Page 507

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী

প্রাণপণে করে ভক্তি তারিণী চরণ।

তাঁরে কৃপা করে প্রভু প্রাণধন।।

সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী প্রভু গুরুচান।

তারিণী চরণ হতে হইল প্রমাণ।।

ডাক্তারী পরীক্ষান্তে প্রশ্ন বলি দেয়।

এবে শোন কোন ভাবে পক্ক আম্র খায়।।

Page 508 start

ব্রহ্মদেশে সে তারিণী যা দেখে সুন্দর।

অবশ্য প্রভুরে তাহা দেয় উপহার।।

একদিন সে তারিণী বসেছে টেবিলে।

ইচ্ছা কিছু জলপান করে কুতূহলে।।

ভৃত্য তাহে আনি দিল গুটিকত ফল।

সুপক্ক সুঘ্রাণযুক্ত ক’টি আম্র ফল।।

মনোলোভা কিবা শোভা ফলের আকার।

সুবাসে ভরিল গৃহ অতি চমৎকার।।

তারিণীর রীতি ছিল ভোজনের আগে।

শ্রীগুরুচাঁদের রূপ হৃদয়েতে জাগে।।

নিবেদন করি খাদ্য উদ্দেশ্য তাহাঁর।

প্রসাদের জ্ঞানে পরে করেন আহার।।

এইদিনে তারিণীর কি যে ভাব হল।

“রাখালিয়া ভাব” যেন অন্তরে পশিল।।

“ব্রজের রাখাল” যত চরিত্রে মধুর।

সখ্য রজ্ঝু দিয়ে বান্ধে বিশ্বের ঠাকুর।।

বনতলে ঘুরে ঘুরে “রাখালিয়া খেলা”।

এ বনে সে বনে যত রাখালের মেলা।।

দেহ থাকে হেথা সেথা মন জেগে রয়।

“প্রাণবন্ধু” কালাচাঁদে খুঁজিয়া বেড়ায়।।

বনতলে ডালে ডালে কত ফল ফলে।

রাখালে কুড়া’য়ে ফল ফেলে দলে দলে।।

ফল পেয়ে মুখে দিয়ে লাগিল মধুর।

জাগা মনে বলে কই “প্রাণের ঠাকুর”?

আর কিরে তাঁরে থু’য়ে ফল খাওয়া যায়।

“কালিয়ারে” খুঁজে খুঁজে ঘুরিয়া বেড়ায়।।

দেখা পেয়ে যায় ধেয়ে বলে “রে কানাই”!

এমন মধুর ফল আর খাস নাই।।

নে’রে ভাই দেরে গালে সব ফল টুক।

তাই খা’রে আমি দেখে পাব কত সুখ।।

প্রেমে বাধ্য ভবারাধ্য প্রেমে বান্ধা রয়।

রাখালে উচ্ছিষ্ট দিলে সুধাজ্ঞানে খায়।।

তাঁরে দিলে দেয় ফিরে লক্ষগুণে তার।

কিবা দিতে পারে বলে সীমানা তাহার।।

সামান্য বৃক্ষের ফল উচ্ছিষ্ট করিয়া।

সখ্য রসে দেয় তাঁর বদনে তুলিয়া।।

প্রতিদানে দেয় প্রভু ব্রহ্মার বাঞ্চিত।

শ্রীমুখের শ্রীপ্রসাদ তুলনা রহিত।।

রাখালে ডাকিয়া বলে “শোন রে রাখাল”।

কিছুতে নহেক মিষ্ট দেখ এই ফল।।

বিশ্বাস না কর যদি মুখে দিয়া দেখ।

যদি বল মিথ্যা বলি তবে বাজী রাখ।।

ইচ্ছাময় ইচ্ছা করে কেবা বাঁধা দেয়।

শ্রীমুখের শ্রীপ্রসাদ রাখালেই খায়।।

সুমিষ্ট সুপক্ক আম্র চোখে দেখে তাই।

গুরুচাঁদে মনে পড়ে ছাড়ে দীর্ঘ হাই।।

“আহারে সুন্দর আম কিবা তোরে বলি?

