Page 562
তিনি কে ছিলেন?
“অদিত্য বর্ণং পুরুষো মহাত্মম।।”—উপনিষদ
হরিচাঁদ বলে “আমি ক্ষীরোদ ঈশ্বর।
দেহ ছাড়ে গুরুচাঁদে করিলাম ভর।।”
নিজে জগদম্বা বলে “তিনি মম পতি।
আমার পূজায় নাই তাঁহার প্রণতি।।”
Page 563 start
ভক্তশ্রেষ্ঠ সে তারক রসের সাগর।
বলে “হরি-গুরুচাঁদ! স্বয়ং মহেশ্বর।।”
শ্রীশশিভূষণ জানি তাঁহার নন্দন।
“প্লাঞ্চেট” যন্ত্রেতে তেহ করে নিরূপণ।।
একাদশ রুদ্র মধ্যে তিনি “রুদ্রেশ্বর”।
তাহাকে পুজিছে সদা দেব, যক্ষ, নর।।
হস্ত গণকের চক্রে উঠে গণনায়।
“রুদ্রপতি”, “রুদ্রেশ্বর” কৈলাস আলয়।।
প্রিয়ভক্ত যাদবের বাঞ্ছাপূর্ণকারী।
তিনি বলে “গুরুচাঁদ চতুর্ভুজধারী”।।
হরিবর বলে “তিনি দেবের দেবতা।
প্রেমময়ী রাধা যায় তিনি যান যেথা।।”
বিপিন গোস্বামী বলে “নবঘন-কায়”।
“ভকত রঞ্জন” তিনি দেবীচান কয়।।
নকুল গোস্বামী কহে “তিনি অন্তর্যামী”।
রমণী গোঁসাই জানে “লোকোত্তর স্বামী”।।
তারিণী ডাক্তার জানে “ভকতের বল”।
কুঞ্জ, মধু, বলে “দিতে পারে মোক্ষফল”।।
যজ্ঞেশ্বর বলে “তিনি স্বয়ং গদাধর”।
গঙ্গা দেবী পূজা করে “বলে প্রাণেশ্বর”।।
মীড লিখে রেখে গেল “মহাশক্তিধারী”।
অশ্বিনী গোঁসাই বলে “অকুল কাণ্ডারী”।।
লাট বলে “তিনি হ’ন নমঃকুল পতি”।
নমঃশূদ্র সবে বলে “অগতির গতি”।।
লিখিল মহাত্মা গান্ধী “গুরুর প্রধান”।
কহিল সুভাষচন্দ্র “পুরুষ মহান”।।
তার সঙ্গে নাহি অন্য সম্বন্ধ নির্ণয়।
পিতা মাতা, পতি পুত্র সবে “বাবা” কয়।।
তার গুণে শ্রীগোপাল বাধ্য নিরবধি।
মরা বাঁচে দেখে বলে “বিধাতার বিধি”।।
আর এক লীলা তার দেখে মহাত্মায়।
“তিনি সর্বব্যাপী” তাই শ্রীগোপাল কয়।।
নরদেহে যবে প্রভু ছিল ওড়াকান্দি।
ভক্তগণে গোপালের কাছে হল বন্ধী।।
একদা দুপুর বেলা ভোজন সময়ে।
আহারে বসিয়া সাধু ভাবিল হৃদয়ে।।
“ভোজন করিয়া শেষ আমি শীঘ্র যাই।
তামাক সাজিয়া দিব প্রভুজীর ঠাই।।
শীঘ্র করি শেষ করি আহার আপন।
বহির্বাটী পানে সাধু ধাইল তখন।।
দালানের মধ্যে প্রভু করেন বিশ্রাম।
স্বচক্ষে দেখিয়া এল সাধু গুণধাম।।
বহির্বাটী উপনীত হ’ল গদীঘরে।
দেখে প্রভু আছে শু’য়ে গদীর উপরে।।
আশ্চর্য মানিয়া সাধু দালানেতে গেল।
বিশ্রাম করিছে প্রভু স্বচক্ষে দেখিল।।
পুনরায় ছুটে এল সেই গদী ঘরে।
দেখিল রয়েছে প্রভু গদীর উপরে।।
প্রেমে পুলকিত চিত্তে তামাক সাজিল।
গদী ‘পরে প্রভু যেথা সেথা হুকা দিল।।
দুইটান দিয়া প্রভু হুঁকা দিল ফিরে।
হুঁকা নিয়ে গেল সাধু বাড়ীর ভিতরে।।
দালানেতে গিয়া হুঁকা প্রভু হস্তে দেয়।
দুই টান খেয়ে প্রভু আর নাহি খায়।।
পাগল হইয়া সাধু বাহিরে ছুটিল।
যেথা চায় দেখে প্রভু হাসে খল খল।।
উর্ধ অধঃ দশ দিকে দেখে প্রভুময়।
কাঁদিয়া পড়িল শেষে প্রভুজীর পায়।।
প্রভু বলে কি গোপাল! কান্দ কি কারণ।
ঘটন কারণ সব সেই জনার্দন।।”
গোপাল কান্দিয়া বলে “সর্বব্যাপী প্রভু।
তোমাকে বুঝিতে আর চাহিব না কভু।।”
এবে বলি কিবা বলে প্রমথরঞ্জন।
তিনি বলে “পিতামহ মানুষ রতন”।।
Page 564 start
দীর্ঘদিন ইউরোপে কাটায়েছি কাল।
দেখে শুনে গেছে কেটে নয়নেরি জাল।।
শত শত নরনারী করেছি দর্শন।
দেখে শুনে আজ মোর ঠিক হ’ল মন।।
মনে মনে প্রাণে প্রাণে বুঝিয়াছি তাই।
“পিতামহ সমব্যক্তি এ ব্রহ্মাণ্ডে নাই”।।
দীন গ্রন্থকার এক করেছে দর্শন।
শ্রীগুরুচাঁদের কীর্তি বিপদভঞ্জন।।
প্রভুর চরিত্র লিখি হেন সাধ্য নাই।
যা করার গোপাল মোরে করিতেছি তাই।।
শত শত বিপদের দেখিয়া ভ্রুকুটি।
শ্রীগুরু চরিত লিখি বসে আমি খাটি।।
কোন পথে কোন ভাবে বিপদ পলায়।
সকল জানিতে মোর সাধ্য না কুলায়।।
জানিতাম গুরুচাঁদ পতিত পাবন।
এবে জানিলাম তিনি বিপদভঞ্জন।।
“শ্রীগুরু চরিত” তাই নাশে ভবভয়।
শ্রীগুরুচাঁদের এই আদি পরিচয়।।
---০---