Page 518

পরম দয়াল শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ (লক্ষ্মীখালী ভ্রমণ)


“তোমারি দেওয়া প্রাণেতোমারি দেওয়া দুঃখ।”-কান্ত কবি রজনীকান্ত

প্রমথ রঞ্জন চলি গেলেন লন্ডন।

প্রভুর নিকটে পত্র দেয় ঘন ঘন।।

গোপাল স্বীকার করে চৌদ্দ হাজার।

দেশে দেশে রটে’ গেল সেই সমাচার।।

স্তম্ভিত হইল সবে শুনি সেই কথা।

যেই শোনে শিহরিয়া হেট করে মাথা।।

ধনী মানী জ্ঞানী মূর্খ বহু লোক জন।

ওড়াকান্দি যাতায়াত করে সর্বক্ষণ।।

যারে দেখে প্রভু তারে ডাক দিয়া কয়।

“অসম্ভব কথা এক শোন মহাশয়।।

Page 519 start

আমার একটি শিস্য নামেতে গোপাল।

বাস করে বাদাবনে শুধু নোনা জল।।

উপরে দেখিলে তারে বোঝা নাহি যায়।

মহাশক্তিশালী বটে সেই মহাশয়।।

বহু কীর্তি আছে তার যাহা শোনা যায়।

দেশবাসী সবে তার জানে পরিচয়।।

আমি যবে লীলামৃত গ্রন্থ ছাপিয়াছি।

সব টাকা সে গোপাল নিজে দিল যাচি।।

সে ত’ মাত্র পাঁচ শত বেশী টাকা নয়।

এবারে করেছে যাহা অত্যাশ্চর্য্যময়।।

প্রমথ বিলাত যেতে করিল মনন।

আমি বলি টাকা দিতে পারি না কখন।।

শুনিয়া গোপাল মোরে করে অঙ্গীকার।

একা টাকা দিবে সেই চৌদ্দ হাজার।।

আর যত মতো’ আছে সব টাকা দিবে।

সেই অর্থে সে প্রমথ বিলাতে পড়িবে।।

এত বড় দানবীর দেখিয়াছ চোখে?

বারুণীতে এসো আমি দেখাব তাহাকে।।”

প্রভুর বচনে সবে ধন্য ধন্য কয়।

সকলেই শ্রীগোপালে দেখিবারে চায়।।

এদিকে গোপাল সাধু করিয়াছে মন।

প্রভুকে আবার নিবে আপন ভবন।।

মনে মনে তার এক গূঢ় ইচ্ছা রয়।

প্রকাশ করে না তাহা মনে মনে কয়।।

প্রভুর আদেশে তেহ মন্দির গড়িল।

মন্দির শিখরে বটে কেতন উড়িল।।

কিন্তু তা’তে তুষ্ট নহে সাধুজীর মন।

মনে মনে এই ইচ্ছা তার সর্বক্ষণ।।

দয়াময় গুরুচাঁদে আনিয়া মন্দিরে।

পুজিবে চরণ পদ্ম দুটি আঁখিনীরে।।

জীবন্ত বিগ্রহ “প্রভু হরি-গুরুচাঁদ”।

সেই পদে পুষ্প দিতে তার মনোসাধ।।

সেই ভাব মনে করি ওড়াকান্দি যায়।

দরবার করিলেন পূজার সময়।।

প্রভু বলে “মোর যেতে বাধা কিছু নাই।

কিছুদিন পরে বটে আমি যেতে চাই।।

এবে তুমি গৃহে গিয়ে কর আয়োজন।

সপ্তাহ পরেতে হেথা কর আগমন”।।

মণিহারা ফণী যেন পেল নিজ মণি।

সেই ভাবে গৃহে ছোটে সাধু গুণমণি।।

দেশে দেশে সকলেরে দিল সমাচার।

“লক্ষ্মীখালী আসিবেন প্রভু গুণাকর।।”

