Page 093

হরিদাসপুরের কারবারী বাসা

আদর্শ গার্হস্থ্য নীতি পালে গুরুচাঁদ।

পতিত গার্হস্থ্য ক্ষেত্র করিতে আবাদ।।

বাল্য ও কৈশোরে করে বিদ্যা উপার্জ্জন।

যৌবনে করিল দৃঢ় সংযম সাধন।।

আজীবন ব্রহ্মচর্য রাখিলেন ঠিক্।

চিরকাল পিতৃধর্ম্মে রাখিল নিরিখ।।

প্রথম যৌবন কালে বিবাহ হইল।

বিবাহ জীবনে প্রভু পবিত্র রহিল।।

সংযমী সুধীর, শান্ত, অতি তেজোবন্ত।

অতল সিন্ধুর প্রায় নাহি মিলে অন্ত।।

গৃহী পক্ষে অর্থ হয় অতি মহাবল।

অর্থ উপার্জ্জনে হ'ল বাসনা প্রবল।।

নীলকান্ত,গীরিধর বন্ধু দুই জনা।

তা 'দিগে খুলিয়া বলে মনের বাসনা।।

তিনে মিশি হরিচাঁদে করে নিবেদন।

তেঁহ আজ্ঞা দিল নৌকা গঠন কারণ।।

নৌকা চালানীতে করে আরম্ভ বানিজ্য।

কিছুকাল পরে করে সেই ভাব ত্যজ্য।।

বাসিন্দা দোকান করি বন্দরের পরে।

ব্যবসা করিতে প্রভু মনে ইচ্ছা করে।।

পিতৃপদে সেই ইচ্ছা প্রকাশ করিল।

ইচ্ছাময় মহাপ্রভু মতে মত দিল।।

হেন কালে হরিচাঁদ লীলা সম্বরিল।

কিছুকাল সে বাসনা স্থগিত রহিল।।

দুই বর্ষ গত হ'ল বিভিন্ন প্রকারে।

সংক্ষেপে বলিব তাহা গুরু কৃপা বরে।।

নড়াইল বাসী নাম শ্রীনাথ সরকার।

বন্দোবস্ত নিয়ে এল ওড়াকান্দী পর।।

তাহে প্রতিবাদী হ'ল প্রজা সব জন।

ভিন্ন জনে কর দিতে নাহি লয় মন।।

দরবার করে সবে জমিদার ঠাঁই।

খাস প্রজা সবে মোরা রহিবারে চাই।।

জমিদার বলে তবে ভাবিয়া দেখিব।

শ্রীনাথে ডাকিয়া সব খুলিয়া বলিব।।

কিছুকাল গত হয় দৈবে একদিন।

দখল লইতে আসে শ্রীনাথ প্রবীণ।।

প্রজা বুঝে জমিদার বঞ্চনা করিল।

ব'লে ক'য়ে শ্রীনাথেরে দেশে পাঠাইল।।

প্রজা বলে “শুন তুমি সরকার বাবু।

তুমি বলবান মোরা সবে দেখ কাবু।।

তব সাথে বিবাদ মোরা কভু না করিব।

জমিদার বাড়ী চল সেথা সব ক'ব।।

যদি জমিদার বলে দিতে তোমা কর।

আপত্তি রবে না কিছু তোমার উপর।।

শ্রীনাথ ভাবিল মনে কথা মন্দ নয়।

আপোষেতে যদি কার্য সুসমাধা হয়।।

তবে কেন গোলমাল করি আমি মিছে।

মিট্ যদি নাহি হয় দেখা যাবে পিছে।।

Page 094 start

এত ভাবি দিল সায় সেই যে শ্রীনাথ।

কথা হ'ল প্রজা সবে যাবে তাঁর সাথ।।

দিন স্থির করি সবে গৃহেতে আসিল।

স্বদেশে শ্রীনাথ তবে প্রস্থান করিল।।

একে'ত কায়স্থ জাতি তাহে সরকার।

চতুরতা কার্যে বুদ্ধি অতিব প্রখর।।

মনে ভাবে জমিদার বড়ই দয়াল।

তাঁর কাছে গেলে সব হবে পয়মাল।।

অশিক্ষিত নমঃশূদ্র তাহাতে দরিদ্র।

আমরা কায়স্থ জাতি ধনে, মানে ভদ্র।।

আইনের কুটীনাটী সব মোরা জানি।

