Page 561 start

“ঠাকুর যায় নাই”

দস্যুরা দেখিয়া বলে “ঠাকুর যায় নাই।”

হরিবর সরকার শুনিলেন তাই।।

রোগে ভোগে হরিবর মনে চিন্তা করে।

আর কেন এই বার যাই তবে মরে।।

প্রভুর নিকটে যবে দিল দরশন।

প্রভু বলে “হরিবর! যেওনা না এখন।।

আমি চলে গেলে তুমি এসে মম পরে।

তোমার যে বহু কাজ রয়েছে সংসারে।।”

কথা শুনি হরিবর অনেক কান্দিল।

সেই হ’তে আপনার হৃদয় বান্ধিল।।

কিছুকাল পরে প্রভু দেহ ছাড়ি যায়।

শুনিয়া সে হরিবর করে হায় হায়!

মনে ভাবে দয়াময় যবে গেছে চলে।

কি বলে থাকিব আর এই ভূমণ্ডলে।।

এত ভাবি এক দিন ধাম প্রতি চলে।

ঘৃতকান্দি উপস্থিত হ’ল সন্ধ্যাকালে।।

এক বাড়ী কিছুকাল করিয়া বিশ্রাম।

ধাম প্রতি চলিলেন সেই গুণধাম।।

দুরন্ত আঁধার মাঝে পথ চলা দায়।

কা’রা যেন আগে আগে কথা বলে যায়।।

অন্ধকার মধ্যে সাধু সাথী পেল বটে।

দ্রুত গতি আসিলেন তাদের নিকটে।।

দেখে দুই ব্যক্তি অগ্রে করে আলাপন।

করিতেছে ঠাকুরের গুণানুকীর্তন।।

একজনে বলিতেছে অপরের কাছে।

“গুরুচাঁদ যায় নাই ওড়াকান্দি আছে।।”

অপরে বলিল “তাহা বুঝিলে কেমনে?

উঠিয়া গিয়াছে তিনি দেখেছি নয়নে।।”

সঙ্গী বলে “শুন ভাই জানিতাম বটে।

এখনে বিশ্বাস কিন্তু নাহি করি মোটে।।”

কারণ বলিব যাহা শুন দিয়া মন।

অল্পকাল আগে যাহা সেই বিবরণ।।

তারাইল হাট হ’তে আসিতেছি ফিরে।

একা একা আসিতেছি ঘোর অন্ধকারে।।

বিল মধ্যে নামি একা করিতেছে ভয়।

হেনকালে শুনি কা’রা আগে কথা কয়।।

ত্রস্তে ব্যস্তে আসিলাম তা’দের নিকটে।

দেখিলাম দুই বেটা মুসলমান বটে।।

নিজ মনে আগে আগে তারা চলে যায়।

আমি যে পশ্চাতে আছি টের নাহি পায়।।

হেনকালে একজন কহিছে অপরে।

“ওরে ভাই বড় কর্তা যায় নাই মরে”।।

সঙ্গী তার হেসে বলে “তুই ত বেহুঁশ।

মরে যেয়ে ফিরে নাকি আসে রে মানুষ।।”

কর্তা মারা গেছে তাহা সকলেই জানে।

এ কথা বলিস নারে যেখানে সেখানে।।

কথা শুনে বলে তবে সেই মুসলমান।

“শোন ভাই বলি আমি চাক্ষুষ প্রমাণ।।

কর্তা মারা গেলে মোরা লোক দুই কুড়ি।

“ডাকাতি” করিব ভাবি ঠাকুরের বাড়ী।।

নিশুতি আঁধার রাতে যাই দলবলে।

বাড়ীর উত্তরে গিয়া বসেছি সকলে।।

মনে ভাবি এই পথে বাড়ীতে ঢুকিব।

মনোমত দ্রব্য যত লুণ্ঠন করিব।।

অগ্রণী হইয়া আমি উঠিব যখনে।

চেয়ে দেখি বড় কর্তা দাঁড়ায়ে সেখানে।।

আমারে ডাকিয়া বলে “আমি যাই নাই।

ডাকাতি করিতে এসে পাবি নারে ঠাই।।”

মনে মনে ভাবিলাম কি দেখিলাম চোখে।

ঘুরে ঘুরে আসিলাম পশ্চিমের দিকে।।

বাড়ীর উপরে যদি উঠিবারে যাই।

কর্তা পুনঃ এসে বলে “আমি যাই নাই”।।

এইভাবে সারারাত্রি ঘুরে চারিধারে।

Page 562 start

যেথা যাই কর্তা এসে বাধা দিল মোরে।।

স্বচক্ষে দেখেছি ইহা কিছু মিথ্যা নয়।

অবশেষে পলাইয়া আসি নিজ গাঁয়।।

সেই কথা যেই দিন শুনিয়াছি কানে।

নিশ্চয় বুঝেছি কর্তা আছে নিজ স্থানে।।”

কথা শুনে হরিবর কান্দিয়া আকুল।

মনে মনে বলে “বাবা ভেঙে দিলে ভুল”।।

ভাবিয়াছি চলে বুঝি গেছ দয়াময়।

আজ দেখি কত ভুল করিয়াছি হায়।।

কান্দিতে কান্দিতে সাধু ওড়াকান্দি গেল।

যারে পায় তার কাছে সকলি কহিল।।

সকল শুনিয়া বলে প্রমথরঞ্জন।

“এই বাক্য আমি কিন্তু করি সমর্থন।।

কে কে কি কি দেখিয়াছে তাহা বলে নয়।

এই কথা বলি আমি তাঁহার কথায়”।।

আমারে বলিয়াছিল “তোমাকে না বলে।

হেথা হ’তে আমি কভু নাহি যাব চলে।।”

আমি জানি সে ঠাকুর মোটে যায় নাই।

হ’তে পারে কর্মদোষে দেখা নাহি পাই”।।

কথা শুনে হরিবর ভাবে মনে মন।

প্রমথরঞ্জন এই বটে কোন জন।।

তথা হ’তে বাড়ী গিয়ে রচিয়াছে গান।

পদ মাত্র লিখিলাম করিয়া সন্ধান।।


“আমার গুরুচাঁদ এসেছে ফিরে।ভক্তজনের মনোরঞ্জন, প্রমথরঞ্জন মূর্তি ধরে।।”- হরিবর সরকার

কোথা গেল কোথা গেল সেই গুরুচন্দ্র।

সেই তত্ত্ব নাহি পেল মূঢ় মহানন্দ।।

---০---