Page 113

সভা বার্তা

এক হবে নমঃশূদ্র ধনী মানী জ্ঞানী ক্ষুদ্র

এ বারতা গেল ঘরে ঘরে।

যেই শোনে সেই কয় একি কাণ্ড মহাশয়

হেন কার্য কিসে হ'তে পারে?

যার যার তার তার আছি মোরা পরস্পর

নিজ দেশে নিজ ভাব লয়ে।

একতা হবে কিসে বাস করি ভিন্ন দেশে

ভিন্ন - ভাব ভিন্ন - ভাষা ক'য়ে?

জ্ঞানী গুণী সাধু যারা সবে কহিলেন তারা

এই কথা ঠিক নাহি বল।

সবে এক জাতি মোরা হাতে হাতে হাত-ধরা

সভা স্থলে চল সবে চল।।

স্ব- জাতি প্রধান যত সব হও একত্রিত

হেন শুভ দিন কি গো পাবে ?

চল চল চল ভাই বৃথা তর্কে কাজ নাই

তীর্থ ফেলে কেন ঘরে র'বে ?

শুনিয়াছি এই বার্ত্তা আসিবেন বড় কর্ত্তা

হরি পুত্র গুরুচাঁদ নাম।

মহাধনী মহা গুণী সমাজের শিরোমণি

রূপে গুণে তিনি অনুপম।।

হরিচাঁদ পিতা তাঁর যিনি ছিল অবতার

ভাগ্য গুণে এল এই ঘরে।

কিবা বলে বড় কর্ত্তা শুনে আসি সেই বার্ত্তা

দেখি দুঃখ যায় নাকি দূরে।।

দলে দলে লোক ধায় আসে দত্ত ডাঙ্গা গাঁয়

শ্রী ঈশ্বর গাইনের বাড়ী।

মহা ধনবান তিনি অশেষ গুণেতে গুণী

দেশ মধ্যে আছে জমিদারী।।

Page 114 start

অভয় চরণ নাম তস্য পুত্র গুণধাম

দেশ মধ্যে মান কৈল কত।

তার পঞ্চ পুত্র জানি ধনী মানী সবে গুণী

পর উপকারে সদা রত।।

ভবানী শঙ্কর যিনি জ্যেষ্ঠ পুত্র হন তিনি

বিবাহ করিল ওড়াকান্দী।

শশিভূষণের কন্যা রূপে গুণে অতি ধন্যা

গাইন ঠাকুরে হ'ল বন্ধি।।

আদি সভা এই ঘরে নমঃশূদ্র মিলি করে

নেতৃ বর্গ সবে আসি মিলে।

ফরিদপুর খুলনা কেহ বাকী ছিল না

যশোহর বরিশালে চলে।।

যজ্ঞেশ্বর রামতনু সুন্দর সুঠাম তনু

ওড়াকান্দী গোমস্থা যে ছিল।

স্ব স্ব দেশে স্ব - প্রধান এই দুই ভাগ্যবান

প্রভু সনে দত্ত ডাঙ্গা এল।।

শ্রী বিধুভূষণ নাম ওড়াকান্দী যার ধাম

চৌধুরী বংশেতে বংশপতি।

তারিণী পোদ্দার যিনি গোব্ রা নিবাসী তিনি

দত্ত ডাঙ্গা এল হৃষ্ট - মতি।।

বাস করে কালিয়ায় ধন্য জগন্নাথ রায়

সরদার আদি পরিচয়।

পাটগাতি গ্রামে ঘর ধনী যেন জমিদার

মণ্ডল উপাধি তারা কয়।।

দ্বারিক মণ্ডল নাম রূপে গুণে অনুপম

দত্ত ডাঙ্গা আসি পহুছিল।

বরিশাল জিলা বাসী গ্রামের নাম চাঁদসী

কেশব ডাক্তার সেথায় এল।।

যশোহরে পারখালী যত বাড়ৈ বংশাবলী

সেই দেশে বাস করে সুখে।

সে - বংশে প্রধান যিনি সভা মধ্যে এল তিনি

