Page 564
তিনি কি করিলেন?
“ধর্ম সংস্থাপনার্থায় স্মভাববামি”--- গীতা
আদি কাণ্ডে ধন্য প্রভু বড় দয়াময়।
ভিক্ষুক বালক রক্ষা করে কৃপাময়।।
এই কাণ্ডে করিলেন বিদ্যার অভ্যাস।
বাংলা শিখে আরবি শেখে মৌলোভীর পাশ।।
দশবর্ষ বয়সেতে পাঠ সমাপন।
গৃহে বসি শাস্ত্র গ্রন্থ করে অধ্যয়ন।।
দ্বাদশ বর্ষের কালে হ’ল পরিণয়।
ষষ্ঠবর্ষ নারী হ’তে প্রভু দূরে রয়।।
কঠোর সংযম শিক্ষা করে ভক্ত স্থানে।
সংসারের ভার প্রভু বহিলা আপনে।।
একুশ বর্ষের কালে জন্মিল নন্দন।
হরিচাঁদ রাখে নাম শ্রীশশিভূষণ।।
আদর্শ গৃহীর সাজে সাজিলেন প্রভু।
কোন কার্যে অলসতা নাহি করে কভু।।
গৃহীর পক্ষেতে ধন অতি প্রয়োজন।
প্রাণপণে করে প্রভু ধন উপার্জন।।
নৌকার চালান প্রভু বিদেশেতে দেয়।
পিতৃ-আজ্ঞামতে সব ব্যবসা চালায়।।
বাসিন্দা দোকান ঘর করিবারে চায়।
হেনকালে হরিচাঁদ দেহ ছেড়ে যায়।।
শক্তিরূপে হরিচাঁদ গুরুচাঁদে গেল।
“হরি-গুরুচাঁদতত্ত্ব” তারক কহিল।।
আপনারে ধরা দিতে প্রভু নাহি চায়।
গোস্বামী তারক আসি ঠেকাইল দায়।।
কারবার লাগি করে বাসিন্দা দোকান।
পুত্র কন্যা শিক্ষা নীতি অন্তরে প্রধান।।
আপনারে ঢাকে প্রভু ঐশ্বর্যের তলে।
ভাঙিল ভুলের চিন্তা গোলক পাগলে।।
রামভরতের সাথে ভাবালাপ করে।
নমঃশূদ্রে দিতে শিক্ষা প্রভু ইচ্ছা ধরে।।
আদি নমঃশূদ্র সভা দত্তভাঙ্গা গাঁয়।
জাতির লাগিয়া করে প্রভু দয়াময়।।
সেই সভা হ’তে হ’ল শিক্ষা আন্দোলন।
দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে স্কুলের পত্তন।।
ওড়াকান্দি পাঠশালা করিল স্থাপন।
সেই হ’ল আদি শিক্ষা বীজের বপন।।
শ্রীশশিভূষণ তবে শিক্ষার উদ্দেশ্যে।
পিতার আজ্ঞায় চলে জয়পুর বাসে।।
রঘুনাথ সরকার পণ্ডিত সুজন।
প্রভুর ইচ্ছায় করে সেথা আগমন।।
Page 565 start
মহাপ্রভু হরিচাঁদ পথ দেখাইল।
একদিন রঘুনাথ ওড়াকান্দি এল।।
আরম্ভ করিল প্রভু লগ্নী কারবার।
দেনায় পতিত জনে করেন উদ্ধার।।
শ্রীগিরীশ বসু আসি পরামর্শ করে।
“হাই স্কুল” করিবারে প্রভু বলে তারে।।
কুচক্রী ব্রাহ্মণ যত ফুকুরাতে বাস।
হিংসা করে নমঃশূদ্রে করে সর্বনাশ।।
