Page 533

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদের ১৩৩৪ সালের ভ্রমণ

পারশুলাবাসী সাধু শ্রীহরি মোহন।

শ্রীহরিবরের শিস্য জানি সেই জন।।

ভারীদেহ ভারীদেল বড় ঘর বাড়ী।

ঠাকুর বলিয়া ক্রমে সব দিল ছাড়ি।।

Page 534 start

গুরুচাঁদ পদে নিষ্ঠা ছিল অতিশয়।

তার ভক্তিগুণে প্রভু তার বাড়ী যায়।।

তেরশ’ চৌত্রিশ সালে সময় হইল।

হরি মোহনের বাড়ী মহাপ্রভু গেল।।

এবে শুন সঙ্গে গেল কোন কোন জন।

ক্রমে ক্রমে বলিতেছি সেই বিবরণ।।

ষষ্ঠীবাবু বলি নাম অতি মহাশয়।

পাটকেলবাড়ী ধাম জানি পরিচয়।।

কৃষ্ণপুরবাসী ভক্ত সনাতন গোঁসাই।

বিপিন, কেদার, শ্যাম, বলাই, কানাই।।

মাধবেন্দ্র, বিচরণ, নারায়ণ বালা।

আপনি গোপাল রায় সঙ্গে করে মেলা।।

দুর্গা, রাই, বনমালী এই কয় জন।

ঠাকুরের সঙ্গে সঙ্গে করিল গমন।।

ওড়াকান্দি হ’তে যাত্রা করিয়া ঠাকুর।

উপনীত হইলেন গোপীনাথপুর।।

দুর্গাচরণের বাড়ী গেল দয়াময়।

হেনকালে মাধবেন্দ্র দুঃসংবাদ পায়।।

পুত্রের অসুখ তার হইয়াছে বেশী।

এ সংবাদ বলে সেথা কোন লোক আসি।।

শ্রুতমাত্র শ্রীঠাকুর মাধবেন্দ্র কয়।

“শীঘ্র করি গৃহে তুমি যাহ মহাশয়।।”

দ্রুতগতি মাধবেন্দ্র গৃহেতে ফিরিল।

কমেছে পুত্রের ব্যাধি আসিয়া দেখিল।।

গোপীনাথপুর হ’তে প্রভু দয়াময়।

সূচীডাঙ্গা গ্রামে আসি হইল উদয়।।

বিজয় ডাক্তার সেথা বহু ভাগ্যবান।

তার গৃহে দয়াময় হ’ল অধিষ্ঠান।।

কমিল পুত্রের ব্যাধি তা’তে মাধবেন্দ্র।

সেই বাড়ী এসে ধরে ঠাকুরের সঙ্গ।।

হৃদয় ডাক্তার যার বড়দিয়া বাস।

জাতিতে মাহিষ্য তিনি উপাধিতে দাস।।

পতি পত্নী দুই জনে পুত্র কন্যা নাই।

প্রভুকে মানিল দোঁহে জগত গোঁসাই।।

বড়দিয়া বন্দরেতে তরণী ভিড়িল।

হৃদয় ডাক্তার আসি প্রভুকে বন্দিল।।

হৃদয়ের সাধ্বী পত্নী অতি ভক্তিমতী।

গুরুচান্দে মান্য করে জগতের পতি।।

বাৎসল্য স্নেহরসে ভক্তি মিশাইয়া।

পূজিলেন গুরুচাঁদে পরাণ ভরিয়া।।

কত শক্তি ধরে দেবী শুন মহাশয়।

একা একা সব দিকে আপনি সামলায়।।

মতুয়ার জন্য রান্না করে একধারে।

তারি মধ্যে আসে সদা ঠাকুরের ধারে।।

আপনার হাতে মুখে খাদ্য তুলি দেয়।

ভক্তিগুণে বাধ্য হ’য়ে প্রভু তাহা খায়।।

জননীর মত স্নেহে প্রভুকে খাওয়ায়।

সোনার অঙ্গুরী দিয়ে প্রণমিল পায়।।

হৃদয় ডাক্তার দিল গরদের জোড়।

প্রণামী পঞ্চাশ টাকা প্রেমে হ’য়ে ভোর।।

প্রণামী চল্লিশ দিল তার সতী নারী।

ভক্তিগুণে দয়াময় তুষ্ট হ’ল ভারী।

পরদিন সুপ্রভাতে বিদায় হইয়া।

ভাউড়ীর চরে প্রভু উপস্থিত গিয়া।।

সেথা হ’তে শ্যামলাল ডাকি প্রভু কয়।

“হেথা হ’তে আমি বটে যা’ব পদুমায়।।

অগ্রভাগে সমাচার বল গিয়া তুমি।

পর পর সেই খানে আসিতেছি আমি।।”

