Page 466

শ্রীশ্রীগুরুচাঁদের করুণায় দারুণ ব্যাধি মুক্তি

একবার হরিবর তারকের সাথে।

উপনীত হইলেন খুলনা জিলাতে।।

হালিস’র নামে গ্রামে উপস্থিত হয়।

যাদব মল্লিক বটে সেই সঙ্গে রয়।।

দৈবযোগে সন্ধ্যাকালে সেই হরিবর।

দারুণ বেদনা রোগে হইল কাতর।।

অসহ্য বেদনাভারে পাগলের প্রায়।

ইতি উতি ছুটাছুটি করিতেছে হায়।।

ক্ষণে ক্ষণে তারকের পদ ধরি কান্দে।

কোন কথা নাহি বলে সে তারক চান্দে।।

এই ভাবে সারা রাত্রি বহু কস্ট পেল।

প্রভাতে বেদনা কিছু উপশম হল।।

এক সাথে তিনজনে গৃহ পানে ধায়।

কান্দিয়া যাদব তবে তারকেরে কয়।।

‘‘দয়া করে হরিবরে ব্যাধি মুক্ত কর।

বেদনায় মনে হয় যেন মর-মর।।’’

তারক বলিল ‘‘ব্যাধি সারিবার নয়।

এক কাজ করে যদি ব্যাধি সেরে যায়।।

সে সব সম্ভব নয় শুধু বলাবলি।

বিশেষতঃ সেই কতা কেমনে বা বলি?

হরিবর বলে ‘‘প্রভু আজ্ঞা যদি হয়।

যাহা বল তাহা আমি করিব নিশ্চয়।।’’

গোস্বামী বলিল ‘‘হেন না বলিও আর।

তুমিত জান না বাপু সব সমাচার।।

আমি বলি মহানন্দে যদি থাক ভুলে।

এই রোগ নাহি আর হবে কোন কালে।।

কেমন হে হরিবর তাহা পারা যাবে?

তাতে বলি এই ব্যাধি আর না সারিবে।।

মহানন্দ অদর্শনে হয়েছে এ রোগ।

তাঁর সাথে বিরহের এই যোগাযোগ।।’’

হরিবর বলে কেন্দে ‘‘যদি প্রাণ যায়।

মহানন্দে ভুলে থাকা হবে না নিশ্চয়।।

মহানন্দ সঙ্গে মোর করেছে যে যোগ।

পরম বান্ধব মোর কিসের সে রোগ?’’

এই ভাবে দিন যায় রোগ নাহি সারে।

ক্ষণকাল কমে যার ক্ষণকাল বাড়ে।।

গানের বয়না কত করিল খেলাপ।

একদিন বেদনার হল বড় দাপ।।

Page 467 start

অসহ্য বেদনা তাপ সহ্য করা ভার।

লোক পাঠাইয়া দিল প্রভুর গোচর।।

বিধান বলিয়া দিল প্রভু গুরুচাঁন।

বিধান মানিয়া মাত্র রোগে শান্তি পান।।

মরিচ বাঁটিয়া গুড়া দিয়া পান্তাভাতে।

আদেশ করিল প্রভু সেই ভাত খেতে।।

পরদিনে সে বেদনা দ্বিগুণিত হল।

ভাব দেখে লোক গিয়ে প্রভুকে জানাল।।

প্রভু কয় ‘‘আর কোন জানি না বিধান।

সারুক মরুক তাহা জানে ভগবান।।’’

এই ভাবে চলে রোগ কমে আর বাড়ে।

একেবারে রোগ তারে নাহি যায় ছেড়ে।।

জীর্ণ শীর্ণ হল দেহ চেনা হল দায়।

মনে হয় বেশী দিন রবে না ধরায়।।

হেনকালে দুই জন মতুয়া সুজন।

দুর্গাপুর আসি তারা দিল দরশন।।

সকল বৃত্তান্ত তারা শুনিয়া চলিল।

যাত্রা কালে হরিবর তাদের বলিল।।

‘‘আমার রোগের কথা প্রভুকে না বল।

তাঁর কৃপা গুণে রোগ ক্রমে হবে ভাল।।’’

তারা যবে ওড়াকান্দী উপস্থিত হয়।

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ কিছু নাহি কয়।।

দুইদিন পরে তারা তৃতীয় দিবসে।

বিদায় মাগিয়া চলে নিজ নিজ দেশে।।

হেনকালে প্রভু বলে ‘‘মোর কথা লও।

দুই জনে এক সাতে দুর্গাপুর যাও।।

দুর্গাপুরবাসী হরিবর সরকার।

দারুন বেদনা রোগে রয়েছে কাতর।।

তারে গিয়া বল আমি দিতেছি বলিয়া।

অদ্য হতে রোগ তার যাইবে চলিয়া।।

ব্যথা পায় তবু মোরে কহিতে না চাহে।

আমার জানিতে বাকী কিছু নাহি রহে।।

তারে গিয়ে বল যাবে দারুণ বেদনা।

বেঁচে যেন থাকে তার মরা’ত হবে না।।’’

প্রভুর বচন শুনি তারা দুই জন।

ভূমিতে লোটায়ে ধরে প্রভুর চরণ।।

বলে ‘‘ওগো দয়াময় তুল্য দিতে নাই।

তুমি যে কি তাহা মোরা বুঝিয়া না পাই।।

এত বলি দুই জনে বিদায় মাগিল।

অপরাহ্নে দুর্গাপুর উপস্থিত হল।।

এসে দেখে হরিবর হাঁটিয়া বেড়ায়।

রোগ-চিহ্ন যেন কিছু নাহি দেখা যায়।।

প্রেমে পুলকিত দোঁহে কহে হরিবরে।

‘‘কেমন তোমার রোগ গিয়াছে সেরে?

হরিবর বলে ‘‘ভাই অদ্ভুত ঘটনা।

অদ্য হতে দুরে গেল সকল বেদনা।।’’

আদ্য অন্ত সে বৃত্তান্ত তারা যবে বলে।

প্রেমানন্দ হরিবর ভাবে অশ্রু জলে।।

‘‘হো রে দয়াল’’ বলি পড়িল ধুলায়।

যারা কাচে ছিল তারা ধরিয়া উঠায়।।

প্রেমালাপে রাত্রি কাটে বসে একখানে।

প্রভাতে বিদায় তারা হইল দুজনে।।

তদবধি রোগে মুক্তি পেল হরিবর।

দয়া করে মুক্তি দিল দয়াল আমার।।

শ্রীগুরু-চরিত কথা সুধা হতে সুধা।

মহানন্দ বলে খেলে যাবে ভব ক্ষুধা।।

---০---