বলে ক’য়ে গিরীশের মন ভাঙ্গি দেয়।
হাইস্কুল তার লাগি ফুকুরাতে যায়।।
দুঃখ পেয়ে নমঃশূদ্র একত্র হইল।
ওড়াকান্দি এম.ই. স্কুল স্থাপন করিল।।
প্রভুর প্রথম পুত্র শ্রীশশিভূষণ।
প্রধান শিক্ষক স্কুলে হইল তখন।।
জাতির উদ্ধার লাগি যাহা প্রয়োজন।
রাজশক্তি ধরিবারে প্রভু করে মন।।
শ্রীশশিভূষণে সেই উপদেশ দেয়।
সেই মর্মে শশি ফিরে হেথায় সেথায়।।
অক্ষয়ের সঙ্গে হ’ল আদি পরিচয়।
অক্ষয় রিপোর্টে সব মীডেরে জানায়।।
শশিবাবু ভীষ্মবাবু আদি কয়জন।
মীডের সঙ্গেতে গিয়ে করে আলাপন।।
ওড়াকান্দি মীড এল শ্রাবণ বেলায়।
ভীষ্মদেবে নাহি পেয়ে ফিরে যেতে চায়।।
স্বপ্ন ছলে কথা বলে শশিরে পাঠায়।
আসিল ডক্টর মীড প্রভুর আলয়।।
প্রভুকে দেখিয়া মীড মানিল বিস্ময়।
মনে মনে বলে “ইনি সামান্য ত’ নয়।।
আদি কাণ্ডে প্রভু সঙ্গে বাক্য দ্বন্দ্ব হয়।
সে সব না লিখিলাম গ্রন্থ বৃদ্ধি ভয়।।
ওড়াকান্দি এল মীড মিশন করিতে।
মনে মনে ইচ্ছা করে প্রভুকে ধরিতে।।
প্রভুর মনন তবে করিতে পরীক্ষা।
প্রভুর নিকটে মীড চাহে জমি ভিক্ষা।।
জমিদান করে প্রভু আনন্দিত চিতে।
রাজশক্তি দয়াময় ধরিলেন হাতে।।
গোপালপুরের দাঙ্গা হ’ল ভয়ঙ্কর।
ভয়ে নমঃশূদ্র সবে কাঁপে থর থর।।
ধান্য দূর্বা দিল অর্ঘ সে কমিশনারে।
সাহেব হইল সুখী নমঃশূদ্র ‘পরে।।
প্রভুর অপূর্ব কীর্তি জানি বটে ধন্য।
সাহেব ফিরিয়া এসে দিল তাঁরে মান্য।।
প্রভুকে বুঝিতে মীড বহু চেষ্টা করে।
ভবিষ্যতে বলে প্রভু মীডের গোচরে।।
তাহাতে মীসেস মীড “ধর্মপিতা” ডাকে।
মীড কি ধরিবে? প্রভু ধরিল তাহাকে।।
নমঃশূদ্র রাজকার্যে নহে অধিকারী।
প্রভু বলে “বল মীড উপায় কি করি?”
ছোটলাট ল্যান্সেলেটে মানপত্র দিল।
তার ফলে নমঃশূদ্র রাজকার্য পেল।।
আদি কাণ্ডে শশিবাবু সাব-রেজিস্টার।
শ্রীকুমুদ, রাধানাথ পেল পর পর।।
ওড়াকান্দি হাইস্কুল স্থাপিত হইল।
যত জমি নিজ হ’তে প্রভু সব দিল।।
ঊনিশ শ’ পাঁচ অব্দে বঙ্গ আন্দোলন।
প্রভুর বাক্যেতে শান্ত নমঃশূদ্রগণ।।
“চণ্ডাল” বলিয়া দেয় নমঃশূদ্রে গালি।
প্রভুর হইল ইচ্ছা গালি দিবে তুলি’।।
মীডকে কহিল “মীড উপায় কি বল?
