Page 437

ভক্ত শ্রীযাদবচন্দ্র মল্লিকের উপাখ্যান

যশোহর জিলাধীনে পদুমা নিবাসী।

প্রিয় ভক্ত যাদবের বহু গুন রাশি।।

মল্লিক উপাধি তাঁর অতি মহাশয়।

অনুক্ষণ হরিনাম করিয়া বেড়ায়।।

তাঁহার পিতার নাম শ্রীচন্ডি চরণ।

ঠাকুরের কৃপা পেল শোন কি কারণ।।

যেই কালে হরিচাঁদ অবতীর্ণ হয়।

সাহেবের নীলকুঠী ছিল সে সময়।।

নীল চাষ কার্য্যে লাগে বহুৎ মজুর।

মনে মনে ভাবে তাই ইংরাজ চতুর।।

দেশমধ্যে বেছে নেয় যতেক প্রধান।

তারা সবে করে দেয় মজুর চালান।।

অবশ্য অর্থের প্রম্ন আছে তাতে কিছু।

সর্দ্দরের চারি আনা মজুরের পিছু।।

এ জগতে একভাব দেখি সর্ব্বদায়।

চোরা-ব্যবসায় চুরি সবখানে রয়।।

সাহেব করিয়া চুরি ফাঁকি দিতে চায়।

সর্দ্দার শিখিয়া চুরি ব্যবসা চালায়।।

জমিদার গোমস্তারে কি দেয় বেতন?

তিন টাকা মহিনায় ভরণ পোষণ।।

কি ফল দাঁড়ায় তাতে সবে ভাল জানে।

প্রজাকে লুটিয়া খায় নায়েব কখনে।।

ব্যবসায়ী আর তার যতেক দালাল।

গরীবেরে লুটে খেয়ে করে পয়মাল।।

নীল চাষে নাহি ছিল এই ভাব ছাড়া।

মজুরের স্কন্ধে সব ‘‘সুখের পায়রা।।’’

সর্দ্দার দালাল হ’ল চন্ডী একজন।

ডানলপ সাহেবের খাইত বেতন।।

নদীয়া জেলায় মধ্যে সে কৃষ্ণনগর।

মজুর চালান হত মাস মাসান্তর।।

অগ্রিম আনিত টাকা মজুরের লাগি।

বিশ বলে দশ দেয় সাথে রেখে ভাগী।।

যেই দামে টাকা আনে সাহেবের কাছে।

অর্দ্ধ দামে লোক দিয়ে চুরি করে পাছে।।

পঞ্চাশজনের লাগি আনে শত টাকা।

পঞ্চাশে পঞ্চাশ দিয়ে বাকী মারে ফাঁকা।।

ইহা ছাড়া লোক পিছু চারি আনা আছে।

মোট কথা যত টাকা অর্দ্ধ তার বাঁচে।।

এসব চুরির কান্ড সাহেব জানে না।

পাছ দিয়ে হাতী গেলে চেয়েও দেখে না।।

পাপের বেসাতী বল কয়দিন চলে।

‘‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’’ শাস্ত্রে তাই বলে।।

একবার টাকা নিয়ে ভাগীদের সাথে।

চন্ডীর বিবাদ হ’ল নানাবিধ মতে।।

বন্ধু যারা শত্রু তারা হ’ল একদিনে।

জানা’ল চুরির কথা সাহেবের স্থানে।।

সাহেব জানিয়া তাতে হইল আগুন।

ফৌজদারী করে দিল বিচার দরুণ।।

গুরুতর অপরাধ আইনেতে লেখা।

অগোচরে ফাঁকি দিয়ে নেয়া হ’ল টাকা।।

জেলের হুকুম তাতে হইবে নিশ্চয়।

অন্ধকার দেখে চন্ডী নাহিক উপায়।।

বিপদে বান্ধব বল কেবা হ’বে তার?

সম্মুখে দেখেছি চন্ডী অকুল পাথার।।

মৃত্যুঞ্জয় গোস্বামীজী ওড়াকান্দী যায়।

কালীনগরীতে বাস করে সে সময়।।

পদুমা কালীনগর গ্রাম পাশাপাশি।

চন্ডী উদয় হ’ল কালীনগর আসি।।

Page 438 start

মনোব্যাথা কহিতেছে মৃত্যুঞ্জয় ঠাঁই।

মৃত্যুঞ্জয় বলে ‘‘চল ওড়াকান্দী যাই।।

হরি বিনে বন্ধু নাই বিপদের কালে।

চল দেখি দয়াময় কোন কথা বলে।।’’