সমাচার পেয়ে যেন সবে আত্মহারা।

মহানন্দে নাম গানে সবে মাতোয়ারা।।

বরিশাল যশোহর ফরিদপুরেতে।

যত ভক্ত ছিল সবে এল হৃষ্ট চিতে।।

ঘর দ্বার পরিষ্কার করে ভক্তগণে।

হরষিত, কাশীনাথ থাকে সনে সনে।।

মিস্ত্রীডাঙ্গাবাসী ভক্ত গণেশ মণ্ডল।

লক্ষ্মীখালী উপনীত বলে হরিবোল।।

তার সাথে সাথে চলে সাধু পতিরাম।

গোপালের আদি শিস্য অতি গুণধাম।।

বেতকাটাবাসী সাধু নাম নিবারণ।

সোনারাম, রতিকান্ত চলে তিনজন।।

মাদুরপাল্টায় বাস শ্রীমধুসূদন।

“কবিরাজ” খ্যাতি ভক্ত তিনি একজন।।

তার ভ্রাতুষ্পুত্র হল শ্রীসখীচরণ।

গোপালের শ্রেষ্ঠ ভক্ত তিনি একজন।।

দিগরাজবাসীধনী নাম নিবারণ।

শ্রীরাইচরণ তার ভাই অন্যজন।।

কনিষ্ঠ অভয় নামে রচক সাধক।

বহুগান রচিয়াছে হইয়া পুলক।।

বুড়বুড়ে বাসী সাধু শ্রীপূর্ণ চরণ।

গোপালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত সেইজন।।

উপাধি মৌলিক তার অতি নিষ্ঠামতি।

তাহার হৃদয়ে সদা ভক্তির বসতি।।

কাইনামারীতে বাস উপাধি মণ্ডল।

শ্রীমহিত রামধন মনে নাহি গোল।।

আড়ংঘাটায় বাস শ্রীকালীচরণ।

Page 520 start

উপাধি “ঠাকুর” তার অতি মহাজন।।

রোমজাইপুর বাসী শ্রীগুরু চরণ।

তার ভ্রাতুষ্পুত্র যিনি নামে পঞ্চানন।।

আদিতে “তাপালী” বলি দিত পরিচয়।

প্রভুর আদেশে পরে “রায়” বলি কয়।।

বড়দিয়া বাস করে নাম কেনারাম।

শ্রীমন্ত বিশ্বাস যিনি বাশতলী ধাম।।

চৌমোহনা গ্রামে বাস নাম লক্ষ্মীকান্ত।

এই মত দেশে দেশে যত সাধু সন্ত।।

একে একে উপস্থিত হ’ল লক্ষ্মীখালী।

শ্রীঅভয়চরণ রায় বাড়ী ধনখালী।।

অভয় চরণ রায় অভয় হালদার।

শ্রীপূর্ণ চন্দ্র মৌলিক জানি সাথে তার।।

তিন জনে এক সঙ্গে থাকে এক ঠাই।

মনে হয় সহোদর যেন তিন ভাই।।

এই মত সাধু যত এল লক্ষ্মীখালী।

সকলেরে শ্রীগোপাল বলিলেন খুলি।।

দয়া করি দয়াময় আসিবে এ দেশে।

তারে সবে কর পূজা বিশেষ বিশেষে।।

দেশ ধন্য হ’বে তা’তে ঘুচিবে জঞ্জাল।

দয়াময় গুরুচাঁদ পরম দয়াল।।

আর এক কথা সবে শুন দিয়া মন!

এ দেশে আসিবে প্রভু কিসের কারণ?

