Page 453

১৩২০ সাল হইতে ১৩৩২ সাল পর্যন্ত ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

তেরশত বিশ সালে দেবীচাঁদ নাই।

জরাজীর্ণ দেহে আছে তারক গোঁসাই।।

Page 454 start

হরিলীলামৃত গ্রন্থ মুদ্রণ কারনে।

তারক গোস্বামী ভিক্ষা করে বহু স্থানে।।

তের শ’ একুশ সালে মার্গশীর্ষ মাসে।

দেহ ছাড়ি সে তারক যায় নিজ দেশে।।

তেরশ বাইশ সালে রথযাত্রা হয়।

তস্য পূর্ব্বে দুর্গাপূজা হল পুনরায়।।

দশভূজা নিজ হতে পূজা মাগি লয়।

তার ইচ্ছা পূর্ণ করে প্রভু দয়াময়।।

ইউরোপ মহাযুদ্ধ আরম্ভ হইল।

রাজকার্য্যে মহাপ্রভু সাহায্য করিল।।

তারকচাঁদের মহাপ্রস্থানের পরে।

কবিবর হরিবর বহু চেষ্টা করে।।

লীলামৃত গ্রন্থ নাহি হইল মুদ্রন।

তাহা দেখি গোপালে অতি ক্ষুন্ন মন।।

প্রভুর আজ্ঞায় অর্থ করিলেন দান।

গোপালের হাতে নিল নিজে ভগবান।।

প্রেমে বাধ্য ভবারাধ্য লহ্মীখালী গেল।

গোপাল সাধুর তাতে মহিমা বাড়িল।।

তের শ’ পচিশ সালে শ্রীশশিভূষণ।

দেহ ত্যাগ করি করে স্বর্গে আরোহণ।।

তের শ’ ছাব্বিশ সালে মহা ঝড় হয়।

বঙ্গদেশে নানা স্থানে বহু লোক ক্ষয়।।

তের শ’ সাতাশ সালে হল আন্দোলন।

অসহযোগের নীতি গান্ধীর সৃজন।।

প্রভুর নিকটে পত্র চিত্ত বীর দেয়।

উপযুক্ত প্রত্যুত্তর করে দয়াময়।।

তের শ’ আঠাশ সালে পাতলা গমন।

করিলেন দয়াময় ভক্তের কারণ।।

তের শ’ তিরিশ সালে পুনঃ পাতলায়।

ভক্তি গুণে দয়াময় ভক্ত সাথে যায়।।

যাদবের রাগাত্মিকা ভক্তি পরিচয়।

অন্তর্য্যামী গুরুচাঁদ বুঝিবারে পায়।।

রাজমন্ত্রী আসিলেন মহাকুমা পরে।

প্রভুকে সম্মান দেয় সভার ভিতরে।।

পদ্মবিলা দাঙ্গা হল তের শ’ তিরিশে।

গোপালগঞ্জেতে পরে বঙ্গেশ্বর আসে।।

শ্রীলর্ড লিটন নামে অতি মহাশয়।

প্রভুর যতেক গুণ পেল পরিচয়।।

তের শত একত্রিশ সালের গনণ।

শ্রীহরি মন্দির তবে হইল গঠন।।

শ্রীহরি চাঁদের দন্ত তাতে রক্ষা হয়।

শ্রীহরি মন্দিরে সবে পূজা অর্ঘ্য দেয়।।

তেরশ’ আঠাশ সালে পত্তন হইল।

ক্রমে ক্রমে শ্রীমন্দির গঠন করিল।।

বহু কর্ম্মে প্রভু এসব সময়।

জাতির উন্নতি লাগি ঘুরিয়া বেড়ায়।।

যেথা যায় সেথা কয় উন্নতির কথা।

ক্ষণে ক্ষণে সেথা কয় উন্নতির কথা।

ক্ষণে ক্ষণে বলে সবে ‘‘করহে একতা।।’