আইনের চাপে সব জব্দ ক'রে আনি।।

এত ভাবি কূটবুদ্ধি সেই মহাশয়।

মহাকুমা পানে চলে প্রফুল্ল হৃদয়।।

ফৌজদারি আদালতে করিল বর্ণনা।

“নমঃশূদ্র প্রজা মোরে দখল দিল না।।

অত্যাচার বহুতর করিয়াছে মোরে।

থালা,বাটী খাতাপত্র নি'ছে জোর করে।।

বড়ই দুর্দান্ত তারা আইন না মানে।

“খুন করা “ছাড়া তারা কিছুই না জানে।।

অল্প রাত্রি ছিল আমি পায়খানা যাই।

হেন কালে দল জুটে এসেছে সবাই।।

দ্বার খোলা ছিল ঘরে আলো ছিল জ্বালা।

খাতা পত্র সাথে নিল, ঘটী, বাটী, থালা।।

সোরাগোল শুনি আমি আসি গৃহ দ্বারে।

দশ জনে বর্শা নিয়ে মোরে তাড়া করে।।

প্রাণ ভয়ে আমি ছুটি ফেলে দিয়ে ঘড়া।

বস্ত্র ছিড়ে গেছে পড়ে চাবি দুই তোড়া।।

অতি কষ্টে প্রাণ নিয়ে আমি আসিয়াছি।

পুনরায় গেলে সেথা বাঁচি কিনা বাঁচি।। “

দুষ্টজনে ছল হয় প্রধান সহায়।

যাত্রাকালে গৃহ হতে ছিন্ন বস্ত্র লয়।।

সেই ছিন্ন বস্ত্র তুলি হাকিমে দেখায়।

হাকিম” সনাক্ত “ বলি তাহা লিখি লয়।।

প্রধান আসামী নাম শ্রীগুরুচরণ।

বিশ্বাস উপাধি বলে” ঠাকুর” এখন।।

শ্রী বিধু ভূষণ নামে দ্বিতীয় আসামী।

উপাধী চৌধুরী কহে শুনিয়াছি আমি।।

এই ভাবে ওড়াকান্দী যতেক প্রধান।

শ্রীনাথ করিল নাম হয়ে হতজ্ঞান।।

হাকিম জিজ্ঞাসা করে মোক্তারের ঠাঁই।

“শুনুন মোক্তার বাবু আমি জানতে চাই।।

দূর্দান্ত আসামী বলি হয়েছে বর্ণনা।

আসামীর নামে কিন্তু সে ভাব আসে না।।

প্রধান আসামী বলি হয়েছে যে নাম।

“ঠাকুর “উপাধি তাঁর আমি জানিলাম।।

ঠাকুর বলিয়া যার উপাধি হয়েছে।

সেই ব্যক্তি হেন কর্ম্ম কভু কি ক'রেছে।।

আপনি মোক্তার বাবু এই দেশে ঘর।

খুলিয়া বলুন দেখি সব সমাচার।।

কি কারণে এই ব্যক্তির উপাধি ঠাকুর।

সত্য কথা বলি মোর সন্দ কর দূর “।।

বিনয়ে মোক্তার বলে “জানাই হুজুর।

এই ব্যক্তির পিতা ছিল “শ্রী হরি ঠাকুর “।।

মহাসাধু সেই ব্যক্তি ছিল এই দেশে।

রোগী, ভোগী পে'ত শান্তি তাঁর কাছে এসে।।

অলৌকিক শক্তি তাঁর আছিল প্রচুর।

তাঁহাকে ডাকিত সবে শ্রী হরি ঠাকুর।।

তাঁর পুত্র হ'ন ইনি মহা ধনবান।

দেশ বাসী সবে তাঁরে করয় সন্মান।।

পিতৃতুল্য দৈবশক্তি আছে কিনা আছে।

সে সব জানিনা মোরা জানে যারা কাছে।।

সাধুর সন্তান তাহে সম্মান প্রচুর।

সেই জন্যে উপাধীতে হয়েছে ঠাকুর।।

Page 095 start

কথা শুনি বিচারক হাসি হাসি বলে।

'বড়ই সুন্দর ব্যাখ্যা এখানে করিলে।।

পিতা যার দেবতুল্য নিজে ভাগ্যবান।

এসব কর্ম্মের নাকি সে রাখে সন্ধান?

