Page 066 

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের তিরোভাব ও শ্রী শ্রী গুরুচাঁদের শক্তি স্থিতি

জগতের হিত তরে প্রভু নর দেহ ধরে।

যুগে যুগে আসি করে জীবের কল্যাণ।

আদর্শ যে ধরে তার করুণার পারাবার

তাঁহাকে করি আঁধার হয় অধিষ্ঠান।।

লোক মুখে শুনি কথা আছে তাতে যৌক্তিকতা

শক্তি নাকি যথা তথা, নারে রহিবারে।

সিংহ দুগ্ধ মেটে ভাণ্ডে রাখে যদি কোন ভণ্ডে

পাত্র ভাঙ্গি সেই দণ্ডে দুগ্ধ যায় পড়ে।।

স্বর্ণ পাত্র হলে পরে সিংহ দুগ্ধ তাহা ভরে

কষ্ট নাহি রাখিবারে শুনি এই কথা।

কোন সত্য কথাচ্ছলে এই বাণী যায় বলে

গূঢ় অর্থ তার তলে আছে বটে গাঁথা।।

পাত্র গুণে শক্তি রয় অপাত্রেতে নষ্ট হয়

তাই সাধু শাস্ত্রে কয় নিগূঢ় কাহিনী।

সিংহ দুগ্ধ যাহে রয় স্বর্ণ পাত্র সে নিশ্চয়

মেটে পাত্রে নাহি রয় মোরা তাই শুনি।

ক্ষীরোদ বিহারী হরি হ’ল পূর্ণ লীলাকারী

এল সফলানগরী এই বঙ্গ দেশে।

জানাতে গার্হস্থ্য ধর্ম গৃহ ধর্ম সার মর্ম

একত্রিত জ্ঞান কর্ম ঋষি গৃহি বেশে।।

প্রথমে আবাদ কৈল পাপ কলি নাশ হৈল

বদ্ধ জীব ধরা পৈল প্রেমের খেলায়।

ক্ষেত্র হল সুপ্রস্তুত দেখি যশোবন্ত সুত

গুরুচাঁদে অবধূত নিজে ডাকি লয়।।

মানব আচারে যাহা পালন করিল তাহা

কত দয়া দেখ আহা জীবগণ প্রতি।

আদর্শ মানব রূপে গুরুচাঁদ বিশ্ব ভূপে

হেরিয়া নয়ন কূপে পায় মহাপ্রীতি।।

Page 067 start

উত্তর সাধক তাঁরে ইচ্ছিলেন করিবারে

এ ভাব জানি অন্তরে করে সেই মত।

বুঝিয়া প্রভুর ভাব গুরুচাঁদ মহাভাব

বাসনা ত্যজিয়া সবে পায় মনোরথ।।

বার’শ চুরাশি সাল মধুর বসন্ত কাল

ঘোর কুজ্ঝটিকা জাল বিদায় মাগিল।

উত্তর আয়ন আসে আলোকে বসুধা হাসে

মধুর ফুলের বাসে জগত ভরিল।।

সিংহাসন ছাড়ি হায় শীত যেন চলি যায়

অভিষেকে রাজা হয়, নবীন বসন্ত।

দেখি সেই রূপ প্রায় হরি দেহ ছাড়ি যায়

পশি গুরুচাঁদ কায় পূর্ণ শক্তিমন্ত।।

ভক্ত কান্দিয়া কয় “বল প্রভু দয়াময়

তোমা বিনা কি উপায় হবে মো’ সবার।

সূর্য বিনা যথাকাশ যজ্ঞ বিনা পীতবাস

বায়ু ছাড়া যথাশ্বাস এমনি আকার।।

মনি হারা যথা ফণী চক্ষু যথা হারা মণি

বল্লভ হারা রমণী প্রাণ হারা কায়া।

তুমি বিনে হরি মনি দিবসে হ’ল যামিনী

এ যেন লতিকা ধ্বনি হারা বৃক্ষ ছায়া।।

মো' সবে ত্যজিবে যদি এত প্রেম গুণনিধি

কেন তবে দেখাইলে ওহে গুণমণি।

তোমা যদি হারা হই কেমনে বা ঘরে রই

অসহ বিরহ-জ্বালা দিবস রজনী।। য

দি প্রভু যেতে চাও মো’ সবারে সঙ্গে লও

দারা পুত্র সব বৃথা তুমি যেথা নাই।

পরাণ-পরাণ তুমি অন্তরের অন্তর্যামী

পরাণ বিহনে ব্যাথা কোথায় জুড়াই।।

তাই বলি ওহে নাথ সবাকারে লও সাথ

তব সঙ্গে রহি যদি কোন দুঃখ নাই।

যখনে ত্যজিবে দেহ আর না বাঁচিবে কেহ

বিচ্ছেদ বিরহ দাহে পুড়ে হবে ছাই।।

কত কথা পড়ে মনে প্রতিদিন প্রতিক্ষণে

কতই করেছ দয়া কিছু না চাহিতে।

সুখে দুখে সবা সনে রয়েছে আপন জ্ঞানে

বুঝেছ বুকের ব্যাথা কিছু না কহিতে।।

এমন পরম বন্ধু এমন করুণা সিন্ধু

হয় নাই হবে নারে কভু এ জগতে।

মন জেনে বলে কথা মুখ দেখে বোঝে ব্যাথা

মন চুরি করি লয় আঁখি পালটিতে।।

মোরা সবে ঘোর অন্ধ তুমি যে পরমানন্দ

আনন্দ আলোকে প্রভু ধাঁধা দিলে কাটি।

অকূল সাগর বুকে মো’ সবারে বুকে রেখে

পরম আদরে নাথ পালিয়াছ খাঁটি।।

তুমি যদি ছেড়ে যাবে বল আর কেবা ভবে

সম্পদে বিপদে নাথ রক্ষিবে সবারে।

তোমা বিনে সবে মোরা পড়ে রব জ্যান্তে মরা

দিন মণি হীন যেন গভীর আঁধারে।।

নিবেদন রাঙ্গা পায় মোদেরে ঠেলনা পায়

তব পায় সবে পায় যাহা কিছু পায়।

তুমি হরি কল্প বৃক্ষ শোভে ফল লক্ষ লক্ষ

সর্ব্ব সিদ্ধি ফলদাতা তুমি রসময়।।

মোরা কিছু নাহি চাই শুধু যে তোমারে চাই

আপন কেহ যে নাই তুমি বিনে ভবে।

তুমি যদি যাবে ছেড়ে প্রাণ সব নিবে কেড়ে

জ্বলিবে সকল হিয়া দুরন্ত বাড়বে।।

দয়া করি ফিরি চাও কৃপা নিধি কথা কও

