Page 397

শ্রীশ্রীগুরুচাঁদের লহ্মীখালী হইতে প্রত্যাগমন

প্রভুর বচন রাশি যেন মধু-পোরা।

নর নারী কেন্দে কেন্দে যেন জ্ঞান-হারা।।

কাঞ্চন জননী প্রতি প্রভু ডাকি কয়।

‘‘বড় ক্ষিদে মাগো তুই খেতে দে আমায়।।

নিষ্ঠুরা জননী তুই দয়া মায়া-হীনা।

ক্ষিদে পেয়ে কান্দে ছেলে খেতে কি দিবিনা।।

বালকের প্রায় প্রভু করিছে কাকুতি।

তাহা শুনি কেন্দে ওঠে শ্রীকাঞ্চন সতী।।

দ্রুত গতি ধায় মাতা রন্ধন শালায়।

স্নান লাগি মহাপ্রভু রাহিরেতে যায়।।

ভক্তগণে জনে জনে স্নান করি আসে।

বিস্তৃত প্রাঙ্গণে সবে আহারেতে বসে।।

উত্তরের ঘরে বসে প্রভু দয়াময়।

স্বহস্তে কাঞ্চন দেবী অন্ন আনি দেয়।।

স্বয়ং লহ্মী করিয়াছে অন্নাদি রন্ধন।

তৃপ্তি সহকারে প্রভু করিল ভোজন।।

প্রসাদ বাঁটিয়া দিল সভার ভিতরে।

কেহ শিরে রাখে তাহা কেহ বক্ষে ধরে।।

এই ভাবে প্রেমানন্দে মহোৎসব হল।

মহাপ্রভু লহ্মীখালী রজনী বঞ্চিল।।

অবিরাম করে নাম ভকতের দল।

আনন্দে সবার চোখে ঝরিতেছে জল।।

গোপালের খুল্লতাত নাম জয়ধর।

সূহ্মজ্ঞানী ছিল তিনি বাক্যে তৎপর।।

গোপালের মামা যার নাম সোনারাম।

সেই মামা এই খুড়া তারা ছিল বাম।।

প্রভুকে দেখিয়া দোঁহে ভাবে মনে মন।

‘‘এমন মানুষ মোরা দেখিনি কখন।।

এতদিন গোপালেরে ভাবিয়াছি মন্দ।

ঠাকুরকে দেখিয়া দূর হল সব সন্দ।।

Page 398 start

কুলের গৌরব পুত্র শ্রীগোপাল চন্দ্র।

মোরা ধন্য বংশে পেয়ে হেন কুল-চন্দ্র।।

পুত্র নহে পিতা অদ্য হয়েছে গোপাল।

কেটে গেছে নয়নের কুয়াসার জাল।।

উভয় বংশের ভার দিব যে গোপালে।

ধন্য হবে দুই বংশ গোপালে মানিলে।।

এই ভাবে আলাপন করি দুই জনে।

প্রণাম করিল আসি প্রভুর চরণে।।

প্রভু কয় ‘‘শুন বলি হালদার মশায়।

তোমার সঙ্গেতে পূর্ব্বে হল পরিচয়।।

হাওলাদার জয়ধর গোপালের খুঁড়া।

উভয়ে জ্ঞানেতে শ্রেষ্ঠ বয়সেতে বুড়া।।

ভেবে দেখ দিন বেশী নাহিক সম্মুখে।

সব ফেলে যেতে হবে যথন সে ডাকে।।

জনম ভরিয়া কত করিয়াছ খেলা।

কি কি করে বল দেখি কেটে গেল বেলা।।

শেষ খেয়া-ঘাটে যবে যাইবে দুজনে।

কিবা সাথে নিয়ে যাবে ভেবেছ কি মনে?

পারে যেতে কড়ি লাগে সেই কড়ি কই?

কিছু নিলে হবে নারে হরি নাম বই।।

সে-কড়ির কি-জোগাড় করেছ দুজনে?

