।’’

যাদব মল্লিক কয় ‘‘ভয় নাই মনে।।

ভোজন দিবার কর্ত্তা এই ভবে যিনি।

আমাদের যা ব্যবস্থা করেছেন তিনি।।

এক মনে ডাক তাঁরে ছাড় অন্য মন।

একমনে একমণে হবে অগণন।।’’

এত বলি সবে মিলে এল স্নান করি।

আহারে বসিল সবে দিয়ে ঘর সারি।।

‘‘জয় হরি গুরুচাঁদ’’ মতুয়ার ভীর।

সেই সাথে নেপালের চক্ষে বহে নীর।।

স্বচ্ছন্দে করিল সেবা যত নরনারী।

কোন কিছু কম নহে তরী তরকারী।।

আকন্ঠ ভোজন করে সবে আনন্দেতে।

এ সব সম্ভব হল প্রভুর দয়াতে।।

ভকতের পুণ্য দেহে প্রভু করে বাস।

ভক্তে যাহা বলে প্রভু তাই করে পাশ।।

Page 493 start

শ্রীগুরু-চরিত কথা সঞ্জীবনী সুধা।

মহানন্দ বলে খেলে যায় ভব-ক্ষুধা।।

---০---