মোদের সহিতে রহ জগৎ জীবন।

কিংবা কর এই কাজ হান শিরে ঘোর বাজ

এক সঙ্গে হোক তবে সবার মরণ।।

যে দেশে নাহিক হরি সেথা থেকে কিবা করি

শূন্য দিবা বিভাবরী শ্রী হরি বিহনে।

প্রাণ যদি চলি যায় শূন্য দেহে কিবা রয়

কিবা কাজ দিবে বল অন্ধের নয়নে।।

Page 068 start

তোমাগত মোরা সবে তুমি বিনে কিবা হবে

জল ছাড়া মীন প্রাণ বাঁচিবে কেমনে।

দারা পুত্র পরিজন তুমি বিনে অকারণ

সকলে ফেলিয়া আজি মিশিব চরণে।।

তুমি যাবে এই কথা শেল সম বাজে ব্যথা

শক্তি শেল হতে হ'ল আঘাত কঠিন।

যাবে যাও বাঁধা নাই মোরা সবে সাথে যাই

চিরকাল আছি মোরা তোমার অধীন।।

তুমি হরি যেথা যাবে মো ' সবারে সঙ্গে নিবে

এই নিবেদন পদে বিশেষে জানাই।

একা তুমি নহ কভু মোরা পদে আছি প্রভু

যেথা যাবে রাঙ্গা পদ সেই দেশে যাই।।

আর ভুলাওনা হরি মোরা কি বুঝিতে পারি

কোন ছলে কোন খেলা খেলিছ জগতে।

তুমি যে কে কেবা চিনে তব তত্ত্ব কেবা জানে

অজানা অচেনা ধন নেমেছে ধরাতে।।

কোটী জন্ম ভাগ্য গুণে পাই তোমা হেন ধনে

মন সাধে রাঙ্গা পদে পারিনি পূজিতে।

তুমি যে পরম ধন শিবের অসাধ্য ধন

তব স্তব করে দেব দেবীর সহিতে।।

যেই ভাগ্য গুণে মোরা পেয়েছি অধরে ধরা

সেই ভাগ্য বলে মোরা রাখিব তোমাকে।

তোমাকে রাখিব মোরা এযে শুধু গর্ব্ব করা

তুমি রবে দয়া করে আপনি আজিকে।।

এই পদে নিবেদন যশোবন্ত প্রাণধন

ভক্তের মুখ চাহি করহে করুণা।

আমাদের কথা রাখ দয়া করে হেথা থাক

মোদেরে ছাড়িয়া এবে প্রভুগো যেওনা।।

শুনিয়া দুঃখের বাণী দুঃখ হরা গুণমণি

ভক্তে ডাকিয়া বলে শুন ভক্ত গণ!

ধরিয়া মানব দেহ বাঁচিয়া রহেনা কেহ

বিধাতার এই নীতি না হবে লঙ্ঘন।।

অসম্ভব কথা এই দেহ ধরে মৃত্যু নেই

মৃত্যুর অধীনে মাত্র জীব দেহ ধরে।

মরণ পরম সত্য মৃত্যু বুকে এই তত্ত্ব

অনিত্য সংসারে সব সৃষ্টির বিকারে।।

পিশাচী মায়ার ছলে জীব নিত্য থাকে ভূলে

জনমে আনন্দ করে মরণের ভয়।

মরণ পরশ মণি নিত্যের বসায় আনি

জীবের জীবাত্ম মায়া সব ঘুচে যায়।।

বৃথা শোক কর সবে শোক দুঃখ এই ভবে

সকলি মায়ার খেলা জানিবে সুধীর।

মরণেরে কর পূজা হও সবে মহাতেজা

মায়া ছেড়ে হও সবে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর।।

মায়া রঙ্গ চোখে লেগে শোক দুঃখ বুকে জাগে

মিথ্যা সব ধাঁধাঁ বাজি মায়ার ছলনা।

আমি যবে ছেড়ে যাই তার মধ্যে সত্য নাই

মায়ার কুহকে ভুলে ও কথা বলনা।।

মাটি দিয়ে দেহ গড়া মূল্য নাই এক কড়া

মূল্য হীন মিথ্যা নিয়ে করো টানাটানি।

দেহ মধ্যে যেবা রয় তাঁর নাহি হবে লয়

তাঁর সাথে কর সবে সত্য জানাজানি।।

শুন সবে যাহা বলি আমি নাহি যাব চলি

মায়ার খোলস দেহ মিলিবে মাটিতে।

গুরুচাঁদ দেহে রবো হরিগুরুচাঁদ হবো

গুরুচাঁদ মধ্যে মোরে পাইবে দেখিতে।।

যেই ভাবে মোরে মানো তাই গুরুচাঁদে জানো

যাহা চাবে তাহা পাবে মনোনীত যত।

গুরুচাঁদে রবে শক্তি তাঁহে সবে কর ভক্তি

অনায়াসে পাবে মুক্তি দেবতা বাঞ্ছিত।।


( “ আমি নাহি ছেড়ে যাব জানিও বিশেষ।গুরুচাঁদ দেহে এই করিনু প্রবেশ।। “ )শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত।।
Page 069 start 

মতুয়ার এই নীতি নিত্য পথে করে গতি

অনিত্য সংসার চক্রে কিছু মান্য নাই।

শান্তি নিয়ে তার খেলা শক্তিকে করিয়ে ভেলা

শক্তি সিন্ধু মাঝে চলে মাতিয়া সবাই।।

শক্তি যেথা স্ব প্রকাশ মতুয়ার এ বিশ্বাস

শক্তিময় প্রভু তার রহে তার মাঝে।

আপনি নোয়ায় মাথা শকতি রয়েছে যেথা

বীর্যের সাধক তারা কথা কিংবা কাজে।।

মতুয়া জানিবে প্রাণে নররূপে এইখানে

মানুষের মাঝে তার প্রাণের ঠাকুর।

মানুষে মিশিয়া রয় মানুষের রূপ লয়

মানুষের সাথে লীলা বড়ই মধুর।।


“ মানুষে আসিয়া মানুষে মিশিয়া করিব মানুষ লীলে।সেইত সময় চিনিবে আমায় পুনঃশ্চ মানুষ হলে।। “------শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত

