Page 049

আর্য সাধনায় জীবন তত্ত্ব


“নাহন্যোঃবিদ্যতে পন্থায়নায়”-উপনিষদ

আর্য জাতি মহাভাগ চারিভাগে করে ভাগ

মানব জীবনে।

আদি ব্রহ্মচর্য তার গৃহধর্ম অতঃপর

পালিবে যতনে।।

তৃতীয়ত বানপ্রস্থ ভিক্ষু হবে শেষপ্রস্থ

জীব শেষ যামে।

এমন মহান নীতি জীবের কল্যাণ গতি

নাহি ধরাধামে।।

“কালস্য-কুটিলাঃ গতি” ক্রমে আর্য ছন্নমতি

জীবন সংগ্রামে।

গুণ কর্ম বিভাগেতে ভিন্ন হল নানা পথে

জাতি বর্ণ নামে।।

মূল নীতি হল ভুল অকুলে হারায়ে কুল

আর্য জাতি ম’ল।

কর্মজাতি মুছে দিয়ে জন্ম জাতি মেনে নিয়ে

হিন্দু সৃষ্টি হল।।

তাই আর্য রক্ষিবারে বারে বারে অবতারে

নামিল ঈশ্বর।

যুগ অনুযায়ী ধর্ম সবারে শিখা’ল মর্ম

ভারত উপর।।

তবু তাহে নাহি হয় অবতার চলি যায়

আপনার লোকে।

কাল গতি চক্রতলে আর্য মরে পলে পলে

জ্বরা ব্যাধি শোকে।।

এমন কেনবা হল কোন খানে ভুল র’ল

সেই তত্ত্ব কথা।

বলি তাহা মনোখেদে শ্রী গুরু গোপাল পদে

নোয়াইয়া মাথা।।

কাল কুহকিনী চলে অবাধ গতির ছলে

অনন্তের পথে।

নিত্য নূতনত্ব দিয়ে জীব মন ভুলাইয়ে

চলে অব্যাহতে।।

রানত কাঁদি যায় কেহ ফিরে নাহি চায়

নূতন আনন্দে।

আহা কর বড় ভুল কেহ নাহি বুঝে স্থুল

নূতনের ছন্দে।।

আজিকের নূতন যাহা কাল পুরাতন তাহা

ইহা মিথ্যা নয়।

Page 050 start

আজিকার যে নতুন কালি সাজে পুরাতন

কাল গর্ভে ধায়।।

আদি অন্ত একাকার বালবৃদ্ধ যে প্রকার

একত্ব স্বভাবে।

লোক মুখে শুনি তাই বুড়া গুড়া ভেদ নাই

কাজে কিংবা ভাবে।।

যেই পুরাতন ফেলি আর্য চলে পথ ভুলি

সেই সে প্রাচীনে।

মিশাবে জীবনে যবে পুনঃ হিন্দু আর্য হবে

আপন জীবনে।।

কূট তর্কবাদী যারা নিশ্চয় বলিবে তারা

দিয়ে করতালি।

পুরাকালে কিবা ছিল সকলি তো জানি ভাল

শুন তবে বলি।

কর্মশক্তি ছিল কম তাই নাকে পূরে দম

তপস্যা করিত।

আকাশ কুসুম যাহা যত্ন করে পেতে তাহা

হাত বাড়াইত।।

অনন্ত অসীম যিনি রূপ নাকি ধরে’ তিনি

দিত দরশন।

মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে ভোজ ভেল্কি দেখা পেয়ে

কহিত বচন।।

গণ্ডি বদ্ধ হয়ে র’ত কূপ মণ্ডুকের মত

দেশ ভাবে বিশ্ব।

বিজ্ঞানের আলোচনা কেহ কিছু জানিত না

এমনি রহস্য।।

দাস্য ভাব ছিল ভারী ব্রাহ্মণের পদতরী

করিত সম্বল।

অন্ধ যুগ পুরাকাল বর্ত্তমান শ্রেষ্ঠ কাল