চণ্ডালত্ব গালি গেলে পাই স্বর্ণফল।।”
ইতিপূর্বে “নমঃশূদ্র সুহৃদ” প্রকাশ।
করিলেন গুরুচাঁদ নিজে কীর্তিবাস।।
“সেন্সাস রিপোর্ট” নিতে মীড চাহে টাকা।
তালতলা খালে প্রভু হ’ল তবে বাঁকা।।
Page 566 start
টাকা পেয়ে প্রভু তবে হৈল শান্ত মন।
তালতলা তীর্থ বলি হ’ল নিরূপণ।।
রিপোর্ট দেখিয়া মীড প্রভুকে জানায়।
নমঃকূলে বিধবার বিয়া দিতে হয়।।
ধর্ম কর্ম এক সঙ্গে করে সম্মিলন।
আদিতে ভক্তের এই পরীক্ষা গ্রহণ।।
বীর সাধু দেবী চাঁদ সাড়া দিল তায়।
স-শিস্য মিলিয়া বিয়া বিধবার দেয়।।
গোপাল সাধুর সঙ্গে হ’ল জানাজানি।
বিপিন আছিল সাথে সেই মত জানি।।
ফরিদপুরেতে হ’ল লাট দরবার।
নিমন্ত্রণ পেয়ে যান প্রভুজী সুন্দর।।
চণ্ডালত্ব মুছিবারে করে আন্দোলন।
দেশে দেশে এক হ’ল নমঃশূদ্রগণ।।
গেটের নিকটে গেল বহু “পিটিশন”।
লিখিল তাহাতে মীড প্রশংসা বচন।।
পুনরায় বঙ্গবাসী যত মিশনারি।
সাক্ষ্য লিখে পাঠাইল এক সঙ্গে করি।।
চণ্ডালত্ব গালি তা’তে মুছিয়া ফেলিল।
“নমঃশূদ্র সুব্রাহ্মণ” বলিয়া লিখিল।।
ঊনিশ শ’ বারো অব্দে দিল্লী দরবার।
“রূপার মেডেল” প্রভু পেল উপহার।।
লাট ডাকিলেন বলি “নমঃশূদ্র পতি”।
যার পরশনে জাগে নমঃশূদ্র জাতি।।
দেহত্যাগ করি চলে গেল সে সুরেন্দ্র।
“নমঃশূদ্র সুহৃদ” পরে হয়ে গেল বন্ধ।
খ্রিষ্টান হইবে বলে প্রভু করে ভাণ।
দেশবাসী সবে তা’তে বহু দুঃখ পান।।
চৌধুরী শ্রীবিশ্বেশ্বর হইল খ্রিষ্টান।
ফিরিয়া দাঁড়া’ল তবে প্রভু গুরুচান।।
ঊনিশ শ’ চৌদ্দ অব্দে বাধিল সমর।
রাজার সাহায্য করে প্রভু গুণাকর।।
খ্রিষ্টানের সঙ্গ ত্যাগ প্রভুজী করিল।
পুনরায় দশভুজা পূজারম্ভ হ’ল।।
“হরিলীলামৃত” গ্রন্থ মুদ্রণ কারণ।
বহু চেষ্টা করিলেন তারক সুজন।।
ভার দিয়া হরিবরে দেহ তেয়াগিল।
হরিবর বহু চেষ্টা পরেতে করিল।।
প্রভুর লীলার তত্ত্ব কে বুঝিল কবে?
কে জানে সে কোন ভাবে কা’রে কি সাজাবে?