সেই মানুষেতে নিষ্ঠা হলাদিনী নামেতে শ্রেষ্ঠা

প্রেমরূপা কহে তাঁরে শক্তিময়ী রাধা।

দু'য়ে এক একে দুই পুরুষ প্রকৃতি দুই

এক আত্মা বাটি দোহে করে আধা আধা।।

দোঁহে দোহাকারে চাহে দোঁহে এক কথা কহে

দোঁহে এক পূর্ণ করে নিষ্ঠা নামে সতী।

মতুয়া জীবনে তাই দেব দেবী কেহ নাই

প্রাণে প্রাণে টানাটানি চলে নিতি নিতি।।

সাযুজ্যাদি মুক্তি তিন মতুয়ার পক্ষে হীন

বাৎসল্যাদি পঞ্চ রসে নহে তো ভিক্ষারী।

মতুয়া চাহে না কারে সকলে চাহে তাহারে

মতো ' ছুয়ে সবে ধন্য গুণে বলিহারী।।

কভু তারে ভাবে দাস কভু নিজে সাজে দাস

প্রাণ ভরি কভু তারে করে আশির্বাদ।

কভু ক্ষোভে কথা কয় কভু ধরণী লোটায়

অসীম ভাবেতে ভাবে যত তার সাথ।।


আমার এক চাকর আছে ভাই,মনের ভাব জেনে সে কর্ম্ম করে,এমন নফর দেখি নাই।---- অশ্বিনী গোঁসাইহরি তোমায় করি আশির্বাদএবার পুরুক তোমার মনোসাধ ---------- অশ্বিনী গোঁসাই

মিশিতে ঠাকুর সনে কোন কালে কোন দিনে

চাহে না মতুয়া কভু ইহ পরকালে।

ঠাকুর -- ঠাকুর রহে মতুয়া ঠাকুরে চাহে

চিরকাল দুইজনে টানাটানি চলে।।

মতুয়া ঠাকুর চিনে তাঁর ভাব ভঙ্গি জানে

তাই কায়া মাত্র নহে পরাণের হরি।

যবে হরি কথা কয় প্রকাশ্যে বা নিরালায়

মতুয়া তাঁহারে চিনে ফেলে অশ্রুবারি।।

মতুয়া জীবনে তাই হরি শূন্য কথা নাই

তার হরি আছে সদা মানুষে মিশিয়া।

সদা ফেরে তাঁরে খুঁজি এই ভাব সোজাসুজি

বিরহ অনল রাখে সজাগ করিয়া।।

মন মানুষের সাথে ঘাটে মাঠে কিংবা পথে

যদি দেখা হয় তার সে পরমানন্দ।

মতুয়া কাঁদিয়া কয় এই মোর রসময়

আপনি লোটায় পদে নাহি রাখে দ্বন্দ্ব।।

মতুয়ার এই বাণী অনন্ত রসের খনি

আসিয়াছে ধরাপরে নাহি যাবে ফিরি।

সদা করে লুকাচুরি ঘর হতে ঘর ছাড়ি

মোরা করি খোঁজাখুঁজি তাঁর পাছে ঘুরি।।

Page 070 start 

তাঁর মত কহে যেঁই তাঁর মত সহে যেঁই

তাঁর মত দহে যেঁই তাঁরে জানি সেই।

কায়া নাহি দেখি চোখে কায়া ফেলে দেখি তাঁকে

তাঁরে নিয়ে নাচি কান্দি তাঁরে প্রাণ দেই।।

তাঁর বাণী তাঁর বাণী তাঁর বলে তাঁরে জানি

তাই তাঁ'রে ভেবে মোরা তাঁর হই।

তাঁর মাঝে তাঁরে পাই আর কারে নাহি চাই

তাঁকে নিয়ে মোরা তার কথা সদা কই।।

মোর ঠাকুর মরে না মোর ঠাকুর সরে না

মোর ঠাকুর ভরে না সদা পূর্ণ রয়।

তিনি পূর্ণানন্দ হরি মোরা তাকে ডাকি “পুরি “

আছে হরি রবে হরি নাহি হবে লয়।।


রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রী গৌরাঙ্গ হরি।হরিচাঁদ আসল হরি পূর্ণানন্দ হরি।।--- শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত।

মানুষেতে এই নিষ্ঠা মতুয়া শক্তির স্রষ্টা

অখণ্ড শক্তির কেন্দ্র মতুয়া হৃদয়।

তাই মতুয়া নির্ভিক শৌর্যে বীর্যে যেন শিখ

প্রেমে ভোলা খোলা প্রাণ শ্রী গৌরাঙ্গ প্রায়।।

এক জাতি এক প্রাণ সবে ডাকে হরিচাঁন

একই তরঙ্গে ভাসে একই সাগরে।

নাহি দেব - দেবী পূজা দীক্ষা শূন্য মহাতেজা

একই মহা মন্ত্রে বলে সবে জাগরে।।

কিবা বেদ কিবা স্মৃতি কিবা শিক্ষা রীতি নীতি

যা ' বলে ঠাকুর মোর সেই সর্ব্ব সার।

নাহি চাহি মোক্ষ ধাম হাতে কাম মুখে নাম

চরিত্র পবিত্র রাখা সাধনা সবার।।

দেহে বল প্রাণে বল নাহি চাহে ফলাফল

পরম গুরুর ডাকে সবে দেয় সাড়া।

নামে রুচি জীবে দয়া মানুষেতে নিষ্ঠা দিয়া

অসীম বীর্যের তেজে দেহমন ঘেরা।।


“জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা। ইহা ভিন্ন যত ক্রিয়া সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।”--- শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত।