এক নমঃশূদ্র মধ্যে বহু শাখা ছিল।

প্রভু কহে ‘‘এই কার্য্য নহে মোটে ভাল।।

শাখা বা প্রশাখা কারা এক সবে মোরা।

দীনের কৌলিন্য দাবী শুধু কর্ত করা।।

নমঃশূদ্র মধ্যে কোন ভিন্ন ভেদ নাই।

এক বংশে মোরা জন্মি সবে ভাই ভাই।।

অজ্ঞানতা বশে পূর্ব্বে নমঃশূদ্র গণ।

ভাই ভাই ছিন্ন ভেদ ভাবিত তখন।।

প্রভু বলে ‘‘আত্ম ধ্বংস বাঞ্ছা কর মনে।

সাবধান ভাই ছেড়ে ডেকোনা মরণে।।

অযুক্তি আদর্শ প্রভু কভু নাহি বলে।

বলে যাহা কাজে তাহা করে সর্ব্বস্থলে।।

বিভিন্ন শাখার মধ্যে মিলন কারণে।

পরস্পরে বান্ধিলেন কন্যা সম্প্রদানে।।

প্রিয় ভক্ত গোপালের দিল এই ভার।

তিনি বিবাহাদি ক্রিয়া করে পরস্পর।।

Page 455 start

শ্রাদ্ধের আসরে কিংবা শ্রীহরি বাসরে।

দয়াময় গুরুচাঁদ বলে সকলেরে।।

‘‘বোকা জাতি নমঃশূদ্র নীতি নাহি জানে।

শ্রাদ্ধেতে বিবাহে ব্যয় করে অকারণে।।

ঘরে নাই অন্ন যার দেনা বহুতর।

পিতৃ-শ্রাদ্ধে করা চাই ‘‘দানের সাগর।।’’

শ্রাদ্ধ নহে পেট-পূজা সাজাইয়া লয়।

এত যে কষ্টের কড়ি সব করে ক্ষয়।।

শ্রাদ্ধ হলে শ্রাদ্ধ হয় শাস্ত্রের প্রমাণ।

মূলতত্ত্ব নাহি জানে যতেক অজ্ঞান।।

ব্রাহ্মণের কুট চক্রে নিজে ক্ষয় হয়।

পরিনামে করে শুধু হায়! হায়! হায়!

এর ফলে কিবা হয় সাক্ষী দেখ তার।

নমঃর ঘরেতে ধন নাহি থাকে আর।।

এক পুরুষের ধন নমঃশ্রদ্রে পায়।

বহুকাল কোন ঘরে ধন নাহি রয়।।

তাই বলি অর্থ নীতি শেখ যতনেতে।

অর্থ নাহি পায় কেহ যথা তথা হতে।।

বিবাহ শ্রাদ্ধের ব্যয় কামাইয়া দও।

সাধ্য অনুযায়ী কাজ সকলে করাও।।’’

শ্রহরি মন্দির যবে নির্ম্মিত হইল।

শ্রীহরিচাঁদের রাস প্রভুজী করিল।।

ক্ষীরোদশায়ীর মূর্ত্তি করিয়া গঠন।

শা্ন্তি মাতা মুর্ত্তি তাতে করিল যোজন।।

ভক্তগণে বলে ডাকি ‘‘শোন ভক্তগণ।’’

শ্রীহরিচাঁদের রাস অপূর্ব্ব কথন।।

রাসতত্ত্ব কেহ নাহি জান ভালমতে।

নন্দের গোপাল রাস করে কোন পথে?

কামিলিপ্সা তার মধ্যে কিছু নাহি ছিল।

নিস্কাম প্রেমের জন্যে তেঁহ রাস কৈল।।

রাসতত্ত্ব বলি সবে শুন সমাচার।

রাসের নিগূঢ় তত্ত্ব অতি মচৎকার।।

রাসেতে পুরুষ কৃষ্ণ অন্য সবে নারী।

কৃষ্ণে বেড়ি নৃত্য করে যতেক সুন্দরী।।

সারা মন প্রাণ দিয়া কৃষ্ণে পেতে চায়।

ধরি ধরি করে কৃষ্ণ ধরা নাহি দেয়।।

মানব মনের এই দেখ ভাবধারা।

পেয়ে যারে নাহি পায় তাতে আত্মহারা।।

ভোগের লালসা হতে জন্মে আদি প্রেম।

খনি মধ্যে থাকে যথা অকষিত হেম।।

অগ্নিতাপে সে কাঞ্চন যবে শুদ্ধ হয়।

ঝক ঝক করে তাহা আপন প্রভায়।।

আদি প্রেম জন্মে বটে কামনা ভিতরে।

পেয়ে পেয়ে ভাগ করে প্রেম যায় মরে।।

পেয়ে যদি নাহি পায় ভোগ-ইচ্ছা মরে।

বিরহ আগুণে প্রেম নিস্কামতা ধরে।।

রাসক্ষেত্রে তাই কৃষ্ণ ধরা নাহি দেয়।

গোপিনীর কাম-ইচ্ছা ভস্মীভূত হয়।।

নিস্কাম প্রেমেতে তারা জলধরে চায়।

নিস্কাম প্রেমের তরে রাসলীলা হয়।।

শ্রীহরিচাঁদের রাস পূর্ণ হতে পূর্ণ।

এই রাস নরনারী সকলের জন্য।।

নিস্কাম সাধনা সবে এই রাসে পাবে।

অকাম কামনা-চক্রে শান্তি মা’ আসিবে।।’’