সংবাদ পাইয়া সবে গ্রাম পদুমায়।

বহু মতে আয়োজন করিল তথায়।।

এ সময় যাদব মল্লিক বেঁচে নাই।

তারে মনে করে প্রভু সেথা গেল তাই।।

তথা হ’তে লোহারগাতী যাদবের বাড়ী।

যাদব প্রভুকে ডাকে বাঞ্ছাপূর্ণকারী।।

Page 535 start

শ্রীউমাচরণ নামে খামার বসতি।

বিশ্বাস উপাধি তার বুদ্ধিমান অতি।।

বহু যত্নে গুরুচান্দে তার গৃহে লয়।

মহানন্দে মহোৎসব সেই বাড়ী হয়।।

কুড়ি ডঙ্কা এক সঙ্গে বাজাইল সবে।

ঠাকুরের আগমনে বিরাট উৎসবে।।

কোন ভাবে দয়াময় কা’রে দয়া করে।

সামান্য মানবে তাহা বুঝিতে না পারে।।

বৈরাগী ভিক্ষুক মাত্রে প্রভু করে রোষ।

ভিক্ষা দে’য়া বলে প্রভু গুরুতর দোষ।।

মতুয়ার বাড়ী দেখি সেই নীতি চলে।

মতুয়ারা ভিক্ষা নাহি দেয় কোনকালে।।

খামারের এই বাড়ী প্রভু যবে এল।

দুটি পুত্র সহ এক নারী সেথা গেল।।

অতি দীনা সেই নারী ভাবে বোঝা যায়।

ঠাকুরের কাছে গিয়ে কেন্দে কেন্দে কয়।।

বড়ই অভাগী আমি ভিক্ষা করে খাই।

দয়া করে দেখ মোরে ঠাকুর গোঁসাই।।

নারীকে দেখিয়া প্রভু এক টাকা দিল।

বলে “যা’রে আজ হ’তে দুঃখ ঘুচে গেল।।”

এবে সেই নারী আর তার দুই পুত্র।

আছে ভালো অভাবের চিহ্ন নাই মাত্র।।

তথা হ’তে নদী পারে গ্রাম মির্জাপুর।

সেই গ্রামে উপনীত দয়াল ঠাকুর।।

কালিয়ায় যাদবের বাড়ী ঘুরে এসে।

লোহারগাতীতে প্রভু আসিলেন শেষে।।

রাম নারায়ণ ঢালী অতি মহাশয়।

তার গৃহে আহারাদি করে দয়াময়।।

যাদবের ভ্রাতা বলে মহাপ্রভু ঠাই।

“এক কথা দয়াময় বলিতে যে চাই।।

কালিয়ার বৈদ্যজাতি বড়ই সম্ভ্রান্ত।

ধনে জনে কোন দিকে নাহি কোন অন্ত।।

এই ইচ্ছা তারা সবে করেছে প্রকাশ।

আপনাকে নিতে চায় তাহাদের পাশে।।

পাঁচ শত টাকা চাঁদা তারা দিতে চায়।

একবার দয়া করে চলুন তথায়।।”

প্রভু কয় “নয়, নয়, এসময়ে নয়।

রাজা রাজড়ার বাড়ী আর দেরী নয়।।

কাঙ্গাল জাতির জন্যে আমি আসিয়াছি।

কাঙ্গালের সুখে দুঃখে সব তা’তে আছি।।

আমি নাহি যাব রাজা রাজড়ার বাড়ী।

আমারে পাইলে তারা নাহি দিবে ছাড়ি।।

রাজবেশে আসিবেন রাজার ঠাকুর।

তার লীলা হ’বে আর মধুর মধুর।।”

প্রভুর ভকত তিনকড়ি মুসলমান।

তেরখাদা বাস করে সেই মতিমান।।

মালঞ্চ নামিনী নারী ভক্তা অন্যজন।

ওড়াকান্দি যাতায়াত করে সর্বক্ষণ।।

তারা আসি প্রভু পদে করে দরবার।

“দয়া করে তেরখাদা চলুন এবার।।”