ঈশ্বর আর সংসারে মিল এত দিন পরে

মতুয়া জীবনে হ'ল পুর্ণ পরাকাষ্ঠা।

গৃহস্থ সন্যাসী মিশি একাসনে রহে বসি

এক ক্ষেত্রে মিলে সব ধর্ম্ম, কর্ম্ম, নিষ্ঠা।।

বেদাতীত এই ভাব কি রূপে হল সম্ভব

তার ইতিহাস কহি শ্রী গুরু কৃপায়।

আমি কহি কহি ভুল শ্রী গোপাল আদি মূল

তাহা কহি সেই জানে যা' মোরে কহায়।।

দশ অবতার হয় হিন্দু শাস্ত্রে এই কয়

মৎস্য,কু্র্ম্ম, আদি করিকরি বরাহ বামন।

নৃসিংহ পরশুরাম, সঙ্কর্ষণ বলরাম

পরম - আরাম রাম জগত মোহন।।

বুদ্ধ, কল্কি, এই দশ অবতার স্বপ্রকাশ

পুনঃ সাধু কহে অষ্টবিংশ অবতার।

শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য গোরা কপিল আখিল জোড়া

বেদব্যাস নামে মুনি মুনির কুমার।।

নানা তত্ত্ব সারোদ্ধার অষ্টবিংশ অবতার

অসীম গুণের ধাতা অবতার সবে।

বিচার করিলে মনে অবতার প্রতি জনে

পূর্ণ গুণে পরিপূর্ণ সবে নাহি হবে।।

হরিতে ধরার ভার করিতে জীব উদ্ধার

যুগ অনুসারে আসে যুগ অবতার।

যতটুকু প্রয়োজন সেই গুণে সে ওজন

তাই নিয়ে নামে প্রভু ধরার উপর।।

অনন্ত জলাধি জলে ধরা ডোবে সীমাতলে

মৎস্য রূপে প্রভু তাই ধরা উদ্ধারিল।

বারি পরে জাগে ধরা কূর্ম্মরূপে পৃষ্ঠে ধরা

কূর্ম্ম অবতারে প্রভু সে কর্ম্ম সাধিল।।

Page 071 start

এই আদি যুগক্ষণে জীব নাহি কোনখানে

জীবোদ্ধার ক্রিয়া তাই না হল প্রকাশ।

অসুর শক্তির চাপে ধরা থরহরি কাঁপে

জল তলে ডুবে ধরা হয়ে হতাশ্বাস।।

রাখিতে ধরার প্রাণ দুষ্টে দিতে দণ্ড দান

দন্ত অস্ত্রে রিপু নাশি ধরাকে তুলিল।

ধরা হল ভাসমান জীব হল অধিষ্ঠান

দেবাসুর দ্বন্দ্বে ধরা ত্রাসিত হইল।।

জিতেন্দ্রিয় দেবগণ সত্য নীতি আলম্বন

পরমাত্মা তত্ত্বে মত্ত আছিল সবাই।

অসাম্য আশ্রয় করি অসুর সাজিল অরি

দেবশক্তি নষ্ট করে করিয়া বড়াই।।

ধরাকে রাখিতে শান্ত অসাম্য করিতে অন্ত

অসুরে সংহার করে নৃসিংহ মূরতি।

দৈত্যপুত্র সে প্রহ্লাদ সাম্য তত্ত্বে পেল সাধ

সুরাসুর দ্বন্দ্ব নাশি পাইল পীরিতি।।

আদরিণী কন্যা ধরা তার ভার দূর করা

অসম আসুর শক্তি হয় বিনাশিতে।

ধরাভার হরা হয় রিপুকুল হয় ক্ষয়

সমেস্থিত সাধুজন শান্তি পায় চিতে।।

যত জীব বৃদ্ধি পায় তাঁর কাজ বাড়ে তায়

ভূভার হরণ পরে জীবের তারণ।

সমেস্থিত সাধুজন রক্ষাপায় সর্ব্বক্ষণ

অসম অসুর যত করে বিনাশন।।

মহাবলী দৈত্য বলি অসম সাধনে বলী

বলদর্পে ত্রাসে ধরা দেবতা লাঞ্ছিত।

দেবতা কাঁদিয়া কয় অসুরের যন্ত্রণায়

দেবশক্তি লুপ্তপ্রায় দৈত্য ভয়ে ভীত।।

বিপদ তারণ হরি মোরা সবে দুঃখে মরি

কি উপায় হবে প্রভু তব কৃপা বিনে।

আশুতুষে তুষি বলি সাজিয়াছে মহাবলী

ভয়াকুল দেবকুল জীবনে বাঁচিনে।।

দেব ডাকে ঊভরায় ধরা ভারাক্রান্ত হয়

তাই পুনঃ অবতারে হ'ল প্রয়োজন।

ভূভার হরিতে হয় সাধুজনে রক্ষা পায়

দুষ্টেরে নাশিতে তাই আসিল বামন।।

নরের আকার পায় তবু পূর্ণ নর নয়

অপূর্ণ আকার দেখি বিভূতি প্রকাশ।

আকারে সাজিল পূর্ণ ক্ষাত্র শক্তি করে চূর্ণ

ভৃগুরাম রূপে করে ক্ষত্রিয় বিনাশ।।

নর বসে ধরা পরে রাজ্যধন সৃষ্টি করে

ক্ষেত্র পতি সাজি রহে ক্ষত্রিয় আখ্যান।

ধনে আনে মদগর্ভ দ্বিতীয় অসুর পর্ব্ব

অহং চূর্ণ করে প্রভু বীরত্বে প্রধান।।

এই সব অবতারে ভূভার হরণ করে

আর করে সাধুজনে সতত রক্ষণ।

জীবে কিছু নাহি চাহে রক্ষ মাং রক্ষ মাং কহে

রসতত্ত্ব এতকাল না পেল শিক্ষণ।।

নাশে ত্রাস রিপু নাশ নাশে সে ধরায় ত্রাস

আশ্বাস সাধুতে পায় এই মাত্র নীতি।

জীবে কিছু নাহি দান নিজে সব ভগবান

জীবের কল্যাণ দিতে পরম পীরিতি।।

জীবে কিছু দিবে বলে জন্মিলেন রাজকুলে

মানব জীবন নীতি পালিল আপনে।

পিতৃসত্য রক্ষিবারে রাজ্য ধন ত্যজ্য করে

