Page 476 start

যঞ্জেশ্বরের মৃগী রোগ মুক্তি

জিলা হল যশোহর মামুদপুরেতে ঘর

যঞ্জেশ্বর বলে নাম জানি।

ধরে তারে অপস্মারে ‘‘মৃগী’’ বলে লোকাচারে

দুঃখে কান্দে দিবস রজনী।।

ওঝা বৈদ্য কবিরাজ ঔষধে না করে কাজ

দিনে দিনে হতেছে হতাশ।

কিবা করে কোথা যায়? সদা করে হায়, হায়,

কোন কিছু না করে বিশ্বাস।।

হেনকালে শোনে নাম, রূপচাঁদ গুণধাম

অন্য নাম রমণী গোঁসাই।।

হরিচাঁদ নাম গুণে সারিয়াছে কত জনে

ওঝা বৈদ্য যাহা পারে নাই।।

একথা শুনিল যবে যজ্ঞেশ্বর বসে ভাবে

কোথা গেলে দেখা পাব তাঁর।

একে আমি চির-রুগী রোগ তাতে হল ‘মৃগী’

হেঁটে যেতে সাধ্য নাহি আর।।

বুঝিলাম কর্ম্ম ফলে অকালে মরণ ভালে

জীবনের আশা কিছু নাই।

ভালে যদি এই লেখা তবে কেন বসে-থাকা

হুড়কাতে একা একা যাই।।

এই ভাবে যজ্ঞেশ্বর হল ক্রমে অগ্রসর

উপনীত হল হুড়কায়।

জিজ্ঞাসা করিয়া জানে রূপচাঁদ কোনখানে

এসে কেন্দে পড়ে তার পায়।।

কেন্দে কেন্দে সব কয় গোস্বামীর দয়া হয়

বলে ‘‘তুমি থাক’’ মোর সাথে।

হরি যদি দয়া করে এ রোগ সারিতে পারে

তাঁরে তুমি ডাক এক চিতে।।’’

তদবধি যজ্ঞেশ্বর নাহি দেয় অবসর

নিরন্তর করে হরি নাম।

রোমজাইপুর গ্রামে সেই কথা বলি ক্রমে

মহোৎসবে গেল গুণধাম।।

যজ্ঞেশ্বর সাথে রয় সদাহরি হরি কয়

নাহি ছাড়ে গোস্বামীর সঙ্গ।

দুই দিন পরে তায় গোস্বামীজী গৃহে-ধায়

মহোৎসব করিলেন ভঙ্গ।।

মঙ্গলা নদীর কুলে যজ্ঞেশ্বর হেলে দুলে

করিতেছে সুধা হরিনাম।

অকস্মাৎ গোস্বামীজী কোন ভাবে কিবা বুঝি

বলে ‘‘আমি জলে নামিলাম।।’’

ভয় পেয়ে যজ্ঞেশ্বর বলে ‘‘কর্ত্তা খরতর

বেগ দেখি এ নদীর জলে।।’’

এই কথা যবে কয় বল আর কোথা যায়?

বেত্রাঘাত করে পৃষ্ঠ স্থলে।।

গোস্বামীর বেত্রাঘাত হল যে বজ্রাঘাত

যজ্ঞেশ্বর পড়িল ভূতলে।।

মহাভাবে সে গোস্বামী তখনি নদীতে নামি

ঝাঁপ দিল মঙ্গলার জলে।

তাই দেখে যজ্ঞেশ্বর ঘুচে গেল অন্ধকার

পিছে ঝাঁপ দিল হরি বলে।।

কুলে কুলে ভরা নদী আকারে যে জলধি

হাঙ্গর কুম্ভীর কত আছে।

কোন দিকে লক্ষ্য নাই ভেসে চলে সে গোঁসাই

জলজন্তু নাহি আসে কাছে।।

কিছু পরে সাঁতারিয়া উঠিলেন কুলে গিয়া

বলে ‘‘জোরে আর যজ্ঞেশ্বর।

এদিকেতে যজ্ঞেশ্বর অতি শ্রান্ত কলেবর

ওঠে গিয়া কুলের উপর।।

Page 477 start

গোস্বামী হাসিয়া কয় ‘‘আয় মোর কাছে আয়

আয় বাছা কত দুঃখ পেলি।

তোর যে রোগের দায় তাতে মন ব্যস্ত রয়

আজ কিন্তু রোগ গেল চলি।।’’

রোগ নাহি এল আর বেঁচে গেল যজ্ঞেশ্বর

মহতের কৃপা পেয়ে ধন্য।

এই ভাবে কতজন দিবা রাত্রি সর্ব্বক্ষণ

তার কাছে আসে মুক্তি জন্য।।

সে সব লিখিতে গেলে গ্রন্থ বহু বেড়ে চলে

অল্পে অল্পে তাই ক্ষান্ত করি।

এই কথা বলা যায় যদি গ্রন্থ লেখা হয়

গ্রন্থ হতে পারে ভুরি ভুরি।।

অসীম ক্ষমতাশালী যত মতুয়া মন্ডলী

মহাশক্তি ধরে প্রতি জনে।

তাঁহাদের লীলা খেলা লেখে যদি সারা বেলা

শেষ নাহি হবে কোন ক্ষণে।।

তবু কিছু বিবরণ আমি করিব লিখন

যথাসাধ্য সংক্ষেপেতে হয়।

দিগরাজ তার ঘর ব্রহ্মকুলে জন্ম তার

ভুপতি নামেতে সেইজন।

বহু রোগে ভুগে পরে আসিয়া গোঁসাইর ধারে

শুরু বলে করিল বরণ।।

তাতে রোগে মুক্তি পায় সেই হতে সর্ব্বদায়

গোঁসাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে রয়।

ত্যজি কুল ত্যজি মান গুরু পদে মন প্রাণ

সমর্পণ করে শান্তি পায়।।

নির্ম্মল কুমার নামে নগরকান্দী গ্রামে

ভক্তিমান একটি বালক।

রূপচাঁদে ছোখে দেখে গুরু বলে মান্য রাখে

পাশ করে হইয়া পুলক।।

সুকঠিন ধর্ম্মপথ বড় দুঃখে যাতায়াত

সাধকের হয় করিবারে।

তেলিহাটি একবার বিপদ হইল তার

গুরুচাঁদ রক্ষা করে তারে।।

হাতে নিয়ে ‘‘গোপীযন্ত্র’’ হরি নাম মহামন্ত্র

যবে স্বামী করে উচ্চারণ।

কিবা নর কিবা নারী সদা ফেলে অশ্রু বারি

ধ্বনি শুনে মন উচাটন।।

লীলামৃত গ্রন্থখানি ছাপিলেন পুনঃ তিনি

দান ধর্ম্মে চিত্ত ছিল খোলা।

যেম্নি পতি তেম্নি সতী অতিশয় নিষ্ঠাবতী

পত্নী তাঁর দেবী ফুলমালা।।

ভ্রাতুস্পুত্র শ্রীযতীন্দ্র খুল্লতাতে করে মান্য

তার মতে তার পথে চলে।

নাম ধর্ম্ম পরচার কোথা করে সাধুবর

সেই কথা বলি কুতুহলে।।

মতুয়া চরিত্র গাঁথা, পরম পবিত্র কথা

সুধা হতে অতি সুধাময়।

তরিতে এ ভবনদী পান কর নিরবধি

দীন মহানন্দে তাই কয়।।

---০---