এ জাতি তুলিতে প্রভু সদা চেষ্টা করে।

তাই কত কষ্টে দেখ দেশে দেশে ঘোরে।।

তাই প্রভু এ জাতির মঙ্গল কারণ।

পাঠাইলা নিজ পৌত্র বিলাত ভুবন।।

একা প্রভু পারে বটে এ কার্য সাধিতে।

পারে বটে প্রভু একা সব অর্থ দিতে।।

কিন্তু তিনি ইচ্ছা করে সবে অর্থ দিক।

প্রভুর এ কার্যে সব থাকুক শরিক।।

এ বড় দয়ার কথা শুন সর্বজন।

প্রভু দিতে চায় সবে অমূল্য রতন।।

আমি বলি এই কার্যে যে যে অর্থ দেয়।

সে বংশে বিদ্বান বহু আসিবে নিশ্চয়।।

যে যেখানে দিবে অর্থ প্রভু সেথা যাবে।

প্রভুর কৃপায় তারা ধন্য হ’য়ে র’বে।।

এই কথা যবে বলে গোপাল গোঁসাই।

“জনে জনে বলে মোরা অর্থ দিতে চাই”।।

গোপাল করিল পরে পথ নিরূপণ।

কোন কোন গৃহে প্রভু করিবে গমন।।

এইভাবে স্থির যবে হ’ল সমুদয়।

ওড়াকান্দি প্রতি তবে সে গোপাল ধায়।।

প্রভু আগমন আশে হেথা সর্বজন।

লক্ষ্মীখালী রহে বসি উচাটন মন।।

প্রভুর লীলার তত্ত্ব কেবা কত বুঝে?

কত যে মাধুরী ভরা তার লীলা মাঝে!

কখনে কান্দায় কা’রে কখনে হাসায়।

হাসি-কান্না দিয়ে প্রভু জগত চালায়।।

ওড়াকান্দি শ্রীগোপাল উপস্থিত হ’ল।

গোপালে দেখিয়া প্রভু কহিতে লাগিল।।

“শুন হে গোপাল তুমি মোর বাক্য লও।

কিসে লক্ষ্মীখালী যা’ব সেই কথা কও।।

একে ত’ প্রাচীন আমি তা’তে বলহীন।

ক্রমেই দুর্বল যেন হই দিন দিন।।

তোমাকে দিয়েছি কথা তাহা মিথ্যা নয়।

কিন্তু কোথা যেতে মনে পাই বড় ভয়।

কি জানি কি লোনা জলে গেলে একবার।

ফিরি কি না ফিরি কিবা ঠিক আছে তার।।”

Page 521 start

চতুরের শিরোমণি করে ছলা কলা।

কথা শুনে আর কিছু নাহি যায় বলা।।

নীরব গোপাল সাধু নীরব সকল।

গোপালের চক্ষে বারি করে টলমল।।

কোন কথা নাহি বলে সাধুজী বসিল।

দুই দিন ওড়াকান্দি বসিয়া কাটিল।।

মহাজ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস সুজন।

গোপালের পক্ষে বটে সেই একজন।।

তার কাছে মনোব্যাথা খুলিয়া বলিল।

কোন ভাবে দেশে তার আয়োজন হ’ল।।

কেন্দে কেন্দে বলে শেষে “বিশ্বাস ম’শায়!

লক্ষ্মীখালী বাবা যদি এবে নাহি যায়।।

কত যে বেদনা হ’বে সকলের প্রাণে।

তোমাকে সে ভাব আমি বুঝা’ব কেমনে?

বাবা যদি নাহি যায় আমি কি বাঁচিব?

কোন মুখে দেশে গিয়ে কোন কথা ক’ব?”

এতেক বলিয়া সাধু কান্দে কতক্ষণ।

যজ্ঞেশ্বর বলে “সাধু! সুস্থ কর মন।।

আমি দেখি চেষ্টা করে প্রভু কিবা কয়।

সুফল ফলিবে বলে মোর মনে হয়।।”

এদিকে গোপালে ডাকি প্রভু সর্বদায়।

বলে “গোপাল! আর কেন র’য়েছ হেথায়।।

শুধু শুধু এইখানে বসে না থাকিও।

দিন ক’ত পরে মোরে টাকা দিয়ে যেও।।”

তথাপি গোপাল নাহি ছাড়ে ওড়াকান্দি।

দিবারাত্রি যায় তার শুধু কান্দি কান্দি।।

হেনকালে একদিন কিছু রাত্রি হ’লে।

প্রভুর নিকটে গিয়া যজ্ঞেশ্বর বলে।।

“এক কার্যে কর্তা! আমি বুঝি না সন্ধান।

গোপাল গোঁসাই হেথা পড়ে থাকে কেন?

বারে বারে গৃহে যেতে তারে বলা হয়।

চুপ করে বসে থাকে ঘরে নাহি যায়।।

দিবানিশি দুই চোখে ঝরিতেছে জল।

বুঝি না এসব কান্না দিবে কোন ফল?

