Page 486

শ্রীমৎ নকুল চন্দ্র গোস্বামীর জীবন কথা

গোস্বামীর নকুল চন্দ্র অতি শক্তিমান।

শুন সবে বলি কিছু তাঁর আখ্যান।।

শ্রীগুরুচাঁদের শ্রেষ্ঠ ভক্ত একজন।

করজোড়ে গোস্বামীরে করিনু বন্দন।।

তের শত দুই সালে লহ্মীকাটী গাঁয়।

শুভক্ষণে জন্ম নিল সেই মহাশয়।।

খুলনা জিলার মধ্যে লহ্মীকাটী গ্রাম।

দৌলতপুরের থানা জেনে লিখিলাম।।

তাঁর পিতা মহাশয় যে দুর্গাচরণ।

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা নাম যাঁর জানি পঞ্চানন।।

উপাধি পাল চৌধুরী জাতি নমঃশূদ্র।

ধনে মানে কুলে শীলে কভু নহে ক্ষুদ্র।।

বাল্য হতে সে নকুল বহু তেজবন্ত।

সময়ে সময়ে যেন হত উদভ্রান্ত।।

একদিন বিলমধ্যে গেল হারাইয়া।

বহু কষ্টে পেল তাঁরে খুঁজিয়া খুঁজিয়া।।

যশোহর জিলাদীনে ডোমরা গেরামে।

নকুলের মাতামহ মত্ত ছিল নামে।।

মাঝে মাঝে শ্রীতারক সেই বাড়ী যায়।

শিশুকালে নকুলের সাথে দেখা দেয়।।

সুন্দর বালক দেখি গোস্বামী সুজন।

নকুলেরে করিলেন অঙ্কেতে ধারণ।।

মহতের স্পর্শ লাগে নকুলের গায়।

স্পর্শগুণে নকুলের হয় ভাগ্যোদয়।।

বাল্যকালে বিদ্যাশিক্ষা কিছু না করিল।

পঞ্চবিংশ বর্ষপরে কিঞ্চিৎ শিখিল।।

এতকালে তার দিন গেল কোন ভাবে?

ক্রমে ক্রমে সেই কথা বলিতেছি তবে।।

সমান বয়সী যত বাল মিশিয়া।

করিতের হরিনাম নাচিয়া নাচিয়া।।

দলের প্রধান ছিল নকুল গোঁসাই।

যাহা বলে সে নকুল সবে করে তাই।।

কীর্ত্তনাদি মহোৎসব হলে কোন খানে।

নকুলের দল যায় প্রেমানন্দ মনে।।

কীর্ত্তনাদি করে বটে মতুয়া না চেনে।

নিন্দা বা স্ত্ততি নাহি করে কোন জনে।।

এই ভাবে একদিন গোস্বামী রতন।

কুলসুর গ্রামে আসি দিল দরশন।।

যশোহর জিলা মধ্যে কুলসুর গ্রাম।

মতুয়ারা সেই খানে করিতেছে নাম।।

Page 487 start

রসরাজ কৃত বই ‘‘মহাসংকীর্ত্তন।’’

তাহা হতে গান করে মতুয়ার গণ।।

এক গান শুনে তার মন ভুলে গেল।

ভাবেতে হৃদয় মুগ্ধ আঁখি ছল ছল।।

আদি পদ সে গানের করিনু লিখন।

যাহা শুনে নকুলের ভুলে গেল মন।।

‘‘তোরা দেখসে এক সোনার মানুষ এসেছে।মানুষ কোন দেশে, ছিল কার কাছে-এ’ত বিধির গঠন, নয় গো কখন,মানুষে মানুষ মিশেছে।।’’----কবিরসরাজ তারকচন্দ্র।

মনে বলে ‘‘হেন গান আর শুনি নাই।

এ গানের বই আম কোন খানে পাই?

যার বই তারে কহে বিনয় বচন।

কিছু দিন বইখানি দিন মহাজন।।

আপনার বই আমি ফিরাইয়া দিব।

মনোমত গান কিছু লিখিয়া লইব।।’’

নকুলের কথা শুনি সেই মহাশয়।

আনন্দ অন্তরে তাঁরে বই দিয়ে দেয়।।

দেশে আসি দলে মিশি গোস্বামী নকুল।

প্রেমানন্দে গায় গান হইয়া আকুল।।

ক্রমে ক্রমে মতুয়ারা তারে সর্ব্বদায়।

মহোৎসব হলে তারে যত্নে ডেকে লয়।।

এসময়ে গোস্বামীজী বিবাহ করিল।

বিবাহের পরে এক বর্ষ কেটে গেল।।

ওড়াকান্দী বারুনীর শুভ সমাচার।

সে সময়ে দেশে দেশে হয়েছে প্রচার।।

গোস্বামী ভাবিল মনে ওড়াকান্দী যাবে।

কেমন বারুণী হয় স্বচক্ষে দেখিবে।।

আপনার লোকজনে গোস্বামী বলিল।

‘‘ওড়াকান্দী যাবে চলি চল সবে চল।।’’

আনন্দে দলের লোক নাচিয়া উঠিল।

সকলে বলিল ‘‘বড় শুভ দিন এল।।’’

