Page 288

গোস্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের কৃপালাভ

নিশি শেষে স্বপ্নাদেশে মহামায় কয়।

“শুনহে তারক তুমি মোর পরিচয়।।

লহ্মী পাশা শ্রীমন্দিরে আমি অধিষ্ঠান।

অহর্নিশি করি আমি তোমার কল্যাণ।।

শুনহে তোমার পিতা ছিল কালীভক্ত।

বুক চিরে মোর পদে দিল তার রক্ত।।

তোমাতে বড়ই প্রীত আছি আমি তাই।

তোমার মঙ্গল হোক সদা এই চাই।।

সত্য সত্য মৃত্যুঞ্জয় অতি মহাজন।

তাঁহার নিকটে কর অবশ্য গমন।।

মহাশক্তি ধারী জান সাধু মৃত্যুঞ্জয়।

মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে বলিনু নিশ্চয়।।

Page 289 start

এত বলি গেল চলি দেবী মহাশয়া।

আভাসে তারক যেন দেখিলেন ছায়া।।

নিদ্রা ভেঙ্গে সে তারক বসিল উঠিয়া।

সূর্য়্য নারায়ণে কথা বলিছে ডাকিয়া।।

“শোন সূর্য্য! মনোধার্য্য বলি তব ঠাঁই।

আর দেরী নহে মোরা অদ্য চলে যাই।।”

ত্রস্তে ব্যস্তে দুইজনে প্রস্তুত হইল।

নব গঙ্গা পার হয়ে শ্রীমন্দিরে গেল।।

দন্ডবৎ করে সাধু মন্দির প্রাঙ্গণে।

ভক্তি ভরে বলে কথা সব মনে মনে।।

“ওগো দয়াময়ি মাতা, জগত জননী।

তোমার অনন্ত গুণ আমি নাহি জানি।।

দয়া করে যদি মোরে বলিয়াছ পথ।

পাই যেন সে মহাপুরুষের সাক্ষাত।।”

এ ভাবে প্রার্থণা করি চলিল তারক।

সূর্য্য নারায়ণ সঙ্গে নাহি অন্য লোক।।

বেলা অবসান হ’ল দোঁহে হেঁটে যায়।

উপনীত হেইলেন গ্রাম কালিয়ায়।।

তথা হতে দ্রুত গতি চলে পথ ধরে।

সন্ধ্যাগ্রে পৌঁছিল দোঁহে সে কালীনগরে।।

জিজ্ঞাসায় যবে যায় সাধুজীর বাড়ী।

গৃহমধ্যে মৃতুঞ্জয় যায় তাড়াতাড়ি।।

তাহা দেখি শ্রীতারক পিছে পিছে যায়।

গৃহমধ্যে অতঃপর হইল উদয়।।

কেন গেল গৃহমধ্যে বুঝিতে না পারে।

কেন যেন জোর করে নিল তারে ধরে।।

দেখিল গৃহের মধ্যে দুইটি আসন।

একাসনে মৃতুঞ্জয় মুদিয়া নয়ন।।

অন্যখানি শূণ্য আছে কেহ বসে নাই।

বিস্মিত তারক ভাবে কোথা আমি যাই।।

বসিবারে মৃত্যুঞ্জয় করিল ইঙ্গিত।

নীরবে তারক বসে চিত্তে পুলকিত।।

মুদিত নয়নে বসে সাধু মৃত্যুঞ্জয়।

একদৃষ্টে সে তারক তাঁর পানে চায়।।

সেইভাবে রাত্রি কাটে প্রভাত সময়।

ইঙ্গিতে তারকে যেতে মৃত্যুঞ্জয় কয়।।

আসন ত্যাজিয়া এল শ্রীতারকচন্দ্র।

একা-ঘরে মৃত্যুঞ্জয় রহিলেন বন্ধ।।

তারক বলিল তবে সূর্য্য নারায়ণে।

“আমি থাকি তুমি একা যাও গৃহপানে।।”