বৃথাই সংসারে তুই আম হ’য়ে এলি।।

আজ যদি তোরে দিতে পারিতাম ডালি।

সফল হইত মোর প্রাণের অঞ্জলি!

আমি হেথা ব্রহ্মদেশে প্রভু মোর দূরে।

কত যে বেদনা বুকে কি বলিব তোরে।।”

এ ভাবে বিলাপ করে সে তারিণী বল।

মনোদুঃখে ঝরিতেছে দুই চক্ষে জল।।

নয়ন মুদ্রিত করে দেখে গুরুচান্দে।

“আম লও” বলি সাধু ফুকারিয়া কান্দে।।

এ দিকে কি ভাব চলে ওড়াকান্দি ধামে?

শুন সবে সেই কথা বলি ক্রমে ক্রমে।।

আপন আসনে বসি প্রভুজী গম্ভীর।

চারিদিকে বসে আছে কত ভক্ত বীর।।

আপনার ভাবে যেন প্রভুজী তন্ময়।

নীরবে বসিয়া সবে কথা নাহি কয়।।

ব্রহ্মদেশ হতে ডাকে তারিণী চরণ।

তার ডাকে সাড়া দিল ভকত জীবন।।

Page 509 start

নয়নের জলে দিল যেই অর্ঘ দান।

গ্রহণ করিল তাহা নিজে ভগবান।।

দেশকাল পাত্র ভেদ তাঁর কিছু নাই।

ক্ষুদ্র জ্ঞানে মোরা তাহা বুঝিয়া না পাই।।

জীব পক্ষে আছে বটে কত অসম্ভব।

সয়ম্ভুর কাছে কিন্তু সকলি সম্ভব।।

সামান্য জ্ঞানের বোঝা বহি’ নিজ শিরে।

বিশ্ববাসী নর প্রাণী বুঝিতে না পারে।।

নর সাজে ধরা মাঝে আসে বটে নেমে।

নরের সহিত তুল্য নহে কোন ক্রমে।।

দুই ভাবে করে লীলা প্রভু দয়াময়।

ঐশ ও মানব চক্রে বিভিন্ন প্রথায়।।

ঐশ- চক্রে ধরে প্রভু গিরি গোবর্ধন।

নর- চক্রে শত্রু ভয়ে করে পলায়ন।।

ঐশ- চক্রে চলে তাঁর শুদ্ধ রাস লীলা।

নর-চক্রে রাখে তাঁর গোধনের মেলা।।

নর- চক্রে গুরুচাঁদ ওড়াকান্দি রয়।

ঐশ- চক্রে তারিণীর পক্ক আম্র খায়।।

আসনে নিস্তব্ধ বসি গম্ভীর ঠাকুর।

সুপক্ক আমের গন্ধ ছুটিল মধুর।।

মহাজ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর তাতে ডেকে কয়।

“মধুর আমের গন্ধ কিসে পাওয়া যায়?”

বলিতে বলিতে গৃহ হ’ল ভরপুর।

হেনকালে বলে কথা দয়াল ঠাকুর।।

“অদ্যকার যে তারিখ তাহা দেখে রাখ।

যে যে হেথা আছে বসে সকলেরে ডাক।

আম্রের তত্ত্বের আমি জানি সমাচার।

ব্রহ্মদেশে এই আম্র করেছি আহার।।

ব্রহ্মদেশে আম্র খায় তারিণী সুজন।

আমাকে করেছে সেই আম্র নিবেদন।।

সেই আম্র খাইলাম আমি এই মাত্র।

তারিণী বাড়িতে এলে শুন সব তত্ত্ব।।”

বিস্মিত হইয়া সবে তাকাইয়া রয়।

লিখিয়া রাখিল পরে তারিখ সময়।।

ছুটি লয়ে সে তারিণী দেশে পহুছিল।

ঠাকুরে দেখিবে বলে ওড়াকান্দি গেল।।

আমের সকল কথা হইল প্রমাণ।

সবে কেন্দে বলে “প্রভু স্বয়ং ভগবান”।।

সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী প্রভু গুরুচান।

কহিল তারিণী বাবু বহু ভাগ্যবান।।

---০---