চতুর্দশ বর্ষ ধরি রহিলেন বনে।।

জানকি জননী সতী পতি ধ্যান পতি গতি

নারীকুলে এই শিক্ষা দানিলা যতনে।

ভ্রাতৃভক্ত সুলক্ষণ মানিলেন শ্রী লক্ষণ

ব্রহ্মচারী ব্রতধারী অকপট মনে।।

জীব দান পেল এবে নাম করে উচ্চরবে

পরব্রহ্ম সনাতন রাম নাম সুধা।

নাম্মী গুণে নাম কয় নাম নিয়ে ফল পায়

মিটাইতে চাহে সবে জীবনের ক্ষুধা।।

Page 072 start 

রাম নামে পাপ হরে রাম নাম যেবা করে

মৃত্যু অন্ত্যে স্বর্গ প্রাপ্তি বৈকুন্ঠে গমন।

ফলাশয় করে নাম ফলদাতা রাম নাম

ফল দাতা নামে নাই প্রেমের লক্ষণ।।

রাজ ধর্ম্ম নর ধর্ম্ম সমাজ শাসন কর্ম্ম

নিজের জীবনে প্রভু দেখাল আদর্শ।

সত্য ধর্ম্ম পরচার নাহি হ 'ল এই বার

অকলঙ্কা সীতা ছাড়ি প্রভু যে বিমর্ষ।।

সমাজ জীবন গড়ি জীবে করে আড়াআড়ি

হিংসা, দ্বেষ ক্ষুদ্রতায় হল প্রর্দুভাব।

জাতি হল জন্মগত মানুষের মান হ'ত

সাধু শূদ্রে মৃত্যু দণ্ড হলরে সম্ভব।।

দুঃখে বুক ফাটি যায় প্রভু রাম দয়াময়

মরমের ব্যথা নিয়ে লীলা সম্বরিল।

আপন জীবনে যাহা পালিলেন কেহ তাহা

পালিল না জীবগণে কেহ না মানিল।।

প্রভু চিন্তা করে মনে দেখাইব জীবগণে

আদর্শ “মানব “ জীব হতে পারে বটে।

দ্বাপরে মথুরা পুরী অবতীর্ণ কৃষ্ণ হরি

নাচিলেন বনমালী যমুনার তটে।।

পাণ্ডু রাজা পুণ্য বাণ নর রূপে অধিষ্ঠান

তাঁর ঘরে পঞ্চ ভ্রাতা “পাণ্ডব “ ব্যাখ্যান।

আদর্শ গৃহীর ধর্ম্ম দেখাইল সেই মর্ম্ম

মাতা,পিতা, ভ্রাতা পুত্র স্বামীর সন্ধান।।

ক্ষাত্রগর্ব্ব নষ্ট করি সমতা আনতে হরি

ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল সবে সমযোগ দেয়।

যেই দুষ্ট নাহি মানে কুরুক্ষেত্র মহারণে

দুষ্টেরে নাশিতে প্রভু সবে করে ক্ষয়।।

পাপী আধার মাত্র ভিন্ন পথে পাপ সুত্র

ভুল হ'ল পাপী ম'ল পাপ বেঁচে রয়।

কুরুবংশ ধ্বংস হয় পাপ হয়ে নিরাশ্রয়

যদু বংশে পূর্ণ রূপে হইল উদয়।।

কৃষ্ণ হয় অবতার কিছুদূর অগ্রসর

নাম ধর্ম্ম পরচার জগতে হইল।

সাধক সন্যাসী যারা কৃষ্ণে নাহি মানে তারা

গোপগোপী নীচ জনে সুধা রস পেল।।

সংসারে আবদ্ধ নর প্রেমে নহে তৎপর

মোহ নাশি প্রেম দিতে এল শ্রী গৌরাঙ্গ।

ঘর ছাড়ি কাঁদি কয় তোরা কে কে নিবি আয়

অফুরন্ত প্রেম ধরে নামের তরঙ্গ।।

আদর্শ গৃহস্থ ধর্ম্ম কৃষ্ণ হতে সে মর্ম্ম

প্রেম ধর্ম্ম সর্ব্ব জনে কভু না কহিল।

কেঁদে কয় গোরা রায় ঘরে কিছু নাহি হায়

নাম মধ্যে যেই প্রেম সেইত আসল।।

সত্যে করি দুই ভাগ কহে দুই মহাভাগ

দুই ভাগে হয়ে ভাগ জীবে দ্বন্দ্ব করে।

পূর্ণ সত্য এক সাথে জীবগণে দেখাইতে

হরিচাঁদ অবতীর্ণ সফলানগরে।।

গৃহাশ্রম করি মূল ভাঙ্গিলেন সব ভুল

সর্ব্বনীতি গৃহস্থরে শিখাল যতনে।

তাঁর ভক্ত মধ্যে তাই সর্ব্বনীতি গড়ে ভাই

সর্ব্বনীতি রহে মিশি ভক্তের জীবনে।।

হাতে কাম মুখে নাম প্রাণা রাম হরি নাম

দণ্ডে দণ্ডে করে ভক্তে প্রেমের নেশায়।

কর্ম্ম করে বীর রাগে সর্ব্ব কর্ম্ম যোগে লাগে

বালকের মত পুনঃ হাসি কথা কয়।।

কিবা নামে কিবা প্রেমে কিবা কর্ম্মে কি বিশ্রামে

কোনগুণে হীন নহে মতুয়ার গণ।

রামকৃষ্ণ যাহা করে তাহা আজি ঘরে ঘরে

করিছে মতুয়া সবে পতিত তারণ।।

ধর্ম্ম কর্ম্ম সমন্বয় ইহ পূর্ব্বে নাহি হয়

ওড়াকান্দী হরিচাঁদ তাহা যে করিল।

পূর্ণ নীতি এই বার হইয়াছে পরচার

জগত - তারণ মন্ত্র জগতে আনিল।।

Page 073 start 

মানুষ সবার শ্রেষ্ঠ ভেদাভেদ ইষ্ঠানিষ্ট

কর্ম্মগুণে মান পায় জন্ম গুণে নয়।

যে জন মতুয়া হয় সেই এই কথা কয়

জন্মগত জাতি কথা তারা নাহি কয়।।

পবিত্র চরিত্র যেই তার কোন তুল্য নেই

হোক না সে জন্মগত ক্ষুদ্র বা মহান।

যেই হরি ভক্ত হয় ম 'তো পড়ে তার পায়

তারে দেখি চোখে তার বহে প্রেমবান।।