কোন দিনে সেই কথা ভেবেছ কি মনে?

প্রভুর বচন শুনি উভয়ে অজ্ঞান।

কেন্দে বলে ‘‘রক্ষা কর ওহে ভগবান।।

মোহের আঁধারে চক্ষু ঢাকা এতদিনে।

দয়া করে জ্ঞান দানে বাঁচালে দুজনে।।

আমাদের কিছু বটে নাহিক সম্বল।

সম্বলের মধ্যে মাত্র আছে শ্রীগোপাল।।

মোরা ধন্য বংশ ধন্য গোপালের গুণে।

গোপালে ধরিয়া যদি পাই তোমা ধনে।।

তোমাকে গোপাল চেনে মোরা নাহি চিনি।

ভরসা গোপাল মাত্র ওহে গুণমণি।।’’

এত বলি উভয়ের চক্ষে ঝরে জল।

মহাপ্রভু বলে ‘‘কথা শুনহে গোপাল।।

তোমার মাতুল আর খুড়া মহাশয়।

উভয়েরে যত্ন করে রাখিও সদায়।।

উভয়েরে ডাকি পরে বলে দয়াময়।

আমার বচন শোন দুই মহাশয়।।

জীবনে গোপালে দোঁহে ছাড়িও না ভুলে।

গোপালের গুণে কুল পাইবে অকুলে।।

তদবধি জয়ধর সব ছেড়ে দিল।

গোপালের সঙ্গে আসি একত্র হইল।।

যাবৎ জীবিত ছিল ছিল একমনে।

গোপাল পালিল তাঁরে পরম যতনে।।

কাঞ্চন জননী দেবী নিজ-মাতা প্রায়।

নিজহস্তে জয়ধরে সেবাদি করয়।।

মহানন্দে জয়ধর সর্ব্বক্ষণে কয়।

‘‘মোর মত সুখী কেহ নাহি এ ধরায়।।

মাতা মোর পূর্ণলহ্মী কাঞ্চন জননী।

গোপাল আমার বাবা ভক্ত শিরোমণী।।

যাহাদের পায়ে আসি সকলে লোটায়।

তারা মোরে যত্ন করে নাওয়ায় খাওয়ায়।।

রাজা মহারাজা নহে আমা হতে ধন্য।

এসব হয়েছে শুধু গোপালের জন্য।।

আমি খুড়া নড়াবড়া কোন গুণ নাই।

তবু দেখ সর্ব্বক্ষণ কত শান্তি পাই।।

ক্ষণে ক্ষণে করি আমি দাদাকে স্মরণ।

ভাবি হায় দাদা যদি থাকিত এখন।।

সাজান বাগানে তার ফলিয়াছে ফল।

সেই ফল ভোগ করি একাই কেবল।।

চিরকাল একসঙ্গে সব করিয়াছি।

দাদা মোরে সব দেছে আমি কি দিয়াছি?’’