যুক্তি পূর্ণ কথা তার মুখে।।

নব কৃষ্ণ যার নাম পাটকেল বাড়ী ধাম

তথা বাস করে মহাতেজে।

নিমন্ত্রণ পেয়ে যায় সেই ধনী মহাশয়

যথাযোগ্য মাননীয় সাজে।।

নড়াইল জমিদার তুলনা মিলেনা যার

তস্য গৃহ - সন্নিকটে বাস।

আদালতে কাজ করে মান্য আছে দেশ ভরে

নাম তার পিয়ারী বিশ্বাস।।

নিমন্ত্রণ যবে পান দত্ত ডাঙ্গা অধিষ্ঠান

হ'ন সেই গুণী মহাশয়।

রঘুনাথ সরকার থাকে ওড়াকান্দী পর

সভা লাগি দত্ত ডাঙ্গা যায়।।

বড়বেড়ে গ্রামে ঘর পোদ্দার উপাধী যার

রামধন নামে মহাধনী।

হরিদাস পুর গাঁয় হীরা বংশে জন্ম লয়

যুধিষ্ঠির নামে হ'ন যিনি।।

গোপীনাথপুর বাসী চৌধুরী কুলেতে শশী

দেব নারায়ণ যার নাম।

রামলোচন বিশ্বাস রাউৎ খামারে বাস

বহু কার্য করে গুণধাম।।

সাচিয়া দহেতে রয় বিশ্বাস উপাধি কয়

শ্রী উমাচরণ মহাশয়।

ময়মনসিংহে বাস রামনাথ বিশ্বাস

স্কুল করে সে ঘোনা পাড়ায়।।

দ্বারিক মোক্তার কয় মান্যবান অতিশয়

কুতূহলে যায় দত্তডাঙ্গা।

ভাগ্যবান তিনি অতি স্বজাতির প্রতি প্রীতি

বাস করে শহর যে ভাঙ্গা।।

নমঃকুলে মহারথী ছিল যত ইতি উতি

হৃষ্ট মতি সবে যায় চলে।

ওড়াকান্দী হতে প্রভু তার মধ্যে যেন বিধু

সভাপানে ধায় দল বলে।।

Page 115 start

সঙ্গে চলে যজ্ঞেশ্বর সঙ্গে নিয়ে যজ্ঞেশ্বর

গুরুচাঁদ রূপে মহেশ্বর।

শ্রী বিধু ভূষণ ধায় তেজে যেন সিংহ - ধায়

প্রভুর সম্মুখে জুড়ি কর।।

নিজাম কান্দিতে ধাম যাদব বিশ্বাস নাম

প্রভুর তরণী পরে ওঠে।

যাদব মল্লিক নাম অতিশয় গুণধাম

প্রভু সঙ্গে চলে কর পুটে।।

মহেশ বেপারী যিনি সাধকের শিরোমণি

মাঝি সাজি বসে হা 'লে গিয়ে।

“শ্রী হরি চাঁদের জয়“ পতাকাতে লেখা রয়

আগা' নায়ে দিল তা ' উড়ায়ে।।

অনুমান বিশ জন একত্রে করে গমন

যাত্রাকালে হরিধ্বনি দিল।

পুরবাসী হতে নারী সুকন্ঠে সুরব করি

হুলুধ্বনি সকলে করিল।।

যে - পথে তরণী চলে নর নারী দলে দলে

ঘাটে আসি সন্মান জানায়।

নরে বলে হরি হরি হুলুধ্বনি করে নারী

ধান্য দূর্ব্বা কেহ শিরে দেয়।।

চন্দন বাঁটিয়া কেহ সাজায় প্রভুর দেহ

মাল্যদান কেহ করে গলে।

একে'ত সুন্দর চাঁদ মনোহর গুরুচাঁদ

ফুল সাজে ভরাচাঁদ চলে।।

নয়নে নেহারে যেই সেই বলে ' নেই নেই '

“মন প্রাণ কিছু মোর নাই।

কিবা রূপ দেখিলাম! দেখিয়া যে মজিলাম!