যা ' হক্ তা ' হক্ বাবু! কর্ত্তব্য আমার।

অভিযোগ পেলে করি বিচার তাহার।।

মনের সন্দেহ কিন্তু দূর নাহি হয়।

“মামলা তদন্ত হোক এই দিনু রায়”।।

পুলিশের হাতে দিল তদন্ত কারণ।

রায় শুনি শ্রী নাথের মলিন বদন।।

স্থানীয় সাক্ষী তা 'তে প্রয়োজন ভারী।

শ্রী নাথ বসিয়া ভাবে উপায় কি করি।।

ইচ্ছা ছিল “ তলবেতে “ কাঠ গড়া এনে।

করিব বিষম জব্দ শহরেতে টেনে।

সে আশা নির্ম্মূল হল উপায় না দেখি।

হাতে নাতে ধরা পরে হতে হল মেকী।।

কিছুদিন পরে যবে তদন্তে আসিল।

শ্রীনাথ ঘটনাস্থলে কভু নাহি গেল।।

তদন্তে দারোগা জানে সব জুয়াচুরি।

রিপোর্ট লিখিয়া দিল “ফরেদি ফেরারী।।

নিষ্কলঙ্ক চন্দ্রসম আসামী খালাস।

শ্রীনাথ গেল না আর ওড়াকান্দী পাশ।।

এইভাবে মোকদ্দমা চূড়ান্ত হইল।

ভয়াকুল প্রজাকুল আনন্দ পাইল।।

বার'শ পঁচাশি সাল অঘ্রাণ মাসেতে।

শতটাকা ট্যাক্স ধার্য প্রভুর পরেতে।।

পরশ্রী কাতর যত দুষ্ট দূরাশয়।

রাজ সরকারে গিয়া বহু কথা কয়।।

শ্রী হরির পুত্র নাম শ্রী গুরুচরণ।

গাড়ী গাড়ী টাকা পায় তাহার কারণ।।

ব্যবসা বানিজ্য তিনি করে বহুতর।

সরকারে কভু নাহি নাহি দেয় কর।।

গুরুভার ট্যাক্স তার উচিত যে হয়।

এই সব কূটকথা সরকারে জানায়।।

ট্যাক্স ধার্য করিলেন রাজ কর্ম্মচারী।

নোটিশে জানায় কথা ঠাকুরের বাড়ী।।

ঘটনা জানিতে প্রভু হইলেন ব্যস্ত।

ট্যাক্সের বিরুদ্ধে দিল এক দরখাস্ত।।

বর্ণনা করিল প্রভু তাহার মধ্যেতে।

“এই ট্যাক্স দিতে মোর না হবে সাধ্যেতে।।

বিশেষতঃ এই কথা করি নিবেদন।

মম পিতা ছিল বটে সাধু মহাজন।।

তেঁহ অগ্রে রোগী ভোগী দিতে কত অর্থ।

সেই সবে নাহি মোর কিছু মাত্র স্বার্থ।।

ধর্ম্মজ্ঞানে যেই অর্থ সাধুজনে দেয়।

তদুপরি ট্যাক্স ধার্য উচিত না হয়।।

মহামান্যা মহারাণী করেছে ঘোষণা।