এত বলি কান্দিতেন সেই মহাশয়।

নরপতি সমসুখী জীবন সন্ধ্যায়।।

Page 399 start

বিষয় সম্পত্তির তাঁর যাহা কিছু ছিল।

সনোসুখে সব ধরে গোপালকে দিল।।

পঞ্চদশ বর্ষ পরে সেই মহাশয়।

জীবলীলা সাঙ্গ করি স্বর্গে চলি যায়।।

সংক্ষেপে জীবনী তাঁর করিনু লিখন।

মূল সূত্রে আসি কথা বলিব এখন।।

দুই দিন রহে প্রভু লহ্মীখালী গাঁয়।

লক্ষ লক্ষ লোক এল গোপাল আলয়।।

রাজসুয় যজ্ঞ যথা করে যুধিষ্ঠির।

সেই মত কার্য্য করে গোপাল সুধীর।।

প্রভুর লাগিয়া আনে দ্রব্য সমুদয়।

গুরুর সেবার যোগ্য যাহা মনে লয়।।

বস্ত্র আনে ছত্র আনে থাল থাল বাটি।

বালিশ তোষক আনে শীতল যে পাটি।।

লেপ আনে মূল্যবান ছড়ি একখানি।

জোড়বস্ত্র সবই আনে জোড়ের উড়ানী।।

তৃতীয় দিবসে প্রভু গৃহে যেতে চায়।

গোপাল কান্দিয়া বলে যাহা ইচ্ছা হয়।।

তোমার ইচ্ছায় চলে ব্রহ্মান্ড সকল।

আমার ইচ্ছা যে প্রভু সকলি বিফল।।

দীনে যদি মহামূল্য রত্ন কভু পায়।

সে রত্ন ছাড়িতে কভু প্রাণে কি জুড়ায়।।

অসংখ্য রত্নের খনি আছে চরণে।

সেই প্রভু দয়া করে এসেছে এখানে।।

আমার ইচ্ছাতে প্রভু সব জান তুমি।

যাহা ইচ্ছা কর বাবা কি বলিব আমি।।

প্রভু কয় হে গোপাল মোর বাক্য ধর।

যাহা বলি সেই মত কার্য্য তুমি কর।।

এবাড়ী আমার বাড়ী সকলি আমার।

এসেছি, আসিব হেথা আর কতবার।।

আমি বলি এবাড়িতে আছি সর্ব্বক্ষণে।

বিশ্বাস রাখিলে তুমি দেখিবে নয়নে।।

আর এক কথা বলি রাখিও স্মরণে।

এক কার্য্য আজ আমি করিনু এখানে।।

ওড়াকান্দি এক খুটা আমি রাখিলাম।

অন্য খুটি লহ্মীখালী আমি পুতিলাম।।

প্রহরী সাজিয়া রক্ষা কর এই খুটা।

নিশ্চয় জানিও এই বাক্য নহে ঝুটা।।

প্রভুর বচন শুনি সাষ্টাঙ্গে গোপাল।

ধরায় লুটায়ে পড়ে চক্ষে ঝরে জল।।

কাঞ্চন দেবীরে তবে প্রভু বলে ডাকি।

কি গো মাতা কোন কথা তুমি বল নাকি।।

আমি যাহা বলি তাহা শোন মন দিয়ে।

এই কথা কোন দিনে যেওনাক ভুলে।।

মা বলে ডেকেছি তোমা শোন ঠাকুরাণী।

নারী জাতি আমি কিন্তু বেশী নাহি মানি।।

আমার জননী ছিল দেবী শান্তি মাতা।

তাঁর ছেলে মা মা বলে নহে তুচ্ছ কথা।।