আমি বলি এক কথা বলে দিন তারে।

সুখী হ’য়ে ঘরে গিয়ে আসুক সে ফিরে।।”

কথা শুনে বলে তবে প্রভু দয়াময়।

“শুন হে আমার কথা বিশ্বাস ম’শায়।।

যত কিছু বল তুমি সব মানিলাম।

তোমার সঙ্গেতে তর্কে আমি হারিলাম।।

কোন কাজ হবে তাতে বল মোরে তাই।

মনের সঙ্গে বটে পারা যাওয়া চাই।।

মন যদি নাহি বলে কি করিবে তুমি।

মনের বিরুদ্ধে কাজ নাহি করি আমি।।

কথা কাটাকাটি করে কিবা হ’বে ফল।

তুমি বল দেশে ফিরে যাউক গোপাল।।”

এত যদি বলিলেন প্রভু ভাবময়।

নিরুত্তর যজ্ঞেশ্বর চুপ করে রয়।।

তবে ত’ গোপাল ছাড়ে সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস।

ধূলিসাৎ হ’ল তার যত কিছু আশ।।

পরদিন প্রাতেঃ উঠি বিদায় মাগিল।

“কোন দুঃখ মনে তুমি কর না গোপাল।

এক ডুবে কেবা পায় সাগরের তল?

এবে বাড়ী যাও ফিরে সরল অন্তরে।

দেখা যাক হরিচাঁদ কি দিয়ে কি করে?”

প্রভুর বচনে তার নয়ন ঝরিল।

সঙ্গী সাথী সহ সাধু দেশেতে ফিরিল।।

এদিকে মিশেছে আসি সব ভক্তগণ।

প্রভুর কারণে সব উচাটন মন।।

কিছুই সংবাদ নাই ওড়াকান্দি হ’তে।

সকলে চাহিয়া শুধু রহে আশা পথে।।

হেনকালে সঙ্গীসহ আসিল গোপাল।

মলিন বদন তার চক্ষে বহে জল।।

Page 522 start

ভক্ত সবে তারে ঘিরি বসিয়া রহিল।

সাহস করিয়া কেহ কিছু না কহিল।।

ক্ষণপরে চক্ষু মুছে কহিল গোপাল।

“কি আর বলিব মোর মন্দ যে কপাল।।

মম কর্ম দোষে প্রভু নাহি এল হেথা।

কোন মুখে বল আমি বলি সেই কথা।।

যদি না আসিল প্রভু কাঙ্গালের সখা।

বল কোন লাগি আর প্রাণ যা’বে রাখা?”

বিলাপ করিয়া সাধু পড়িল ধরায়।

শত শত ভক্ত কান্দে পড়িয়া ধূলায়।।

সে কি যে করুণ দৃশ্য কি দিব তুলনা।

এত কান্না কাঁদে নাই ব্রজের ললনা।।

এত কাঁদা কাঁদে নাই পতি হারা সতী।

রাজ্য হারা কাঁদে নাই এমন ভূপতি।।

পুত্র হারা মাতা কভু এত কাঁদে নাই।

ভাই হারা হয়ে এত কাঁদে নাই ভাই।।

নরনারী একাকার বাহ্যজ্ঞান হারা।

দলে দলে শবাকারে পড়ে আছে তারা।।

কে কা’রে তুলিবে ধরে সবে হতজ্ঞান।

সে কান্নায় গলে’ যায় কঠিন পাষাণ।।

কেন্দে কেন্দে সবে শুধু করে হায়! হায়!

কেন রে পাষাণ প্রাণ আর দেহে রয়?

কোন চক্রী খেলে চক্রী কেবা তাহা জানে?

ওড়াকান্দি কিবা হল বলিব এখনে।।

গোপাল কান্দিয়া তবে দেশে ফিরে গেল।

ভকতের দুঃখে প্রভু আপনি গলিল।।

কিছু পরে ডেকে বলে সেই যজ্ঞেশ্বরে।

“যজ্ঞেশ্বর! সে গোপাল গেছে নাকি ফিরে।।

কি জানি কি যজ্ঞেশ্বর এ হ’ল কেমন।

লক্ষ্মীখালী যেতে এবে চায় মোর মন।।

শীঘ্র করি ডেকে আন কুঞ্জ বিহারীরে।

এখনি চলিয়া যাক সোজা পথ ধরে।।

কোনখানে গোপালেরে যদি দেখা পায়।

ফিরা’য়ে আনুক তারে থাকুক যেথায়।।

আর এক কাজ তুমি কর মহাশয়।

শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ ভক্ত যত এই দেশে রয়।।

সংবাদ পাঠাও তুমি সবার গোচরে।

লক্ষ্মীখালী যা’ব আমি নিয়ে সকলেরে।।”