মনে বলে সাথে সাথে যাই।।

কোথা ছিল ঢাকা রূপ ভরিয়া নয়ন কূপ

মরমের মণি- কোঠা ভরে।

অফুরন্ত রূপ রাশি কোথা লাগে রবি শশী

কোটী কোটী পদে আছে পড়ে।।

অধরে মধুর হাসি মুক্তা যেন রাশি রাশি

গলে 'গলে ' পড়ে ধরাতলে।

চাহিলে নয়ন পানে হেন ভাব হয় মনে

জন্মে জন্মে রহি পদ তলে।।

হাসি হাসি কথা কয় মন প্রাণ কাড়ি লয়

সুধা যেন ঝরে মুখ হতে।

যেই দেখে সেই ভোলে ভাসিয়া নয়ন জলে

বলে “প্রভু! রাখ চরণেতে।।

অপরূপ রূপ হেরি যত সব নরনারী

বলে সবে এ কোন মানুষ।

রূপ আছে কায়া নেই মনে হয় এই সেই

হরিচাঁদ সহজ পুরুষ।।

তাঁরে দেখিয়াছি সবে তুল্য - রূপ এই ভবে

আর কোথা মোরা দেখি নাই।

সেই রূপ সেই ভাব তার কান্তি সে - স্বভাব

এই মানুষেতে মোরা পাই।।

এ যেন সে হরিচাঁদ হয়ে এল পূর্ণ চাঁদ

নব ভাব - রূপ কান্তি লয়ে।

নবীন বয়স দেখি করুণ কোমল আঁখি

হরি- রূপে রয়েছে মিশিয়ে।।

দীন বেশে ছিল হরি সেই রূপ পরিহরি

রাজ বেশে এল মহারাজ।

মনে তাঁর কিবা আছে জানা সব যাবে পিছে

কোন লাগি' পরে রাজ সাজ।।

সবে এই মত কয় তরণী চলিয়া যায়

মঙ্গল আরতি গাহে ভক্ত।

মহেশ বসিয়া হা'লে হরি বলে হেলে দুলে

গুরুচাঁদ - পদে অনুরক্ত।।

পূর্ব্বেতে নিয়ম ছিল আসিলে শরৎ কাল

বিজয়ার দিনে করি যাত্রা।

দ্বিগ্বিজয় করিবারে সাঙ্গ পাঙ্গ সঙ্গে করে

রাজ গণে দিত জয় - বার্ত্তা।।

Page 116 start

দিকে দিকে জয় জয় প্রজাগণে সবে কয়

রাজা চলে মনের আনন্দে।

কবি - কুল সেই কথা ছন্দে বাঁধে করি গাঁথা

রাখে সব পুরাণ - প্রবন্ধে।।

বিজয়ার অভিযান হ'ত রাজা আগুয়ান

দেশে দেশে জয় পত্র পায়।

ফিরিয়া আপন ঘরে মহোল্লাসে যজ্ঞ করে

বীর গাঁথা ঘরে ঘরে কয়।।

দেখি এই শোভা যাত্রা মনে পড়ে গেই বার্ত্তা

গুরুচাঁদ রাজ রাজেশ্বর।

শুভ যাত্রা করি যায় সাঙ্গ পাঙ্গ সঙ্গে রয়

শুভ্র কান্তি শুদ্ধ কলেবর।।

যে পথে তরনী চলে উচ্চ কন্ঠে জলে স্থলে

গায় সবে মঙ্গল আরতি।

তরি চলে কল কল আঁখি করে ছল ছল

দলে দলে করিছে প্রণতি।।

বিল ছাড়ি তবে তরী মধুমতি-বক্ষ ধরি

মহাবেগে চলিল দক্ষিণে।

যেই দেখে সেই কয় এই নায় কেবা যায়

জয় ধ্বনি করে নাম শুনে।।

কেন জয় ধ্বনি করে কেহ না বুঝিতে পারে

মনের আগল গেছে খসি।

তীর বেগে তরি ছুটে বসিয়া নদীর তটে

একি কাণ্ড! সবে ভাবে বসি।।

পরদিন শুভ প্রাতে তরণী লাগিল ঘাটে

দত্তডাঙ্গা ঈশ্বর - আলয়।

প্রভু আগমন শুনি ধনী মানী মূর্খ জ্ঞানী

সবে আসি ঘাটেতে উদয়।।

কি ছিল প্রভুর মনে কেবা বল তাহা জানে

ঘাটে যবে লাগিল তরণী।

উঠি ছাপ্পরের পরে প্রভু পদ্মাসন করে '

স্থির হয়ে বসিলা অমনি।।

ডগ - মগ উঠে রবি ভুবন - মোহন ছবি

রক্তচ্ছটা ছুটিয়া আসিল।

সবে বলে একি হায় রবি ছুটে পড়ে নায়

শূন্য ছাড়ি ভূতলে নামিল।।

রবি আজ কোনখানে ভূতলে কিংবা গগনে

জ্ঞান - হারা হয়ে সবে কয়।

নৌকায় যে রূপ রাশি কোথা পাবে রবি শশী

তারা যেন পদতলে রয়।।

সবে বলাবলি করে ' এ মানুষ কোথা ছিল রে

রাজ বংশে রাজার তনয়।

ব্যথিত নমঃর ঘরে আসিল কেমন করে

অসম্ভব বুঝিনু নিশ্চয়।।

ভাগ্যবান যারা যারা স্বচক্ষে দেখিল তারা

গুরুচাঁদ - পদে জ্যোতিঃ ফুটে।

'জয় গুরুচাঁদ জয়' আকাশে বাতাস কয়

পড়ে সবে ভূমি তলে লুটে।।

পূর্ণ - ব্রহ্ম পুর্ণানন্দ বিশ্ব গুরু গুরুচন্দ্র

প্রেম মকরন্দ দিতে এল।

গুরুচাঁদ এল ঘাটে সকলে চরণে লুটে

মহানন্দ পিছে পড়ে র'ল।।

---০---