আমার মায়ের মত থাকিও পবিত্র।

সাবধান ইহা নাহি ভুল ক্ষণ মাত্র।।

মাতা কয় ‘‘দয়াময় কিছু নাহি জানি।

কখন ভুলিনা যেন তোমার এ বাণী।।

মম পতি তব দাস যেন সদা রয়।

পতির চরণে যেন মোর মতি ধায়।।

পতি যেন সুখে থাকে হরিভক্ত হয়।

পতি চিন্তা থাকে যেন আমার হৃদয়।।

মাতার বচন শুনি প্রভু বলে ধন্য।

তোমাকে বলেছি মাতা শুধু এই জন্য।।

পতির মঙ্গল চিন্তা সতীর সাধনা।

পতি ভিন্ন সতী নারী কিছুত জানেনা।।

বড়ই আনন্দ হল শুনি তব কথা।

ধন্য সতী নিষ্ঠামতি অতি পতিব্রতা।।

এত বলি দয়াময় বিদায় মাগিল।

হুলুধ্বনি, জয়ধ্বনি সকলে করিল।।

Page 400 start

বাড়ী ছাড়ি উঠে প্রভু নৌকার উপর।

গোপাল চলিল সঙ্গে প্রেমে থর থর।।

হেনকালে দেখ এক মধুর ঘটনা।

স্বমুখেতে প্রভু যাহা করিল রটনা।।

প্রভু লাগি যে যে দ্রব্য গোপাল আনিল।

ভক্তগণে বয়ে নিয়ে নৌকাতে রাখিল।।

সকল আনিল বটে রহিয়া সবাই।

তোষকাদি আনিবারে কার মনে নাই।।

কাঞ্চন জননী যবে আসিলেন ফিরে।

দেখিলেন তোষকাদি খাটের উপরে।।

ত্রস্তে-ব্যস্তে সে জননী আপনি তখন।

কক্ষ পরে তোষকাদি করিল গ্রহণ।।

দ্রুত গতি ঘাট প্রতি চলিছে জননী।

ঘাট হতে নৌকা তবে ছাড়িল তখনি।।

সকলে ঘাটের কাছে দাঁড়াইয়া রয়।

ধীরে ধীরে চলে তরী এমন সময়।।

দূর হতে ডাকে মাতা করিয়া মিনতি।

‘‘ক্ষণ মাত্র রাখ’’ নৌকা জগতের পতি।।

তোমার শয্যার সজ্জা সাথে করি লও।

দেয়া দ্রব্য দয়াময় কারে দিয়ে যাও।।

ভাবময় মহাপ্রভু ভাবে বাধ্য রয়।

দাঁড়ি গণে ডেকে বলে প্রভু এ সময়।।

‘‘কুলেতে ভিড়াও তরী কর কিছু দেরী।

দেখ দেখি কে আসিছে এত তাড়াতাড়ি।।

সোণার বরণ দেখি বনদেবী প্রায়।

দেখ দেখি কে আসিছে ছুটিয়া ত্বরায়।।’’

সকলে চাহিয়া তারে চিনিল অমনি।

তারা বলে ‘‘এ যে মাতা কাঞ্চন জননী।।’’

প্রভু কয় হায় হায় মাতা ছোটে কেন?

যাও যাও শীঘ্র শীঘ্র সেই তত্ত্ব জান।।

বলিতে বলিতে মাতা ঘাটেতে উদয়।

প্রচন্ড লেপের বোঝা কক্ষ পরে রয়।।

প্রভু বলে ‘‘কি গো মাতা এত ব্যস্ত কেন?’’

মাতা কয় দয়াময় সব তুমি জান।।’’