প্রধান সকল।।

নর আজ সুখী কত সুখে কাল হয় গত

জীবনে মরণে।

নাহি কোন অত্যাচার মান্যামান্য পরস্পর

আছে সর্ব্বখানে।।

বিজ্ঞানের কি উন্নতি জলে স্থলে সদা গতি

করিছে মানব।

সবে মিলি গড়ে নীতি বল দর্পী হতে ভীতি

গেছে চলে সব।।

আপামর সর্বজনে শিক্ষা পায় সর্বস্থানে

নাহি বাধাবিঘ্ন।

সাম্যনীতি ঘরে ঘরে পালিতেছে নারী নরে

জীবন যাত্রা স্নিগ্ধ।।

আদি, ব্যাধি, জ্বরা তৃষ্ণা সবে আজি ভগ্ন আশা

বিজ্ঞানের গুণে।

উদার ধর্মের নীতি পালিছে সবারে নিতি

সম দরশনে।।

শুনিতে মধুর বটে তর্কবাদী যাহা রটে

সদা বাহ্য দৃশ্যে।

বিচার করিলে মূলে ধরা যায় সব ভূলে

জানিবে অবশ্যে।।

অধুনা কালের গতি যতকিছু রতিনীতি

কিবা পরিনাম।

ইন্দ্রিয় পোষণ লাগি নর আছে সদা জাগি

তাই মোক্ষধাম।।

ঘুরিয়া সুখের পাছে সুখ মোহে পরে আছে

নর নারী যত।

সকলের অত্যাচার কোথায় অভাব তার

কোথা সাম্য মত।।

অসংযত ইন্দ্রিয়াদি আনিয়াছে মহাব্যাধি

ভোগ তৃষ্ণা পথে।

ভোগে আনে মহাভোগ দারুণ বিষয় রোগ

ঘিরিছে জগতে।।

যাহা আছে তাহা ছাই আর সুখ ভোগ চাই

নরনারী কহে।

Page 051 start

বল দর্পী পদ তলে কত জন ভূমণ্ডলে

দুঃখ জ্বালা সহে।।

বিজ্ঞানের যে উন্নতি কিবা করিছে সম্প্রতি

মারনাস্ত্র গড়ে।

অস্ত্রে যেই বলবান হয়ে যেন হতজ্ঞান

পররাজ্যে পড়ে।।

অসুর স্বভাবে তাই দিকে দিকে দেখি তাই

শুধু অত্যাচার।

রাজ্যে রাজ্যে রাজে রাজে শুধু হিংসা ধ্বনি বাজে

ভীষণ আকার।।

ধর্মনীতি সুসরল কোথায় দেখেছে বল

বর্তমান কালে।

ধর্মান্ধ পশু যে কত ধর্মপীঠ করে হত

অতি কতুহলে।।

শিক্ষা নাকি সর্বঠাঁই কিবা শিক্ষা পায় ছাই

জীবন গঠনে।

ভোগবাহী শিক্ষা দিয়ে সুখ শান্তি দূর করে

ডাকে যে মরণে।।

জুয়াচুরি ধাপ্পাবাজী ঘরে ঘরে দেখি আজি

পেতেছে সন্মান।

ধর্মকথা তুচ্ছ অতি ধর্ম দুর্বলের নীতি

করে উচ্চারণ।।

নিত্য নব সুখ পায় প্রাণ কিন্তু না জুড়ায়

আছে শূন্য হয়ে।

ত্যাগে যে মহান শান্তি নরে কহে তাহে ভ্রান্তি

সুখেরে চাহিয়ে।।

ভোগের বিজ্ঞান নিয়ে শান্তি গেছে দূর হয়ে

অন্তরে কাঙ্গাল।

বাহ্য দৃশ্যে বড় ভাল অন্তরে নিবিড় কাল

মাকালের ফল।।

তাই বলি শুন ভাই এ পথে যে শান্তি নাই

জীবের জীবনে।

জীবের শান্তির লাগি আর্য হল সর্বত্যাগী

শুদ্ধ তপোবনে।।