ডঙ্কা, শিঙ্গা, ভেরী, তুরী, লোহিত নিশান।

বীরমুর্ত্তি সে নকুল অগ্রে অগ্রে যান।।

দলে লোক তিন শত বয়সে সমান।

মহানন্দে একসঙ্গে করে সবে গান।।

ক্রমে সবে উপস্থিত মধুমতী তীরে।

সভয়ে পাটনী তবে দিল পার করে।।

বীরভাবে তারা সবে ওড়াকান্দী এল।

দল দেখে গুরুচাঁদ আনন্দিত হল।।

পরিচয় জিজ্ঞাসিল নকুলের ঠাঁই।

পরিচয় পেয়ে ডাকে ‘‘চৌধুরী মশাই।।’’

প্রভু কয় ‘‘এইমত বীর দল চাই।

তোমরা আসিলে কাছে বড় শান্তি পাই।।

শুনহে নকুল তুমি আমার বচন।

মাঝে মাঝে ওড়াকান্দী কর আগমন।।’’

প্রভুর নিকটে পরে লইল বিদায়।

বিদায়ের কাছে প্রভু ডাক দিয়া কয়।।

‘‘আমি বলি তোমাদের পারে বাধা নাই।

কোন কড়ি লাগিবে না বলে দিনু তাই।।’’

নকুলের দল তবে চলিল হাঁটিয়া।

উপনীত মধুমতী তীরেতে আসিয়া।।

মঙ্গলপুরের ঘাটে যেই খেয়া রয়।

মাথা পিছু দু’পয়সা পার হতে লয়।।

কিন্তু দেখ নকুলের দলে ছিল যারা।

কোনভাবে নদীপার হইলেন তারা?

সর্ব্বদশী গুরুচাঁদ যাহা বলেছিল।

ঘটিতে ঘটিতে দেখ তাহাই ঘটিল।।

জেলেরা নদীর মধ্যে ফেলিতেছে জাল।

হেনকালে শোনে ধ্বনি বল হরিবল।।

জেলেরা ভাবিল আজ দিন বড় ভাল।

হরিবলে দলে দলে মতুয়া আসিল।।

Page 488 start

মতুয়ারে অদ্য মোরা পার করে দিব।

মতুয়া করিলে পার বেশী মাছ পাব।।

চিরকাল এই কথা জানি ভাল মোরা।

বহুশক্তি ধরে ওড়াকান্দী মতো’রা।।

তাই যবে নকুলের দল এলো চলে।

জোড়হাতে বলিতেছে যত সব জেলে।।

‘‘দয়া করে গোস্বামীরা এস এই নায়।

তোমাদের পার করি বহু ইচ্ছা রয়।।

জেলেদের কথা শুনি দলে ছিল যারা।

তারা কয় ‘‘একি কান্ড নাহি বুঝি মোরা।।

কোথা বা সে ওড়াকান্দী কোথা মধুমতী।

এই কি আশ্চর্য্য কান্ড ঘটিল সংপ্রতি?

এতদূরে গুরুচাঁদ দেখিল কেমনে?

সর্ব্বদর্শী গুরুচাঁদ বুঝিলাম মনে।।’’

নকুল ডাকিয়া বলে ‘‘শুন ভাই সব।

কি দেখিলে কিবা বোঝ’ এই সব ভাব?’’

সঙ্গী যারা বলে তারা ‘‘ঠকিয়াছি ভাই।

হেন ব্যক্তি গুরুচাঁদ আগে বুঝি নাই।।

দূরে থেকে সব দেখে, জানিতেও পারে।

এমন সোনা মানুষ দেখি নাই ওরে।।’’

এই কথা জনে জনে সকলেই বলে।

উঠিল ভাবের ঢেউ মধুমতী কুলে।।

হেনকালে নৌকা আসি কুলেতে ভিড়িল।

প্রেমানন্দে সকলেই নৌকায় চড়িল।।

সুদীর্ঘ চারটি তরী হল ভাসমান।

হেনকালে সে নকুল ধরিলেন গান।।


‘‘তোরা কে কে যাবি আয় পারে-তোদের পারের কড়ি লাগবে না রে।।’’

মধুমতী নাচে রঙ্গে জলের তরঙ্গে।

তরী পরে মগ্ন তারা ভাবের প্রসঙ্গে।।

তরঙ্গে তরঙ্গে মিলি হল একাকার।

আরোহী কি দাঁড়ি মাঝি জ্ঞান নাহি কার।।

তীরে বসি নরনারী করে বলাবলি।

‘‘এ কোন ভাবে খেলা খেলিছে সকলি।।’’

ভাবে মত্ত অরোহীরা তরী চলে ধীরে।

কুলে গেল সেই তরী দুই ঘন্টা পরে।।

এইভাবে সে নকুল বাড়ী চলে গেল।

গুরুচাঁদে দেখে মন ব্যাকুল হইল।।

সপ্তাহ গৃহেতে থাকি সাধু পুনরায়।

হইলেন ওড়াকান্দী শ্রীধামে উদয়।।

মতুয়া পবিত্র কথা সুধাধিক সুধা।

কবিকহে পিও সাধু যাবে ভবক্ষুধা।।

---০---