তোমার লেপের বোঝা পড়ে ছিল পাছে।

এসব আনিতে সবে ভুল করিয়াছে।।

তোমার লেপের বোঝা আনিয়াছি বয়ে।

দয়া করে এই সব যাও তুমি নিয়ে।।

প্রভু বলে ধন্য ধন্য তুমি সতী মেয়ে।

ভক্তি গুণে তুমি মোরে রাখিলে বান্ধিয়ে।।

দাঁড়ি যারা দ্রুত তারা তোষকাদি নিল।

জয়ধ্বনি করি তবে তরণী ছাড়িল।।

ভোলা নদী ধরি গেল বাদার নিকটে।

পশ্চিমে চলিল নৌকা তারপরে বটে।।

গভীর বনের বাজ্য নদীর কিনারে।

প্রভুর তরণী চলে মধ্যনদী ধরে।।

খড়মা নদীর বুকে তরী চলি যায়।

বামে তরী বাদাবন বটে ঢাকা রয়।।

কিবা সে বাদার শোভা অতি মনোরম।

গাছে গাছে ডালে ডালে নাহি ব্যতিক্রম।।

অনন্ত গাছের সারি মিশেছে অনন্তে।

কে যেন সৃজিল সব বসিয়া একান্তে।।

এক এক জাতি বৃক্ষ রহে এক ঠাঁই।

বৃক্ষতল পরিষ্কার জঙ্গলাদি নাই।।

নদীর কিনারে ঝোঁপ জঙ্গলাদি রয়।

নদী চরে গোলপাতা বিচিত্র শোভায়।।

সুন্দর কিনারে ঝোঁপে গা ঢাকিয়া রয়।

জীবমাত্র নদীতীরে উপস্থিত হয়।।

লষ্ফ দিয়ে ধরে তারে ব্যঘ্র মহাশয়।।

ডাঙ্গায় বাঘের বাসা জলেতে কুমীর।

কোন প্রাণী বাদা মধ্যে নহেক সুস্থির।।

নির্ভয়ে চড়ায় উঠি কুম্ভীর মশায়।

আপন পাষাণ-দেহ রোদ্রেতে শুকায়।।

Page 401 start

জল মধ্যে যদি কোন জীব আসি পড়ে।

কুম্ভীর পরমানন্দে তারে গিয়ে ধরে।।

এমন যে বনপতি ব্যাঘ্র মহাশয়।

কুম্ভীরের সঙ্গে তার কত রণ হয়।।

মানব রচিত বিশ্ব ফেলিয়া পিছনে।

প্রকৃতি রয়েছে সেথা বসি নিজমনে।।

সভ্যতার কুটিলতা, জ্ঞানের মুখোস।

সুখের কপট হাসি বিষ-ভরা রোষ।।

প্রকৃতির বনরাজ্যে কিছু তার নাই।

সত্য যাহা সবে তাহা বহিছে সদাই।।

কুম্ভীরের সঙ্গে ব্যাঘ্র নাহি করে ছলা।

ভাণ করে নাহি ধরে হরিণের গলা।।

মৃগ জানে ব্যাঘ্র কভু করিবেনা দয়া।

ব্যাঘ্র জানে কুম্ভীরের বুকে নাহি মায়া।।

যার যার পরিচয় তাহা অকপটে।

বনরাজ্যবাসী সবে দিয়া থাকে বটে।।

সভ্যতার গর্বে মত্ত মানব সমাজে।।

মিল নাই কোনখানে কথা আর কাজে।।

সেই সব কথা বলে আর কার্য্য নাই।

এবে শুন কি করিল অশ্বিনী গোসাই।।

পশর নদীর বুকে পশিল তরণী।

ক্রোশেক বিস্তুত হবে কলেবর খানি।।

পর্ব্বত সমান ঢেউ গর্জ্জে সর্ব্বদায়।

দেখিলে তান্ডব লীলা মনে লাগে ভয়।।

সাবধানে দাড়ীগণে তরী বেয়ে গেল।

মঙ্গলা নদীতে আসি উপনীত হল।।

কল কল ছোটে জল তরী বেয়ে যায়।

অশ্বিনী গোঁসাই গান ধরে এসময়।।

নিজের রচিত গান ভাবরসে পোরা।

উথলে স্বরের গতি যেনরে ফোয়ারা।।

গান শুনি মুগ্ধ হল সব ভক্তগণ।

অবিরল নেত্রজল করিছে মোচন।।

পদমাত্র এইখানে উল্লেখ করিব।

পরে পরে আর বহু কথা আমি কব।।


‘‘গুরুচাঁদ! এমন চাঁদ কে ভবে আনিলপ্রেমরসে জগত মাতাল।।না জানি কি মোহিনী জানে,কুলজার মনপ্রাণ ধরিয়ে টানে,কিবা বাল্য বৃদ্ধ শুনে বাধ্য,তাঁর রূপ দেখে পাগল হল।।’’