এত যদি নিজ মুখে প্রভুজী বলিল।

দয়া দেখে যজ্ঞেশ্বর কতই কাঁদিল।।

তখনি কুঞ্জেরে ডেকে আনিল সেখানে।

প্রণাম করিল কুঞ্জ প্রভুর চরণে।।

প্রভু কয় “যাও কুঞ্জ! এখনি ছুটিয়া।

গোপাল সাধুরে আন’ এখানে ধরিয়া।।

বড় ব্যাথা পেয়ে ফিরে গিয়াছে গোপাল।

দেখ দেখি পাও নাকি তাহার নাগাল।।

যেথা দেখা পাও তারে সঙ্গেতে আনিবে।

লক্ষ্মীখালী যা’ব আমি নিশ্চয় জানিবে।।”

শ্রীগোপালের ভক্ত বটে কুঞ্জ একজন।

পূর্ব হ’তে জানে সেই সব বিবরণ।।

মনে মনে তা’তে দুঃখ ছিল বটে তার।

প্রভুর বাক্যেতে কেটে গেল অন্ধকার।।

আনন্দে চলিল কুঞ্জ ছুটিয়া ছুটিয়া।

একজন সঙ্গী সাথে নিল জুটাইয়া।।

ইতিপূর্বে লক্ষ্মীখালী কুঞ্জ যায় নাই।

পথে পথে জিজ্ঞাসায় দেরী হ’ল তাই।।

যে কালে সাধুজী গৃহে উপস্থিত হ’ল।

তার কিছু পরে কুঞ্জ লক্ষ্মীখালী গেল।।

দূর হ’তে শোনে যেন মহা গণ্ডগোল।

আকাশ ভেদিয়া ওঠে ক্রন্দনের রোল।।

মনে মনে ভাবে কুঞ্জ এ বাড়ী নিশ্চয়।

মানুষ মরেছে বলে কাঁদাকাটি হয়।।

কিন্তু যবে উপস্থিত হ’ল সেইখানে।

বড়ই আশ্চর্য কুঞ্জ মানিলেন মনে।।

Page 523 start

কুঞ্জকে দেখিয়া সাধু আসিল ছুটিয়া।

আপনার করে তারে লইল ধরিয়া।।

বসিতে আসন দিল বহু যত্ন করি।

কুঞ্জ না বসিতে চায় আসন উপরি।।

ক্রমে ক্রমে কুঞ্জ বলে সব সমাচার।

শুনিয়া দ্বিগুণ সাধু কান্দিল এবার।।

সকলে ডাকিয়া কেন্দে বলিছে গোপাল।

“শুনেছে তোদের কান্না পরম দয়াল।।

তোরা ব্যথা পাবি বলে দেখ সাথে সাথে।

আপনি পাঠা’ল লোক অভাগারে নিতে।।

এমন দয়াল তোরা পাবি নাক আর।

পরম দয়াল বাবা গুরুচাঁদ আমার।।”

সাধুর বচন শুনে যত ভকতেরা।

উভরায় পুনরায় কাঁদে সবে তারা।।

হতাশে বিষাদে বটে পূর্বে কেন্দেছিল।

এখন সংবাদ পেয়ে আনন্দে কান্দিল।।

একদিন বটে সাধু গৃহেতে রহিল।

কুঞ্জের সঙ্গেতে পরে ওড়াকান্দি গেল।।

ওড়াকান্দি গিয়া পড়ে প্রভুজীর পায়।

দুই চোখে গোপালের অশ্রুধারা বয়।।

প্রভু বলে “আর নাহি কান্দ অকারণ।”

এইভাবে প্রভু বোঝে ভকতের মন।।

শ্রীগুরু চরিত কথা নাশে ভব ভয়।

অলঙ্ঘ্য প্রভুর বাণী মহানন্দ কয়।।

---০---