প্রভু কয় “দেখা যাক প্রভু কিবা করে।

তাঁহার ইচ্ছাই পূর্ণ হয় এ সংসারে।।”

তারা বুঝে’ প্রভু বুঝি দিল অনুমতি।

গৃহে গিয়ে আয়োজন করে শীঘ্রগতি।।

এদিকে প্রভুজী কহে যাদবের ঠাই।

“মাধবেন্দ্রে আন ডেকে যাদব গোঁসাই।।

তেরখাদা যেতে আমি ইচ্ছা নাহি করি।

নানা কারণেতে শঙ্কা মনে আছে ভারী।।

উপায় বাহির সবে করহে এখন।

কোন ভাবে কোন পথে করিবে গমন।।”

সকলে করিল ঠিক গাঢ় নিশাকালে।

চুপে চুপে যাবে চলে তেরখাদা ফেলে।।

সেই মত চলে কাজ নিশীথ সময়।

চুপে চুপে ঠাকুরের তরী বেয়ে যায়।।

Page 536 start

মালঞ্চের বাড়ী ভরে জ্বলিতেছে আলো।

নৌকা দেখে তারা বলে “কারা হেথা এল?”

জবাব না দিয়া তরী জোরে বেয়ে যায়।

তারা বলে “ও মালঞ্চ! শীঘ্র চলে আয়!

ঠাকুরের নৌকা দেখ ঐ গেল চলে।

আয়োজন করে তোর এ হ’ল কপালে।।”

মালঞ্চ ছুটিয়া চলে নদী তীর ধরে।

তিনকড়ি সাথে সাথে ছোটে জোরে জোরে।।

ডাকাডাকি করে কিন্তু তরী না ভিড়ায়।

প্রাতঃকালে বান্ধে তরী হাড়িদহ গাঁয়।।

রজনী বিশ্বাস সেথা ভক্ত মহাজন।

তার গৃহে মহাপ্রভু করেন গমন।।

মালঞ্চ আসিয়া সেথা পড়িল কান্দিয়া।

সান্তনা করিয়া প্রভু দিল ফিরাইয়া।।

শিয়লী গ্রামেতে পরে হইল উদয়।

শিরোমণি নামে ভক্ত সেই দেশে রয়।।

তার ঘাটে যেতে খাল কচুড়ীতে ভরা।

কোন ভাবে নৌকা নিবে ভাবিছে মতো’রা।।

জনে জনে হাতে ধরি কচুড়ি ফেলায়।

অল্পকাল মধ্যে খাল পরিষ্কার হয়।।

“জিয়ানী” সে শিরোমণি অজ্ঞ লোকে কয়।

সবে নমশূদ্র তার “জিয়ানী” কোথায়?

পত্নী তার ভাগ্যবতী সাধ্বী অতিশয়।

তার পাক খেয়ে প্রভু বহু খুশী হয়।।

আহারান্তে হ’ল সেথা সভা আয়োজন।

বহু দেশ হ’তে আসে নমশূদ্রগণ।।

সভাজনে ডাক দিয়া বলে দয়াময়।

“নমশূদ্র ভাগে ভাগে মোটে ভাল নয়।।

“জিয়ানী” কি “ধানী” কিংবা অন্য পরিচয়।

নমশূদ্র পক্ষে তাহা মন্দ অতিশয়।।

একমাত্র নমশূদ্র সত্য পরিচয়।

অন্য কোন নাম কেহ বল না কোথায়?”

কালী চরণের বাড়ী কাগদিয়া গ্রাম।

তার বাড়ী চলিলেন প্রভু গুণধাম।।

ভুজনীয়া বাস করে নামেতে প্রসন্ন।

প্রভুকে গৃহেতে নিয়া হ’ল বটে ধন্য।।

শ্রীপুর গ্রামেতে প্রভু বহু বাড়ী গেল।

অতপর নদী পথে তরণী ছাড়িল।।

একে’ ত ভাঁটার স্রোত আরো দাঁড় টানে।

তীর বেগে ছোটে তরী দক্ষিণের পানে।।

শিয়ালী নিবাসী দুটি লোক সেই কালে।

ডাকাডাকি করে তরী ভিড়াইতে বলে।।

সঙ্গীলোক ভিড়াইতে নাহি চাহে তরী।

তাহা দেখি দুজনে পড়িল সাঁতারি।।

শব্দ শুনে প্রভু বলে ‘কিসে শব্দ হয়।’