অভক্ত আপন জন ম'তো দেয় বিসর্জ্জন

ভক্ত যারা তারা হয় পরম আত্মীয়।

মন মানুষের খেলা করে যেবা সারা বেলা

সেই সে পরম বন্ধু প্রিয় হতে প্রিয়।।

শয়নে ভোজনে কিবা কি রজনী কিবা দিবা

ভক্ত হয় মতুয়ার নয়নের মনি।

প্রেম প্রীতি পরাকাষ্ঠা এই মানুষেতে নিষ্ঠা

মতুয়া জীবনে এই মূল মন্ত্র জানি।।

এই নিষ্ঠা মতুয়াকে কি ভাবে কেমনে রাখে

কিছু মাত্র সেই কথা বলিবারে চাই।

এমন মধুর ভাব অপূর্ব্ব ভ্রাতৃ স্বভাব

এতকাল ধর পরে কেহ দেখে নাই।।

মতুয়া চলিতে পথে কেশদাম নাচে মাথে

মনে মনে করে গান হরিচাঁদ গীতি।

দ্বিতীয় মতুয়া যদি পথেতে মিলায় বিধি

উভে দরশনে উভে হর্ষান্বিত অতি।।

নাহি কোন পরিচয় তবু দাদা বলি কয়

ভূমি তলে গড়াগড়ি করে যে আনন্দে।

বয়ান ভাসিয়া যায় আলিঙ্গন করি রয়

প্রেমে জড়াজড়ি করি বুকে বুক বান্ধে।।

নাহি চেনে দেব দেবী ঘট, পট, কিংবা ছবি

জানে মানে মনে প্রাণে শুধু হরিচাঁন্দে।

সতী যথা পতি মানে নদী ধায় সিন্ধু পানে

শ্রী হরি বিরহে তারা মনে মনে কান্দে।।

যদি হরিচাঁন্দ কয় মরণের নাহি ভয়

অগ্নি মাঝে প্রবেশিতে পারে যে মতুয়া।

মরণ দলিয়া পায় নেচে নেচে ম'তো ধায়

যদি হরি আজ্ঞা দেয় ইঙ্গিত করিয়া।।

শঙ্কা শূন্য ভরা বুক শূর তেজে দীপ্ত মুখ

এক মহামন্ত্র কন্ঠে জয় হরিচাঁদ।

গৃহে বনে কি শ্মশানে দিবা কিম্বা রাত্রি ক্ষণে

সমভাবে চলে ফিরে গণেনা প্রমাদ।।

নারী জাতি জানে মাতা সুদূরে নোয়ায়ে মাথা

মাতৃজ্ঞানে আলাপন করে মিষ্ট ভাষে।

মানামান সমজ্ঞান মতো শুধু দেখে প্রাণ

ডাকিলে সরল প্রাণে ম'তো সেথা বসে।।

পর দুঃখে দুঃখী যত শ্রী হরি চাঁন্দের ম'তো

নিঃস্বার্থ তাদের মত দেখা নাহি যায়।

বিপদে পড়িলে কেহ ডাকিয়া করিলে স্নেহ

দয়াল মতুয়া চলে ছুটিয়া তথায়।।

কিবা দিবা বিভাবরী শুধু বলে হরি হরি

অবিরত অশ্রুবারি ফেলে তার লাগি।

খেতে পেলে তবে খাই না দিলেও ক্ষতি নাই

শয্যা যদি নাহি মিলে তবে রাত্রি জাগি।।

না মাগে কোনই অর্থ নাহি চিনে কোন স্বার্থ

একমাত্র স্বার্থ শুধু পর উপকার।

ছাড়ি গৃহ ছাড়ি জায়া দিয়ে মন প্রাণ কায়া

বিপদ তারণ নাম করিছে প্রচার।।

শান্ত দান্ত কৃপাবন্ত মতুয়া পরম শান্ত

উলঙ্গ শিশুর মত উলঙ্গ পরাণ।

শান্ত সিন্ধু প্রায় স্থির ভাব কত সু গম্ভীর

ভিন্ন চিত্র দেখা যায় অতীব মহান।।

সিন্ধু যদি ক্ষুদ্ধ হয় শান্ত ভাব দূরে যায়

উত্তাল তরঙ্গ দল মত্ত হয়ে ছোটে।

ম'তো যবে ক্ষেপে যায় কেবা তারে মেপে লয়

মুহূর্তে প্রলয় কাণ্ড ধরা পরে ঘটে।।

Page 074 start 

দুই ক্ষণে এই ভাব দেখি মতুয়া স্বভাব

নাম সংকীর্ত্তনে অন্য গুরু নিন্দা শুনে।

বাড়বাগ্নি সম জলে মহাবেগে ছুটে চলে

টল টল নড়ে ধরা মতুয়া নাচনে।।

কর্ম্ম ব্যাস্ত ঝরে ঘাম তবু মুখে হরি নাম

দিব্যজ্যোতিঃ অনুপম মতুয়া বদনে।

ঝর ঝর বারি ঝরে যবে হরিচাঁদ স্মরে

বিরহি উথলি ওঠে মতুয়ার প্রাণে।।

যদি কোন অসজ্জন গুরুনিন্দা আলাপন

মতুয়া নিকটে করে অবহেলা ভরে।

পরাণ ফাটিয়া যায় কে রক্ষিবে বল তায়

বীর মূর্ত্তি ধরি ম'তো দণ্ড দান করে।।

জীবন মরণ বল মতুয়া জানে যে ভাল

মৃত্যু হাতে ধরি করে পুতুলের খেলা।

মন প্রাণ গুরু পদে মতুয়া রেখেছে বেঁধে

বাচন মরণ সব করে অবহেলা।।

এক মানুষেরে জানে সেই মানুষেরে মানে

মনের মানুষ করি তারে রাখে প্রাণে।

মন মানুষের ভাব তার কান্তি যে স্বভাব

যার মধ্যে দেখে ম'তো তারে তাই মানে।।

এই মানুষেতে নিষ্ঠা ম'তো ধর্ম্ম পরাকাষ্ঠা

মনে প্রাণে ম'তো সব এই নীতি মানে।

যত জীব হল সৃষ্ট নর তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ

সকল জীবের ইষ্ট করে নরগণে।।

মানুষে সাধনা করে চিৎ শক্তি রাখে ধরে