সেই হতে রাস লীলা হয় ওড়াকান্দী।

চারি উৎসবের কেন্দ্রে মতুয়ারা বন্দী।।

শ্রীবারুণী রথযাত্রা দশভূজা পূজা।

মহালীলা পূর্ণরাস অতি মহাতেজা।।

কর্ম্মচক্রে ধর্ম্মবর্ম্মে মতুয়া জীবন।

দিনে দিনে গড়ে প্রভু অনাথ শরণ।।

শেষ কর্ম্ম এ জাতির মঙ্গল বিধানে।

উচ্চ শিক্ষা লভিবারে পাঠাতে লন্ডনে।।

অসম্ভব কার্য্য ভাবি নমঃশূদ্রগণ।

এই কার্য্যে অগ্রসর না হল কখন।।

Page 456 start

জাতির মনেতে তাই দৃঢ় শক্তি দিতে।

নিজ পৌত্রে ইচ্ছা করে বিলাতে পাঠাতে।।

মনে মনে ইচ্ছা করে মুখে নাহি কয়।

প্রমথ রঞ্জন ডিগ্রী পেল এ সময়।।

ডিগ্রী পলে বি,এ, পাশ করিয়া গৌরবে।

এম,এ, পড়ে কলিকাতা যশের সৌরভে।।

একবর্ষ পাঠ তাঁ হইল যখন।

প্রভুর ইচছায় তিনি ভাবে মনে মন।।

সহপাঠী ছাত্র যত ছিল একসাথে।

বহুবিধ কথা তারা বলে বহুমতে।।

নিজ নিজ উচ্চাকাঙ্খা জানায় পুলকে।

জীবনের ভবিষ্যৎ ভরিবে আলোকে।।

সব কথা বসে শোনে প্রমথরঞ্জন।

বিলাত যাইতে ইচ্চা হইল তখন।।

একেত মহান কার্য্য তাতে পিতৃহীন।

ভরসা যে পিতামহ তিনিও প্রাচীন।।

ইতি উতি ভাবি মনে শান্তি নাহি পায়।

মনে মনে গুমরিছে প্রাণ ফেটে যায়।।

এই ভাবে দুঃখে যবে দিন কাটে তাঁর।

গোপালগঞ্জেতে এল স্যার জন কার।।

বঙ্গের অস্থায়ী লাট ছিল সেই জন।

গোপালগঞ্জেতে এল দর্শন কারণ।।

নিমন্ত্রণ পেয়ে প্রভু তখাকারে যায়।

ডেপুটি বহুত মান তাঁহারে দেখায়।।

ইহার কারণ বলি শুন মন দিয়া।

অসহযোগের নীতি দেশেতে আসিয়া।।

কায়স্থ ব্রাহ্মণগণে মিলিয়া সকলে।

‘‘ইংরাজে মানিনা’’ মোরা এই কথা বলে।।

লাটেরে সম্মান দিতে কেহ নাহি যাবে।

ঘাটে মাঠে এই কথা বলে নানাভাবে।।

তাহাতে ডেপুটি তবে চিন্তিত হইল।

প্রভুকে সকল কথা চিঠিতে জানাল।।

প্রভু বলে ‘‘লোক দিব লাগে যতজন।

চিন্তা কি ডেপুটিবাবু আছি যতক্ষণ।।’’

কথামত দয়াময় বহু লোক সঙ্গে।

উপস্থিত দরবারে অতি মনোরঙ্গে।।

তাহাতে ডেপুটিবাবু বহু সুখী হল।

লাটের নিকটে তাঁর গুণ ব্যাখা কৈল।।

সকল শুনিয়া লাট বলিলেন তাঁরে।

‘‘বিলাত ফেরত কেহ নাহি কি এ ঘরে?’’

ডেপুটী করিল তবে সেই আলোচনা।

বিলাত গমনে সেই প্রথম নিশানা।।

ইচ্ছাময় ইচ্ছা যাহা করে নিজ মনে।

ইচ্ছা মাত্রে পুর্ণ তাহা হয় দিনে দিনে।।

কিভাবে বিলাত গেল প্রমথরঞ্জন।

সেই তত্ত্ব-কথা পরে করিব বর্ণন।।

ভক্তগণে প্রীত মনে অর্থ করে দান।

কে কে দিল পরে বলি সেই উপাখ্যান।।

তস্য পূর্ব্বে দিব ভক্ত সঙ্ঘ পরিচয়।

প্রধান প্রধান ভক্ত যত জন রয়।।

সংক্ষিপ্ত জীবনী কিন্তু করিব বর্ণন।

‘‘জয় গুরুচাঁদ’’ ধ্বনি কর সর্ব্বজন।।

---০---