Page 310

দেবী সরস্বতী কর্তৃক গ্রন্থদান ও শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত রচনা

মৃত্যুঞ্জয় দশরথ এই দুইজনে।

লীলামৃত গ্রন্থ লেখা ইচ্ছা করে মনে।।

কিছু অংশ লিখি দোঁহে গেল ওড়াকান্দী।

বসিলেন দুই সাধু প্রভু পদ বন্দি।।

মহাপ্রভু হরিচাঁদে বিনয়েতে কয়।

হৃদয়ের আশা কহি ওগো দয়াময়।।

আপনার লীলা যাহা অপূর্ব্ব অনন্ত।

ধরা পরে প্রকাশিতে চাহি যে বৃত্তান্ত।।

প্রভু বলে এই কার্য্য কভু না করিবে।

সময় হইলে গ্রন্থ প্রকাশিত হবে।।

কিন্তু মনে নাহি মানে-সহে না বিলম্ব।

পুনরায় লিপিকার্য্য করিল আরম্ভ।।

ইচ্ছাময় যাহা ইচ্ছা নাহি করে নিজে।

সে-কার্য্য কেমনে হবে তাঁর বিশ্ব মাঝে?

লেখা-গ্রন্থ আকস্মাৎ হল অন্তর্দ্ধান।

খোঁজাখুঁজি করে কত মেলে না সন্ধান।।

অতএব গ্রন্থ লেখা নাহি হল আর।

লীলাসাঙ্গ হরিচাঁদ করে অপঃপর।।

ইচ্ছাময় ইচ্ছা করে সময় হইল।

দশরথ, মৃত্যুঞ্জয় তারকে কহিল।।

“প্রভুর লীলার কথা করহে রচনা।

রচনা করহে তুমি তারক রসনা।।”

মনে ভয় সে তারক স্বীকার না করে।

এবে শুন কি ঘটনা হ’ল অতঃপরে।।

একদা আপন গৃহে তারক গোঁসাই।

নিদ্রাকালে “হরি” বলে, চাড়িলেন হাই।।

পরাণ-পুতুল হরি স্মরণে আসিল।

স্মরণে শয়নে বসি তারক কান্দিল।।

কিছু পরে নিদ্রামগ্ন সে তারক হয়।

দেবী বীণাপাণি আসি তথায় উদয়।।

বরাভয়হস্ত রাখে তারকের শিরে।

অসীম স্নেহেতে মাতা কহিলা তাঁহারে।।

“পুত্র শ্রেষ্ঠ তুমি মোর কবি অগ্রগণ্য।

তোমার গৌরবে মোর বক্ষা সদা পূর্ণ।।

প্রাণপতি প্রেম-গীতি তব কন্ঠে থাকি।

সতত জীবেরে কহি উচ্চ রবে ডাকি।।

এ-বারে আসিলা প্রতি নমঃশূদ্র ঘরে।

তোমাকে আনিনু আমি তাই জয়পুরে।।

লীলা-গীতি চিরকাল তোমারি রচনা।

প্রভু তাই দশরেথে করেছিল মানা।।

প্রেম-নিষ্ঠা দশরথ কথা নাহি শোনে।

তাই লীলা-গীতি এনে রাখি নিজ স্থানে।।

লীলা সাঙ্গ হ’ল এবে লীলা-গীতি কও।

এনেছি প্রথম লেখা করে তুলে লও।।”

এত বলি দয়ামীয় তারকের হাতে।

রাখিলা পূর্ব্বে গ্রন্থ বহু স্নেহমতে।।

অর্দ্ধ-নিদ্রা জাগরণে তারক দেখিল।

গ্রন্থ দিয়া বীণাপাণি অন্তর্দ্ধান হ’ল।।

ব্রহ্ম মুহুর্ত্তের কালে গোস্বামী জাগিল।

দেখিলা হস্তের পরে গ্রন্থ কে রাখিল।।

অকস্মাৎ স্বপ্ন-কথঅ মনে পড়ে যায়।

গ্রন্থ বুকে চেপে ধরে কহে হায়! হায়।।

Page 311 start

মায়ের করুণা-ধারা এইভাবে পায়।

প্রত্যক্ষে বাগেদেদী যাঁরে গ্রন্থ দিয়ে যায়।।

এত কৃপা পেল তবু সাহস না পায়।

চুপ থাকে লীলাগ্রন্থ লেখা নাহি হয়।।

এক নিশি শেষভাগে গোস্বামী গোলক।

সপ্নে সে তাহাকে বলে “শোনরে তারক।।

লীলামৃত নাহি দিলে রক্ষা তোর নাই।

রক্ত কিংবা লীলামৃত একখানা চাই।।”

নৃ-সিংহমূরতিধারী অতি ভয়ঙ্কর।

তারকের গাত্র তাহে কাঁপে থর থর।।

ভীতমনে গোস্বামীজী স্বীকার করিল।

সেই হতে লীলামৃত রচিতে লাগিল।।

এসব বৃত্তান্ত আছে লীলামৃত মাঝে।

নিজ হস্তে লিখিলেন কবি রসরাজে।।

আর কীর্ত্তিকথা তাঁর আছে বহুতর।

সমস্ত প্রকাশে নাহি পায় অবসর।।

কণামাত্র বলি তাহা করিতেছি শেষ।

তারকের আগমনে ধন্য বঙ্গদেশ।।

বারশ’ চুয়ান্ন সালে আষাঢ় মাসেতে।

জন্ম নিল শ্রীতারক প্রভু আজ্ঞামতে।।

তেরশ’ একুশ সালে মার্গশীর্ঘ কালে।

শ্রীতারক ছাড়িলেন এই ধরাতলে।।

সৎকার জন্যে দেহ নেয় নদীকূলে।

উপস্থিত নরনারী হরি হরি বলে।।

চন্দনের বৃষ্টি হল চিতার উপরে।

আশ্চর্য্য মানিয়া সবে হরিধ্বনি করে।।

শুধুতাহা মাত্র নহে পুষ্প বরিষণ।

চিতা পরে হল তাহা দেখে সর্ব্বজন।।

মহাশক্তিধারী গেল ছাড়িয়া পৃথিবী।

আর না দেখিবে ধরা সে মোহন ছবি।।

এই ভাবে দেহত্যাগ করিল তারক।

পরবর্তী এককথা শুন সর্ব্বলোক।।

---০---