দাঁড়ি মাঝি যারা ছিল তারা সবে কয়।।

“দুই ব্যক্তি আপনারে নিতে চায় কুলে।

পরাণ ত্যজিবে তারা কুলে নাহি গেলে।।

তাই বলে দুই জনে পড়িয়াছে জলে।

ঠেকা’তে পারিনি মোরা কোন কথা বলে।।”

প্রভু কয় “শীঘ্র করি তরণী ভিড়াও।

আমারে যে নিতে চায় তাহারে দেখাও।।”

তরণী ভিড়িল তারা নিকটে আসিল।

প্রভুর চরণে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।

প্রভু কয় “কান্দ কেন, শীঘ্র বাড়ী যাও।

ডা’ল ভাত যাহা হয় মোরে খেতে দাও।।”

তখনি ছুটিয়া তারা গৃহ মধ্যে যায়।

কিছু পরে তীরে ওঠে নিজে দয়াময়।।

নদী হতে চারি পাঁচ রশি দূরে বাড়ী।

কিছু কিছু জল কাঁদা আছে রাস্তা ভরি।।

কেদার মিস্ত্রীরে ডাকি বলে দয়াময়।

“কোলে করে নিতে তুমি পার কি আমায়?”

কেদার স্বীকার করে প্রভুরে ভাবিয়া।

দুই রশি পথ গেল কোলেতে করিয়া।।

Page 537 start

হেনকালে ডাকে প্রভু সে নীল রতনে।

বলে “মোরে কোলে তুই নেরে কিছুক্ষণে।।”

প্রভুকে করিয়া কোলে নীলরতন যায়।

দুই দশ নল যেতে ঘর্ম ছোটে গায়।।

প্রভু কয় “কিরে নীলে বিয়ে কর নাই।

খাসে ঘোর কাজ কর আমি জানি তাই।।

ব্রহ্মচারী সেজে নাকি হয়েছ গোঁসাই।

গায়ে কেন শক্তি নাই বল দেখি তাই।।”

কেদারর আসিয়া পরে প্রভুকে ধরিল।

সরাসরি বাড়ী পরে সভাতে আনিল।।

সভা করি গুরুচাঁদ বহু কথা কয়।

সভা অন্তে ধীরে ধীরে তরণীতে যায়।।

তরণী পৌছিল ক্রমে হাট ঝলমায়।

সেইদিনে হাটবার বুঝি গণনায়।।

যত লোক হাটে ছিল তারা ডেকে বলে।

কাহার তরণী এই কোন পথে চলে?

“শ্রী গুরুচাঁদের তরী” দাঁড়ি মাঝি কয়।

“ভিড়াও এখানে তরী ওহে মহাশয়।।”

