Page 488

শ্রীশ্রী ঠাকুরের কৃপালাভ

শ্রীধামে আসিয়া প্রণাম করিয়া

নকুল বসিয়া রয়।

হাসিয়া মধুর কহিল ঠাকুর

‘‘আসিলি কিসের দায়?।।

কহিছে নকুল হয়ে প্রেমাকুল

‘‘অকুল কান্ডারি তুমি!

কিছুই কহিতে কিছুই লইতে

আসি নাই হেথা আমি।।’’

প্রভুজী হাসিয়া কহিছে ডাকিয়া

‘‘বলিলি কেমন কথা?

কিছু নাহি নিবি কিছুনা বলিবি

তবে কি আসিলি বৃথা?’’

যজ্ঞেশ্বর তার তাকে ডাকি লয়

প্রভু হতে কিছু দূরে।

পরে তারে কয় ‘‘শোন মহাশয়

ফেলিয়াছ ভুল করে।।

Page 489 start

নিজে দয়াময় কৃপা দিতে চায়

বাধা কর কেন তাতে?

আপনি রতন আসিছে যখন

কিবা দোষ তাহা নিতে?

তুমি’ত সরল বোঝ সে গরল

কর যে বিষম ভুল।

যেতে ভব পারে ডাকিছে তোমারে

তুমি যে ছাড়না কুল।।’’

শুনি তার কথা নকুল অগত্যা

তার মতে দিল সায়।

গিয়ে করপুটে প্রভুর নিকটে

এক বাক্য চেয়ে লয়।।

কহিছে ঠাকুর ‘‘শোনরে নকুল

যাহা বলি করা চাই।

অষ্টাদশ মাস পত্নী সহবাস

করিওনা বলি তাই।।’’

নকুল ভাবিল কোন জ্বালা হল

কেমনে পারিব তাহা?

একবর্ষ ধরি নাহি ছোব নারী

এসব যাবে কি সহা?

না পারি সে ভাল কিন্তু কিসে বল

পারি বলে নাহি পারি?

প্রতিজ্ঞা আমার করিয়া স্বীকার

অস্বীকার নাহি করি।।

কি জানি কি হয় কথা ভাল নয়

স্বীকার করিয়া ডাঙ্গা।

একার্যে নিরিখ লাগে বটে ঠিক

যথা রাখে মাছরাঙ্গা।।

রাখিয়া বিকার করিলে স্বীকার

অবশ্য কুফল ফলে।

আপন স্বভাবে যদি হয় হবে

বলে কেন বাধি জালে।।’’

এতেক ভাবিয়া নকুল উঠিয়া

কহিছে প্রভুর ঠাঁই।

‘‘বলিলে যে কথা কখনে আমি তা’

পারিবনা-মাফ চাই।।’’

প্রভু বলে ডাকি ‘‘বলিলি তুই কি

নারিবি রাখিতে কথা?

না মানিলে কথা কেন এলি হেথা

আসা হল তোর বৃথা।।

যদি না পারিস ভাল না থাকিস

আসিস না ওড়াকান্দি।

আসুক তাহারা কথা মানে যারা

যারা নাহি জানে ফন্দী।।’’

প্রভুর মহিমা কেবা দিবে সীমা

কেবা বোঝে কার্য ধারা।

কারে কিযে কয় কিসে কিযে হয়

কিছুই বুঝিনা মোরা।।

প্রভুর বচনে নকুলের মনে

দুঃখ বটে কিছু হল।

প্রভুরে চাহিয়া বিষাদে হাসিয়া

ঝরিল নয়নে জল।।

প্রভু প্রতি কয় ‘‘শোন দয়াময়।

আমারে করিলে মানা।

না বলিলে ফিরে আসিবনা ফিরে

হেথা নাহি দিব হানা।।’’

এতেক কহিয়া প্রণাম করিয়া

নকুল চলিয়া যায়।

পথে চিন্তা করে ‘‘কেমন প্রকারে

বাক্য-রক্ষা কিসে হয়?

গৃহে যদি রই কি জানি কি হই

কি জানি নারীর খেলা।

দেড় বর্ষ ধরে রব দূরে দূরে

যৌবনের এই বেলা।।’’

Page 490 start

গৃহে ফিরে গেল কিছু না কহিল

আপন নারীর কাছে।

সাজিয়া উদাসী ঘোরে দিশি দিশি

হরি বলে সদা-নাচে।।

তাহার রমণী গুণময়ী ধনি

মনে নাহি করে দুঃখ।

স্বামী তুষ্ট যাতে তিনি ও তাহাতে

পরাণে পাইল সুখ।।

দু্ই বর্ষ গত হল এই মত

নকুল মাতিল নামে।

হেথা দয়াময় ব্যস্ত অতিশয়

ওড়াকান্দী পুণ্য ধামে।।

উনশিয়া ঘর অনন্ত কুমার

তাহারে ডাকিয়া কয়।

‘‘অনন্ত কুমার যাহ একবার

দেখ নকুল কোথায়?

দুই বর্ষ গেল তবু নাহি এল

পড়েছি বিষম দায়।

তার বাড়ী যাও তারে গিয়ে কও

কর্তা ডেকেছে তোমায়।।’’

অনন্ত চলিল লহ্মীকাটী গেল

নকুলে ধরিল বাড়ী।

বলে ‘‘মহাশয় প্রভুর আজ্ঞায়

চল তুমি তাড়া তাড়ি।।

কহিল নকুল ‘‘আমিও ব্যাকুল

যাইতে প্রভুর ঠাঁই।

কিছু কাল পরে যাব তাঁর ধারে

আজ যেতে সাধ্য নাই।।’’

প্রভুর দয়ায় সীমা নাহি রয়

দয়ার তুলনা নাই।

যত যাই ছেড়ে প্রভু ধরে বেড়ে

আর কি এমন পাই?

প্রভুর পুনরায় আদুকে পাঠায়

নকুলেরে আনিবারে।

নকুলের প্রাণ মহাভাব আনে

এইভাব চোখে হেরে।।

ভাবিছে নকুল প্রেমেতে আকুল

‘‘ওহোরে দয়ার বন্ধু!

জোর করে ধরে মোরে দয়া করে

এমনি করুণা-সিন্ধু।।’’

ভাবেতে মাতিয়া শ্রীধামে আসিয়া

পড়িল প্রভুর পদে।

কহিল ‘‘দয়াল প্রাণে দাও বল

মজিয়াছি অপরাধে।।

প্রভু ডেকে কয় ‘‘নাহি কোন ভয়

আমি যে রয়েছি তোর।

দেশে দেশে যাও সবে নাম দাও

থাকিও প্রেমেতে ভোর।।’’

করে এই উক্তি প্রভু দিল শক্তি

নকুল আনন্দ পায়।

দেশে দেশে যায় শ্রীনাম বিলায়

প্রেমেতে বিভোর রয়।।

প্রভু কৃপা করে শুন অতঃপরে

কার শক্তি পেল প্রাণে।

স্মরিয়া গোপালে নয়নের জলে

মহানন্দ তাই ভণে।।

---০---