আসিল গোপাল সাধু উদার পরাণ।
“লীলামৃত” ছাপিবারে অর্থ করে দান।।
গোপালে চিনিল ভাল প্রভু রসময়।
দয়া করে লক্ষ্মীখালী গেল দয়াময়।।
ইতিপূর্বে মাঝে মাঝে যায় ভক্তালয়।
বানীয়ারী চাঁদকাঠি দুই বার যায়।।
যেথা যায় সেথা কয় জাতির উন্নতি।
অপূর্ব শিক্ষায় দীক্ষা পেল এই জাতি।।
রথযাত্রা উৎসবের করে আয়োজন।
“জগবন্ধু” শক্তি প্রভু করে আকর্ষণ।।
তের শ’ পঁচিশ সালে শ্রীশশিভূষণ।
অকালে ত্যজিয়া গেল মরত ভুবন।।
তের শ’ ছাব্বিশ সালে মহাঝড় হয়।
শত শত নরনারী তা’তে মারা যায়।।
অন্নহীন জনে প্রভু অন্ন করে দান।
লাটমন্ত্রী গুরুচাঁদে জানায় সম্মান।।
নূতন শাসন নীতি আসিল ভারতে।
অসহযোগের পথে গান্ধী চলে তা’তে।।
ভারত ব্যাপিয়া চলে সুদৃঢ় আন্দোলন।
অনুন্নত জনে প্রভু করে নিবারণ।।
“দেশবন্ধু চিত্তবীর” লিখিলেন পত্র।
উত্তর দিলেন প্রভু তার ছত্রে ছত্র।।
পিছনে রয়েছে যারা তা’ দিগে বিশেষ।
ভ্রাতৃজ্ঞানে জাগাইতে দিল উপদেশ।।
Page 567 start
চিরতরে মীড গেল এদেশ ছড়িয়া।
শ্রদ্ধার অঞ্জলি দিল পত্রেতে লিখিয়া।।
“শ্রীহরি মন্দির” তবে হইল পত্তন।
খুলনা জিলায় নমঃশূদ্র সম্মেলন।।
দয়াময় গুরুচাঁদ তথা সভাপতি।
বহুত কহিল কথা নমঃশূদ্র প্রতি।।
খুলনা হইতে গৃহে ফিরে দয়াময়।
পদ্মবিলা দাঙ্গা হ’ল সামান্য কথায়।।
“যথা ধর্ম তথা জয়” প্রভু দিল ভীর।
ধর্মযুদ্ধে জয়ী হ’ল নমঃশূদ্র বীর।।
“দাঙ্গা মন্দ অতিশয়” প্রভু ডাকি বলে।
ভাই ভাই এক হও একভাবে চলে।।
গোপালগঞ্জেতে এল লাট মহোদয়।
স্বজাতি লইয়া প্রভু ‘মানপত্র’ দেয়।।
কলিকাতা বসে পড়ে প্রমথরঞ্জন।
বিলাত পাঠাতে তারে প্রভু করে মন।।
মুখ ফুটে নাহি বলে বিবাদের ভয়।
কমলাকান্তের কাছে সেই কথা হয়।।
তথাপি প্রস্তাব হ’লে পড়ে কিছু বাধা।
মেঝে বাবু কহিলেন কথা আধা আধা।।
প্রভুর যতেক ভক্ত মতুয়া উপাধি।
প্রভুর কর্মেতে তারা বাধ্য নিরবধি।।
ওড়াকান্দি এসে তারা সব কথা শোনে।
মন্ত্রণা করিল সবে বসে একস্থানে।।
(গ্যাপ)
বিলাতের যত ব্যয় তাহারা জোগা’বে।।
ভক্তের পরীক্ষা করে নিজে চক্রধর।
বলে “টাকা দিতে হ’বে চৌদ্দটি হাজার।।”
গোপাল দাঁড়া’য়ে বলে জোড় করি পাণি।
“সব টাকা আমি দিব ওহে গুণমণি”।।
সব মতুয়ারা বলে মোরা অংশীদার।
বিলাতে পাঠাতে চিন্তা নাহি কর আর।।
বিলাতে চলিয়া গেল প্রমথরঞ্জন।
সুধন্য কুমার পরে ত্যজিল জীবন।।
সর্বকর্ম ছাড়ি প্রভু আত্মতত্ত্বে রয়।
দিবারাত্রি “হরি কথা” কৃষ্ণ কথা কয়।।
প্রমথরঞ্জন দেশে ফিরিয়া আসিল।
কলিকাতা হাইকোর্টে ব্যবসা করিল।।
স্বয়ং সতী সত্যভামা জগত জননী।
জীবলীলা সাঙ্গ করি চলিলেন তিনি।।
প্রমথরঞ্জন করে শুভ পরিণয়।
হেনকালে বঙ্গদেশে ‘নির্বাচন’ হয়।।
পরিষদে সভ্য হ’ল প্রমথরঞ্জন।
ইচ্ছা করে যেতে প্রভু “নিজ নিকেতন”।।
পিতামহ পদে নিষ্ঠা প্রমথ রাখিল।
আশীর্বাদ ছলে প্রভু তারে শক্তি দিল।।
আসন সাজায়ে ঋতু বসন্ত আসিল।
পূর্ণ চন্দ্র গুরুচন্দ্র অস্তাচলে গেল।।
---০---