এইরূপে ডাকাডাকি করিছে সকলে।

ক্ষণেক ভিড়াও তরী মহাপ্রভু বলে।।

ঝুঁকিয়া আসিল সবে তরণীর কাছে।

এক দুই টাকা দিয়ে প্রণাম করিছে।।

ঠাকুরে দেখিয়া হ’ল আনন্দ প্রচুর।

মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে চলিল ঠাকুর।।

গুরুচরণের বাড়ী হাটবাড়ী গাঁয়।

সেই বাড়ী মহাপ্রভু হইল উদয়।।

রাত্রিকালে তরণীতে রহিল দয়াল।

তীরেতে উঠিল পরে হইলে সকাল।।

একজোড়া বস্ত্র আর টাকা দিল দশ।

ভক্তিগুণে গুরুচাঁদ রহে সদা বশ।।

আর আর বাড়ী গিয়া প্রভু দয়াময়।

অবশেষে পারশুলা হইল উদয়।।

প্রচুর হইল সেথা নাম সংকীর্তন।

মতুয়ারা প্রেমানন্দে হইল মগন।।

প্রণামী পঞ্চাশ টাকা দিল সেই হরি।

একদিন থেকে প্রভু ছাড়িলেন তরী।।

খলিসাডাঙ্গায় বাড়ী নাম পুটীরাম।

তার গৃহে সভা করে প্রভু গুণধাম।।

জাতীয় উন্নতি কথা ধর্ম সংরক্ষণ।

বহু আলোচ্য করে পতিত পাবন।।

তথা হ’তে উপনীত হ’ল চালনায়।

দুর্যোধন বিশ্বাসের গৃহেতে উদয়।।

ইতিপূর্বে শ্রীগোপাল গৃহ হ’তে এল।

প্রভুকে লইবে গৃহে এই ভাব ছিল।।

হুড়কা হইতে আসে রমণী গোঁসাই।

তিনি বটে মনে মনে ইচ্ছা করে তাই।।

নকুল গোস্বামী এল লক্ষ্মীকাটী হ’তে।

বরাবর রহিয়াছে প্রভুজীর সাথে।।

চালনা হইতে প্রভু উঠিল সত্বর।

তিন সাধু তিন দিকে করে দরবার।।

প্রভু কহে “এ সময় কোথা নাহি যা’ব।

অবশ্য অবশ্য আমি গৃহেতে পৌছিব।।”

গোপাল রমণী দোঁহে কান্দিছে দাঁড়ায়ে।

প্রভু কয় “দুই জনে কান্দ’ কি লাগিয়ে।।

এইবারে আমি কোথা নাহি যা’ব আর।

গৃহে যেতে চাই তাই সত্বর সত্বর।।”

গোপাল রমণী দোঁহে ফিরে গেল ছাড়ি।

চালনা হইতে প্রভু তরী দিল ছাড়ি।।

লবণ গোলায় সাধু বিহারী সদ্দার।

রমণীর শ্রেষ্ঠ শিস্য পরিচয় তার।।

সেই গৃহে মহাপ্রভু হইল উদয়।

বিহারীর আনন্দেতে সীমা নাহি রয়।।

সেই গৃহ হ’তে প্রভু অন্য গৃহে যায়।

“পৌণ্ড্র ক্ষত্রিয়” বলি দেয় পরিচয়।।

Page 538 start

দুইজন ভক্তে দিল চারশত টাকা।

প্রভু বলে “এই রূপ কম যায় দেখা।।”

হেথায় কানাই সাধু পড়িলেন রোগে।

সেই কথা বলে কেহ মহাপ্রভু আগে।।

প্রভু বলে “তারে হেথা রাখিও না আর।

পাঠাইয়া দাও তারে আপনার ঘর।।”

হরি বিশ্বাসের এক নৌকা সঙ্গে ছিল।

সবে মিলে কানাইকে সেই সঙ্গে দিল।।

কিছুকাল পরে তারা বলিল ডাকিয়া।

“তোমাদের লোক আর পারি না বহিয়া।।

লোক যদি নাহি লও দিব ফেলাইয়া।”

কথা শুনি প্রভু যেন উঠিল জ্বলিয়া।।

হরিকে তাড়না করে দিল তাড়াইয়া।

নিজ তরণীতে নিল রোগীরে তুলিয়া।।

খুলনা আসিতে রোগ গেল পালাইয়া।

ব্যয় দিয়া তারে প্রভু দিল পাঠাইয়া।।

নকুল গোস্বামী সদা সঙ্গে সঙ্গে রয়।

দয়া করি গেল প্রভু লক্ষ্মীকাটী গাঁয়।।

তিন দিন মহাপ্রভু লক্ষ্মীকাটী রয়।

কাছে কাছে নানা স্থানে ঘুরিয়া বেড়ায়।।

ইচ্ছামতী লক্ষ্মণের বাড়ী প্রভু গেল।

নাআম সংকীর্তন সেথা প্রচুর হইল।।

সেথা হ’তে গেল প্রভু নেপালের বাড়ী।

এবে শোন কি বলিল “জুঙ্গুশিয়া বুড়ী”।।

জুঙ্গুশিয়া গ্রামে এক নিষ্ঠাবতী নারী।

সবে তারে ডাকে বলে “জুঙ্গুশিয়া বুড়ী”।।

অনন্ত নামেতে ভক্ত জুঙ্গুশিয়া গাঁয়।

তার গৃহে চলেছেন প্রভু দয়াময়।।

পথে দেখা হ’ল সেই নারীর সহিতে।

ঠাকুরের নৌকা দেখে লাগিল কহিতে।।

একটি ধামায় কিছু ছিল তরকারী।

তাহা দেখাইয়া পরে বলে সেই বুড়ী।।

“আমার বাড়ীতে নিয়ে চল ঠাকুরেরে।

তরকারী পাক করে দিব আমি তারে।।”

অনন্ত তাহাতে কিছু করে প্রতিবাদ।

বুড়ী কয় “অনন্তরে! কেন কর বাদ?