বিপদ এমন করে কিবা চমৎকার।

বিপদের কালে নাহি থাকে অহঙ্কার।।

চিরকাল চন্ডী করে ম’তোদের ঘৃণা।

বিপদে পড়িয়া মনে সে ভাব আসে না।।

মান ফেলে চলে চন্ডী মনে অতি ভয়।

কি জানি কি হরিচাঁদ কোন কথা কয়।।

নানা কথা মনে ভাবি সে চন্ডীচরণ।

উপনীত ওড়াকান্দী বিষাদিত মন।।

প্রভুর নিকটে রাখে কিছু জরিমানা।

প্রভু বলে ‘‘ঐ টাকা আমিত নেবনা।।

গরীবেরে ফাঁকি দিয়ে আনিয়াছ টাকা।

ওটাকা নিরেট নয় ওর মধ্যে ফাঁকা।।’’

কথা শুনি সে চন্ডীর দুঃখ হ’ল মনে।

অমনি লোটায়ে পড়ে প্রভুর চরণে।।

কা্ন্দিয়া কান্দিয়া কহে ‘‘ওহে দয়াময়।

অপরাধ ক্ষমা করে করহে উপায়।।’’

প্রভু কয় ‘‘ওই কথা বল কিসে হয়।

মাপ দিলে দিতে পারি কি দিব উপায়?

তবে বলি এই দোষে মুক্তি পেতে চাও।

যারা যেই টাকা পাবে তারে তাই দাও।।

তাতে যদি তারা সুখী হয় তবোপরে।

উপায় মিলিবে তাতে বলিনু তোমারে।।’’

চন্ডী বলে ‘‘টাকা নাই খরচ হয়েছে।

নিশ্চই বুঝিনু শাস্তি এ কপালে আছে।।

শুনেছি তোমার নামে মরা বেঁচে যায়।

এ মরা বাঁচায়ে নহ ওগো দয়াময়।।’’

প্রভু কয় যাও তবে কোন ভয় নাই।

রক্ষা হবে বটে কিন্তু মতো হওয়া চাই।।

আর এক কাজ তুমি অবশ্য করিবে।

সকলের কাছে তুমি মাপ চেয়ে লবে।।

মতুয়া ডাকিয়া গৃহে কর হরিনাম।

সাধু যদি মাপ করে মিলে মোক্ষধাম।।’’

প্র্রভুর আশ্চর্য্য লীলা কিছু নাহি বুঝি।

পাপীকে তরাতে প্রভু সর্ব্বকালে রাজী।।

প্রভুর আদেশ মত চন্ডী সব করে।

সংবাদ পাইল চন্ডী কিছুদিন পরে।।

আপনা হইতে দাবী সাহেব তুলেছে।

আর পাঁচ শত টাকা পুরস্কার দেছে।।

ইহার কারণ যাহা হ’ল লোকাচারে।

সেইটুকু বলিমাত্র সভার ভিতরে।।

সেইবারে সাহেবের বহুলাভ হ’ল।

লাভ দেখে মহাসুখে চন্ডীকে ছাড়িল।।

সকলের পিছে কিন্তু হরির করুণা।

বুদ্ধিমান মোরা যারা সে সব মানিনা।।

সেই হতে চন্ডী হল মতুয়া সুজন।

পাপচারী ব্যবসায় না করে কখন।।

তার পুত্র সে যাদব বহু নিষ্ঠাবান।

ওড়াকান্দী বলে সদা কান্দে তাঁর প্রাণ।।

গৃহেতে বিবাদ করে গেল ওড়াকান্দী।

প্রভুর চরণে গিয়ে পড়িলেন কান্দি।।

প্রভু বলে ‘রে যাদব এই বাড়ী থাক।

আমার পালের গরু সব তুই রাখ।।’’

আজ্ঞা পেয়ে সে যাদব ওড়াকান্দী রয়।

মহাপ্রভু হরিচাঁদ দেহ ছেড়ে যায়।।

বহু স্নেহ গুরুচাঁদ করিতেন তাঁরে।

আপন বাড়ীর লোক ভাবে সদা তারে।।

কিছুকালে পরে সাধু নিজ বাসে যায়।

ঠাকুরের নাম লয়ে ঘুরিয়া বেড়ায়।।

যাদব ঢালীর সঙ্গে বহু প্রীতি ছিল।

বহু স্থানে দুই জনে নাম প্রচারিল।।

Page 439 start

পবিত্র চরিত্র সাধু অহঙ্কার নাই।

তাঁর কৃপা পেয়ে ধন্য নকুল গোঁসাই।।

গুরুচাঁদ তাঁরে বড় বাসিতেন ভাল।

হরি কথা উচ্চারণে আঁখি ছল ছল।।

ভ্রমণের জন্য প্রভু পশ্চিমেতে যায়।

অবশ্য উদয় হত গ্রাম পদুমায়।।

এসব পবিত্র সাধু দেশের গৌরব।

কোন দিনে নাহি ম্লান হবে সে সৌরভ।।

যাদব মল্লিক ধন্য পবিত্র গোঁসাই।

সাধুর চরণে আমি প্রণাম জানাই।।

---০---