Page 241

তালতলা খাল তীর্থ বিতরণ

তালতলী সভা হবে সবে মিলে টাকা দিবে

প্রভু যাবে আপনি সভায়।

চন্ডালত্ব গালি দূরে করিবেন শ্রীঠাকুর

এই শব্দ দেশে দেশে যায়।।

দিন উপনীত হল ঠাকুরে আনিতে গেল

নিত্যানন্দ, যাদব বিশ্বাস।

পূর্ণচন্দ্র, বিচরণ, একা সাথে চারিজন

উপনীত ঠাকুরের পাশে।।

ঠাকুর ডাকিয়া কয় আমি যাব নিজ নায়

তোমরা চল হে অগ্রভাগে।

বেশীক্ষণ না রহিব অল্প দুটী কথা কব

টাকা টাকা শুধু মনে জাগে।।

চন্ডালত্ব না ঘুচিলে শান্তি নাহি কোনকালে

চোখে মোর ঘুম নাহি আসে।

তাতে আমি টাকা চাই স্বর্থ-বিত্ত কিছু নাই

টাকা দাও সরল বিশ্বাসে।।

যারা গেছে তারা কয় শুন প্রভু দয়াময়

টাকা দিতে নাহি হবে বাধা।

ষাট মণ হবে ব্যয় প্রহলাদের মাতুদয়

মণ প্রতি টাকা দিব আধা।।

বিশেষতঃ শুভ কার্য আপনার মনোধার্য

নমঃশূদ্র হইবে উদ্ধার।

টাকা দিবে আনন্দেতে তাই আসি তোমা নিতে

টাকা দিবে সন্দেহ কি তোর?

এত যদি তারা কয় চলিলেন দয়াময়

তালতলা উপনীত হল।

যাদবের বাড়ীয় যায় তথা হতে দয়াময়

মহেশের বাড়ীতে উঠিল।।

পরে যায় সভা-স্থান আগুয়ান

গুরুচাঁদে করে অভর্থনা।

হুলুধ্বনি জয়ধ্বনি কেহ করে হরি ধ্বনি

আনন্দের নাহিক সীমানা।।

অতঃপরে যত্ন করে সুদৃশ্য আসন পরে

বসাইল শ্রীগুরুচাঁদেররে।

উপস্থিত যত জন সবে করে আলাপন

কেহ কেহ ভাবে আঁখি-নীরে।।

এইরূপে কিছুক্ষণ আলাপন সম্ভাষণ

করে সবে গুরুচাঁদ-সাথে।

এক ব্যক্তি ধীরে ধীরে প্রভুকে জিজ্ঞাসা করে

করজোড় করি দুই হাতে।।

Page 242 start

“দেশে দেশে জনে জনে বলিতেছে নিশি দিনে

তালতলা আসিছে ঠাকুর।

টাকা নিবে সভা হতে চন্ডালত্ব ঘুচে যাবে

আয়োজন হতেছে প্রচুর।।

কি কারণে জনে জন করে এই আলাপন

সেই তত্ত্ব জানিবারে চাই।”

তত্ত্ব শুন তব মুখে আমরা সকলে সুখে

নিজ নিজ দেশে চলে যাই।

তাই সভা জনে ডাকি গুরুচাঁদ কমলাখি

কহে শোন নমঃশূদ্র গণ।

চন্ডাল বলিয়া কয় অন্য যত সম্প্রদায়

গ্রন্থ-মধ্যে করেছে লিখন।।

এই গালি অকারণ তারা করে উচ্চারণ

হিংসা বশে লিখিল পুস্তকে।

প্রমাণ দেখায়ে তায় এ গালি ঘুচাতে হয়

অভিশাপ জাতির সম্তকে।।

সেন্সার রিপোর্ট কয় সেই-গ্রন্থ-পরিচয়

তার মধ্যে আছে সব লেখা।

কি কারণে কিবা লেখে তাহা সেই গ্রন্থ দেখে

ঠিক ভাবে যাবে সব দেখা।।

সেই বই কিনিবারে মীড অনুরোধ করে

দাম তার পঁয়ত্রিশ টাকা।

তালতলা বাসী সবে আমাকে সে-টাকা দিবে

বলিয়াছে এই কথা পাকা।।

তাই হেথা আসিলাম সকলেরে বলিলাম

টাকা চাহি কোন কার্য তরে।

সময় নাহিক হাতে ঘুম নাহি দিনে রাতে

শ্রীঘ্র করি দেরে টাকা দেরে।।

এত বলি টাকা চায় প্রহলাদে বিশ্বাস তায়

কূট পরামর্শ পেল কাণে।

দুষ্ট জন তারে কয় একি শুধু তব দায়

এই টাকা একা দিবে কেনে?