আব্রহ্ম জুড়িয়া তাহা করে নিত্য খেলা।

অন্যে জীবে নহে সাধ্য মানুষে করিল সাধ্য

চিৎ শক্তি তাই বাধ্য আপনি হইলা।।

মানুষের মধ্যে তাই তাঁর শ্রেষ্ঠ রূপ পাই

তার শক্তি নর মাঝে অধিক বিকাশ।

এই কৃপা নরে পেয়ে আছে জীব শ্রেষ্ঠ হয়ে

তাই দেখি নর মাঝে তাহারই প্রকাশ।।

ম'তো এই সত্য জানে তাই মানুষেরে মানে

যেই মানুষেতে দেখে মনের মানুষ।

সেই পদে সব দান ধন মান মন প্রাণ

ম'তো জানে সেই শ্রেষ্ঠ প্রধান পুরুষ।।

নর রূপে হরিচাঁদ করে পতিত আবাদ

দীন হীন উপেক্ষিত আছিল যাহারা।

পিয়ে সে চাঁদের সুধা মিটাইল সব ক্ষুধা

ঢেলে দিল জীবনের দুঃখের পসরা।।

সর্ব্বাশ্রম এক সাথে পবিত্র প্রেমের সুতে

গাঁথি দিল হরিচাঁদ পূর্ণ অবতার।

পূর্ব্বে যাহা ছিল ক্ষুণ্ণ এবারে করিল পূর্ণ

পূর্ণনন্দ পূর্ণ হরি শ্রী হরি আমার।।

নিষ্ঠা রাখি হরিচাঁদে সকল মতুয়া কাঁদে

“ওহে প্রভু তুমি বিনে কি হবে উপায়।

আমি নাহি যাব চলে বারে বারে হরি বলে

গুরুচাঁদ দেহে আমি রহিব নিশ্চয়।।

শ্রী হরির এই বাণী যতেক মতুয়া প্রাণী

নত শিরে সবে মানি লইল মাথায়।

শ্রী গুরু চরিত্র মাঝে সব দিনে সব কাজে

কিসে সত্য হল বাণী দিব পরিচয়।।

এবে শুন বলি কথা অপূর্ব্ব মধুর গাঁথা

শুনিলে সে সব কথা জীব ধন্য হয়।

হরিচাঁদ তিরোধানে তার কিছু পূর্ব্বক্ষণে

হরি অগ্রে গুরুচাঁদ হইল উদয়।।

কর জোরে করি রয় মুখে কথা না জুড়ায়

পিতৃ পদ দৃষ্টি রাখি বিনয় বচনে।

বলে তাতঃ নিবেদন চাই চরণে শরণ

পতিত তারণ তুমি এসেছ ভুবনে।।

অনাদির আদি তুমি ক্ষিরোদ বিহারী স্বামী

বড় কৃপা করি জীবে জগতে আসিলে।

জীবগণে এত দিনে পায় নাই যেই দিনে

তুমি এনে সযতনে জীবেরে তা’ দিলে।।

Page 075 start 

তব কথা কি বলিব কেমনে তোমা চিনিব

অজানা অচেনা ধন তুমি গুণাতীত।

তব কথা যাহা কই তাহা বলা হয় কই

অপূর্ণ সকলি কই বিরিঞ্চি বাঞ্ছিত।।

কত কৃপা মম পরে জন্ম দিলে তব ঘরে

আপনার করি মোরে দেখ চিরদিন।

ভীত মনে দূরে থাকি তব লীলা খেলা দেখি

জন্ম জন্ম তব পদে আছে মম ঋণ।।

মনে ভাবি এই কথা কোন কথা দিয়ে পিতা

তোমরে তুষিব হেথা আমি অভাজন।

এমন কি গুণ আছে যে গুণে আসিব কাছে

কোন কথা দিয়ে পাব তোমা হেন ধন।।

এমন কি কথা জানি পা 'ব তোমা ' গুণমণি

বাণী যেথা হারা বাণী তাঁরে কিবা কব।

সকলি জানত তুমি অনাদি অনন্ত স্বামী

মূঢ় হতে মূঢ় আমি কিসে তোমা পাব।।

জীব লাগি নর ভাব ঘুচাতে সব অভাব

অপরূপ মহাভাব ব্রহ্মা অগোচর।

নর ভাবে কায়া ছাড়ি তুমিত ছাড়িবে হরি

বল পিতঃ কিবা করি আমি অতঃপর।।

কোন ভাবে কোন পথে চলিব জীবন পথে

ধর্ম্ম মানি কোন মতে পিতা তাই বল।

তোমার ভকত যারা নামে গানে মাতোয়ারা

কোন ভাবে এবে তারা চলিবে সকল।।

তব আশির্বাদ বিনে কিছু নাই এ জীবনে

নিদ্রা কিম্বা জাগরণে তাহাই সম্বল।

চাহি কোন আশীর্বাদ পূর্ণ ব্রহ্ম হরিচাঁদ

তব মনে যাহা সাধ হউক সফল।।

উন্নত পাদপ তলে জীবে রহে দলে দলে

ভয় অবহেলি চলে সহায়ের গুণে।

ঝঞ্ঝা বায়ু শীতাতপে আশ্রয় করি পাদপে

জীব কুল কাল যাপে' নিঃসন্দেহ মনে।।

বৃক্ষ যদি পড়ি যায় আশ্রয়ের শেষ হয়

করে সবে হায় হায় হেরি অন্ধকার।

তব অদর্শনে পিতা প্রাণে বাজে বড় ব্যাথা

আমরা দাঁড়াব কোথা বল একবার।।

কাণ্ডারী বিহীন তরী অকূলে ডুবিয়া মরি

তুমি যে কাণ্ডারী হরি যদি নাহি রবে।

তোমা বিনে মরি প্রাণে স্থান নাহি কোন খানে

কৃষ্ণ হারা বৃন্দাবন - তুল্য দশা হবে।।

তুমি হরি ইচ্ছা ময় কে রোধে তব ইচ্ছায়

তবু প্রাণে ইচ্ছা হয় করি নিবেদন।

যেও না যেও না হরি প্রাণে মারি নর নারী

সকলে তোমার হরি যাচে শ্রী চরণ।।

একান্ত ছাড়িবে যদি বল ওহে গুণনিধি

চঞ্চল সংসার নদী লঙ্ঘিব কেমনে ?