তোমার একার ভক্ত নহেত ঠাকুর।

আমারও ভক্ত তিনি কিসে কত দূর?”

সরল সহজ প্রাণ সেথা জয়ী হ’ল।

তার বাড়ী দয়াময় দয়া করি গেল।।

তথা হ’তে চলিলেন বাবুপুর গাঁয়।

সৃষ্টিধর নামে সাধু সেই গ্রামে রয়।।

অল্প সংখ্যা হিন্দু সেথা মুসলমান বেশী।

প্রভুরে সম্মান তারা জানাইল আসি।।

সভা করিবারে তারা করে নিবেদন।

কিছুই উত্তর প্রভু না করে তখন।।

রাত্রিকালে পাল্কী যোগে প্রভু তথা হ’তে।

আসিয়া পৌছিল প্রভু নিজ তরণীতে।।

তথা হ’তে ‘বহরের’ সঙ্গে তরী বায়।

রাত্রি শেষে বড়দিয়া উপস্থিত হয়।।

এক জেলে সেইখানে অগ্নি নে’য়া ছলে।

প্রভুর নৌকায় দিল বহু মাছ ঢেলে।।

সবে মিলে পৌছিলেন গোপালের বাড়ী।

প্রভু বলে “ওড়াকান্দি চল তাড়াতাড়ি।।”

ভক্তগণে ইচ্ছা করে সেখানে থাকিতে।

মহাক্রোধে প্রভু তবে লাগে গালি দিতে।।

কেদার কহিছে “বাবা! হাট ঝাড়া বিলে।

কুচুড়ী রয়েছে সেথা ভরা কুলে কুলে।।”

হেনকালে এক ব্যক্তি সেই পথে যায়।

তাহারে জিজ্ঞাসা করে প্রভু দয়াময়।।

“হাটঝাড়া বিলে বাপু কুচুড়ী কেমন?”

সে বলে “কুচুড়ী কর্তা নাহিক এখন।।”

হাসিয়া বলেন প্রভু “কুচুড়ী যে তোরা।

তোদের বুদ্ধির সঙ্গে যায় না’ক পারা।।”

Page 539 start

সেই গ্রামে প্রভু তবে রজনী বঞ্চিল।

গ্রামবাসী সবে তা’তে মহাসুখী হৈল।।

প্রভাতে তরণী খুলি পূর্ব দিকে ধায়।

প্রভু বলে “পুনরায় চলিলে কোথায়?

যাহা ইচ্ছা কর আর কথা নাহি কব।

যতদূর নেও আমি তত দূরে যা’ব।।”

এত বলি রাগ করি প্রভু বসে রয়।

নারিকেলবাড়ী আসি তরণী ঘনায়।।

মাধবেন্দ্র পদে পড়ি কাঁদাকাঁদি করে।

দয়া করে দয়াময় উঠিলেন তীরে।।

বহু আয়োজন সেথা মাধবেন্দ্র করে।

পরিপূর্ণ মহোৎসব হ’ল তার ঘরে।।

মহোৎসব অন্তে প্রভু তরীতে উঠিল।

শ্রীধামের প্রতি তরী বেগেতে ছুটিল।।

“জয় গুরুচাঁদ” ধ্বনি ভক্তগণে কয়।

ধীরে ধীরে তরী আসি শ্রীধামে ভিড়ায়।।

এস্তে ব্যস্তে ভক্তগণে দ্রব্য সমুদয়।

কুলে তুলি গৃহমধ্যে সব লয়ে যায়।।

দূর দেশ হ’তে যত ভক্ত সঙ্গে ছিল।

সকলেরে ডেকে প্রভু বিদায় করিল।।

মাধবেন্দ্র ধাম ‘পরে রহিল বসিয়া।

গুরুচাঁদে সেবা করে প্রেমেতে মজিয়া।।

শ্রীগুরু চরিত গাঁথা সুধা হ’তে সুধা।

মহানন্দ ভণে খেলে যাবে ভবক্ষুধা।।

---০---