বারে বারে প্রভু তাই বলে আন টাকা চাই

টাকা আন বিলম্ব না সহে।

কূট-পরামর্শ মত প্রহলাদের মাথা নত

চুপ থাকে কথা নাহি কহে।।

প্রভু কহে কিবা ভাব আসিলাম গৃহ তব

টাকা দিবে করেছ স্বীকার।

বাড়ী এনে ভাবো কিসে এখনে ভাবনা মিছে

ভাবাভাবি শুধু ভাব-সার।।

প্রভুর বচন শুনে প্রহলাদ রাখিল এনে

পাঁচ টাকা প্রভুর গোচরে।

পাঁচ টাকা এনে দিয়ে প্রভু পদে প্রাণদিয়ে

দাঁড়াইয়া রহে চুপ করে।।

প্রভু কয়-কি মশায় বাকী টাকা দিতে হয়

পাঁচ টাকা আন কি কারণে?

পঁয়ত্রিশ টাকা চাই তার কমে নেয়া নাই

দরাদরি করোনা এখন।।

পরামর্শ যাহা পায় এহলাদ তাহাই কয়

বলে বর্ত্তা করি নিবেদন।

সকলের কাজ এই আমি পাঁচ টাকা দেই

বাকী টাকা দিক অন্যজন।।

বিচার করহ তুমি এই কার্যে একা আমি

সব ভার কেন বা বহিব?

একা ভার নিতে হলে এইখানে সবে বলে

আপনার বহিতে সম্ভব।।

এই কথা যবে বলে, অগ্নি সম উঠে জ্বলে

সংহার-মূরতি গুরুচাঁদ।

পঞ্চ মুদ্রা ফেলে দূরে অঙ্গ কাঁপে থরে থরে

ডেকে বলে “শোনরে প্রহলাদ!

বাক্য দিয়ে বাক্য-ঠেলা ধ্বংস হবে তালতলা

ফেলা টাকা এনে তুই ফেলা

টাকা আন টাকা চাই তা না হলে রক্ষা নাই

মোর বাক্য করিস না রে-হেলা।।

Page 243 start

প্রহলাদ না কথা কয় উঠিলেন দয়াময়

ক্রোধ বরে চাহিলেন নায়।

সঙ্গে যারা এসেছিল সকলি নৌকায় গেল

দুষ্টে ভাবে গেল মহা দয়।।

আসিয়া তরণী পরে প্রভু বলে ক্রোধভরে

এই গ্র্রামে সকলি চন্ডাল।

চাঁড়ালে ছুঁয়েছে তোরে তুই যাবি কোথাকারে

টাকা ফেল তালতলা খাল।

এই ইচ্ছা ছিল মোর গঙ্গা বারি হবে তোর

ব্রাহ্মণে করিবে স্নান দান?