এই ভাবে ধীরে ধীরে তরী বেয়ে যায়।

হুড়কা গ্রামেতে আসি হইল উদয়।।

রূপচাঁদ গোস্বামীজী সঙ্গেতে আছিল।

দয়া করি দয়াময় তাঁর গৃহে গেল।।

রূপচাঁদ গোস্বামীর ভকতি অপার।

কিছুপরে লেখা হবে কীর্ত্তি কথা তাঁর।।

এক রাত্রি দয়াময় রহে তাঁর বাড়ী।

তথা হতে প্রাতেঃ তবে তরী দিল ছাড়ি।।

রূপচাঁদ গোস্বামীর ধর্ম্মপত্নী যিনি।

সতীলহ্মী ফুলমালা নাম তাঁর জানি।।

আপন কন্যার প্রায় প্রভুকে সেবিল।

তাঁর ভক্তিগুণে প্রভু বহু প্রীত হল।।

তথা হতে আসিলেন বড়দিয়া গ্রাম।

জ্ঞানী ভক্ত আছে সেথা নাম কোনারাম।।

গোপালের পদাশ্রয়ে ভাবেতে মাতিল।

গোপালের গুণে তারে ঠাকুর চিনিল।।

তাঁর সাধ্বী পত্নী যার নাম আহলাদিনী।

পরম পবিত্রা সতী গুণেতে বাখানি।।

নিজ পিতা সম মানে শ্রীগোপাল চান্দে।

গোপাল, গোপাল বলি দেবী সদা কান্দে।।

দয়া করি দয়াময় সেই গৃহে গেল।

সতী মাতা আহলাদিনী বহুত কান্দিল।।

এ সময়ে এক কন্যা মাতাজীর কোলে।

কন্যা দেখি গুরুচাঁদ দয়া করি বলে।।

Page 402 start

‘‘এক পুত্র এই ঘরে আসিবে এবার।

বিদ্বান হইবে পুত্র বলিলাম সার।।’’

পতি পত্নী একমনে প্রভুকে সেবিল।

আহলাদী দেবীর গুণে প্রভু বাধ্য হল।।

কেনারামে ডাকি প্রভু বলিল তখন।

‘‘শোন কেনারাম তুমি আমার বচন।।

গোপালের সঙ্গ তুমি কভু ছাড়িও না।

গোপালে অমান্য করি যেন বাড়িওনা।।’’

করেজোড়ে কেনারাম করিল স্বীকার।

‘‘জীবনে মরণে প্রভু গোপাল আমার।।’’

তারপরে যাহা হলে সেই পরিচয়।

বলিবারে ইচ্ছা আছে অপর অধ্যায়।।

তথা হতে তরী ছাড়ি বাগেরহাট আসে।

প্রভু বলে ‘‘চল এবে যাই নিজ দেশে।।’’

কাথলী নিবাসী সাধু নিবারণ নাম।

তার কান্না দেখি বলে প্রভু গুণধাম।।

‘‘সরল সহজ লোক এই নিবারণ।

চল তার গৃহে আমি করিব গমন।।’’

কাথলী গ্রামেতে আসি দয়াল ঠাকুর।

ভাব দেখি প্রাণে শান্তি পাইল প্রচুর।।

একদিন দেরী করি তথা হতে যায়।

ক্রমে ক্রমে উপনীত সে তালতলায়।।

মহেশের গৃহে গিয়া দিল দরশন।

মহেশ পাইল মনে শান্তি অবর্ণন।।

যাদবের বাড়ী পরে প্রভুজী চলিল।

ভক্তিভরে যে যাদব চরণ বন্দিল।।

তথা হতে ধীরে ধীরে চলে ধামপানে।

মতুয়ারা মত্ত হল হরি নাম গানে।।

ক্রমে তরী লাগে ঘাটে প্রভাত বেলায়।

নরনারী সবে আমি জয়ধ্বনি দেয়।।

দুইদিন ওড়াকান্দী রহিল গোপাল।

তাঁরে ডাকে বলিলেন পরম দয়াল।।

‘‘গৃহে যাও হে গোপাল এলে বহুদিন।

বহুকষ্টে দেহ তব হইয়াছে ক্ষীণ।।

কিছুদিন গৃহে থাকি এস পুনরায়।

ওড়াকান্দী যাতায়াত কর সর্ব্বদায়।।’’

প্রভুর বচনে সাধু গৃহেতে ফিরিল।

হরি গুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।

---০---