ধর্ম্ম কার্যে হস্তক্ষেপ রাজা করিবে না।।

ধর্ম্মের ব্যাপারে আমি সেই অর্থ পাই।

তার পরে ট্যাক্স ধার্য 'রাজাইনে' নাই।।

যুক্তি পূর্ণ দরখাস্ত করে গুরুচাঁদ।

রাজ কর্ম্মচারী তাতে ট্যাক্স দেয় বাদ”।।

ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করে উকিলের ঠাঁই।

“শুন হে উকিল বাবু আমি জানতে চাই।।

কি কারণে অর্থ সবে দেয় এই জনে।

শুধু শুধু অর্থ দিবে কিসের কারণে ?

আমি রাজ কর্ম্মচারী রাজশক্তি বলে।

বিচার করেছি কত অতি কুতূহলে।।

“রাজদণ্ড ভয়ে দেখ সবে করে ভয়।

শুধু শুধু তবু অর্থ কেহ নাহি দেয়।।

কোন শক্তি বলে বল এই ভাগ্যবান।

গৃহে বসি অর্থ পায় না করি সন্ধান।।”

উকিল হাকিমে বলে বিনয় বচনে।

“যে আজ্ঞা হুজুর সব বলিব এখনে।।

Page 096 start

ইহার পিতার নাম শ্রী হরি ঠাকুর।

এই জিলা মধ্যে বাস সাধনা প্রচুর।।

ওড়াকান্দী গ্রামে তিনি করিলেন বাস।

শত শত নর নারী যেত তাঁর পাশ।।

অলৌকিক শক্তি বলে সেই মহাশয়।

রোগারোগ্য করিতেন মুখের কথায়।।

অন্ধজনে দৃষ্টি পে'ত দরিদ্রেতে ধন।

সবে পেত যেই যাহা করিত মনন।।

মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হত যখনি যাহার।

ইচ্ছামত দিত সবে অর্থ কি আহার।।

তাঁর বাড়ী সবে মানে তীর্থক্ষেত্র প্রায়।

অদ্যাবধি অর্থ আনি সবে সেথা দেয়।।

সেই অর্থ তাঁর পুত্র শ্রী গুরুচরণ।

পিতার নামেতে তাহা করেন গ্রহণ।।

এই ব্যক্তি সেই শক্তি ধরে কিনা ধরে।

সেই কথা বলি তবে যা আসে অন্তরে।।

কিছু শক্তি এই জন নাহি যদি পায়।

সবে কেন আসে তবে তাঁহার আলয়।।

মোরা সবে আছি হেথা বসিয়া শহরে।

সব কথা নাহি জানি বলি কি প্রকারে।।

তবে এক কথা মনে ওঠে যে হুজুর।

ব্রহ্ম শক্তি যাঁর আছে সে হয় ঠাকুর।।

যার আছে তাঁর কাছে ছুটে যে সকলি।

মধু শূন্য পুষ্পে কভু ধায় নাকি অলি ?

