Page 259

প্রেমোন্মাদ গোস্বামী মহানন্দের তিরোধান

ফরিদপুর জিলা নারিকেল বাড়ী গ্রামে।

জন্ম নিল ভক্তশ্রেষ্ঠ শ্রীগোলক নামে।।

প্রভুর কৃপায় বহু আশ্চর্য্য করিল।

হরিচাঁদ অন্তর্দ্ধানে জীয়ন্তে মরিল।।

কিছুকাল দেহ ধরি রহে ধরা পরে।

দেহরক্ষা করিলেন গিয়ে জয়পুরে।।

তস্য ভাতুস্পুত্র যাঁর নাম মহানন্দ।

পরম উদার স্বামী সদা প্রেমানন্দ।।

গোলকের কৃপা হল তাঁহার উপর।

গোলকের শক্তি মহানন্দে করে ভর।।

পেয়ে শক্তি মহানন্দ ঘুরে দেশে দেশে।

জুড়াল ধরার জীব প্রেমের বাতাসে।।

যেভাবে গোলক করে হরিচাঁদ ভক্তি।

সেই ভাবে গুরুচাঁদে তাঁর অনুরক্তি।।

তার সঙ্গে তারকের হল মেশামিশি।

দুজনে বিলায় প্রেম নানা দিশিদিশি।।

যশোহরে প্রায়কালে ভ্রমণ করয়।

তেলী মালী কুন্তুকারে হরিনাম দেয়।।

তাঁরে দেখি বহু লোক মতুয়া হইল।

কান্দি কান্দি ওড়কান্দী সকলে আসিল।।

এই সব লীলা খেলা মহানন্দ করে।

লেখা আছে “লীলামৃত” গ্রন্থের ভিতরে।।

সে সব লিখিতে গেলে গ্রন্থ বেড়ে যায়।

উল্লেখ করিনু মাত্র সাধুর সভায়।।

এই ভাবে তের শত চৌদ্দ সাল এল।

গো্স্বামীজী মহানন্দ নিজলোকে গেল।।

রূপের পাগল যাঁরা প্রেমের কাঙ্গাল।

বিষয় বাসনা ছাড়ি হয়েছে বেহাল।।

কর্ম্মকান্ড মনে প্রাণে না করে গ্রহণ।

তাঁরা শুধু বাসে ভাল প্রেম-আস্বাদন।।

ধর্ম্ম-কর্ম্ম-সম্মিলন প্রভুজী করিল।

দুই সারি ভক্ত তাহে বিদায় মাগিল।।

মুক্তিকামী স্বার্থবাদী যাঁরা যাঁরা ছিল।

কেহ দল ছাড়ে কেহ দেহ ছেড়ে গেল।।

বদন চন্দ্র রায় আর রাই চরণ।

ভিন্নভাবে চলে তারা স্বার্থের কারণ।।

শ্রীরাম ভরত আর স্বামী মহানন্দ।

ব্রহ্ম-বংশে মহাসাধু শ্রীঅক্ষয় চন্দ্র।।

ইহ সবে প্রেমে জানে সর্ব্ব-সিদ্ধি-সার।

কেহ দেহ ছাড়ে কেহ ছাড়িল সংসার।।

কর্ম্ম দায়ে বদ্ধ নহে স্বামী মহানন্দ।

এদিকেতে প্রভু আনে কর্ম্মের প্রসঙ্গ।।

তাই দেহ চাড়িবারে মনে কৈল আঁশ।

রোগ যুক্ত হয়ে গৃহে করিলেন বাস।।

ক্রমে রোগ বৃদ্ধি হল জীবন সংশয়।

প্রেমোন্মাদ ভাবুকের দুঃখ নাহি তায়।।

অবিরাম হরিনাম প্রেমের আলাপ।

মধুময় মধুমাস চৈত্র শেষ হয়।

দেহ ছাড়ি গোস্বামীজী পরপারে যায়।

Page 260 start

পড়িল শোকের ছায়া প্রতি ঘরে ঘরে।

ভক্তগণে অনুক্ষণে হায় হায় করে।।

সবারে সান্তনা দিল প্রভু দয়াময়।

বলে জান জন্ম মৃত্যু প্রভুর ইচ্ছায়।।

যার যতটুকু কার্য্য হয় প্রয়োজন।

সে-টুকু করায় তারে সেই নিরঞ্জন।।

তোমার আমার ইচ্ছা কিছু ইচ্ছা নয়।

ইচ্ছা তাহা ইচ্ছা যাহা করে ইচ্ছাময়।।

তিনিই বিধির বিধি সর্ব্বময় বিভু।

অ-বশ্য হইয়া বশ্য অখিলের প্রভু।।

বেদ শ্রুতি স্মৃতি আদি সকল পুরানে।

করজোড়ে স্থির চিত্তে এই বাণী ভণে।।

“অবশ্য সর্ব্ববশ্যাত্মা সর্বদা সর্ব্ব বিত্তমঃ।তস্য ধাতা ন চৈবান্তি স বৈ সর্ব্বময়ো বিভুঃ।।...........পদ্মপূরাণম

মৃত্যু কোন তত্ত্ব বল শুধু দেহ ছাড়া।

কর্ম্মক্ষয়ে মৃত্যু আসি দেহে দেয় সাড়া।।

পুরানে লিখেছে তাহা শুন দিয়া মন।

মৃত্যু কারে বলে আর মৃত্যুর লহ্মণ।।

“তৈলক্ষয়াদ যথা দীপো নির্ব্বাণমধিগচ্ছতি।কর্ম্মক্ষয়াত্তমা জন্তুঃ শরীরান্নাশমিচ্ছতি।।”

তৈল ক্ষয়ে দীপ-ক্ষয় আলো নাহি জ্বলে।

কর্ম্মক্ষয়ে দেহী মরে এই ভূ-মন্ডলে।।

এতএব শোক করা অজ্ঞানের কথা।

যা করে সকলি করে আপনি বিধাতা।।

প্রভুর নিকটে শুনি মধুময় বাণী।

সাত্বনা পাইল যত ভকত পরানী।।

মহোল্লাসে মহোৎসব আয়োজন হৈল।

ভক্তগণে অবিরাম নাম গান কৈল।।

সেই বংশে মাধবেন্দ্র অতীব সুজন।

তেহ বহু চেষ্টা কৈল উৎসব কারণ।।

গোস্বামী শ্রী মহানন্দ লীলা সাঙ্গ কৈল।

ভক্তগণে এক মনে হরি হরি বল।

---০---