সূর্য্য নারায়ণ গেল রহিল তারক।

সারাদিন বৃক্ষতলে কাটিল একক।।

পুনরায় সন্ধ্যাগমে গৃহমধ্যে যায়।

ইঙ্গিত বসিতে তারে বলে মৃত্যুঞ্জয়।।

পুনরায় রাত্রি কাটে প্রভাত আসিল।

ইঙ্গিতে তারকচন্দ্র বৃক্ষতলে গেল।।

এই ভাবে তিন রাত্রি আর তিন দিন।

একাসনে মৃত্যুঞ্জয় রহে হয়ে লীণ।।

তৃতীয় রাত্রিতে তবে নিশীথ সময়।

স্বচক্ষে তারকচন্দ্র দেখিবারে পায়।।

জ্যোর্তিষ্ময় মূর্ত্তিধারী বহু নরনারী।

অকস্মাৎ বসিলেন মৃত্যুঞ্জয় ঘিরি।।

“ওঁ গুরবে নমঃ” বলি করে প্রণিপাত।

আশীর্ব্বাদে মৃত্যুঞ্জয় তুলিলেন হাত।।

মুহুর্ত্ত থাকিয়া সবে হল অন্তর্যাধ্তণন।

দৃশ্য দেখি সে তারক যেন হতজ্ঞান।।

মনে মনে কত প্রশ্ন উঠে মনে তাঁর।

কন্ঠবন্ধ, কথা-বলা-চেষ্টা মাত্র সার।।

সংশয়-দোদুল-চিত্ত বসিয়া তারক।

হেনকালে পূর্ব্বভিতে ফুটিল আলোক।।

নয়ন মেলিল ঊষা প্রভাতের কোলে।

মৃত্যুঞ্জয় এ সময় আঁখিযুগ মেলে।।

করুণা-পুরিত নেত্রে তারকে দেখিল।

নয়নে নয়নে দোঁহে মিশামিশি হ’ল।।

Page 290 start

কি মোহিনী শক্তি যেন ধরে মৃত্যুঞ্জয়।

জ্ঞানহারা সে তারক পড়িল ধরায়।।

ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় ধরিলেন তারে।

করুণ-কোমল হস্ত রাখিলেন শিরে।।

ক্ষণপরে তারকের সঙ্গা ফিরে আসে।

তাহা দেখি মৃত্যুঞ্জয় মৃদু মৃদু হাসে।।

সঙ্গাপ্রাপ্ত সে তারক উঠিয়া বসিল।

গোস্বামীর পদে পড়ি কান্দিতে লাগিল।।

মৃত্যুঞ্জয় বলে “তুই শোন মোর সোনা।

অদ্য হতে মম হাতে তুই হলি কেনা।।

বাসনা পুরিবে তোর নাহি কোন ভয়।

বলি দেখি কি বলিতে এলিরে হেথায়।।”

তারক কান্দিয়া বলে ‘গুরু তুমি মোর।

দয়া করে কাট যত মায়া-মোহ-ঘোর।।

নিজগুণে দয়া যদি করিয়াছ প্রভু।

চরণ ছাড়িয়া আমি নাহি যাব কভু।।

হেসে তায় মৃত্যুঞ্জয় বলে মিষ্টভাষে।

“শুক্তি পেয়ে ভুলে গেলি রত্নাকরে এসে?

যাও বাছা গৃহে যাও এসো পুনর্ব্বার।

ক্রমে ক্রমে হবে জানা সব সমাচার।।

এইভাবে তারকের কৃপা-প্রাপ্তি হয়।

নুতন জনম লয়ে গৃহে ফিরে যায়।।

কৃপাবীজে মৃত্যুঞ্জয় দিল জন্ম তাঁর।

কবি কহে সাধু-সঙ্গ-সর্ব্বতীর্থ-সার।।

---০---