স্বনামে পুরুষ ধন্য উত্তম সে জন।

পিতৃধনে ধনী ভবে আছে কত জন।।

যে বাড়ায় তার হয় অগণিত ধন।

মূলধন ক্ষয় করি দীন কতজন।।

এ মহাপুরুষে জানি বহু বিত্তশালী।

দিন দিন বাড়িতেছে সে ধন সকলি।।

ইথে মম মনে লয় এই মহাজন।

শুধু ধনে নয় ইনি গুণে মহাজন।।

ধর্ম্ম পথ জানি সুক্ষ্ম নাহি কুটুম্বিতা।

ধনধান্য লক্ষ্মী থাকে ধর্ম্ম থাকে যেথা।।

নিশ্চয় জানিনু তা'তে ধার্ম্মিক এ জন।

শুধু পিতৃধনে নহে নিজে মহাজন।।

কথাশুনি বলে সেই রাজ - কর্ম্মচারী।

“শুনহে উকিল বাবু নিবেদন করি।।

যেই জন ধর্ম্ম রাখে ধর্ম্ম রাখে তারে।

পরম ধার্ম্মিক ইনি বুঝিনু অন্তরে।।

ধর্ম্মপথে যেই ধন পায় মহাশয়।

তদুপরি ট্যাক্স ধার্য উচিত না হয়।।

তবু এক কথা আমি বলিবারে চাই।

উচিৎ কি অনুচিত বুঝুন মশাই।।

রাজদ্বারে পরিচিত নহে যেই জন।

বৃথা তার জমিদারী যশ মান ধন।।

শুনিয়াছি ইনি সদা করিছে বানিজ্য।

বানিজ্যের ধনে ট্যাক্স দে'য়া কিন্তু ন্যায্য।।

এসব বিচার ইনি করুন আপনে।

ইচ্ছা হলে ট্যাক্স দিন রাজ সন্নিধানে।।

হাকিমের কথা শুনি গুরুচাঁদ হাসে।

হাসি কন্ “মোর মনে এই ভাব আসে।।

বানিজ্য করিয়া আমি যেই অর্থ পাই।

তার কিছু অংশ আমি ট্যাক্স দিতে চাই।।

রাজার আশ্রয়ে প্রজা রহে চিরসুখে।

রাজার সাহায্যে টাকা দে'য়া ভাল ঠেকে।।

বিশেষতঃ রাজদ্বারে এই অর্থ দিলে।

রাজ - পরিচিত হব আমরা সকলে।।

আর কথা গুরুচাঁদ ভাবে মনে মন।

নমঃশূদ্র ঘরে ধনী নাহি কোন জন।।

অন্য অন্য জাতি যত আছে বঙ্গ দেশে।

ধন জন মান আছে দেশে কি বিদেশে।।

রাজঘরে পরিচিত বিদ্যা বুদ্ধি ধনে।

উচ্চ জাতি বলি রাজা সে সকলে জানে।।

Page 097 start

ধনহীন নমঃশূদ্র আছে পরিচয়।

এই ঘরে 'আয়কর কেহ নাহি দেয়।।

যে জাতির ঘরে ধন নাহি পরিমিত।

দরিদ্র বলিয়া তারা বিশ্বে পরিচিত।।

দরিদ্রের মান নাই সবে কৃপা করে।

ভিক্ষুকের প্রায় ঘুরে দুয়ারে দুয়ারে।।

আমি অদ্য রাজদ্বারে যদি ট্যাক্স দেই।

কে বলিবে নমঃশূদ্র ঘরে ধনী নেই।।

জাতির কারণে মোর ট্যাক্স দেয়া ভাল।

ট্যাক্স দিলে একদিনে পা'ব তার ফল।।

এত ভাবি সবিনয়ে গুরুচাঁদ কয়।

“হুজুর আমার এই নিবেদন হয়।।

বানিজ্য করিয়া আমি যত অর্থ পাই।

তদুপরি কুড়ি টাকা ট্যাক্স দিতে চাই।।

শ্রীগুরুর বাক্য শুনি হাকিম বিস্মিত।

বলে “আমি তব ঠাঁই হই পরাজিত।।

স্বেচ্ছায় রাজাকে দান কেহ নাহি করে।

শ্রেষ্ঠ রাজভক্ত আমি দেখি আপনারে।।

রাজ - প্রতিনিধি কাছে দিব সব লিখি।

দেখি আপনার কিছু কর্ত্তে পারে নাকি ?