মোর নাহি কোন শক্তি নাহি জ্ঞান নাহি ভক্তি

কাতরে সকল উক্তি করিহে চরণে।।

উক্তি শুনি পুত্র মুখে শ্রী হরি চাহিয়া দেখে

আপনি ডাকিয়া তারে কহিল বচন।

“মনে কিবা চিন্তা কর আমার বচন ধর

তুমি কিছু নহ পর শ্রী গুরুচরণ।।

যাহা কিছু প্রয়োজন সকলি হবে স্মরণ

যাহা কিছু কর মন সকলি মিলিবে।

মম পিতা যশোবন্ত কহে মোরে যে বৃত্তান্ত

কহি তাহা আদ্যপান্ত শুন ভক্তি ভাবে।।

দেহত্যাগ পূর্ব্ব ভাগে সবে ডাকি তাঁর আগে

মধুর বচনে বলে “শুন পুত্রগণ!

দেহধারী হলে পরে যেতে হয় পরপারে

অলঙ্ঘ্য নিয়ম এই নিয়তির লিখন।।

মন মধ্যে বুঝি তাই আর বেশি দেরী নাই

যাত্রা কালে বলি যাই পবিত্র কাহিনী।

পাপ থাকে কোনখানে পাপে ধরে কোন জনে

পাপে রক্ষা কোন গুণে বলিব এখনি।।।

Page 076 start 

আপন জীবন পথে এই নীতি রেখ ' সাথে

শুভ ফল পাবে তাতে নাহি হবে আন।

দুঃখ তাপ দূরে যাবে প্রেমানন্দে সুখে রবে

প্রাণ মধ্যে প্রাণারাম হবে অধিষ্ঠান।।

পাপ দূরে নাহি রয় পাপ জাগে নিজালয়

নিজ ঘরে জীবচয় পাপে ডুবে মরে।

নারী রূপে মায়াবিণী সাজিয়াছে আদরিণী

তার ছলে ভুলে প্রাণী নিত্য পাপ করে।।

সদাচার বলে কারে সৎ আছে যে আচারে

সৎ থাকে সদাচারে পবিত্র নিয়মে।

ঋতুকাল ভিন্ন কালে নারী সঙ্গ যদি মিলে

ব্যাভিচারী তারে বলে ধর্ম্মনীতি ক্রমে।।

মাতৃতুল্য পর নারী হৃদয়ে ধারনা করি

জগতের নর -নারী পূজিবে অন্তরে।

পর নারী সঙ্গ আশা করে যেই সর্বনাশা

ধন ধর্ম্ম আশা নির্ম্মুল সংসারে।।

দূরে থাক পর নারী নিজ নারী সঙ্গ করি

হতে পারে ব্যভিচারী মানব সকল।

ঋতুকালে নারী সঙ্গ মানিবে পবিত্র ধর্ম্ম

ইহা ভিন্ন সঙ্গ কর্ম্মে ফলে বিষফল।।

পবিত্র চরিত্র রাখি নর হয় মহাসুখি

সদা থাকে কমলাখি হৃদয়ে তাহার।

দিন মাত্র সঙ্গ করে সন্তান লভিতে পারে

সেই ধন্য এ সংসারে পালি সদাচার।।

কিন্তু দেখ মহাভুল নরে নাহি জানে স্থুল

নষ্ট করে আদি মূল মজে ব্যভিচারে।

ভাবিয়া আপন দারা নিত্য ব্যভিচারে সারা

নিজ নারী সঙ্গে যারা না মানে বিচারে।।

তা'তে বলি এই কথা পাপ নহে দূরে কোথা

পাপ বাস করে হেথা আপনার ঘরে।

আনায়াসে নারী মিলে আপনার গৃহ তলে

নর পশু কুতূহলে মজে ব্যভিচারে।।

পর নারী পেতে আশা সময়েতে সে দুরাশা

আপনার ঘরে বাসা পাপে ডাকি দেয়।

সহজ পাপের খেলা মিলায় পাপের মেলা

ঘরে পরে পাপ খেলা করিয়া বেড়ায়।।

পাপে নষ্ঠ গৃহ ধর্ম্ম নষ্ঠ জ্ঞান নষ্ঠ কর্ম্ম

নরে এই মূল মর্ম্ম জানে কদাচন।

ব্যভিচার মহাপাপ ইহ হতে মনস্তাপ

জীবনের অভিশাপ না মিলে এমন।।

দূর হতে দূরে রহ আপনারে সামলাহ

মনে রাখ অহরহ পবিত্র আচার।

কিবা ঘরে কিবা পরে ব্যভিচার হতে দূরে

থাক সদা সদাচারে মানিয়া বিচার।।

ব্যভিচার যেই নর কিছুতে নাহি উদ্ধার

পূর্ব্ব পূরুষেতে তাঁরে করে অভিশাপ।

সামাল সামাল তাই চরিত্র পবিত্র চাই

ইহা হতে ধর্ম্ম নাই প্রবল প্রতাপ।।

আর কিবা বলি তোমা বিদ্যাদান, দয়া ক্ষমা

হরি নাম ঘরে ঘরে করিবে প্রচার।

পুত্র কন্যা বিদ্যাদানে রূপে শীলে কিংবা গুণে

পালিবে সকল জনে না হয়ে কাতর।।

এত বলি হরিচাঁদ করিলেন দেহ ত্যাগ

ভাগ্যবান মহাভাগ দেখিল স্বচক্ষে।

নীলাভ উজ্জ্বল জ্যোতিঃ কোটি সূর্য সম ভাতি

ছুটি গুরুচাঁদ প্রতি লাগে তার বক্ষে।।

শক্তি পেয়ে গুরুচন্দ্র শোভে যেন পূর্ণ চন্দ্র

ধ্বনিল জীমূত মন্দ্র মহাকাশ কোলে।

বিশ্ব কাঁপে থর থর নাচে যেন বিশ্বম্ভর

নাচিল দিক অম্বর প্রেমানন্দ রোলে।।

হরি দেহ পরি রয় শক্তি নাহি হয় লয়

অপূর্ণ পূরিয়া যায় পূর্ণানন্দ স্রোতে।

নাহি দুঃখ নাহি শোক অন্তরে আসে পুলক

বিশ্ববাসী যত লোক লাগিল হাসিতে।।

Page 077 start 

হরি পুর্ণ গুরুচাঁদে ধরা নত শিরে বন্দে

ভাবে দীন মহানন্দে বসে কিবা করি।

শ্রী গুরু গোপাল চন্দ্র পেল সেই প্রেমানন্দ

সাধু পিয়ে মকরন্দ বলে হরি হরি।।

--০--