সাধনে চিনিয়া আত্মা বিশ্বে দিল মহাবার্তা

ধর্ম জাগরণে।

ধর্মকে করিয়া ভিত্তি তাহে গড়ে সর্বনীতি

জীবের জীবনে।।

আর্য ঋষি সাধনাতে আদি যুগে এ ভারতে

কহিল বারতা।

গৃহী কি সন্ন্যাসী হও পাবে সব যাহা চাও

দূরে যাবে ব্যথা।।

সেই মূল তত্ত্ব হ’তে প্রচারিল এ জগতে

বর্ণাশ্রম ধর্ম।

তাহা হতে উচ্চতর কেহ বলে নাহি আর

জীবনের মর্ম।।

বলিয়াছি ইতিপূর্বে যত অবতার সর্বে

কি কাজ করিল।

কালচক্রে ব্যাভিচারী এ জগতে নরনারী

সবারে কহিল।।

“যুগ ধর্ম মতে সবে রহ পবিত্র স্বভাবে

ভ্রান্ত পথ ছাড়ি।

নূতনের সহকারে প্রতিবার অবতারে

গেল ধর্ম গড়ি”।।

নূতন চালিয়ে যায় যুগ ধর্ম লোপ হয়

অসত্যের চাপে।

মূল ছাড়ি ধরি ডাল চলিয়াছে এতকাল

পরধর্ম ছাপে।।

তাই হরিচাঁদ বলে জগতের জীবকুলে

গম্ভীর নিনাদে।

শুন শুন জীব কুল এতদিন করি ভুল

পরেছে বিপদে।।

পড়ি কাল চক্রতলে মূল তত্ত্ব গেছ ভুলে

মানবের ধর্ম।

Page 052 start

যদ্যপি উদ্ধার চাও আর্য নীতি মানি লও

কর আর্য কর্ম।।

মানবব জীবন পথে আর্য ঋষি ধর্ম হতে

নাহি কিছু শ্রেষ্ঠ।

মানব জীবনটাকে বাটি চারিটি স্তবকে

অতীব উৎকৃষ্ট।।

সংযম সাধনা করি হয়ে মহা শক্তি ধারী

গড়িবে সংসার।

সুকর্মে সংসার ধর্ম পালিতে কর্তব্য কর্ম

বিধানে তাহার।।

যবে কর্ম শেষ হয় সাধনেতে মন ধায়

উদ্ধার কারণে।

পূর্ণ সাধনেতে তবে মনে পূর্ণ শান্তি পাবে

শ্রী হরি সাধনে।।

এ আদর্শ কোথা পাই হরিচাঁদে দেখে তাই

বসি রাত্রি দিনে।

দেখে গুরুচাঁদ ভিন্ন ইহা সাধ্য নহে অন্য

দিতে জীবগনে।।

গুরুচাঁদে বলে তাই “মূল নীতি মানা চাই

তোমার জীবনে।

তোমাকে আদর্শ করি জগতের নরনারী

পড়িবে চরণে।।

আগে কর বিদ্যাভাস রিপুদলে কর নাশ

পরেতে গৃহস্থ।

বিষয় বাসনা ছাড়ি বল সবে হরি হরি

শেষে বানপ্রস্থ।।

এই নীতি পালে যেই শান্তি ধামে রহে সেই

পরম আহ্লাদে।

চলিতে জীবন পথে দুঃখ নাই কোন মতে

শান্তি পদে পদে।।

আপন জীবনে তাই এই ধর্ম রাখা চাই

বিশেষ যতনে।

তোমারে দেখিয়ে সবে এই ধর্ম শিক্ষা পা’বে

আপন জীবনে।।

পিতৃ মুখে শুনি তত্ত্ব মানব জীবনামৃত

মঙ্গল মধুর।।

গুরুচাঁদ প্রাণপণে সেই শুদ্ধ তত্ত্ব মানে

ভোগ করি দূর।।

সেই কথা ক্রমে ক্রমে প্রকাশিব গুরুনামে

পরম পবিত্র।

মতুয়া ভক্তের দয়া গোপালের পদছায়া

বাঞ্ছা এই মাত্র।।