বহুত প্রশংসা করে সেই সে হেকিম।

পরবর্ত্তী কথা শুন, অথ ততঃ কিম্।।

অগ্রভাগে সে হাকিম সেলাম জানায়।

টাকা দিয়া মহাপ্রভু ঘরে ফিরে যায়।।

গৃহে আসি গুরুচাঁদ ভাবে মনে মন।

এ জাতির ঘরে বৃদ্ধি - করা চাই ধন।।

কিছু কিছু ব্যবসায় আমি করিয়াছি।

তাহাতে ধনের বৃদ্ধি ঠিক বুঝিয়াছি।।

মম পিতা হরিচাঁদ লীলা সাঙ্গ কালে।

এ জাতি উঠাতে আজ্ঞা করে কুতূহলে।।

তাঁর ইচ্ছা তাঁর কর্ম্ম করিবেন তিনি।

আমি তো নিমিত্ত মাত্র কিছু নাহি জানি।।

তাঁর আশির্বাদ আছে আমার উপরে।

করিব সে সব কর্ম্ম যা ' উঠে অন্তরে।।

যন্ত্রী তিনি যন্ত্র আমি তিনি বাদ্য করে।

সেই ভাবে গান গায় যে ভাব অন্তরে।।

এ জাতির মধ্যে আমি যে কর্ম্ম করিব।

পৃথিবীর জীব দ্বারা সে কর্ম্ম সাধিব।।

বারশ ছিয়াশি সালে জ্যৈষ্ঠের প্রথমে।

কুড়ি টাকা ট্যাক্স ধার্য শ্রী গুরুর নামে।।

আষাঢ় মাসের শেষে হরিদাস পুরে।

দোকান খুলিল প্রভু বাসা ঘর করে।।

বেথুরিয়া গ্রাম বাসী নাম যজ্ঞেশ্বর।

ধীর স্থির প্রাজ্ঞ তিনি স্বভাব সুন্দর।।

বিশ্বাস উপাধী ধারী জ্ঞানেতে প্রবীণ।

গুরুচাঁদে ভক্তি তিনি করে চিরদিন।।

রামতনু নামধারী অপর সুজন।

গোমস্তা সাজিয়া পেল প্রভুর চরণ।।

হরিদাসপুরে রয় দুই মহাশয়।

কর্ম্মচারী রাখি সেথা ব্যবসা চালায়।।

গুণে জ্ঞানে দুই জনে কেহ নহে হীন।

উভয়ের শ্রম লাভ বাড়ে দিনে দিন।।

এক দরে বেচা কেনা একই ওজন।

জুয়াচুরি বাটপাড়ী চলে না কখন।।

সকলে জানিল তবে এই শুভ বার্ত্তা।

হরি - পুত্র গুরুচাঁদ দোকানের কর্ত্তা।।

দলে দলে সে দোকানে ভিড়িল সবাই।

ইচ্ছামত কেনে দ্রব্য কোন ভয় নাই।।

ক্রমে ক্রমে ব্যবসায় অতি বড় হ'ল।

“বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃ “আপনি ফলিল।।

সবে বলে “সাচ্চা মাল কর্ত্তার দোকানে।

ঠকিবার ভয় নাই যেই যাহা কিনে”।।

যেই দ্রব্য যেই জনে দোকানেতে চায়।

সর্ব্ববিধ দ্রব্য এক দোকানেতে পায়।।

Page 098 start

“ক্ষীরোদ বিহারী হরি “ পিতা রূপে যাঁর।

শান্তি দেবী রূপে “লক্ষ্মী “ জননী যাঁহার।।

ব্যবসা দূরের কথা যেই কর্ম্ম করে।

সিদ্ধি নিয়ে শ্রী গণেশ সাথে সাথে ফিরে।।

আষাঢ় মাসেতে ঘরে দোকান বসিল।

দুই মাস মধ্যে ধন বহুৎ বাড়িল।।

বহুত বাড়িল ধন ব্যবসা কারণে।

লগ্নি কার্য লাগি বাঞ্ছা করিলেন মনে।।

সেই কথা ক্রমে ক্রমে করিব প্রচার।

এ পর্যন্ত করি ক্ষান্ত বাণিজ্য প্রকার।।

গুরুচাঁদ রূপে এল ভবারাধ্য ধন।

মহানন্দ না চিনিল অন্ধ যে নয়ন।।

--০--