চাঁড়াল-চাঁড়াল রয় ব্রাহ্মণ না হতে চায়

তুই হলি নরক সমান।।

গঙ্গা তুল্য হবি যদি আমি বলি সেই বিধি

চন্ডালের সারা রে ব্রাহ্মণ।

হতে পারে এ উপায় তাতে টাকা দিতে হয়

তুই টাকা ফেলরে এখন।।

টাকা দেরে টাকা দেরে এই বলে বজ্রস্বরে

প্রভু মোর হুঙ্কার ছাড়িল।

পদাঘাত করে নায় প্রলয়ের শব্দ হয়

মহা ঢেউ জলেতে উঠিল।

তরঙ্গে তরঙ্গে-জল ভরে গেল সারাখাল

মহারোল উঠে চারিভিতে।

ঘূর্ণিপাক উঠে জলে জল তাই উঠে ফুলে

দুলে দুলে নাচে আচম্বিতে।।

প্রভুর নৌকার লোকে প্রলয়ের ভাব দেখে

শীঘ্র গতি বাড়ি পরে যায়।

কি ভাবে বসিয়া থাক খাল-পারে এসে দেখ

ভীত চিত্তে এই কথা কয়।।

ঘন ঘন বহে শ্বাস কথা-বলা অবকাশ

নাহি যেন তাহাদের মুকে।

এই ভাব দেখে সবে কেবা কোন কথা কবে

খাল-পারে এসে সবে দেখে।।

যেই খাল ছিল মরা তরঙ্গে তরঙ্গ ভরা

ঢেউ নাচে মত্ত গরজনে।

সংহারের এই ক্ষেত্রে আরক্ত-সংহার-নেত্রে

গুরুচাঁদ চাহে বারি পানে।।

গুরুচাঁদ পদতলে প্রলয়-নর্ত্তন জলে

অনন্তের ফণা যেন নড়ে।

কল কল নাচে জল বিশ্ব করে টলমল

ধ্বংস যেন প্রলয়ের ঝাড়ে।।

এই ভাব সবে দেখে কথা কারো নাহি মুখে

মহাভয়ে ভীত হৈন মন।

যাবদ বিশ্বস যিনি এই ভাব দেখি তিনি

মনে ভাবে কি করি এখন?

সংহারের কর্তা যিনি আপনি ক্ষেলাপি তিনি

কিসে হবে ক্রোধ সম্বরণ?

মূর্খে তাঁরে নাহি চিনে এ কান্ড করিল কেনে

ধ্বংস সব হবে বিলক্ষণ।।

রক্ষা নাহি রক্ষা নাই কিবা করি ভাবি তাই

ক্ষ্যাপা-ভোলা শান্ত হবে কিসে?

টাকা আন টাকা আন কারো নাহি রবে প্রাণ

যাবি মারা গুরুচাঁদ-রোষে।।

তখন ছুটিয়া যায়, টাকা আনি হাতে দেয়

টাকা পেয়ে ছুটিল যাদব।।

বিচরণ সাথে ধায় গ্রামবাসী লোকে তায়

খাল পারে উপনীত সব।।

যাবদ উঠিয়া নায় পড়িল প্রবুর পায়

টাকা রাখে চরণের কাছে।

বলে প্রভু কর ক্ষমা আমরা চিনি না তোমা

মূর্খ ধ্বংসে ফল কিবা আছে?

যাদবের কথা শুনি সাধকের-শিরোমণি

তালতলা খালে ডাকি কয়।

কথা কয় মহাকাল কাঁপে তালতলা খাল

ধ্বংস যেন নেমেছে ধরায়।।

Page 244 start

কিরে খাল হলি ঠেকা এনে দিলি সব টাকা

তাই তোরে করিলাম রক্ষা।

যে কাজ করিলি তুই আশীর্ব্বাদ দিনু মুই

ধন্য হবি গঙ্গায় অপেক্ষা।।

চন্ডাল বরেরা আর তোর এই খাল-পার

ব্রাহ্মণে করিবে নিত্য-স্নান।

হরি-ভক্ত সাধু যারা তোর জলে সবে তারা

করিবেন জল কেলি দান।।

এত বলি দয়াময় যাদবেরে ডাকি কয়

কুলে যাও যাদব সুমতি।

তোমাদের ভক্তি গুণে কিছু নাহি রাখি মনে

বড় প্রীত হৈনু তব প্রতি।।

প্রভু হাসি কথা বলে্ এদিকে দেখে সকলে

বারি শান্ত হৈল অকস্মাৎ।

দেখিয়া আশ্চর্য্য কান্ড সাধু কি অসাধু ভন্ড

ভূমে পড়ি করে দন্ডবৎ।।

প্রলয়ের যে-নর্ত্তন দেখে নরনারী গণ

স্বপ্নবৎ হইল বিলীন।

রুদ্র যবে শান্ত হয় বিশম সুন্দর কয়

কোথা কিছু রহেনা মলিন।।

প্রভুর অমোঘ বাণী পরে পূর্ণ হল জানি

তালতলা খাল আজি ধন্য।

হরিভক্ত মতুয়ায় ওড়াকান্দী ধামে যায়

প্রভু বাক্য করে তারা মান্য।।

তালতলা খালে নায় তার সুধা-বারি খায়

স্নান দান করে তার জলে।

হরিভক্ত পরশনে তীর্থ প্রায় দরশনে

প্রভু বাক্য এই মত ফলে।।

---০---